নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধার্ত শিশু ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

টি.এস.সি এর বিপরীত পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান। গেট দিয়ে ঢুকলে অনেকগুলো খাবারের দোকান। নানা রকমের খাবার।ফুচকা, পিঠা, চা, সিগারেট, ভাজা পোড়া খাবার, ডাব,ডিম আরও নানা কিছু। আমি ঢুকে অতি ভেজাল মুক্ত ডাব কিনলাম একটা।ডাবের পানি খেয়ে শাঁস খাচ্ছি আর ডাব বিক্রেতার সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করছি। ডাব বিক্রি করা চাচার আজ মন খুব খারাপ। আজ নাকি মাত্র ১৫-১৬ টার মত ডাব বিক্রি হইছে।শীতকাল চলে আসছে। কে আর ডাব খাবে? এতো কম বেচাকেনা হইলে ঘর ভাড়া দিবে কি দিয়ে, আর খাবে কি?কিছুদিন পর আর বিক্রিই হবে না।কিছুটা হতাশ ভাবে কথাটা বললেন তিনি।আমি ডাবের সাদা শাঁস খেতে খেতে বললাম, চাচা, পিঠা আর সিদ্ধ ডিম বিক্রি শুরু করেন। শীতকালে ভাল লাভ হবে।

চাচা বলল, তাই করবেন।

আমি ডাবের শাঁস খাচ্ছি। সাদা শাঁস। হঠাৎ এক বাচ্চা মেয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়াল।রাতের বেলার ঠাণ্ডায়ও একটা পাতলা জামা পরা।খালি পা। আমার দিকে হাত পেতে পেট দেখাল।মানে বুঝাল কিছু খায় নি। মুখে খুব অসহায় ভাব। অল্প একটু ডাবের শাঁস বাকি ছিল। পিচ্চিকে দিয়ে তা দিয়ে, মানিব্যাগ বের করলাম। একটা পাঁচ টাকার নোট ছোট মেয়েটাকে দিলাম। মেয়েটা অনেক খুশি। মানুষের খুশি খুশি মুখ দেখতে অনেক ভাল লাগে।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা ৫ টাকা নিয়ে দৌড় দিল। দৌড়ে গিয়ে পাশের দোকান থেকে বেগুনী কিনছে, আমার দেয়া ৫ টাকা দিয়ে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে কিছুটা ইতস্তত করছিল।নিবে কি নিবে না। আমিই এগিয়ে গেলাম দোকানের দিকে। আমাকে দেখে একবার ভাবল হয়ত চলে যাবে, পরে আবার ফিরে আসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবা?

- বেগুনী

- আচ্ছা ঠিক আছে এইদিকে আসো।





আমি ছোট মেয়েটাকে নিয়ে পিছনের চেয়ারে বসলাম।মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে। আমি বললাম, টাকাটা রেখে দাও। কি কি খাবে খাও।

- আপনে নেন।





আমি ১ টা বেগুনী, একটা ২টা পিয়াজু, ছোলা,১টা ডিম চপ, মাশরুম,১০ টাকার চিকেন ফ্রাই নিলাম। মেয়েটা খাচ্ছে। আমি তাকিয়ে দেখছি। অনেক তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি থাক কোথায় ?

- এনেই।

- আব্বু আম্মু কই থাকে?

- জানিনা।

- জানিনা মানে কি? গ্রামে থাকে?

- জানিনা।

- ঢাকায় একা থাক?

- হ।

- কবে থেকে?

- অনেক আগে থেকে।

- কাজ কর কোন?

- না?

- খাও কি?

- এমনেই খাই।





আমি আর কিছু বললাম না।মেয়েটা খেয়ে যাচ্ছে। আমি এতো তৃপ্তি নিয়ে কখনও কাউকে খেতে দেখি নি। ছোট ছোট হাত গুলো দিয়ে তুলে খাচ্ছে।আমি তাকিয়ে আছি। আসলেই ক্ষুধার্ত মানুষকে তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখার মত সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর নেই। আমার খুব ভাল লাগছে। বুকের ভিতর অনেক ভাললাগার অনুভূতি হচ্ছে। সাথে চোখটাও ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, অনেক বেশি ভাল লাগায়। অন্ধকার আর চোখে চশমা থাকায় মেয়েটা তা দেখল না। ওর মনোযোগ খাবারের দিকে।রাস্তা দিয়ে অনেক সুখী মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। জোড়ায় জোড়ায় সুখী মানুষ। শীতের কাপড় পরে,একজন অন্যজনের হাত হাত বেঁধে। এখানেও এক জোড়া সুখী মানুষ। একজন মন ভরে খেতে পেরে সুখী, আর একজন একটা মানুষকে সুখী দেখতে পেরে সুখী।মেয়েটা খাওয়ার পর চলে গেল। আমি অনেকটা সময় ঘাসের উপর একা বসে ছিলাম। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, হয়ত অনেক বেশি ভাললাগায়। অনেকদিন পর এতো বেশি কাঁদলাম। তাও ভাললাগায়।মানুষের জীবন আসলেই কত রঙের, কত রকম, কত দুঃখের, কখনও ছোট কিছু পাওয়ায় কত সুখের।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

বোকামন বলেছেন:
অনেক ভালো লাগলো আপনার এই লেখাটি ...
হ্যাঁ ! আমরা পারি ইচ্ছে করলেই ।

শুভকামনা ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: হ্যাঁ, একটু একটু করেই, একটু একটু আমরা মানুষের একটু একটু দুঃখ সরাতে পারি।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩

বেকার সব ০০৭ বলেছেন: এই কাজের জন্য আপনাকে স্যালুট জানাই , সবাই একটু একটু করে এই বাবে এগিযে আসলে দেশে আর দরিদ্র থাকবে না
আসলেই ক্ষুধার্ত মানুষকে তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখার মত সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর নেই।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার অত সামর্থ্য নেই, মাঝে মাঝে দেখে কষ্ট লাগে তাই করা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.