নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবে মন বলে

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

জাহিনের স্বভাব চরিত্র ইদানীং খুবই খারাপ হয়ে গেছে। চোখ নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকে।তাকিয়ে থাকার জায়গা গুলোও নির্দিষ্ট।এখনও তাকিয়ে আছে, সামনে মহিলা সিটে বসা মেয়েটার দিকে।গোলাপি রঙের কামিজ আর জিন্স পরা মেয়েটা। বার বার তাকাচ্ছে জাহিন। একটু পর পর চোখাচুখি হচ্ছে।মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।তবে জাহিনের ভালোই লাগছে।জাহিন একটা মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে, এটা ঐ মেয়ের জন্য সৌভাগ্য। জাহিনের মতে, ছেলেরা মেয়েদের দিকে তাকালে, মেয়েদের ভালোই লাগে।একটা কুৎসিত মেয়ের দিকে, ছেলেরা তাকায় না। ফ্যাল ফ্যাল করে শরীর দেখে না।একটা মেয়ে সুন্দরী হলেই তার দিকে তাকায়। সামনে দিয়ে তাকায়। পিছন থেকে তাকায়। জাহিনও তাকায়। আর জাহিন দেখতে সুপুরুষ।জাহিন কোন মেয়ের দিকে তাকাক, এটা যে কোন মেয়েই চাইবে। জাহিন মনে মনে চাচ্ছে, মেয়েটার পাশে যদি বসতে পারত।দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাই ভাবছে।ঢাকার বাসগুলোতে মেয়েদের বসার সু ব্যবস্থা থাকলেও, ছেলেদের জন্য কোন সুবিধা নেই। সুন্দরী মেয়েগুলো সব মহিলা সিটেই বসে।জাহিনের মত ছেলেদের, দেখা ছাড়া আর কাছাকাছি যাবার মত সৌভাগ্য হয় না।তবুও আজ বোধহয় সৌভাগ্য হল। এক মহিলা নেমে গেছে। বাসে দাড়িয়ে থাকা আর কোন মহিলা নেই। জাহিন হুট করে মেয়েটার পাশে বসে পড়ল।বসেই নিজের দামী মোবাইলটা বের করে টিপাটিপি শুরু করল। মেয়েটাকে দেখাবার জন্য।কিন্তু মেয়েটা জাহিনের দিকে তাকাচ্ছে না। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।জাহিন একটু কাশি দিল, মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। মেয়েটা তাকাতেই বলল, আপনার কাছে পানি হবে?

মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, আমাকে বললেন?

- হ্যাঁ। খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।

- আছে।



মেয়েটা ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করে দিল। ছেলেদের কাছে পানির বোতল থাকে না। থাকলেও তা, ছাল তোলা সেভেন আপ অথবা মাউন্টেন ডিউ এর বোতল। আর মেয়েদের কাছে থাকে ,আলাদা করে কেনা সুন্দর পানির বোতল। এই মেয়ের কাছেরটাও তেমন। মেয়েটার মতই সুন্দর।বোতলের গায়ে ফুল আঁকা।জাহিন পানির বোতল হাতে নিয়ে, পানি খাবার জন্য বোতল ধরে টানাটানি করছে। তবে কিভাবে খুলতে হয় বুঝতে পারছে না। মেয়েটা একটু বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে বলল, আমাকে দিন। খুলে দিচ্ছি।

জাহিনের থেকে বোতল নিয়ে, মুখা খুলে আবার দিল। জাহিন পানি খেল। মুখ লাগিয়ে না। মেয়েটা নিশ্চয় মুখ লাগিয়ে পানি খায় বোতলটায়। এখন জাহিনও যদি এখন মুখ লাগিয়ে খায়, মেয়েটা রাগ করবে। বাসায় নিয়ে বোতল সাবান দিয়ে ধুয়ে, তারপর এই বোতলে পানি খাবে। নয়ত জানালা দিয়ে ফেলে দিবে বোতল। এর চেয়ে একটু ভদ্রতা দেখিয়ে মুখ না লাগিয়ে খাওয়াই ভাল। জাহিন পানি খেয়ে বলল, আসলে ঝাল মুড়ি খেলাম তো। হাতে তেল লেগেছিল।তাই মুখা খুলতে সমস্যা হচ্ছিল।

- আচ্ছা ব্যাপার না।

- আপনাকে ধন্যবাদ।পানিটা অনেক ভাল লাগল।

- ইটস ওকে। আর পানির স্বাদ একই রকম থাকে।

- আরে আপনি তো তাহলে জানেনই না। পানি তো অনেক প্রকার। কিছু পানি নোনা, সমুদ্রের পানি। কিছু পানি ভাল। এই ধরনের আমরা যেগুলো খাই। কিছু পানি কালো, নর্দমার পানি। কিছু পানির স্বাদ আমরা জানিনা। তবে বইয়ে পড়ে জেনেছি, সেই পানির স্বাদ কখনও অম্লীয়, কখনও ক্ষারীও।সে পানি অবশ্য শরীর থেকেই বের হয়...।

- ওহ আমি জানি। প্লিজ চুপ করেন একটু।



মেয়েটা মুখের উপর চুপ করতে বলল,এভাবে অপমান। তবে জাহিন অপমান গায়ে লাগায় নি।একটু চুপ করে থেকে বলল, আপনার নাম?

- ঊর্মি।

- বাহ সুন্দর নাম। আমি জাহিন। কোথায় যাচ্ছেন?

- ধানমন্ডি ২৭ এ।

- বাহ, আমিও তো ওখানেই নামব।

- ও আচ্ছা।



জাহিন যদিও ফার্মগেট নামবে। ধানমণ্ডির কথা মিথ্যা বলল। মেয়েটার পাশ থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। ভালোই লাগছে। বাসের ধাক্কায় একটু পর পর শরীরের সাথে শরীরের ছোঁয়া লাগছে।সুন্দরী মেয়ের ছোঁয়া। অন্যরকম ভাললাগা। মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে, আর কি কি বলবে জাহিন। মেয়েটা কিছু বলছে না। সেধে সেধে আর কতক্ষণ কথা বলা যায়? জাহিন আড় চোখে বার বার ঊর্মিকে দেখছে।আর একটু একটু পর নানা কথা বলছে।ঊর্মি বিরক্তি নিয়েও উত্তর দিচ্ছে। ধানমন্ডি চলে আসল। ঊর্মি নামবে,সাথে জাহিনও। ঊর্মি নেমে সোজা হাঁটতে লাগল। পিছন ফিরেও তাকাল না। জাহিন একটু দূর পর্যন্ত পিছনে গিয়ে হারিয়ে ফেলল। যাক মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালোই।ভালোই সময় কাটল।ধানমন্ডি লেকের পাড় দিয়ে হাঁটতে লাগল জাহিন। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। জেনি কল করেছে। জেনি মেয়েটা জাহিনের গার্লফ্রেন্ড। অতি রূপসী বলতে যা বুঝায় তাই।সকাল থেকে একবারও কথা হয় নি। তাই কল করল। আজ আবার ভার্সিটি থেকে স্টাডি ট্যুরে যাবে জেনি। জাহিন কয়েকবার না করল। তবে জেনি যেতে চায়।একটু হালকা ঝগড়া ঝাটির পর জাহিন রাজি হল।জেনির কল ধরে বলল, কি খবর?

- এইতো ভাল। তোমার?

- হ্যাঁ আমারও ভাল। কই আছ এখন?

- এইতো বাসে চড়লাম।

- ছেলে মেয়ে কি এক বাসে?

- হ্যাঁ, কয়েকটা ছেলে মেয়ে। আলাদা বাস নিবে নাকি?

- ভাল তো। বার বার বলছি, যেতে হবে না। তারপরও তোমার ঐ ছেলেদের সাথে লাফালাফি করতে যেতে হবে?

- লাফালাফি মানে? ফ্রেন্ডরা আমরা মজা করব। আর আমি ছেলেদের সাথে লাফালাফি করব এটা কে বলল তোমাকে? আমার বান্ধবী নেই বুঝি?

- হ্যাঁ বান্ধবী আছে। বন্ধুও তো আছে। আর ভার্সিটিতে ছেলে মেয়েরা কি করে আমি জানি।

- কি করে? তুমিও কর নাকি?

- আমি না করি। তোমাদের ক্লাসের ছেলেরা কেমন আমার জানা আছে।

- ছেলেরা যেমন হোক। আমি তো খারাপ কিছু করতে যাচ্ছি না। আমি ছেলেদের সাথে কথা বলি না।

- স্টাডি ট্যুরে ছেলে মেয়েরা ফাজলামি শয়তানি করেই। কথা না হলেও এইদিন করে।

- আমি করব না।

- কত কি করবা না আমি জানি। বারবার মানা করলাম যেতে।

- আজব তো। এমন করছ কেন?

- কেমন করব? হ্যাঁ কেমন করব? তোমাকে না করছি না ছেলদের সাথে যেতে। ছেলেদের সাথে লাফালাফি করবা খুব ভাল লাগবে, তাই না?গায়ের সাথে গা লাগবে...

- ওহ অসহ্য।



জেনি কেটে দিল।জাহিন কল দিতেই নাম্বার বন্ধ। রাগ হচ্ছে খুব।জেনি অন্য কোন ছেলের আশেপাশে থাকুক, একদম সহ্য হয় না জাহিনের।জেনি মেয়েটা দেখতে অনেক বেশিই সুন্দর। আশেপাশের ছেলেরা, জেনির দিকে তাকাবেই। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাবে।জাহিনের এটা ভাল লাগে না। জাহিনের সাথে যখন জেনি হাঁটে,ছেলেরা তাকিয়ে থাকে জেনির দিকে। তা দেখে জ্বলে যায় ভিতরে জাহিনের। সহ্য হবার কথা না। আর জেনি কিনা, ঘুরে ফিরে ছেলেদের আশেপাশে থাকবে? কথা না বলুক ছেলেদের সাথে। তবুও তো ছেলেরা তাকিয়ে থাকে।এটা মানা যায় না। সহ্য করা যায় না। কোন প্রেমিকই সহ্য করবে না। জাহিনের রাগে শরীর কাঁপছে। জেনির নাম্বার ডায়াল করছে, আর চোখের সামনে ভাসছে, জেনি লাফাচ্ছে। বাসের ভিতর, বান্ধবীদের সাথে।আর ছেলেরা হা করে তাকিয়ে জেনিকে দেখছে।একটু পর পর ছেলেগুলো জেনির আশেপাশে আসছে। কথা বলতে চাচ্ছে। বাসের ব্রেকের অজুহাতে, জেনির গায়ে ঢলে পড়ছে। জাহিন আর ভাবতে পারছে না। বুকের বাম পাশে কষ্ট হচ্ছে।রাগে শরীর ঘামছে, আবার ঠাণ্ডাও হয়ে আছে শরীর।সামনে দিয়ে, অনেক জোড়া জোড়া ছেলে মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েগুলো সুন্দরী। তবে জাহিনের সেদিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে না।ঐ সব মেয়ের চেয়ে জেনি অনেক বেশি সুন্দরী।

তবে খানিক আগেই যা করল জাহিন, ঠিক ভুলে গেছে। বাসে মেয়ের পাশে বসল সুন্দরী মেয়ে দেখে।চোখ দিয়ে নানা কিছু দেখল। অবশ্যই ভাল কিছু না। এখন হয়ত সেসবই দেখছে জেনির, অন্য ছেলেরা।ভাল কিছু না।পানির বোতলে পানি খেল। জেনির কাছেও হয়ত এখন কেউ পানি চাচ্ছে। নানা হাসির কথা বলে মেয়েটার সাথে ভাব জমাতে চাইল। এখন হয়ত অন্য কেউ একই কাজ জেনির সাথে করছে। তবুও সান্ত্বনা, জেনি ঠিক নিজেকে ঠিক রাখছে, জাহিনের পাশে বসা মেয়েটার মত।

আমরা নানা কিছু করি,অনেক কিছুই করি। যখন করছি, তা খারাপ লাগছে না।স্রোতে গা ভাসাচ্ছি। কিন্তু একটু গভীর থেকে চিন্তা করলেই, ভাল খারাপের বিচার হয়ে যায়। স্রোতে গা ভাসাতে নেই। প্রতিটা কাজের আগে ভাবা উচিৎ, আসলেই ঠিক করছি তো? ভালবাসার মানুষ থাকলে, ভাবা উচিৎ আমি যে কাজটা করলাম, তা ভালবাসার মানুষ করত যদি? তবে কি হত? কেমন লাগত? তবেই সম্পর্কের শুদ্ধতা থাকে। সম্পর্কে সম্মান থাকে, ভালবাসা থাকে।শুধু ভালবাসি বললেই ভালবাসা হয় না। ভালবাসতে ভাল মন লাগে। ভাল মানুষ হতে হয়। নয়ত সে সম্পর্ক কখনই সম্পর্ক না। ভালবাসা না। যে ভালবাসায় সম্মান নেই, সে ভালবাসা হারিয়ে যাবেই।ভাল সবাই বাসতে পারে, সম্পর্কের শুদ্ধতা সবাই ধরে রাখতে পারে না। এর জন্য সুন্দর মন লাগে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৮

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: আমরা নানা কিছু করি,অনেক কিছুই করি। যখন করছি, তা খারাপ লাগছে না।স্রোতে গা ভাসাচ্ছি। কিন্তু একটু গভীর থেকে চিন্তা করলেই, ভাল খারাপের বিচার হয়ে যায়। স্রোতে গা ভাসাতে নেই।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: :) :)

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:১৭

অপ্রচলিত বলেছেন: গল্পের অন্তর্নিহিত বাণীটা ভালো লাগলো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.