নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অবাক ভালবাসা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫

হাতে পাঁচটা গোলাপ নিয়ে রিক্ত কখন থেকে দাড়িয়ে আছে, ভার্সিটির পুকুর পাড়ে। তুলির আসার খবর নেই। ৫ মিনিটের জায়গায় ৩০ মিনিট পাড় হয়ে গেছে। মেয়েদের যে কয় সেকেন্ডে মিনিট হয়!!!!

- ইশ দেরী হয়ে গেল। তুমি কি রাগ করেছ?





হঠাৎ এসেই বলল তুলি।

- না না , কি যে বল? আমি তোমার উপর রাগ করতে পারি?এই নাও।





রিক্ত গোলাপ গুলো তুলির দিকে বাড়িয়ে দিল। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে গোলাপ গুলো নিল তুলি। ফুলগুলোর সুভাস নিতে নিতে বলল- আমি কিন্তু এতে অবাক হই নি।

- আমি এটা তোমাকে অবাক করার জন্য, করিও নি।হঠাৎ তোমাকে দিতে ইচ্ছা করল।তাই দিলাম।

- আচ্ছা বুঝতে পারলাম।





রিক্ত কিছুক্ষণ তুলির দিকে তাকিয়ে থাকল।চোখে কাজল দিয়ে এসেছে আজ তুলি। কাজল দিলে সব মেয়েদেরই অনেক বেশি সুন্দর লাগে হয়ত।তুলিকেও লাগছে।তুলি ফুলগুলো নিয়ে অনেক ব্যস্ত।রিক্ত তুলির একটু কাছে গিয়ে, হাত বাড়িয়ে বলল- ফুল গুলো রেখে, একটু হাত দুটো আমার হাতের উপর রাখো।

- কেন?

- রাখো না। পরে বলি।





তুলি রিক্তর বাড়ানো হাতের উপর হাত রাখল। ভাবল রিক্ত বুঝি চেপে ধরবে হাতগুলো। কিন্তু ধরল না। বরং রিক্ত বলল- ৯ ঘরের নামতা পার?

- মানে?

- তুমি ৯ এর ঘরের নামতা পারো?

- পারব না কেন? আমাকে তোমার গাধা ছাত্রী মনে হয়?

- না,না। তা না। দেখো তোমাকে ৯ এর ঘরের নামতা নতুন করে শিখাই। বল, ৯ এর সাথে ১-১০ এর মধ্যে কত গুণ করতে চাও?

- ইমমম... ৩

- আচ্ছা তোমার হাতের আঙুল গুলো মেলে, আমার হাতের উপর রাখো।এখন বাম হাতের, বাম দিকে দিক থেকে, ৩ নং আঙুলটা বন্ধ কর।

- করলাম।

- এখন দেখো তো ,তোমার যে আঙুলটা বন্ধ করে রাখছ। তার বাম পাশে কয়টা আঙুল আছে? আর ডান পাশে কয়টা?

- বাম পাশে ২ টা আর ডান পাশে ৭ টা।

- তাহলে, ৯ এর সাথে ৩ গুণ করলে, ২৭ হয়। তোমার হাতেও ২৭ দেখাচ্ছে।





তুলি অবাক হয়ে রিক্তর দিকে তাকিয়ে রইল।রিক্ত বলল- যদি ৪ দিয়ে গুণ করতে চাও। বাম থেকে ৪ নং আঙুল বন্ধ কর।বন্ধ আঙুলের বাম পাশে ৩ টা, আর ডান পাশে ৬ টা আঙুল আছে।তার মানে ৩৬ দেখাচ্ছে। ৯ আর ৪ গুণ করলে ৩৬। এমন করে ৯ এর নামতা হাতে দেখতে পারবে।





তুলি এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেদিন দেখা হয়, সেদিনই তুলি অবাক হয়। তবে প্রতিটা দিনই নতুন কিছু নিয়ে। তুলির ভাবনায় আসে না, এতো অবাক করে দেওয়া,কি করে সম্ভব?রিক্ত সত্যি অন্যরকম একটা ছেলে।মাঝে মাঝেই ভাবে,সত্যি তুলিকে অনেক ভালবাসে রিক্ত।তুলি সেই কবে বলেছে, যেদিনই ওদের দেখা হবে, চমকে দিতে হবে, অবাক করার মত কিছু করতে হবে। সেই থেকে সত্যিই রিক্ত যে কটা দিন তুলির সাথে দেখা করেছে, ওকে অবাক করে দিয়েছে,কিছু না কিছু করে।

- অবাক হইছ?

- হ্যাঁ অনেক...। কত ছোট একটা জিনিস। কিন্তু কত অবাক করার মতন।আমি এটা জানতাম না। তুমি আসলেই অন্যরকম।একটু বেশিই অন্যরকম। তুমি অনেক ভালবাস আমাকে।আমি যতটা বাসি, তার চেয়েও অনেক বেশি।ওহ, তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।

- কি?

- এই নাও। আমার নিজের হাতের বানানো আমের আচার। মিষ্টি আচার।

-তোমার মত?

- মানে?

- তোমার মত মিষ্টি?

- চুপ। খেয়ে দেখো কেমন হইছে?

- হুম,অনেক টেস্ট।

- না খেয়েই?

- আমি জানি অনেক ভালো হয়েছে। দাও বাসায় গিয়ে খাব।





আচারের বোতলটা রিক্ত নিল। নিয়েই বলল- চল, ফুচকা খাই।

- আবার সেই রাস্তার পাশে?ধুলা বালির মধ্যে?

- দেখো , আমার ভার্সিটির মত এমন, মজার ফুচকা আর কোথাও নেই। ধুলা বালিতে কিছু হবে না।

- চল।





রিক্ত তুলি একই ভার্সিটির আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টে পড়ে। পরিচয় যদিও ফেসবুকে। রিক্ত আর তুলির মাঝে মাঝে কথা হত। রিক্ত অনেক কম কথা বলত। তবে প্রতিদিনই আজব আজব সব কথা বলে তুলিকে চমকে দিত। তুলি না চাইলেও সারাদিন তা নিয়ে ভাবত। একটা মানুষের মাঝে ,অন্য একজনকে মুগ্ধ করার মত কতটা ক্ষমতা থাকতে পারে!! তুলি ওর সাথে কথা বলার আগে বুঝতে পারেনি। পরে জানতে পারল, রিক্ত তুলির ভার্সিটিতেই পড়ে। তারপর একদিন দেখা হল দুজনের।রিক্ত প্রতিটা দিন কিছু না কিছু করে, চমকে দিত তুলিকে।তুলি এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল যে,সারাদিন অতটুকু অবাক হবার জন্য অপেক্ষা করত। একসময় বুঝতে পারল রিক্তকে তুলি ভালবেসে ফেলছে।সারাক্ষণ ওর কথা ভাবে।বুকের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভব হয়, রিক্তকে নিয়ে ভাবলেই। রিক্ত কি করে জানে না। হয়ত রিক্ত তুলিকে নিয়ে ভাবে না। তুলি তো আর রিক্তকে অবাক করার মত কিছু করে না।ভাববেই বা কেন?

সেদিন রিক্ত কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ, করতে লাগলো। তুলির সাথে কোন কথা বলল না সারাদিন। কি যেন একবার বলতে গেল, কিন্তু না বলে চলে গেল। শুধু বলল- "আমার অনেক কষ্ট লাগছে। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। সত্যি কথা বললে আমি একজনকে হারাব।"

বলেই রিক্ত চলে গেল। আর দেখা হল না সেদিন। তুলির খুব মন খারাপ হয়ে গেল।কিছুই ভালো লাগছিল না। খুব রান্না পাচ্ছিল। কি বলতে চাচ্ছিল রিক্ত? রাতে ঘুম হল না। খুব কান্না করল। মানুষ অকারণেই কাঁদে। যার মন যত পবিত্র, সে তত কারণ ছাড়া কাঁদে।তুলি ওর কান্নার কারণ জানে না।খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে রিক্তর সাথে। কিন্তু সাহস হল না। যদি বুঝে ফেলে। কষ্ট বুকের ভিতর ঝমিয়ে রাখায় মানুষ অন্যরকম সুখ পায়। কাউকে কষ্টের কথা বলে দিলে , বুঝতে দিলে, মনে হয় কিছু হারিয়ে গেল। মানুষ কিছু হারাতে চায় না কখনও।





পরদিন সকাল সকাল ভার্সিটিতে চলে গেল তুলি। রিক্তর আসার খবর নেই। অপেক্ষার প্রহর এতো কষ্টের। সময়টার যেন কেউ গলা টিপে ধরে রেখেছে। চলতেই চায় না। দুই ঘণ্টা পর রিক্ত আসল। তুলির সামনে এসে দাঁড়াল। তুলি বলল- আমি তোমাকে একটা কথা বলব।

রিক্ত গতকালের মত মন খারাপ করেই বলল- বল।

- বলব, আগে তুমি বল যে তোমার কাল কি হইছিল?

- আমি মিথ্যা বলতে পারব না। সিরিয়াস সময়ে মিথ্যা বলতে পারি না। ফাজলামির সময় পারি।

- মিথ্যা কেন বলবে? সত্যিটাই বল।

- সত্যি বলা যাবে না। তুমি কি বলবা বল। আমি পরে একসময় বলব।

- আমি কাল সারারাত জাগছি। সকালে অনেক কান্না করছি। আমি একজনকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। কখন কিভাবে বুঝতেও পারি নি। I love you.





রিক্ত হাঁ করে তাকিয়ে রইল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারতেছিল না।

- কাকে i love u?

- তোমাকে।





মাটির দিকে চেয়ে আছে তুলি। চোখ দিয়ে গাল বেয়ে পানি পড়ছে। অসাধারণ লাগছে তুলিকে দেখতে।

- আমিও তোমাকে i love you.বলতে পারি নায় কখনও। সাহস হয় নায়। আমি ভিতু মানুষ। আমি জীবনে প্রথম এতো অবাক হলাম। আমার কথাও এটা। আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করছিল, তোমাকে ভালবাসি কিনা। মিথ্যা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। আর সত্যিটাও বলতে পারছিলাম না।





গুলিয়ে পাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল রিক্ত।

তুলি মুখ তুলে, চোখে পানি নিয়েই হাসি দিল একটা।

- সত্যি?

- আমি সিরিয়াস মুডে মিথ্যা বলতে পারি না।

তুলি চোখ মুছে বলল- আমি তোমার হাতটা ধরি?





রিক্ত আবারও অবাক হল। পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা মুছে বলল- ধর।





তুলি হাত ধরল। রিক্তর মনে হচ্ছিল কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে জ্ঞানশুন্য হয়ে যাচ্ছে, ভালবাসার অন্যরকম অনুভবে। হঠাৎ ই বলল- চল ফুচকা খাই।





সেই প্রথম দিনও ফুচকা, আজ ও। রিক্ত একটুও বদলায় নি।

- তোমার ফুচকা থেকে একটা খাই? আমার গুলো শেষ।





রিক্তর কথায়,তুলির ভাবনায় ছেদ ঘটল।দেখল রিক্ত তুলির প্লেট থেকে ফুচকা নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। ছেলেটা কত যে ফুচকা খেতে পারে। রিক্তকে দেখছে তুলি। আসলেই বদলায় নি একটুও। মাঝে কয়েকদিন বদলে গিয়েছিল। মানে অবাক করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তুলির খুব রাগ হচ্ছিল তখন। তাই বল দিয়েছে- আমাকে যদি তুমি অবাক করতে না পার, আমার সাথে দেখা হলে। আমি আর তোমাকে ভালবাসব না।





সেই থেকে অবিরাম অবাক করা তুলিকে। মাঝে মাঝে মনে হয় তুলির, নাহ ,না করে দেই এমন করতে। জোর করার কি দরকার?কাউকে প্রতিদিন চমকে দেয়ার মত কিছু করা, খুব একটা সহজ কোন কাজ না।

কিন্তু না ও করতে পারে না। ওর এটা ভালো লাগে।

---- ----- -----

তুলির আজ জন্মদিন। কিছু তো করতে হয়। তুলির এক বান্ধবী মুন কে ঠিক করল, কাজটা করার জন্য। একটা ইয়া বড় টেডি বিয়ার কিনে আসছে রিক্ত। রাতের বেলা তো আর তুলির সাথে দেখা করতে পারবে না। তাই মুনের কাছে উপহারটা দিল। দিয়ে বলল, রাত ১২ টার একটু পর যেন দিয়ে, তুলিকে রিক্তর কথা বলে।

মুন তুলির পাশের বাসায়ই থাকে। অনেক বলে কয়ে বাসা থেকে বের হল মুন।তুলিদের বাসার দরজায় নক করতেই তুলির মা দরজা খুলল।

-মুন এতো রাতে মা? আসো আসো।

- না আন্টি। তুলিকে একটু ডেকে দিবেন?

- ওর তো খুব মাথা ব্যথা, ঘুমিয়ে পড়ছে তাড়াতাড়ি।

- ওওও, আচ্ছা। ওর জন্মদিন তো। তাই গিফট।

- বাহ, অনেক সুন্দর তো। তুমি বস মা। ঘরে আসো।

- না আন্টি।আম্মুকে অনেক বলে তারপর আসলাম। চলে যেতে হবে। কাল সকালে আসব আবার। যাই আন্টি।

- আচ্ছা মা।





তুলির মা উপহারটা রেখে দিলেন।





তুলি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে, রিক্তর কলের। তুলিকে উইশ করবে, সবার আগে শুভ জন্মদিন বলবে।আর ঐদিকে রিক্তকে মুন মেসেজ করল, যে উপহারটা দিয়ে এসেছে। তাই রিক্তও অপেক্ষা করছে, তুলির কলের। তুলি বলবে উপহারটা কেমন লেগেছে।নিশ্চয় অনেক অবাক হয়েছে।কিন্তু কেউ কাউকে কল করছে না।দুজনই অপেক্ষা করছে।একসময় তুলির খুব রাগ হল। রিক্ত কি করে ওর জন্মদিন ভুলে গেল? একটা মেসেজ করল রিক্তকে- আমি কখনও এমন ভাবিনি।আমি ভাবতাম তুমি আমাকে অনেক ভালবাস।কিন্তু আমার ধারণা ভুল, তুমি আমাকে একটুও ভালবাস না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মরে যেতে ইচ্ছা করছে।





রিক্ত কলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে, কখন যেন ঘুমিয়ে গেল।ভোর বেলা মেসেজ টা দেখল।রিক্ত বুঝল না আসলে কি হইছে? তাই মেসেজের রিপ্লাই করল- আমি জানিনা, তুমি কেন এমন মেসেজ দিয়েছ। মুনকে দিয়ে পাঠানো আমার উপহারটা, তোমার পছন্দ হয় নি? তুমি তো টেডি বিয়ার অনেক পছন্দ কর।তাই দিলাম। পছন্দ না হলে সরি। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালবাসি। তুমি আমার ভালবাসা না বুঝলে, কিছু করার নেই।আমার ইচ্ছা নেই আর। আমি কি করব জানিনা। হয়ত তোমাকে শেষ বার ,চমকে দেবার মত কিছু করব। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।





তুলি সকালে উঠে মেসেজটা দেখল।ড্রয়িং রুমে গিয়ে , সত্যি একটা অনেক বড় টেডি বিয়ার পেল। দৌড়ে গিয়ে ওটাকে জাপটে ধরল। তুলির মা রান্না ঘর থেকে বললেন, মুন কাল রাতে গিয়ে গেছে ওটা।





তুলি তাড়াতাড়ি রিক্তকে কল করল। ধরল না। কয়েকবার করার পরও না। তুলি জলদি বাসা থেকে বের হয়ে গেল। রিক্তর কাছে যাবার জন্য।





- রিক্ত ভাই কি করেন?

ফ্যানের সাথে দড়ি ঝুলাতে দেখে, ক্যান্টিন এর ছেলেটা জিজ্ঞেস করল।

- ফ্যানটা অনেক দুষ্টামি করে, ওরে বেধে পিটানি দিব। তোর এই জায়গায় কি? যা।





বলেই ঠাস করে জানলাটা বন্ধ করে দিল রিক্ত। দরজা আগে থেকেই বন্ধ।অবশ্য এই দরজা খোলা থাকা বন্ধ থাকা এক ই। এক লাথি মারলেই ভেঙ্গে চুড়ে শেষ। ভাগ্য ভালো বউ নিয়ে থাকে না কেউ এখানে। রিক্ত আর রিক্তর দুই বন্ধু থাকে। ব্যাচেলররা সবসময় সস্তা খুঁজে। সস্তার এই অবস্থা হবেই। ঘুণে ধরা কাঠের দরজা।





ক্যান্টিন বয়টা দৌড়ে গিয়ে জিসান আর রুমেল কে বলল- ভাইয়া আপানাদের রুমমেট কি করাতছে দেখেন। ফ্যান ধরি লাগাইতেছে দরজা জানলা বন্ধ কইরা। আমার লগে কেমন কইরা জানি কথা কইল।

- মানে কি? আবার কি পাগলামি করতাছে ও? ওর আজ কে খবর আছে। ফাজলামি পাইছে? একেক দিন একেকটা ঝামেলা করবে। জিসান চল তো।





জিসান আর রুমেল ছুটে গেল। দরজা বন্ধ। জিসান দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল- ঐ দরজা খুল। দরজা বন্ধ কইরা কি করিস?

- এটা আমার আর তুলির ব্যাপার। এখানে মাথা ঘামাবি না?

- তোদের ব্যাপার মানে? রুমের ভিতর কি তুলিও আছে নাকি? তুলিকে নিয়ে দরজা আটকাইছিস? ছিঃ ছিঃ।

- ঐ চুপ।তুলি থাকবে কেন?কিসব উল্টাপাল্টা বলিস? আমি সুইসাইড করেতেছি। মানে আত্মহত্যা। তোরা যা।

- আরে বলে কি? আর মরবি তো এই রুমে কেন? রুম থেকে বের হ। তুই মরে আমাদের ফাসাতে চাস? তুই মরবি আর আমাদের ফাঁসিতে ঝুলাবি। বাপ, তোর পায়ে পড়ি, রুম থেকে বের হয়ে আয়। তারপর যা করার কর। আমরা তোকে সাহায্য করব, মরার ব্যাপারে। দোস্ত বের হয়ে আয়। এই মাসের ঘর ভাড়াটা অন্তত দিয়ে যা।

- আমি মরতেছি। আমার মানিব্যাগ না। তাই ভাড়া এমনিই পাবি। তোরা যা এখন।





কিছুক্ষণের মধ্যে রুমের সামনে, আরও কয়েকজন এসে জমা হয়ে গেল।সবাই ওদের ব্যাচমেট।একটু পরে তুলি ছুটতে ছুটতে আসল। এসে রুমের সামনে এতো মানুষ দেখে ,বুকের ভিতর ধক করে উঠল।

- জিসান, রিক্ত কোথাও বলতে পার?

- আরে রুমের ভিতর। তোমাদের কি হইছে না হইছে। ও নাকি সুইসাইড করতেছে। ক্যান্টিনের রফিক বলল, ফ্যানের সাথে দড়ি বাধতে দেখেছে। ছিঃ ছিঃ ছেলে মানুষ, গলায় দড়ি দিবে। মান সম্মান বলে কিছু নাই।

- আরে ও রুমের ভিতর আর তোমার এখানে ফাজলামি করতেছ? রিক্ত প্লিজ দরজা খুল। আমি সরি। আমি রাতে তোমার গিফট দেখিনি। এমন পাগলামি করে না। এতোটুকু একটা বিষয় নিয়ে কেউ এমন করে? প্লিজ দরজাটা খুলো।





ভিতর থেকে কোন শব্দ আসল না। তুলির অনেক অস্থির লাগছে। বুঝছে না কি করবে।

হঠাৎ রফিক দৌড়ে এসে বলল- রুমেল ভাই দরজা ভাঙ্গেন তাড়াতাড়ি। আমি জানলার ফাক দিয়ে দেখলাম, রিক্ত ভাই ফ্যানের সাথে ঝুলতেছে। কালো শার্ট পইরা।

তুলির সমস্ত পৃথিবী ঘুরছে। কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। চিৎকার করতে চাচ্ছে।কিন্তু মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে।পুরো শরীর মনে হচ্ছে অবশ হয়ে যাচ্ছে। শুধু একবার বলতে চাচ্ছে- রিক্ত আমি আর অবাক হতে চাই না। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ফিরে আসো। আমি আর কিছুই চাই না তোমার কাছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।





তুলির সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কাঁদতে পারছে না।সমস্ত পৃথিবী ফাঁকা শুন্য লাগছে।রিক্তর বন্ধুরা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে রিক্তকে। রিক্তর সাড়া নেই। এক সময় দরজা ভেঙ্গে ফেলল। সবাই রুমে গেল। তুলিও অনুভূতিশুন্য অবস্থায় অনুসরণ করে রুমে ঢুকল। অবচেতন লাগছে নিজেকে। কি ঘটছে চারপাশে, এটা স্বপ্ন না বাস্তব সব গুলিয়ে যাচ্ছে তুলির। রিক্তর বন্ধুরা রুমে ঢুকে দেখল, কালো প্যান্ট আর নীল জিন্স পরে রিক্ত ফ্যানের সাথে ঝুলছে।তুলির মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে।

" মারা যাবার পর কি মানুষ খাটো হয়ে যায়? রিক্তকে এতো খাটো লাগছে কেন? "- অবচেতন মনেই ভাবল তুলি।





- আরে এইটা রিক্ত না তো। কোলবালিশ। কোলবালিশকে জামা প্যান্ট পরিয়ে ঝুলিয়ে রাখছে।





চিৎকার করে বলে উঠল রুমেল। আর তখনি খাটের নিচ থেকে বের হল রিক্ত।

- এই রুমে এতো মানুষ কেন? যাও যাও সবাই যাও।





সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে রিক্তর দিকে। শুধু জিসান রাগি রাগি মুখে।

- কি ব্যাপার? দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা দেখতেছিস তোরা? যা তো এখন। বেচে আছি। জাস্ট মজা করছি। মজা শেষ এখন যা সবাই। এটা আমার আর তুলির ব্যাপার।





সবাই চলে গেল। রুমে শুধু রিক্ত, জিসান , রুমেল আর তুলি। তুলি কি হচ্ছে বুঝতে এখনও সময় লাগছে।

- তোরাও যা না দোস্ত।





জিসান আর রুমেলকে বলল রিক্ত।

- দাড়া তোর ব্যাবস্থা রাতে করতেছি। এখন তুলি আছে। ভাবির সামনে কিছু বললাম না। টাকা দে, দরজা কিনে নিয়ে আসতে হবে।

- তোরা নিয়ে আয়। আমি টাকা দিয়ে দিব পরে।





রাগে বক বক করতে করতে জিসান চলে গেল। সাথে রুমেল।





তুলির সামনে গিয়ে রিক্ত দাঁড়াল। দেখতে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে তুলিকে।

- অবাক হইছ?





কিছু বোঝার আগেই গালে একটা চড় পরল রিক্তর। গালে হাত দিতে না দিতেই জড়িয়ে ধরল তুলি রিক্তকে। অঝরে কাঁদছে তুলি। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

- কি হইছে? এই পাগলি, কাঁদছ কেন?

- তুমি এমন কেন করলা? আমার কষ্ট হয়না? আমি না হয় একটা ভুল করছি, তার জন্য এভাবে শাস্তি দিতে হবে?

- আমি তো তোমাকে অবাক করতে চাইছিলাম শুধু।

- খবরদার! আর কখনও যদি আমাকে অবাক করার চেষ্টা করছ, তোমার খবর আছে। তুমি জানো না ,তুমি কষ্ট দিলে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করে?আর অবাক করতে হবে না আমাকে। শুধু ভালবাসতে হবে। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না।





আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুলি। কারও স্পর্শ এতো মধুর হতে পারে, রিক্তর জানা ছিল না। তুলি এখনও কাঁদছে।

- কান্না থামাও না। আমি তোমাকে ছেড়ে কই যাব বল? আমি তোমার পাশে আছি তো সবসময়। আর এখন ছাড়, দরজা ভাঙ্গা দেখছ?





তুলি রিক্তকে ছেড়ে দিল। তুলি বলল- চল ফুচকা খেতে যাই।

- ধুলা বালির মধ্যে?

- হ্যাঁ চল, আজ আমি তোমাকে খাওয়াব।





রিক্ত অনেক সাহস করে তুলির হাত ধরল। তুলি রিক্তর দিকে তাকাল। রিক্ত বলল, তুমিই আমাকে বেশি ভালবাস। আমার চেয়ে।

- না দুজন দুজনকে , সবটুকু দিয়ে ভালবাসি।





দুজন হেঁটে চলছে। যাচ্ছে ভার্সিটির সামনের ফুচকার দোকানের দিকে।তুলি হঠাৎ বলল- এই তোমার কোলবালিশ নামাবে না?

- থাকুক না, কেউ এসে দেখে অবাক হোক।





ভালবাসা শর্ত মেনে হয় না। কিছু জিনিসে ভালবাসা আঁটকে থাকলে, সেটা ভালবাসা না। ভালবাসার কারণ জানতে নেই। অজান্তেই ভালবাসতে হয়, ভালবেসে যায়।ভালবাসার কারণ জেনে গেলে, ঐ জিনিস হারালে, ভালবাসাও হারিয়ে যায়।যখন থেকে বুঝতে শিখে, ভালবাসি। কেন ভালবাসি? এর উত্তর যখন জানা থাকে না, তখন সেটা সত্যিকারের ভালবাসা।



( গল্পটি অনেক আগের লেখা। আমার একেবারে প্রথম দিকের। ব্যস্ততার কারণে নতুন লেখা না দিতে পারাতে, পুরাতন গল্পটা পোস্ট করলাম। যদিও ব্লগে প্রথম দেয়া গল্পটা। )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.