নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃএকা

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮

পার্কের এই কোণটা অনেক নীরব। চুপচাপ বসে আছে রিনি। ফাঁকা বেঞ্চটার উপর। এক কোণে। চোখ ক্ষণে ক্ষণে ভিজে উঠছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সামনের সব। ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ মুছছে। সাদা ওড়না চোখের কাজলে কাল হয়ে যাচ্ছে। আজ সাদা ড্রেস পরেই এসেছে রিনি। সপ্তাহে তিন দিন দেখা হয় শোভনের সাথে। এর মধ্যে একদিন সাদা ড্রেস পরে আসে রিনি। সাদা ড্রেস পরার বিশেষ কারণ আছে। প্রথম যেদিন শোভনের সাথে দেখা হয়, রিনি সাদা ড্রেস পরা ছিল। শোভন বলে সাদা ড্রেসে নাকি রিনিকে, পরীর মত লাগে। আর রিনি বলে মুখে একটু রাগি ভাব এনে,

- তুমি জীবনে পরী দেখছ?

- না তো।

- পরী তো দেখতে কুৎসিতও হতে পারে। ফালতু কথা বলে আমাকে পাম দিতে হবে না।





রাগে রাগে কথাটা বললেও, রিনির এই কিছু ফালতু কথা শুনতেই ভাল লাগে। তাইতো সপ্তাহে একবার করে সাদা ড্রেস পরে আসে। সাদা ড্রেস পরার পিছনে শক্তপোক্ত কারণ থাকলেও, কান্না করে ওড়না কাজলে কাল করার পিছনের কারণটা, অত বড় কিছু না। তবুও কাঁদছে রিনি। রিনি এতো কষ্ট করে আগে এসে বসে আছে। আর শোভনের কোন খোঁজ নেই। দেরী করছে ,সেটা এক অপরাধ। আরেক অপরাধ হল, রিনির সাথে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলছে। পচা কথা বলছে। রাগ দেখিয়েছে। শোভন ছেলেটা অত সহজে রাগ করে না। তবে রাগ করলে এলোমেলো পাগলের মত কথা বলে। কি বলে না বলে, নিজেই হয়ত জানে না। সেদিন সংসদ ভবনের সামনে বসে আছে। রিনি আর শোভন। এক ডিম বিক্রেতা ডিম বিক্রি করছে। রিনি বলে উঠল, ডিম খাব।

ডিম বিক্রেতা আসল। হাসের ডিম রিনি খায় না। তাই একটা মুরগীর ডিম দিতে বলল। সেদিনও সাদা ড্রেস পরা রিনি। দেখতে পরীর মত লাগছে। ডিম বিক্রেতাও হা করে তাকিয়ে পরী দেখছে। জীবনে মেয়ে দেখেনি এভাবে তাকিয়ে আছে। আর এক মনে ডিম ছিলছে। রিনি সামনের সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে। আর শোভন ডিম বিক্রেতার দিকে। রাগ হচ্ছে খুব শোভনের। ওর প্রেমিকার দিকে অন্য কেউ এভাবে তাকিয়ে আছে। এটা মানা যায় না। সাদা ড্রেসে পরীর মত লাগে রিনিকে। পরী দেখবে শোভন। এই ডিম বিক্রেতা কেন?

শোভন একটু রাগে রাগে বলল, ঐ ডিম ছিলতে এতো সময় লাগে? তাড়াতাড়ি দে।

- ছিলন তো শেষ। দুই জনরে কি দুইডা দিমু?

- আগে আমারে দে।





ডিম বিক্রেতা ডিম শোভনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ডিম মুখে দিয়েই থু থু ফেলল।

- তুই ঠকাস আমাদের। বদ পোলা। আবার ফ্যাল ফ্যাল কইরা আমার বউরে দেখিস।





রিনি হাত ধরে শোভনের বলে, এই কি হল? এমন করছ কেন?

- আরে ঠকবাজ পোলা এইটা। থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।





ডিম বিক্রেতা কাচুমাচু হয়ে বলে, কি করলাম আমি?

- কি করছিস? আবার জিজ্ঞেস করিস? মরা মুরগীর ডিম খেতে দিস আমাদের?

- কি বলেন?

- আমি কি বলি না? বদমাইশ।





রিনি শোভনের হাত আরও শক্ত করে ধরে বলে, এই থাম। এসব কি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে? মরা মুরগী ডিম দেয় নাকি? আজব। কি হইছে?

- না দিক। তুমি আমার দলে না ঐ বদের দলে?

- তোমার দলে।





ডিমওয়ালা ছেলেকে ডিমের টাকা দিয়ে, রিনি বলল, এই, যা তুই।





ডিমওয়ালা চলে গেল। রিনি আস্তে করে চোখ রাখে শোভনের চোখের দিকে। হাত ধরেই বলে, এই কি? এমন পাগলামি কর কেন?

- ঐ ছেলে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে কেন?

- হিহি, ও এই ব্যাপার? এতো লাগে?

- লাগবে না? ভালবাসি,লাগবেই তো।

- আর রাগলে কি সব বল এসব? একটু মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পার না?

- আচ্ছা রাখব। আর এমন করব না।

- মনে থাকে যেন।

- থাকবে।

- এই তো, লক্ষ্মী ছেলে।





এমন নানা সময় রাগ উঠলে আবল তাবল কথা কথা বলে। কি বলে হয়ত নিজেও বুঝে না। কি করে নিজেও জানে না। সেদিন রাস্তা দিয়ে যাবার সময়, কোন ছেলে যেন কি বলল, পিছন থেকে। রিনিকে নিয়ে। রিনি শুনেও নি ঠিক মত। শোভন ঠিকই শুনেছে। চিৎকার করে ছেলেটার দিকে এমন ভাবে এগিয়ে গেল, ঐ ছেলে ভয়ে আগেই শেষ। তার উপর আবার হাতে ইটের টুকরা। তাই নিয়ে তাড়া করছে শোভন। ছেলে কোন মতে পালাল। আর শোভন এদিকে এসে, রাগে কাঁপছে। কি বলছে জানতে চাইলে, শোভন বলে না। তবে রিনি জানে, হয়ত অনেক রাগ করার মত কিছু। নয়ত এতো সহজে শোভন রাগে না। আজও রাগে এলোমেলো কথা বলল। রিনি রাগের মত কিইবা করেছে? আসতে দেরী হওয়াতে কয়েকবার কল করেছে। কল করে না হয় একটু ঝাড়ি দিয়েছে। বলেছে, এতো দেরী হয় কেন? কোন মেয়ের সাথে আছ?

তাতেই এমন করতে হবে? শোভনকেও ঝাড়ি দিয়ে কথা বলতে হবে? পচা কথা বলতে হবে? রাগ দেখাতে হবে? ছিঃ ছিঃ এমন পচা কথা কি করে শোভন মুখ দিয়ে বলল, ভাবতেই অবাক লাগছে। কি নোংরা কথা। এতোটা নোংরা কথা শোভন বলতে পারে? খুব কষ্ট হচ্ছে রিনির। চোখ বেয়ে এমনিই পানি পড়ছে। কাজল দেয়া চোখ দিয়ে। কষ্ট পেতে ইচ্ছে করছে না রিনির। শোভনের উপর খুব রাগ হচ্ছে। শোভনকেও কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে। কষ্ট গুলো কারও জমিয়ে রাখতে ভাল লাগে, কারও ভাল লাগে ছড়িয়ে দিতে। রিনি দ্বিতীয় দলের। একা একা কষ্ট পুষে রাখার মত মেয়ে রিনি না। রিনি কষ্ট ছড়িয়ে দিবে। শোভনের ভিতর। কিভাবে ছড়িয়ে দিবে তাই ভাবছে। তবে কোন উপায় পাচ্ছে না।





পার্কের যে কোণটায় রিনি বসে আছে, তার ঠিক সামনে একটা বেঞ্চে, একা একটা ছেলে বসে। মাথার চুল গুলো এলোমেলো, উস্কু খুস্কু। এমন চুল থাকে পাগলদের। তবে এই ছেলেকে পাগলের মত লাগছে না। হাতে সিগারেট নিয়ে ,অনেকক্ষণ ধরে মাথার উপরের কাঠ গোলাপ গাছে কিছু দেখছে। সিগারেটে টান দিচ্ছে না। পুড়েই যাচ্ছে। পাশে একটা ব্যাগ রাখা, তাও খুব ময়লা, তেল চিকচিকে। কেনার পর থেকে কোনদিন যত্ন করা হয়নি বোঝাই যায়। ময়লা ধুলায় পড়ে ছিল অনেক দিন। এমন হতে পারে, এই ছেলে পুরাতন এক ব্যাগ কিনেছিল। গায়ে পরা হাফ হাতা শার্টটাও পুরাতন। শার্টের গায়ে নানা রকম ফুল আকা, তার ভিতর বেশীর ভাগই হলুদ ফুল। এই শার্টও পরে কেউ? এমন জিনিসও কারও পছন্দ হয়?

- আপনার পাশে বসা যাবে?





রিনি আস্তে করে পাশে দাড়িয়ে বলল। ছেলেটার মধ্যে কোন ভাবগতিক নেই। যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে। এবার রিনি ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে বলল, এই যে, শুনছেন? আপনার পাশে বসা যাবে?





ছেলেটা মুখ নামিয়ে, হাঁ করে কিছুক্ষণ রিনির দিকে তাকিয়ে রইল। রিনি মুখে হাসি ফুটিয়ে সামনে দাড়িয়ে আছে। একটু পর বলল, আমাকে বললেন কিছু?

- আরে হ্যাঁ, আপানাকে। এই নিয়ে তিন বার বললাম। আপনার পাশে বসা যাবে কিনা।

- আমি কি আপনাকে চিনি?

- না।

- আপনি আমাকে চিনেন?

- না।

- তাহলে আমার পাশে বসবেন কেন?

- এমনি বসব। বসি একটু?





বলেই পাশে বসে পড়ল রিনি। মুখে হাসি রেখেই বলল, আপনার নাম কি?

- আপনি কি কোন সাংবাদিক? পার্কে পার্কে একা একা বসে থাকা, মানুষের উপর রিপোর্ট করছেন?

- না, আমি রিনি। আপনি?

- মঞ্জু।

- মজনু? লাইলি মজনুর মজনু?

- মজনু না, মঞ্জু।

- ঐ হল। আপনার কি এই একটাই নাম? ভাল নাম নেই কোন?

- এটাই আমার ভাল নাম। আর একটা পচা নাম আছে। ওটা আপনাকে বলব না।

- আচ্ছা। আপনি সিগারেট খাবেন না? নাকি এভাবেই পুড়বেন?





মঞ্জু সিগারেটে টান দিয়ে একটা বলল, খাব।

- এটা খেয়ে লাভ কি?

- আপনাকে বলব না।

- আচ্ছা। বলতে হবে না। আপনার সাথে কথা বলব কিছুক্ষণ, কিছু মনে করবেন না তো?

- আমার সাথে কথা বলার কি আছে?

- এমনি বলব, আপনাকে দেখে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। আর আপনি তো একাই বসে আছেন।

- আচ্ছা বলেন, কি বলবেন?

- আপনি উপরে তাকিয়ে কি দেখছিলেন? কাঠ গোলাপ খুব পছন্দ আপনার?

- আমার ফুল ভাল লাগে না। কাক বসে আছে, তা দেখছিলাম।

- কাক ভাল লাগে?

- যা ভাল লাগে, তাই দেখতে হবে, এমন কোন কথা নেই।

- আপনার গায়ের জামাটা কি আপনার খুব পছন্দ?

- হ্যাঁ পছন্দ।

- পড়াশুনা করেন?

- না, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাস করিনা।

- কেন?

- পড়ালেখা করে কি হবে? যারা পড়ালেখা করে, তারাও বেঁচে আছে। যারা করে না তারাও।

- তাই বলে পড়বেন না?

- না পড়ব না। এই যে ঘোরাঘুরি করি, রাস্তায় রাস্তায়। সেই বেশ। পড়ালেখা করে এতো টাকা খরচ করে, বেকার থাকার চেয়ে, ঘুরে ফিরে বেকার থাকা ভাল।

- গার্লফ্রেন্ড আছে আপনার?

- মেয়েদের আমার পছন্দ না, প্রেমিকা হিসেবে। এরা বন্ধু হিসেবে অসাধারণ।

- আপনার তাই মনে হয়?

- হ্যাঁ অবশ্যই। আর ছেলেরা, প্রেমিক হিসেবে ভাল, বন্ধু হিসেবে না। বন্ধু হিসেবে ছেলেরা থাকতে চায় না, প্রেমিক হতে চায়। আর মেয়েরা প্রেমিকা হতে চায় না, বন্ধু হিসেবেই থাকতে চায়। একটা ছেলে বন্ধু হয়ে, প্রেমিক প্রেমিক ভাব দেখায়। আর মেয়ে প্রেমিকার মত আচরণ করে বলে, আমি শুধুই বন্ধু।

- এতো জটিল কথা আমার ভাল লাগে না। জীবন যেমন চলার চলবে।

- আপনাকে ভাল লাগাতে বলছি না তো। জীবন আসলেই চলে যেমন চলছে তেমন।

- আপনার চুল এমন উস্কু খুস্কু কেন?

- আমার পাগল পাগল থাকতে ভাল লাগে।

- কেন?

- কারণ পাগল ছাড়া জীবন চলে না। কেউ আপনার জন্য পাগল। আবার আপনি কারও জন্য পাগল। পাগলের পাগলামিতেই জীবন চলছে। তবে আমি পাগল পাগল থেকে, ভাল থাকছি। পাগলরা জীবনে অনেক সুখী। আমার সুখ ছুঁয়ে দেখতে ভাল লাগে। যা সবাই পারে না। এমনকি সব পাগলেও না।

- আপনি এতো জটিল করে কথা বলেন কেন? আপনার সব কথা বুঝি না আমি।

- সব কথা বুঝতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি কি নিজেকে সুখী ভাবেন?

- অবশ্যই।

- কিন্তু আপনি সুখী না।সুখী মানুষরা কাঁদে না। আপনি খানিক আগে কেঁদেছেন। চোখের কাজল লেপটে আছে সে কারণে। সুখী মানুষরা কাঁদে না, কাঁদলেও লুকিয়ে। এরা দুঃখ গুলো বাচিয়ে রাখে না।

- আমিও দুঃখ জমিয়ে রাখি না। দুঃখ হচ্ছিল বলেই অপরিচিত আপনার সাথে কথা বলছি। আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।

- আচ্ছা। তাহলে আপনার সাথে আমি কথা বলব না।

- কেন?

- আমি নিজে সুখী থাকার জন্য বেঁচে আছি। কাউকে সুখী রাখার জন্য না।

- ওহ, আপনি এতো এমন করে কথা বলেন কেন?

- হাহা, সুখী থাকার জন্য। যা বলছি, তার সবটুকু আমি বুঝছি, মানছি, আমার ভিতর ধারণ করছি। নিজের মত চলছি। অন্য কেউ বুঝতে পারছে না, এটাও একটা সুখ। নিজের সবটুকু কখনও জানতে দিতে নেই কাউকে, সবটুকু বুঝতেও দিতে নেই।

- হুম বলেন, আমি শুনি। আপনার কথা শুনতে ভাল লাগছে।

- আমি আর কিছু বলব না। চলেন পাখি দেখি। কাক পাখি। কুৎসিত জিনিস দেখলে নিজের উপর সম্মান বাড়ে, নিজেকে সুন্দর লাগে। নিজের প্রতি সম্মান না থাকলে, মানুষ গুলো হতাশায় ডুবে।

- আপনি জটিল কথা বললেও, সুন্দর কথা বলেন। এখন মনে হচ্ছে সাংবাদিক হলে ভাল হত। আপনার কথা গুলো টুকে রাখতাম।

- সব কথা পাতায় পাতায় লেখা থাকলে মানায় না। মন থেকে কিছু বের হয়। সেসব, খাতায় পাতায় থাকে না।

- আচ্ছা ঠিক আছে। চলেন আপনার কাক পাখি দেখি।





কাঠ গোলাপ গাছে তাকিয়ে, কাক দেখছে রিনি আর মঞ্জু। সাদা হলুদের অপরূপ ফুল গুলোর পাশে , অসুন্দর কাক। দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব নেই। কাক আর কাঠ গোলাপের। অমিলে ভরা। তবুও পাশাপাশি বসে আছে। বাতাসের সাথে একই ঢঙে ঢুলছে। রিনি আর মঞ্জুর মতই।

সামনে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে, রিনি আর মঞ্জুর। কাক দেখার ব্যাঘাত করতে।

- এই এখানে তুমি কি কর?





রিনি সামনে তাকিয়ে , আলতো করে একটা মিষ্টি হাসি দিল। শোভন এসেছে। এসে রিনির সামনে দাঁড়িয়েছে।

- আমার তো এই পার্কেই থাকার কথা ছিল।

- উনি কে?





মঞ্জুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে বলল শোভন। রিনি আবার হেসে বলল, ও ও, এ আমার বন্ধু। নাম মজনু।





মঞ্জু একটু নড়েচড়ে বসে বলল, মজনু না, মঞ্জু।

- ঐ হল।





শোভন হাত বাড়িয়ে দিল মঞ্জুর দিকে। মুখে শক্ত একটা ভাব নিয়ে। রাগ হচ্ছে খুব। নিজের গার্লফ্রেন্ড, পার্কে একটা পাগল গোছের লোকের সাথে বসে আছে। বসে বসে আবার পাগলের মত আকাশ দেখছে। এটা দেখে রাগ হবেই। রাগ হবার কথাই। মঞ্জু একটু শুকনো হাসি হেসে , শোভনের সাথে হাত মিলাল। হাত মিলিয়ে বলল, এতো রাগ হবার কিছু নেই ভাই। আপনার প্রেমিকাকে আমি চিনি না। শুধু নামটা জানি, রিনি। একটু আগেই পরিচয় তার সাথে। মাঝখানে ব্যাগ রেখে, বসে ছিলাম দুজন। আপনার আসার দেরী হওয়াতে, সে খুব বিরক্ত হচ্ছিল। তাই আমার সাথে আবল তাবল কথা বলল। আর শেষ মুহূর্তে কাক দেখছিলাম। ঝগড়া ঝাঁটি ভাল না, ভাই। খুনসুটি এক জিনিস, ঝগড়া এক জিনিস। খুনসুটি ভালবাসা বাড়ায়, ঝগড়া ভালবাসা কমিয়ে দেয়। যান, দুজনে মিটমাট করে নিন। আর আপনি প্রেমিক মানুষ, ভাল মানুষ। আমি বেশী হলে বন্ধু, খারাপ মানুষ। আসলে আমি বন্ধুও না। কিছু না ওনার।





শোভন কিছু বলছে না, একটু লজ্জাই পেল। রিনি উঠে গেছে মঞ্জুর পাশ থেকে। শোভনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আমার সাথে অমন করছ কেন? আমাকে পচা কথা বলছ কেন? বলছ কেন তুমি সত্যিই মেয়ে নিয়ে ঘুরছ? তাই তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য, এর সাথে কথা বলছি।

- আচ্ছা ভুল হইছে। মাফ চাচ্ছি। আর হবে না এমন। এখন চল এখান থেকে।

- আচ্ছা।





রিনি শোভনের হাত ধরল। হাত ধরে চলে যাচ্ছে। আবার একটু ফিরে, মঞ্জুর দিকে এসে বলল, ধন্যবাদ, সময় দেবার জন্য, আপনার কথা গুলো মাথায় রাখব, মজনু।





মঞ্জু এবার আর নাম শুধরে দিল না। রিনি শোভনের হাত ধরে যাচ্ছে চলে। ঝগড়া গুলো খুনসুটি হবে। ভালবাসা আরও বাড়বে। কষ্ট গুলো হারিয়ে যাবে। হয়ত দুঃখের সাথে পাল্লা দিতে হবে না। এমনিই দুজনের ভালবাসায় সুখ ধরা দিবে।

মঞ্জু আবার কাঠ গোলাপ গাছের দিকে তাকাল। এখন আর কাক নেই। অন্য একটা পাখি এসে বসেছে। শালিক পাখি। এই পাখিগুলো জোড়া জোড়া থাকে। কিন্তু এই শালিক একা। মঞ্জুর মত একা। একা একা সুখী কিনা শালিক পাখিটা জানে না। তবে মঞ্জু সুখী। একা একাই সুখী। কষ্ট গুলোকে ভিড়তে দেয় না আশে পাশে। দু দিন আগেই টুসি, চলে গেল জীবন থেকে। ভালবাসার মানুষ পেয়েছে। হাসান নামে এক ছেলের সাথে, ভালবাসা হয়েছে। এখন নাকি আর লাগেনা মঞ্জুকে। বন্ধু ছিল টুসির মঞ্জু। কিন্তু ছেলে মানুষ মঞ্জু, ঠিক নিজেকে ভালবাসার মানুষ ভেবে বসে ছিল। আর টুসি ভালবাসার মানুষের মত, কাছে এসে, ভালবেসে, চলে যাবার আগে বলে দিল, আমরা শুধুই বন্ধু ছিলাম। কষ্টের সময়ের সঙ্গী ছিল মঞ্জু। সুখের সময় কেন যেন দরকার হয় না ওকে।

কিছু মানুষ জীবনে আসে, সারাজীবন পাশে থাকবার জন্য। হাত ধরবার জন্য, ভালবাসবার জন্য। রিনির জীবনে শোভন হয়ত তেমন কেউ। টুসির জীবনে হাসান। আর কিছু মানুষ ক্ষণিকের জন্য, এদের সারাজীবন পাশে রাখা যায় না। এরা শুধু পরিচিতের খাতায় নাম বাড়ায়। মঞ্জু তেমন কেউ। রিনির মত কেউ নাম ভুল বলে, একসময় ঠিক ভুলে যাবে। টুসির মত কেউ, বন্ধু ভেবে, একটু সময় নিয়ে ভুলে যাবে। পরিচিতের খাতায় নাম বাড়ান মানুষগুলো, স্মৃতির পাতায় থাকে না। বিস্মৃতিতে হারিয়ে যায়। মুছে গিয়ে অপরিচিত হয়ে যায়। তবুও জীবন গুলো থামে না। কাউকে ভালবেসে জীবন চলে। কারও হাত ধরে জীবন চলে। কাঠ গোলাপের গাছে, কাক বা একা শালিক দেখেও জীবন চলে। কেউ একা সুখী থাকে, কেউ কাউকে নিয়ে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

কল্পলোকের রাজপুত্র বলেছেন: চমৎকার গতিশীল এবং সাবলীল হয়েছে গল্পটা । বেশ ভাল লাগলো

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। চমৎকার মন্তব্যের জন্য। :)

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল লাগল গল্প।

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

মামুন রশিদ বলেছেন: ভাল লেগেছে গল্প ।

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালো
শুভেচ্ছা থাকলো

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.