নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বই পড়ার শুরু ও হুমায়ূন আহমেদ স্যার

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪০

আমি খুবই বাজে পাঠক। যা পড়তে গিয়ে প্রথম থেকে ভাল না লাগে, তা পড়ার ক্ষেত্রে আমি আগাই না। মানে ব্যাপারটা এমন হতে হয়, আমাকে দিয়ে কিছু পড়াতে হলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখার সাথে আটকে রাখতে হবে। ঠিক এই কারণে আমি খুব কমই গল্প, কবিতা, উপন্যাসের বই পড়েছি। খুব কমই গল্প পড়েছি, কবিতা পড়েছি, প্রবন্ধ বা উপন্যাস পড়েছি।আমার প্রথম পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়া তৃতীয় শ্রেণিতে থাকতে। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করি নায়। এক বছর বাসায় কাটিয়েছি দ্বিতীয় শ্রেণির পর। তারপর আবার স্যাররা এসে বাবা মাকে বলে এক বছর পর চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়ে ভর্তি করিয়েছিল। ওটা পরিবারের ব্যাপার, ঐ ব্যাপারে এত কিছু না বলি। যাই হোক,তৃতীয় শ্রেণির বছর বাসায় বসে থাকার কারণে, কিছুই করার নেই।মোটামুটি ভাল ছাত্র ছিলাম , তাই খুব ভাল রিডিং পড়তে পারতাম।আমার এক দুঃসম্পর্কের বড় আপু,তখন ক্লাস এইটে পড়েন। দেখতে খুবই সুন্দরী, এই কারণে এলাকার অনেক ছেলে তার পিছনে ঘুরে। আপু মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে বাহিরে বের হতেন। সেই হিসেবে ঐ পিছনে ঘুরা ব্যক্তিবর্গের কাছেও আমি পরিচিত হয়ে গেলাম। নানা সময় আমাকে একা পেলে নানা রকম খাবার খেতে দিয়ে, চিঠি দিত আপুর কাছে পাঠাবার জন্য। আমিও তা নিয়ে আপুর কাছে দিতাম।একদিন আপু বলল, তারা কিছু দিলে রাস্তায় ফেলে দিতে। আমিও তাই করতাম। প্রেমিকদের থেকে নানা রকম খাবার খেয়ে চিঠি এনে পচা পানিতে ফেলে দিতাম।ভালই যাচ্ছে দিন। একদিন আপুর পিছনে ঘুরা এক ছেলে র‍্যাপিং পেপারে পেঁচিয়ে একটা বই দিল। আমি যথারীতি তা পচা পানিতে ফেলতে নিয়ে গেলাম।পরে ভাবলাম, ফেলে দিব? এতো সুন্দর করে পেঁচিয়ে একটা বই দিল।আমি বই নিয়ে আপুকে দেখালাম। আপু বলল, তুই রেখে দে। তুই পড়িস ওটা।

আমি ঘরে এনে, বই বের করলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের " নৌকা ডুবি" । ভাল রিডিং পড়তে পারি। তাই সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পড়া শুরু করলাম। শব্দ করে তিন পাতা রিডিং পড়ে শেষ করলাম। তখনি একটু ভাবলাম, এতক্ষণ আমি কি পড়লাম? জীবনে প্রথম গল্পের বই পড়তেছি একটু মনোযোগ সহকারে না পড়লে হয়? তাই আবার শুরু করলাম পড়া প্রথম থেকে, অতি মনোযোগ সহকারে।কিন্তু এবার দেড় পৃষ্ঠার বেশি যেতে পারলাম না।আমার দ্বিতীয় শ্রেণির বিদ্যায় এই বইয়ের এক লাইনও বোঝা অসম্ভব। আর কি করা। বই রেখে দিলাম। আর কখনও পড়া হয় নি।গল্পের বই বা অন্য কোন বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমে গেল।এরপর বই পড়া শুরু করলাম অন্যভাবে। আব্বু একটা নতুন লুঙ্গি কিনেছে। নতুন লুঙ্গির ভিতর কোন এক কারণে কাগজ বা পেপার থাকে। কিন্তু আমার আব্বুর সেই নতুন লুঙ্গির ভিতর দেখলাম রূপকথার এক বইয়ের কতগুলো পাতা।আমি সেগুলো এক করে অনেক পরিশ্রম করে, পেজ সাজিয়ে দেখলাম মোটামুটি সব পাতাই আছে। তো, তাই পড়া শুরু করলাম। খুবই মজার গল্প। এক রাজকুমার, তার বন্ধু সেনাপতির ছেলে দুজন মিলে যায় এক রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে। যাকে কিনা তারা দুজনেই পছন্দ করে। রাজকন্যা থাকে পানির নিচে এক রাজ্যে বন্ধি। তাকে উদ্ধার করতে দরকার একটা অজগর সাপের মাথার মনি।তারা সেই মনি উদ্ধার করে এক রাতকানা বুড়ির ছেলে সেজে যায় রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে। তারপর, তারপর। তার কোন পর নাই। গল্পের বাকি পৃষ্ঠা নাই। খুব হতাশ হলাম। নিজের মনে ভাবতে লাগলাম কি হতে পারে। ভাবনায় ভাবনায় চলে গেল। আর বই পড়া নেই। আমার আগ্রহও নেই। এমনকি একবার এক বন্ধু একটা কমিকের বই এনে দিল। তাও আমার ভাল লাগে না।

তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি।জুম্মার নামাজ পড়তে বাজারের মসজিদে যাই।ছাদে নামাজ পড়ি। নামাজ শেষে মসজিদের পাশের দোকানগুলো দেখি। সেখানে মানিব্যাগ,ব্রাশ,চিরুনি, নেল কাটার থেকে শুরু করে, মেয়েদের মাথা ঠাণ্ডা রাখার তেল পর্যন্ত বিক্রি হয়। সেই ফুটপাথের রকমারি দোকানে দেখলাম, ছোট ছোট বই বিক্রি হয়। বিভিন্ন বই। তবে আমার চোখ আটকে যায় ভুতের গল্পের বইয়ে। ২ টা বই নিয়ে বললাম, আঙ্কেল দাম কত?

- ৩০ টাকা।

আমি ভয়ে বই রেখে দেই।এতো টাকা আমার কাছে নেই।আছে ১০ টাকা। ২ সপ্তাহ পর আমার কাছে ৩০ টাকা হল। ২ টা বই নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম,

- আঙ্কেল দাম কত?

- ২০ টাকা।

ভাবলাম, বাহ ১০ টাকা কমিয়ে দিল। জীবনে প্রথম একটু দামাদামির চেষ্টায় নামলাম। বললাম, ৫ টাকা করে দিবেন?

- না না, এতো সস্তা বই আছে?১৫ টাকা দিও ২ টা।

- না ১০ টাকাই ২ টা। দিলে দেন, নইলে যাই

- আচ্ছা টাকা দাও।



আমি ৪ টা বই কিনলাম। ভুতের গল্পের। বাসায় এনে রাতে পড়লাম। একটু একটু ভয় লাগে। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই এমন বই কিনতাম ভুতের।এক বন্ধুর জন্মদিনে একটা ভুতের বই ই উপহার দিয়েছিলাম।তবে সেই ৫ টাকার বই না।লাইব্রেরী থেকে কেনা বই।এভাবেই চলছিল অনেকদিন, ভুতের গল্পের বই পড়তে পড়তে। কিছুদিন পর খেয়াল করলাম, আমার আর ভুতের গল্পে ভয় লাগে না। পড়তে গিয়ে ভাবি, এমন কেন? এর চেয়ে এমন হলে ভয়টা বেশি লাগত। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।ভুতের গল্পে ভয় হল মজা, সেই মজা হারিয়ে যাওয়াতে নিজেই লেখা শুরু করলাম ভুতের গল্প। রাতের বেলা নিজে লিখে নিজেই ভয় পাই। এরপর বেশি ভয়ের অংশটা কেটে দেই, ভয়ও নেই।ভালই চলছিল ৩-৪ মাস পর পর ভুতের গল্পের কয়েক লাইন লেখা।আমার এক হিন্দু বন্ধুর বাসায় আমি নিয়মিত যাই ছোটবেলা থেকে। আমার অনেক প্রিয় একটা বন্ধু সে। তার মা বাবাও আমাকে অনেক পছন্দ করে।আন্টি সব পুজায় নাড়ু খেতে দেয়, দারুন মজার নাড়ু। যেদিন যাই সেদিনই ভাত খেতে বলে। মাঝে মাঝে না খেলে, রাগ করে আন্টি বলেন, আমরা হিন্দু তাই আমাদের বাসায় খাস না?

আমার এই কথার পর আর না খেয়ে উপায় থাকে না। তো সেই বন্ধুর বাবার বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। তার কাছে অনেক অনেক অনেক কলকাতার লেখকদের বই। তিনি কাজে ব্যস্ত, বই পড়ার সময় পান না। আমি আমার বন্ধু মিলে বই বের করলাম।সেদিন বন্ধুর থেকে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর "টেনিদার হালখাতা" বইটা নিয়ে আসলাম। পড়ে আমি হাসি, হাসি মানে হেসে পেট ব্যথা করে ফেলি।পড়ি আর হাসি, শুধুই হাসি। ক্ষণে ক্ষণে সেই বইয়ের কিছু কথা মনে পরেও হঠাৎ হঠাৎ হাসি।কেউ কিছু লিখে এভাবে হাসাতে পারে আমার ভাবনার বাহিরে ছিল।এরপর কিছুটা বইয়ের নেশা পেল। বন্ধুর থেকে আরও কিছু বই এনে পড়লাম। এর ভিতর একদিন সত্যজিৎ রায়ের " গোরস্থানে সাবধান" বইটা এনে পড়লাম। ফেলুদার কাহিনী, রহস্য গল্প। আমি অবাক। মানুষ এতো সুন্দর করে লিখে কি করে? সেই সময়টাতে প্রায় ২ বছর বেশ কয়েকটা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কু এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কাকাবাবু পড়লাম। এই বইয়ের প্রতি আমার অনেক ভালবাসা জন্মাল। তবুও একটা সময় এসে কেন যেন লাগছিল গল্পের ভাষাটা ঠিক আমাদের না। এটা কলকাতার ভাষা। আমরা এই ভাষায় কথা বলি না।নিজের ভাষায় গল্প পড়বার অনেক ইচ্ছা আমার। তবে লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন এনে পড়া শুরু করলেও তা আমার ভাল লাগে না। সব লেখা আসলে সবার জন্য না। মাঝে মাঝে নিজের লেখা ভুতের গল্প পড়তাম, বন্ধুদের পড়তে দিতাম। এর ভিতর অনেকটা আগ্রহবশত কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতা সংকলন "সঞ্চিতা" কিনলাম।কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ। আমার কবিতা অত ভাল লাগে না। তবুও তার প্রতিটা কবিতা ঐ বইয়ের আমি প্রায় মুখস্থ করে ফেললাম, পড়তে পড়তে।অবাক হতাম একটা মানুষ একই সাথে দুঃখ, সুখ, প্রেম, বিদ্রোহ কি করে কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেন। নিজেও ছন্দ মিলিয়ে লেখা শুরু করলাম।আর কবিতা বলতে সেই সঞ্চিতা বই ই পড়েছি শুধু।

এই ঘটনাটা ক্লাস নাইনের শেষ দিকের। আমার পাশের ঘরের একজন আমাকে জন্মদিনে একটা বই উপহার দিল। " আজ হিমুর বিয়ে" লেখক হুমায়ূন আহমেদ। জানতাম হুমায়ূন আহমেদ ভাল লেখেন, তবে তার কোন বই পড়া হয় নি। হয়ত ভালই হবে। তার লেখা নাটক গুলো অনেক ভাল লাগত। হেসে হেসে অবস্থা খারাপ হত। সিনেমা গুলোও অন্যরকম, ভাল লাগার মত।বইও ভাল হবার কথা। পড়া শুরু করলাম। শীতের দিন। বাহিরে পাটি বিছিয়ে রোদে বসে বই পড়তে লাগলাম। আমি বই পড়ে যাচ্ছি। কি হল জানিনা। বই ছেড়ে উঠতে পারছি না। আম্মু ডাকে আমি যাই না।পাতার পর পাতা পড়ে যাচ্ছি, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে বইয়ের সাথে আটকে রাখলেন।পড়ি আর ভাবি, আরে এটা তো আমার মনের কথা। এমন তো আমি ভাবি। এমন তো হয়। আমিও তো এমন চাই।

এতো দিনে মনে হচ্ছে আমার ভাষার বই পড়ছি। আমার মনের মত লেখা পড়ছি। যেখানে সাহিত্যের জটিল ভাষার কচকচানি নেই। আছে ভাললাগার মত কিছু। যে ভাললাগা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে না। বই একবারে পড়ে শেষ করলাম। মাঝে পানি পান বা পানি ছাড়ারও কোন বিরতি নিলাম না। আমি মুগ্ধ হলাম লেখা পড়ে। কিভাবে সম্ভব, কিভাবে?এভাবে লেখার সাথে আটকে রাখা। লেখায় কি এমন মধু আছে? আমি এক বই পড়েই হুমায়ূন আহমেদ কে সব লেখকের উপরে জায়গা দিয়ে দিলাম। সবার কাছে যা আমার কাছে তা হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমার আশেপাশে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে নানা বাজে কথা শুনতাম। সেসবে আমি কানে লাগাতাম না।আমার ভাললাগা আমার কাছে। এরপর থেকে শুধু হুমায়ূন আহমেদ পড়ি। হিমুর বই পড়ি, মিসির আলি পড়ি।কলেজে উঠে আমার এক বন্ধু মামুরের থেকে কয়েকটা হিমুর বই এনে পড়লাম হুমায়ূন আহমেদ এর। মামুরের আবার বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। পুরো এলাকার মানুষ বেচারার থেকে বই নিয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবার বই মেরেও দেয়।

আমার এক ক্লাসমেট মেয়ের থেকেও আমার কয়েকটা গল্প দিয়ে মিসির আলির ২ টা বই এনেছিলাম। সেই বই এখনও আমার কাছে আছে। তার সাথে দেখাও হয়নি আর ফেরতও দেয়া হয় না। আমার হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কিছুই ভাল লাগে না। আর কারও লেখাই কেন যেন ভাল লাগত না। খুব কম পড়ি আমি বই, তবে যে কয়েকটা পড়ি তা হুমায়ূন আহমেদ এর ই।

হিমুর বই পড়েছি- আজ হিমুর বিয়ে, হিমুর আছে জল, হিমুর নীল জোসনা, চলে যায় বসন্তের দিন, আঙ্গুল কাটা জগলু, হলুদ হিমু কালো র‍্যাব। আরও কয়েকটার নাম মনে নেই।



মিসির আলির বই পড়েছি- আমি এবং আমরা, কহেন কবি কালিদাস, বৃহন্নলা,মিসির আলির চশমা, দেবী, নিশীথিনী, তন্দ্রাবিলাস, অন্য ভুবন, মিসির আলির অ মীমাংসিত রহস্য, অনীশ, নিষাদ। আরও কয়েকটা পড়েছি।



শুভ্র এর ২ টা পড়েছি বই।

হিমু এতো জনপ্রিয় হবার কারণ হল, মনে মনে অনেকেই হিমু হতে চায়। হিমুর মত স্বাধীন জীবন কাটাতে চায়। তবে তা চাওয়া পর্যন্তই। বইয়ের পাতা পর্যন্ত।



হিমু অনেকটা পাগলাটে গল্প, হাসির গল্প। আর মিসির আলির বইগুলো রহস্যের গল্প, তার পিছনের যুক্তির গল্প,মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর গল্প। শুভ্রর গল্প এক নিস্পাপ সাধারণ ছেলের গল্প।

এই চরিত্রগুলো সম্পর্কে আমরা জানি।এমন হবে অমন হবে। কিন্তু আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদ এই চরিত্রগুলো ছাড়া বাহিরে যে বইগুলো লিখেছেন সেগুলো অনেক বেশি পরিপূর্ণ, অনেক বেশি ভাললাগার। অন্য বইগুলো তিনি এমন ভাবে লিখেন, পড়তে পড়তে হঠাৎ খুব ভাল লাগবে, হাসি পাবে। আবার মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়বে। একটা মানুষ তার একই উপন্যাস দিয়ে মানুষকে হাসাচ্ছে, মানুষকে কাঁদাচ্ছে কত অবাক করা একটা বিষয়। আমি কেঁদেছি তার অন্য বইগুলার প্রায় সবগুলো পড়েই চোখে পানি এসেছে। হাসার কথা বাদ দিলাম, কেন দিলাম? কারণ এটাই যে আমরা সস্তা জোকস শুনেও হাসি, লেখা দিয়ে চোখে পানি আনা অনেক কঠিন একটা কাজ। কতটা আবেগ নিয়ে লিখলে একটা লেখক তার পাঠকের মনের ভিতর ঢুকতে পারে, কাঁদাতে পারে ভেবে পাই না।তার লেখায় যে পরিমাণ ভালবাসা তিনি দিয়েছেন, তা কল্পনাতীত।তিনি হুটহাট এমন কিছু লাইন লিখে ফেলেন যা পড়ে মনে হয়, আসলেই এটা তো আমার মনে ছিল। আসলেই এমনটা হয়।ধক করে বুকের ভিতর আঘাত করে তার কিছু গল্পের লাইন। সহজ ভাষায় তার মত কেউ আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি।ছোট ছোট আবেগ অনুভূতিগুলো তার লেখায় যেভাবে এসেছে অন্য কারও লেখায় আমি তা দেখিনি। তার অন্য পড়া বই গুলো হল- অন্ধকারের গান, আকাশ জোড়া মেঘ, আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি, আয়না ঘর, তোমাকে, পাখি আমার একলা পাখি, বৃষ্টি বিলাস, মৃন্ময়ী, মৃন্ময়ীর মন ভাল নেই, পুফি, অচিনপুর, অন্যদিন, এই মেঘ রৌদ্র ছায়া, কিছুক্ষণ, কে কথা কয়, যদিও সন্ধ্যা ,বলপয়েন্ট,আমি এবং আমরা। আর নাম মনে নেই।



এখনও তার অনেক লেখা পড়া বাকি। আমি খুবই অলস পাঠক। কারও লেখা পড়তে খুব আলসেমি লাগে। তাই ধীরে ধীরে তার লেখাগুলো পড়ছি। আর মনে মনে ভাবছি তার লেখা ফুরিয়ে গেলে আমি পড়ব কি?



তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়, আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমার প্রিয় লেখক তিনি। অনেকেই বলে কেন তার লেখা ভাল লাগে? অন্য লেখকদের লেখা পড়লে নাকি আর তার লেখা ভাল লাগবে না।

আমার জানা নেই কেন ভাল লাগে তার লেখা। ভাললাগার কারণ জানতে নেই। ভাললাগা কিছু বুঝে হয় না। তার লেখা ভাল লাগে তাই ভাল লাগে।হয়ত তিনি সহজ ভাষায় কাঁদাতে পারেন, সেজন্য।তিনি লেখার সাথে আটকে রাখতে পারেন সেজন্য।আমার মত বাজে পাঠককে দিয়ে কিছু পড়াবার জন্য ভাল লাগে। আমি জানি তিনি আমার মত হাজার পাঠক তৈরি করেছেন।কেউ আছে যা পাই তাই পড়ি। আমি সেই শ্রেণির না। আমার যা পড়তে ভাল লাগে তাই পড়ি।হুমায়ূন আহমেদ না লিখলে আমার পড়ার আগ্রহ দমে যেত। আমি সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এদের লেখায়ও ভাল লাগা পেয়েছিলাম, তবে কখনও মনে হয় নি গল্পের ভিতর আমি আছি। হুমায়ূন আহেমদ এর লেখা পড়ে সেই অপূর্ণতা আমার কেটেছে। আমি তার জন্য তর্ক করতে রাজি, তবে তার প্রতি ভাললাগা হারাতে রাজি নই।সব সৌন্দর্য সবাই দেখে না। আমি যা দেখেছি তা অন্য কারও চোখে নাই পড়তে পারে। আমি বুঝি সাহিত্য মানে জটিল কিছু না।সাহিত্য মানে ভাললাগা, হুমায়ূন সাহিত্য মানে ভালবাসা।তবে কষ্ট লাগে আমার হয়ে কথা বলার জন্য তিনি আর পাশে নেই।মাঝে মাঝে মনে হয় তাকে বলি, স্যার একটু নিচে আসেন, আপনাকে নিয়ে তর্ক করতেছি, একা একা পারতেছি না।স্যার নতুন একটা বই লেখেন। আমি এখন ঢাকা থাকি, বই বের হলেই কিনে নিব।স্যার আরও কয়েকটা শ্যামল ছায়ার মত সিনেমা বানান, দারুচিনি দ্বীপের মত সিনেমার গল্প লিখেন। আরও কিছু মনের লাইন লিখেন। স্যার আপনি চলে গিয়ে কেন কাঁদাচ্ছেন, কলমে কিছু লিখে কাঁদান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮

আলম দীপ্র বলেছেন: হুম । হুমায়ূন স্যার এর সহজ সাবলীল ভাষার তুলনা হয়না । উনার কোনও বই পড়তে কখনও এতটুকু খারাপ লাগেনি ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: সবার ভিতর পাঠক ধরে রাখার, এমন ক্ষমতা থাকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.