নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাদের সুখ, জানালার দুঃখ

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪

ছাদ থেকে রুমটার ভিতরে স্পষ্ট দেখা যায়।রাতে যখন চারপাশে আলো থাকে না, ছাদেও না। শুধু কয়েকটা ঘরে আলো জ্বালানো থাকে, তখন নিবির ছাদে আসে। অন্ধকার ভাল লাগে, অনেক ভাল লাগে।আর চুপিচুপি ছাদ থেকে ঐ রুমের ভিতরটায় দেখতে।অন্ধকারে ছাদের রেলিং ধরে অপেক্ষা করে নিবির।কখন মেয়েটা আসবে। বিছানায় শুয়ে কাঁদবে।আর নিবির কাঁদতে দেখবে।এই শহরে এতো মানুষ। নানা লোকের নানা কষ্ট। কারও কষ্ট দেখার সময় কারও নেই। সবাই অনেক ব্যস্ত। নিবিরের কোন ব্যস্ততা নেই। তাই প্রতি রাতে, ঐ মেয়ের কষ্ট দেখে। কাঁদতে দেখে।কারও কান্না দেখতে ভাল লাগে, এটা কোন কথা হল? কিন্তু নিবিরের লাগে। ঐ মেয়ের সাথে নিবিরের কোন শত্রুতা নেই। চিনেও না মেয়েটাকে।তবুও বুকের ভিতর সুখ সুখ লাগে, কাঁদতে দেখতে।

সেদিন নিবির ছাদে এসে একা একা কাঁদছিল।রেলিং এর উপর বসে। হঠাৎ ভেজা চোখে ঝাপসা আলোয়, একটা মেয়েকে দেখে নিবির। জানালা খোলা, বিছানার উপর শুয়ে। কোলবালিশ বুকের উপর নিয়ে কাঁদে।আর চোখ মুছে। হঠাৎ করেই বুকের ভিতর কেমন যেন লাগে। সুখ সুখ ভাব আসে। হাসে নিবির। অনেক দিন পর হাসে।

এর পরদিন আবার এসে ছাদে মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে। আবারও ভাল লাগে। সারাদিন কেন শুধু নিবির একাই কাঁদবে? আর কারও কেন দুঃখ থাকবে না।সবাই হাসবে, আর ও কাঁদবে, তা হবে না।

ক্লাসে কিছু হলে নিবির হাসলে, রিহান বলে, দাঁতাল রে দাঁতাল।হাসিস না। মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে।

আর নিজের সামনের দাঁতগুলো বের করে, নিবিরের মত করে হাসে। উপহাস করে। নিবিরের সামনে দিয়ে দাঁত উঁচু। তাতে কি? এটা নিয়ে হাসতে হবে? মুখে দুর্গন্ধ বলে অপমান করতে হবে? নিবিরের মুখে কোনভাবেই দুর্গন্ধ নেই, নিবির জানে। সকালে রাতে ২ বার ব্রাশ করে নিবির। চাচার কিনে আনা বিদেশী ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট দিয়ে। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ আসার প্রশ্নই আসে না। তবুও ওসব বলে, সামনে দিয়ে দাঁত উঁচু তাই।

মাঝে মাঝেই নিবিরের কিছু মজার কথা ,বন্ধুরের বলতে ইচ্ছা করে। যা শুনে সবাই হাসবে, আর পিঠ চাপড়ে বলবে, দোস্ত তুই একটা জিনিস রে।

আড্ডায় বসলে সবাই নানা হাসির কথা বলে। তার বেশির ভাগই ক্লাসের মেয়েদের নিয়ে। কোন মেয়ে দেখতে কেমন। কার কি দেখতে কেমন। নানা নোংরা কথা। অনর্গল বলে যায় সবাই। মুখে একটুও বাধে না। নিবিরের এসব ভাল লাগে না। রিনিকে নিয়েও খারাপ কথা বলে। রিনি ভাল মেয়ে। অনেক ভাল।ওকে নিয়ে খারাপ কথায় গা জ্বলে যায়। কিন্তু ওদের থামান যায় না।নিবির তাই কিছু হাসির কথা বলতে চায়। যে হাসির কথা শুনে সবাই হাসবে। নোংরা কথা না। ভাল হাসির কথা। কথা বলতে গেলেই সবাই হো হো করে হাসে।নিবিরের হাসির কথা শুনে না।নিবিরের কথা বলতে গেলে আঁটকে যায়। সোজা কথায় তোতলা। তাই সবাই হাসে।নিবিরকে অনুকরণ করে কথা বলে। নিবির কিছু না বলে, চুপ করে মাথা নিচু করে থাকে। এর পরের সময়টা নিবিরকে নিয়ে হাসাহাসি হয়। রিনিকে নিয়ে বাজে কথায় না।

ক্লাসে সবচেয়ে বোকাসোকা ছেলে মনে হয় নিবির।স্যার কিছু পড়ালে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পরীক্ষার খাতায় কিছুই লিখতে পারে না। কিভাবে কিভাবে যেন এতদূর পর্যন্ত আসল।কলেজ পাস কোনমতে করেছে। এখন কোনভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না।বন্ধুরা সবাই হাসাহাসি করে। কিছু হলেই নিবিরকে নিয়ে হাসাহাসি। নিবিরের বন্ধু নেই কোন।রিনি মেয়েটা কয়েকদিন কথা বলেছে। কিভাবে কিভাবে যেন একটা ভাললাগা চলে এসেছিল মেয়েটার প্রতি।কিন্তু সবাই ঠাট্টা করবে, তাই বলতে পারে নি ভাললাগার কথা। না বলাতে হারিয়ে গেল। ক্লাসের সাকিবের সাথে এখন রিনির সম্পর্ক। নিবিরের সাথে কথা বলুক সাকিব চায় না এটা। তাই রিনি বলল, নিবির, সাকিব চায় না আমি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলি। প্লিজ আমার সাথে কথা বইল না।

নিবির আস্তে করে মাথা নেড়ে বলে, আচ্ছা।

আর কথা হয় না। একজনকে একটু বন্ধু বন্ধু লেগেছিল। একটু একটু ভালবেসেছিল, তাও হারিয়ে গেল।যাক হারিয়ে ।এমন বোকাসোকা ছেলের সাথে না থাকাই ভাল। বাবা মায়ের থেকে অনেক দূরে থাকে নিবির। নিবির দূরে থাকে না। বাবা মা ই দূরে থাকে।সেই ছোট বেলা মা হারিয়ে গেল। কয়েক বছর আগে বাবা। তারপর থেকে চাচার কাছে থাকে। এমন একটা অকর্মণ্য ছেলে। না চাইলেও রাগ উঠে যায়। তাই মাঝে মাঝেই চাচা খুব খারাপ ব্যবহার করেন। চাচী করেন না। তবুও নিবিরের উপর বিরক্ত বেশ বোঝা যায়।

নিবিরের খুব একা লাগে। খুব কষ্ট লাগে। কোন বন্ধু নেই। আপন কেউ নেই। মা থাকলে হয়ত, মা আপন কেউ হত। নাও হতে পারত।এমন অপদার্থ ছেলের জন্য হয়ত নিজেকে অভিশাপ দিত। যাক একা থাকাই ভাল। একা একাই কাঁদে নিবির ,প্রতি রাতে ছাদে এসে। অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে বসে কাঁদে। কেউ এসে বলে না, এই যে ছেলে ঠাণ্ডা লাগবে যে।

কেউ বলে না, বাবা এতো রাতে ছাদে থাকে না।

কেউ বলে না, এই এখন রুমে যাও। না গেলে আমি রাতে খাব না।

অনেককে এই কথাগুলো বলার অনেকে আছে। নিবিরের কেউ নেই। কখনও ছিল না। সবাই হাসে, নিবির কাঁদে। ছাদে বসে কাঁদে।আবার ছাদ থেকে মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে হাসে। যাক কেউ একজন নিবিরের মত দুঃখী। যে প্রতি রাতে কাঁদে।কষ্ট বুকের ভিতর জমিয়ে, রাতের বেলা চোখের জল করে বের করে দেয়। নিবিরের দেখে ভাল লাগে, পৃথিবীতে ও একা দুঃখী না। আরও কেউ আছে। মনে মনে ভাবে, হয়ত নিবিরের চেয়েও মেয়েটা দুঃখী।অনেক বেশি কষ্ট মেয়েটার। হয়ত মেয়েটাও কাউকে ভালবাসে, যে মেয়েটাকে কুৎসিত বলে এড়িয়ে যায়। হয়ত জীবনের প্রতিটা ধাপে ব্যর্থ। হয়ত কিছু না করার পরও, ক্লাসের ছেলে গুলো নানা বাজে কথা বানিয়ে বলে।হয়ত প্রতিদিন রাতে কেউ গায়ে হাত তুলে। কত কষ্ট। আসলেই কত কষ্ট। নিবিরের চেয়ে বেশি কষ্ট। নিবির ঐ মেয়ের চেয়ে সুখী। এই ভেবে নিবির হাসে। সুখী মানুষ তো হাসবেই। কাঁদবে কেন?





নানা মানুষ নানা কষ্ট। কারও কষ্ট দেখার সময় কারও নেই। নিজের কষ্ট বড় ভেবে কেঁদে যাই।ব্যথা পেয়ে যাই। কেউ ছাদে কাঁদে। কেউ বিছানায় বালিশ জড়িয়ে। কেউ কেঁদেই যায়। আশেপাশের অন্য কারও কষ্ট না দেখেই। কেউ কাঁদতে গিয়ে হেসে যায়, লুকিয়ে অন্যের কষ্ট দেখে।ছাদের রেলিং ধরে লুকিয়ে অন্যের কষ্ট অনুভব করে,নিজেকে সুখী ভেবে। আকাশে বাতাসে কষ্ট।কষ্ট ছুঁয়েই জীবন। তবুও আকাশে বাতাসে সুখ। একটু হাত বাড়িয়ে গায়ে মাখার অপেক্ষা শুধু। কেউ পারে লুকিয়ে তা মেখে নিতে, কেউ সারাজীবন কেঁদে যায় বালিশ ভিজিয়ে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.