নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন খারাপের ভালবাসা

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬

ওজন মাপার মেশিনটার দিকে তাকিয়ে ভাবল, একবার ওজনটা মেপে দেখা দরকার। ঘুমালে মানুষ মোটা হয়। গত ৫ দিন ধরে ধরতে গেলে সারাদিনই ঘুমায় আসাদ।ওজন মাপার মেশিনের উপর উঠল। ৪৯ কেজি। আন্ডার ওয়েট।এটা কি করে হয়? ৫ দিন আগেও ৪৯ কেজিই ছিল। ৫ দিনের ঘুমে কিছুই হল না। ২ টাকার একটা নোট ওজন মাপা ছেলেকে দিয়ে চলে আসল। এখনও ঘুম পাচ্ছে।মোবাইল এ তাকিয়ে দেখল ৪ টা ২০ বাজে।বিকেল বেলা।আসাদ দিনে ঘুমায় না। কিন্তু গত ৫ দিন ধরে ঘুমাচ্ছে।পকেটে এখনও আধা পাতা ট্রিপ্টিন আছে।ফার্মাসিতে গিয়ে বলল ট্রিপ্টিন দুই পাতা। দোকানদার বলল, ৫ টাকা না ১০ টাকার পাতা?

- ৫ টাকার।





দোকানদার ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিল। কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। এখন আসাদ এগুলো খেয়ে মরে গেলে দায় ভার নিবে কে?আসাদ মরেনি, তাই কেউ দায় ভারও নিতে আসেনি। প্রতিদিন কয়েকটা করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে।সারাদিন ঘুমাচ্ছে। সেদিন রিতুর খুব মন খারাপ।আসাদ মোবাইল করে, কল কেটে দেয়। আসাদ কল করেই যায়।এক পর্যায়ে রিতু রিসিভ করে কাঁপা গলায় বলে, আমার মন খারাপ রে।

- কেন?

- এখন বলতে পারব না।ভাল লাগতেছে না। আমি রাখি, মন খারাপ থাকলে কারও সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না।

- আরে রাখিস না। কথাটা শোন আমার। মন খারাপ , ঠিক আছে। আমার সাথে কথা বল, দেখবি ঠিক হয়ে যাবে। মন খারাপ থাকলে কেউ চুপ করে বসে থাকে? এতে আরও কষ্ট বাড়ে।

- আমাকে একা থাকতে দে না প্লিজ। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

- আমি তোর বন্ধু না,বল? আমার উপর বিশ্বাস রাখ। আমি বলতেছি কিছুক্ষণ কথা বল, মন ভাল হয়ে যাবে।

-না।

- তাহলে কি করবি তুই?

- ঘুমাব। ঘুমালেই মন ভাল হয়ে যাবে। ঘুম থেকে উঠলে মন ফ্রেশ হয়। মনে হয় কোন কষ্ট নাই। আমি রাখি, তোর সাথে ঘুম থেকে উঠে কথা বলব।





রিতু কল কেটে দেয়। আসাদ আবার কল করে, নাম্বার বন্ধ। মন খারাপ থাকলেই মেয়েটা এমন করে। হুট করে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ত্থেকে উঠে আগে কি হয়েছে না হয়েছে, কষ্ট দুঃখ সব ভুলে যায়। মন একদম ভাল। তখন যদি আসাদ জিজ্ঞেস করে, কি কারণে মন খারাপ ছিল?

- এখন তোর এসব শুনে আবার আমার মন খারাপ করে দিতে হবে?

- না।

- তাহলে চুপ করে থাক। অন্য কথা বল।

- কি কথা?

- আরে জানিস, আজ কি হইছে?

- কি?

-আমাকে আজ এক ছেলে প্রপোস করল।

- তাই? কই থাকে? কই পড়ে? দেখতে কেমন?

-দূর। এসব কে দেখে। ছেলের সে কি অবস্থা। ভাল না বাসলে মইরা যাবে। হাতে ব্লেড নিয়া বইসা আছে।

- তারপর?

- তারপর আর কি? আমি বলছি, মইরা যাও।

- এইটা কোন কাজ করলি?তুই কি জীবনে প্রেম করবি না?ছেলেটাকে একটা সুযোগ দিতি। দেখতি। খারাপ লাগলে পরে না হয় বাদ দিয়ে দিতি।

- তোর এতো মাথা ব্যথা কেন? আমার ইচ্ছা হলে আমি করব। না হলে করব না। জীবনে করব না। তোর কি? তুই কর প্রেম। যাহ।

- কার সাথে প্রেম করব?

- কেন? ঐ যে তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড কি পরী না পেত্নী যেন। তোমার কবিতা পরে তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছে।সারাদিন তোমারে মেসেজ দেয়, এমন কেন তুমি? একটু রিপ্লাই তো দিয়ে পার।

আহা, কি আবেগ, কি ভালবাসা। মেয়েটাকে এতো কষ্ট দিয়ে লাভ আছে? হ্যাঁ বলে দে। তোর জন্য এত দেওয়ানা। প্রতিদিন একটা করে কবিতা তারে লিখে দিলেই সে খুশি। এক্সট্রা গিফট কিনতে হবে। তোর কত টাকা সাশ্রয়, একবার ভেবে দেখছিস?

- বুঝছি। আমার ঐ মেয়েকে ভাল লাগে না। আমি করব না প্রেম।

- এহ ওনার জন্য, রাজকন্যা আসবে। দেখতে ইঁদুরের মত, আবার রাজকন্যার খোঁজ করে।

- তুই তো হাতি।

- তাও তো কত ছেলে পাগল। বুঝতে হবে।হিহি।

- তো প্রেম কর।

- না, প্রেম করব না। ছেলেদের ঘুরিয়ে অনেক মজা। একটা ছেলেকে না করে দিলাম, আমার দাম বাড়ল। এমন ঘুরিয়েই যাব ছেলেদের, প্রেম করব না। আর তুই তো আছিস ই। আমার মনে হল এখন কাউকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। তোকে এসে জড়িয়ে ধরব। মনে হল একসাথে রিকশায় ঘুরা দরকার। তোর সাথে ঘুরলাম। মনে হল, কেউ একজন আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিলে ভাল লাগত। তোকে কান ধরে নিয়ে আসলাম। তুই পড়িয়ে দিবি। হিহি।





রিতু হাসে।আসাদ তাকিয়ে থাকে। হাসির শব্দ বুকের ভিতর এসে বিঁধছে। কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে। এই অনুভুতি আগে হয় নি।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিতুর দিকে আসাদ। কত সুন্দর লাগছে দেখতে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে রিতুর। বেশি হাসলেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তখন আরও অপরূপ লাগে।হাসি মাখা মুখেই রিতু আসাদের দিকে তাকায়।

- শয়তান, এভাবে দেখতেছিস কেন?





মাথায় খাতা দিয়ে একটা বারি দিয়ে বলে রিতু। আসাদও একটু হাসি দেয়।রিতু আবার হাসতে শুরু করে। আর আসাদ তাকিয়ে থাকে।





এমন অনেকটা সময় কাটিয়েছে আসাদ রিতুর সাথে। সারাদিন ২ জনই ব্যাস্ত, অন্য জনের প্রেম করিয়ে দেবার চিন্তায়। কিন্তু কেউ ই প্রেম করে না। এই সম্পর্কটাই মধুর লাগে।





সেদিন বার ছিল শুক্রবার। একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে আসাদ।সকাল সকাল রিতুর কলে ঘুম ভেঙ্গে গেল।কল রিসিভ করার পরই রিতুর হাসি হাসি কণ্ঠ।সকাল সকাল এই মিষ্টি কণ্ঠ শুনতে, মিষ্টি হাসি শুনতে অনেক ভাল লাগছে।আসাদ বলল, কিরে কি হইছে?

- আরে হয়ে গেছে যা হবার।

- মানে কি?

-i am in a relation.

- মানে?

- তোকে একটা ছেলের কথা বলছিলাম না? রনিক। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে ফোন দিত।এডমিশনের ব্যাপারে সাজেশন দিত। অনেক ভদ্র করে ছেলেটা। ওর সাথে।

- ও ও ও।ভাল তো।





আসাদের কানে কথাগুলো কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। একটু একটু কষ্ট হচ্ছে মনে হয়।কিন্তু কষ্ট লাগবার কথা না। আসাদই তো চাইতো রিতুর একটা সম্পর্ক হোক কারও সাথে। কাউকে ভালবাসুক।





- ঐ পাগল, এখন খুশি তুই? খুব তো লাফাতি প্রেম করিয়ে দেবার জন্য।এই যে করলাম। এখন খুশিতে লাফা তুই।হিহি।





রিতু হাসে।শব্দ করে। হাসির শব্দ বুকের ভিতর এসে বিঁধছে। কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে। এই অনুভুতি আগে হয় নি।সেদিনের হাসির শব্দও বুকের ভিতর এসে বিঁধছিল। কিন্তু সেটা সুখের অনুভুতি ছিল।ভাল লাগার অনুভুতি ছিল। কিন্তু আজ খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে বুকের উপর অনেক ভারী কিছু পড়েছে। যার ভার সহ্য করা অসম্ভব।কেন যেন চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। নিশ্চিত খুশিতে হবে। রিতু হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেলে।আর আসাদের বের হচ্ছে হয়ত খুশিতে। কষ্ট পাবার কথা না, তবুও আসাদ পাচ্ছে।গতকাল একটা পায়েল কিনেছিল আসাদ। রিতুকে পরিয়ে দিবে তাই। কিন্তু পায়েলের কথা আর বলা হল না।একটু নিজেকে সামলে নিয়ে আসাদ বলল,

- হ্যাঁ রে খুব খুশি হইছি। ও ও তোকে একটা কথা বলি।

- বল।

- আগে বল আমার কথা রাখবি?

- হুম রাখব।

- প্রমিজ কর।

- প্রমিজ। বল রে বাবা এখন।

- আগামী কয়েকদিন তুই আমার সাথে যোগাযোগ করবি না।

- কেন?

- নতুন প্রেম হল। এখন কয়েকদিন তাকে পুরোপুরি সময় দে। আগে বুঝ সে কেমন, তোর অন্য ছেলে বন্ধু সহ্য করতে পারে কিনা। তাছাড়া, পরে যা করার করিস। কিন্তু এখন কয়েকদিন তাকে সময় দে। প্লিজ।

- এইটা কোন কথা হল। আমি এটা পারব না।

- প্লিজ, কয়েকটা দিনই তো। আর তুই প্রমিজ করছিস।আমি তো আছিই। পালিয়ে যাচ্ছি না।

- আচ্ছা।

- হুম রাখি রে। ভাল থাকিস। শুভ কামনা তোদের জন্য।





বলে কল কেটে দিল আসাদ। কষ্ট হচ্ছে খুব।মনটা খুব খারাপ লাগছে।কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এমন কেন লাগছে?রিতু ওর অনেক ভাল একটা বন্ধু। ওকে তো ও কখনও প্রেমিকা হিসেবে চায় নি। তাহলে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক হওয়াতে খারাপ লাগবে কেন?হয়ত ভালবাসা বুকের কোণে কোথাও না কোথাও ছিল।সেই ভালবাসা পূর্ণতা না পাওয়াতে বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে।খুব কষ্ট। মন খারাপ। ঘুমানো দরকার। কিন্তু ঘুম আসছে না। মাত্র ঘুম থেকে উঠল। কিন্তু রিতুর তো মন খারাপ হলেই ঘুমিয়ে যেতে পারে।আসাদ পারবে না কেন? হয়ত সবাই সবকিছু পারে না। সবাই সবকিছু পায় না।তাই ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে প্রতিদিন ঘুমায় আসাদ। গত ৫ দিন ধরে ঘুমায়,ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে। তবুও মন ভাল হয় না। হবার কথা তো। আবার ঘুমানো দরকার। এমনিতেই ঘুম ঘুম পাচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট বের করল।ট্যাবলেটের সাথে জড়িয়ে পায়েলটা বের হয়ে আসল। রিতুর পায়ে পরিয়ে দেবার জন্য কিনেছিল। হাতে নিয়ে একটু দেখে পায়েলটা পকেটে রেখে দিল। আরও ঘুমের ওষুধ খেল।হলের দিকে যাচ্ছে আসাদ। রুমে গিয়ে ঘুমাবে। হঠাৎ মোবাইল কেঁপে উঠল। মেসেজ আসার ভাইব্রেশন। ঘুম ঘুম চোখে দেখল রিতুর মেসেজ। ওপেন করল। মেসেজে লেখা,

" একটু দেখা করবি আমার সাথে? খুব কষ্ট হচ্ছে। মন খারাপ খুব। ঘুমালে এই মন খারাপ ঠিক হবে না। তোকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদব।তোর কাছে টাকা হবে? একটা পায়েল কিনে নিয়ে আসবি।আমার পায়ে পরিয়ে দিবি। কেউ তোর মত এতো ভাল না রে। আমি প্রেম করব না। আমার তুই ই ভাল। আয় না প্লিজ। "





হঠাৎ ই মনে হল আসাদ জীবনের সবকিছু ফিরে পেয়েছে। বুকের ভিতর কেমন একটা যেন অনুভুতি হচ্ছে। এই অনুভুতি ভাল লাগার অনুভুতি। রিতুর সাথে দেখা করতে হবে। ঘুমটা খুব ঝেঁকে বসেছে চোখে। একবার হোঁচট খেল আসাদ।তবুও যেতে হবে। পকেটে হাত দিয়ে দেখল, পায়েলটা ঠিক আছে। রিতুর পায়ে পায়েল পরিয়ে দিবে আসাদ। আর রিতু আসাদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে।হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, মন খারাপের হাওয়ায় চড়ে ফিরে আসবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

পথহারা সৈকত বলেছেন: good............very good ............ Carry on brother

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.