নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃঅবিশ্বাস বিশ্বাস

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

- ভাইয়া, আপনার কাছে ৫০০ টাকা ভাংতি হবে?





আরিফ একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, আমাকে বললেন?

- হ্যাঁ , আপনাকে। থাকলে প্লিজ একটু দিবেন। খুব দরকার।

- আমার কাছে নেই।





বলেই আরিফ হাঁটতে লাগল। মেয়েটা বোধহয় দাড়িয়ে আছে এখনও। আবার পিছন দিকে ডাক দিল মেয়েটা।

- একটু শুনবেন?

- জ্বি বলেন।

- একটু উপকার করবেন?

- কি উপকার?

- আপনার কাছে ২০ টাকা হবে? সত্যি দরকার ছিল খুব।





আরিফ চুপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মেয়েটার দিকে। অনেক সাজগোজ করা মেয়েটা। কোথাও যাচ্ছে কিনা কি জানি। ঢাকায় মেয়েরা বাহিরে বের হলে, এমনিতেই অনেক সাজ করে বের হয়। আরিফ যখন ভার্সিটিতে ক্লাস করত, সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনমতে ক্লাসে যেত। কোনদিন ব্রাশ না করেই, মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে। কোনদিন প্রাকৃতিক কাজে সারা না দিয়েই। কোনদিন ঘুমাতে ঘুমাতে। আর মেয়েগুলো দেখা যেত, মেকআপ করে সেজে গুজে আসছে। প্রতিটা মেয়েই। কেউ কেউ গোসল করে ভেজা চুলে। মাথায় আসে না, কিভাবে সম্ভব? এতো সময় কোথা থেকে পেত? মুক্তিও ওভাবে সেজে গুজে আসত। অনেক স্নিগ্ধ লাগত দেখতে মেয়েটাকে। আরিফ ভার্সিটিতে যেত ঐ মেয়েটাকে দেখতেই। সকালের মিষ্টি ঘুমের চেয়েও, মুক্তি মিষ্টি। চোখে খুব শান্তি লাগত।

আরিফের পকেটে এখন এক টাকাও নেই। কিছুক্ষণ আগে এক দোকান থেকে চা খেল, ভিড়ের মধ্যে। চা খেয়ে চলে আসল। টাকা দিল না। দোকানদার টেরও পেল না।

মেয়েরা ভালো হয় না, একদম না। এই মেয়েটাকেও এখন অসহ্য লাগছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরিফ বলল, টাকা লাগবে তো, আমাকে বলতেছেন কেন?

- আমার কাছে ৫০০ টাকার নোট। কিন্তু আমার ২০ টাকার খুব দরকার। কয়েকটা দোকানে বললাম, ভাংতি দেয় না। ১০০ টাকার কিছু নিলে ভাংতি দিবে। কিন্তু আমার টাকাটা দরকার খুব। খরচ করা যাবে না।

- কি ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলেন? টাকা লাগবে তো আমার কাছে চাচ্ছেন কেন? আমাকে দেখে কি খুব বড়লোক মনে হচ্ছে আপনার? এই যে জুতা দেখেন, সেলাই করা। কিনেছিলাম কত করে জানেন? ৬০ টাকা দিয়ে, ফুটপাথ থেকে।

- ২০ টাকা থাকতে হলে বড় লোক হতে হয় না। রাস্তায় আরও মানুষ আছে, কিন্তু কেন যেন আপনাকে দেখে ভদ্রলোক মনে হল, বিশ্বাস করে চাইলাম।

- আমি ভদ্র লোক না। চরম অভদ্র মানুষ। এক বছর আগে ভার্সিটি থেকে বহিস্কার হয়েছি। বুঝতে পারলেন কিছু? আর আমার সাথে কথা বলবেন না। ফাও প্যান প্যান কানের কাছে।

- আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? মেয়ে মানুষের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?

- আমার মেয়ে মানুষ পছন্দ না। আমি এভাবেই কথা বলি।

- কেন পছন্দ না? মেয়েরা আপনাকে কি করছে? বিপদে পড়েছি বলেই তো আপনার কাছে একটা সাহায্য চাইলাম।

- আমি কোন মেয়েকে সাহায্য করি না। পৃথিবীতে সবচেয়ে স্বার্থপর জাতি হল মেয়ে জাতি। এরা স্বার্থ ছাড়া কখনও কোন ছেলের আশেপাশে যায় না।

- আজব তো। আপনি এভাবে সব মেয়েকে খারাপ বলছেন কেন?

- কারণ সব মেয়েই এমন। এরা ভালবাসতে জানে না। মানুষকে সম্মান করতে জানে না। ভাল কিছু চিনেও না। চিনে শুধু স্বার্থ , জানে শুধু স্বার্থ।

- চুপ করেন। আপনার টাকা দিতে হবে না। সরি আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আমি আসি।

- জ্বি ধন্যবাদ। আসেন আপনি, দয়া করে।





মেয়েটা চলে গেল আরিফের সামনে থেকে। প্রচণ্ড রাগে হাঁটতে হাঁটতে। মেয়েরা রাগলে চেহারায় অন্য রকম একটা ভাব চলে আসে। কাউকে রাগলে খুব বিচ্ছিরি লাগে। কাউকে রাগলেও অনেক সুন্দর লাগে। একটা বাচ্চা ভাব ফুটে উঠে। দেখে মনে হয় এখনি কেঁদে দিবে। মুক্তি মাঝে মাঝে রাগলে এই বাচ্চা ভাব ফুটে উঠত। মাঝে মাঝে না প্রায় প্রতিদিনই রাগ করত মুক্তি। ক্লাসে সারাক্ষণ মুক্তিকে দেখত আরিফ। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে। দেখতে দেখতে সময় গুলো কখন যেন কেটে যেত। অনেক সময় ক্লাসে এটেনডেন্সও মিস করে ফেলত। তাতে কিছু যায় আসে না। স্যার এর কোন কথাই কানে যেত না। শুধু হাঁ করে তাকিয়ে মুক্তিকে দেখা। সেই বেশ ছিল। দুই তিন গোছা চুল মাঝে মধ্যেই মুখের উপর এসে পড়ত। মুক্তি নরম হাত দিয়ে, চুল গুলো সরিয়ে আবার ক্লাসে মন দিত। মাঝে মধ্যে মুক্তিও ক্লাসে ফাকি জুকি দিত। স্যার এর ক্লাস লেকচার না শুনে, মোবাইলে গুতাগুতি করত সবাইকে আড়াল করে। কিন্তু আরিফ তাও দেখত। প্রথম মুক্তিকে দেখে ভার্সিটির অরিয়েন্টেশনের দিন। ভার্সিটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে আরিফ বিমর্ষ, বিরক্ত হয়ে বসে আছে। কি সব আজে বাজে বক্তৃতা স্যার ম্যাডাম দের। এই করবে তোমরা, ঐ করবে তোমরা। ঘুম চলে আসছিল। ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে, হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে যেন এক মেয়ে এসে বসল আরিফের পাশে। লম্বা শার্ট আর জিন্স। একটু আধুনিক বেশ ভূষা। তবুও দেখে চোখ ফেরাবার মত না। একটা মিষ্টি ভাব মুখে, একটা স্নিগ্ধ ভাব চোখে। এসে পাশে বসেই বলল, '১৩ ব্যাচ?

- হ্যাঁ।

- আমিও। শেষ হয়ে গেল নাকি অনুষ্ঠান? অনেক দেরী করে ফেললাম।

- না শেষ হয় নি। আর হবে বলেও মনে হয় না। যে বক্তৃতা দিচ্ছে একেক জন। মুখও ব্যথা করে না। আ*ল সব।





মেয়েটা একটু বিরক্তি ফুটিয়ে তাকাল আরিফের দিকে।

- স্যার ম্যাডামদের এসব কি বলছ তুমি? খুব খারাপ।





সেই মেয়েটাই মুক্তি। প্রথম দিন আরিফের মুখে একটা কু কথা শুনে, আর আগায় নি কথা বলার ক্ষেত্রে। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, অরিয়েন্টেশনের সেই নিষ্প্রাণ বক্তৃতা। আর আরিফ দেখছিল মুক্তিকে। পাশে বসা মুক্তিকে। দেখতে কেন যেন ভালই লাগছিল। কিছু একটা আছে চেহারার মধ্যে, সেই কিছু একটা কি জানেনা আরিফ। খানিক পর মুক্তির আরিফের দিকে চোখ পড়তেই, একটু ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এভাবে একটা ছেলে তাকিয়ে আছে, বেশ অস্বস্তির ব্যাপার। কিন্তু বলে না কিছু। একটু পর পর আড় চোখে দেখে মুক্তি। দেখে পুরো অনুষ্ঠানেই আরিফ তাকিয়ে ছিল মুক্তির দিকে। অনুষ্ঠান শেষে যাবার সময়, আরিফ একবার ডাক দেয় মুক্তিকে। বলে, তুমি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর।

- স্টুপিড।

রাগি রাগি মুখে বলে মুক্তি। এই রাগি মুখের ভাবের মধ্যে, একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে। আরও মিষ্টি লাগছিল মুক্তিকে। স্টুপিড শুনে হেসে দেয় আরিফ। মুক্তি চলে যায়।

সেই অপলকে দেখা শুরু। এর পরদিন থেকে ক্লাসে দেখা। ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা, শিট ফটোকপির দোকানে দেখা, ক্লাস শেষে বসে থাকার জন্য রাখা বেঞ্চের উপর বসা অবস্থায় দেখা। দেখেই যায় আরিফ। আর মুক্তির একটু সামনে আসলেই বলে দেয়, তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। গতদিনের চেয়েও সুন্দর। দিন দিন সুন্দর হচ্ছ।





আর মুক্তি বাচ্চা বাচ্চা রাগ ফুটিয়ে বলে, স্টুপিড।

এই স্টুপিড শোনার প্রেমে পরে গিয়েছিল আরিফ। মিষ্টি মেয়েটার প্রেমে। লুকিয়ে একদিন ক্লাসে একটা ছবি তুলেছিল মুক্তির। তাই প্রতি রাতে দেখত। মুক্তি কথা বলতে চাইত না আরিফের সাথে। আরিফ চাইতও না। কেন যেন প্রতিদিন দেখা, আর মাঝে মধ্যে সুন্দর বলে স্টুপিড শোনাটাই ভাল লাগত। কখনও অধিকার চাইবার, বা খাটাবার ইচ্ছে মনে আসেনি। কখনও হাত ধরবার ইচ্ছে আসে নি, কিংবা নাম্বার নিয়ে সারারাত কথা বলবার বাসনাও জাগে নি। মনের ভিতর মুখ ছাড়া অন্য কিছু দেখে, কু চিন্তা আনার কথাও আসে নি। কখনও ছোঁয়া পেতে, বা ছুঁয়ে দিতেও ইচ্ছে করে নি। এ যেন এক অন্য রকম ভাললাগা, অন্যরকম ভালবাসা। দূর থেকে, শুধু চোখের চাহনিতে। তবে মাঝে মাঝে মন চাইত, যখন মুখের উপর চুল গুলো এসে পড়ে, একটু আস্তে করে ফু দিয়ে সরিয়ে দিতে। এই ইচ্ছেটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছিল। না চাইতেই অনেক কিছু পেয়েছিল আরিফ।

বেশ কয়েকদিন ধরেই, মুক্তির আশে পাশে এক সিনিয়র ভাইকে ঘুরতে দেখছে আরিফ। বেশ বলিষ্ঠ শরীর। নেতা গোছের মানুষ। কয়েকবার মুক্তির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। মুক্তি খুব একটা পাত্তা দেয় নি। তবুও মোটর সাইকেল নিয়ে মাঝে মধ্যে মুক্তির আশে পাশে যায়। ছুটির পর মুক্তিকে মোটর সাইকেলে চড়তে বলে। মুক্তি না করে দেয়। আরিফ আশেপাশেই থাকে। তাই চোখ এড়ায় না বিষয়গুলো।

একদিন প্রচণ্ড জ্বর আসে আরিফের। সারারাত প্রলাপ বকে , সকালে ঘুম ভাঙ্গে না। ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না। দুপুর বেলা ঘুম ভেঙ্গে নিজেই নিজেকে বকে। মুক্তিকে দেখা হল না। পরদিনও একই অবস্থা। মুক্তিকে না দেখে ভাল লাগে না। বেশী মাত্রার এন্টিবায়োটিকের জোরে জ্বর চলে যায়। তবে শরীর দুর্বল খুব। পরদিন ওভাবেই যায় ভার্সিটিতে। মুক্তিকে না দেখে থাকা অসম্ভব। অসুস্থ শরীরে হাজির হয়। ক্লাস ঢুকবার সময়ই মুক্তিকে দেখে। হেসে বলতে যাবে, তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগছে। ঠিক তখনি মুক্তি এসে আরিফের সামনে দাড়িয়ে বলে, গত ২ দিন আসো নি কেন?

হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আরিফ। মুক্তি নিজে থেকে কথা বলছে, বিশ্বাস হচ্ছে না। স্টুপিডের বাইরে অন্য কিছু বলছে তাও বিশ্বাস হচ্ছে না।

- কথা কানে যায় না? কি বলি?





একটু নড়েচড়ে বলে আরিফ, অসুস্থ ছিলাম। জ্বর।

- এখন কমছে?

বলে মুক্তি আরিফের কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে। সব কেমন স্বপ্নের মত লাগছে। এসব হচ্ছে কি? আরিফ ভাবছে হয়ত জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নটা ভেঙে যাক, চায় না আরিফ। আরিফ বোকা চোখে তাকিয়ে বলল, কমেছে। তবে আবার আসবে।

- আবার আসবে মানে?

- মানে আসতে পারে।

- হিহিহি।





একটা নিষ্প্রাণ হাসি দিল মুক্তি। মুক্তির হাসি এতো প্রাণহীন না। তবুও ভাল লাগছে। মুক্তি বলল, আসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তোমার সাথে অনেক কথা আছে। আমার সাথে বসবে আজকে।

আরিফ চুপচাপ গিয়ে ক্লাসে বসে মুক্তির পাশে। পাশে বসে পুরো ক্লাস দুজনে গল্প করে। আরিফের মনটা অনেক ভাল, সত্যি অনেক ভাল লাগে। তবে মুক্তির মনটা ভাল নেই। কেমন যেন প্রাণহীন একটা ভাব। আরিফকে কিছু বলতে চায়। আরিফ বলে, তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?

- হ্যাঁ।

- বল।

- ক্লাস শেষ হোক, তারপর।

- আচ্ছা।





মুক্তি বলে না কিছু। আরিফ তাকিয়ে মুক্তিকে দেখে। মুক্তিও মাঝে মাঝে তাকিয়ে হাসি দেয়। ক্লাস শেষে সবাই যখন ক্লাস ছেড়ে চলে যায়, তখনও আরিফ আর মুক্তি থাকে। মুক্তির দিকে তাকিয়ে আরিফ বলে, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। গতদিনের চেয়েও সুন্দর।





মুক্তি আজ স্টুপিড বলে না। শুধু আরিফের নাকে একটা আঙুল ছোঁয়ায়। আরিফ বলে, ক্লাস শেষ। এখন বল, কি বলবে?

মুক্তি মাথা নিচু করে থাকে। আরিফ বলল, বল।

মুক্তি তাও কিছু বলে না। মাথা নিচু করে কাঁদে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আরিফ বুঝতে পারে না কি করবে। মুক্তি চোখের পানি মুছে আরিফের দিকে তাকিয়ে, আরিফের হাত ধরে। আরিফ অবাক হয়ে তাকায় মুক্তির দিকে। আরিফের হাত মুক্তির গালে লাগিয়ে বলে, অনেক বিশ্বাস করে এই হাত ধরলাম। জানিনা কেন? তবুও তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, আমাকে শুধু তুমিই সাহায্য করতে পারবে। এই মুহূর্তে আমার শুধু তোমাকে দরকার।





আরিফের হাত পা জমে যাচ্ছে। বুকের ভিতর কি চলছে জানে না। না চাইতেই অনেক কিছু পাবার মত, সুখ হচ্ছে। এই সুখ না পেলে হয়ত অনুভব করা যায় না। আরিফ বলল, হুম।

- হুমের কিছু না। আরিফ তুমি দুই দিন ক্লাসে আসো নি। আমাকে দেখো নি। এর মধ্যে অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে। আমার বার বার মনে হচ্ছিল, তোমাকে পাশে দরকার। তুমি পাশে থাকলে এমনটা কখনও হত না।

- কি হইছে?

- সেজান ভাইয়া, আমার পিছনে ঘুরত, বিরক্ত করত, দেখতে তো?

- হ্যাঁ।

- গত দুই দিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছে।

- কি করছে?

- গত কাল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন। ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এসে ,আমার সামনে নিজের বাইক থামিয়ে বলেন, চল, তোমাকে নিয়ে আজ বসুন্ধরা যাই। সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখে আসি। আমি বললাম, না ভাইয়া। আমি মুভি দেখি না। সেজান ভাইয়া বলেন, না বললে চলবে না। আজ যেতে হবেই। বলেই উনি আমার হাত ধরেন। হাত ধরে টান দিয়ে বাইকে বসাতে চান। আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আমি ওনাকে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই কানের উপর। দিয়েই চলে আসি। আমার খুব ভয় করছে আরিফ। জানিনা কি হবে? তবুও মনে হচ্ছে আমাকে তুমি সাহায্য করতে পারবে। এই বিশ্বাস টুকু আমার কিভাবে তোমার উপর এসেছে জানিনা।





হাতটা আরও জোরে চেপে ধরে মুক্তি বলে, প্লিজ কিছু একটা কর আরিফ। কথা দিচ্ছি ,এর বদলে তুমি যা চাইবে আমি দিব।





আরিফের শরীরের ভিতর রাগে আগুন জ্বলে যাচ্ছে। সেজানের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সামনে পেলে খুন করে ফেলবে। মুক্তির হাত ধরেই বলে, দেখি কি করা যায়। আচ্ছা অনেক বেলা হয়ে গেছে। চল তোমাকে বাসে তুলে দিয়ে আসি।





আরিফ মুক্তিকে নিয়ে বের হয় ভার্সিটি থেকে। রাস্তায় দেখা হয় সেজানের সাথে। মোটর সাইকেল নিয়ে পাশ দিয়ে যাবার সময় বলে, আরিফ একটু এই দিকে আসো তো। কথা আছে।

- আসতেছি ভাইয়া। ফ্রেন্ডকে বাসে তুলে দিয়ে।





মুক্তিকে বাসে তুলে আরিফ আসে ভার্সিটির ভিতর। আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসে, রাস্তার পাশে পুতে রাখা দুই হাত লম্বা একটা বাঁশের লাঠি। তাই নিয়ে সেজানের সামনে এসে দাড়ায় আরিফ।

- জ্বি ভাইয়া বলেন।

- কি খবর তোমার? কেমন যাচ্ছে দিন কাল?

- এইতো ভালই।

- হাতে করে এটা কি নিয়ে আসছ?

- কিছু না ভাইয়া।

- তা বান্ধবী ভাল আছে? শরীর সুস্থ বান্ধবীর? আজ হঠাৎ বন্ধুকে লাগল বাসে চড়তে।





আরিফ বলে না কিছু। চারপাশে তাকায় একবার। সেজান বলে যায়, বান্ধবীর জিনিস পত্র ভালই। আমার খুব পছন্দ হইছে। বেশী কিছু কিন্তু চাই নাই। একবার বাইকের পিছনে বসে, বুকটা পিঠের সাথে লাগিয়ে বসলেই হত।





আরিফের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। রাগ এবার আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ঝিম ঝিম মাথায় দুর্বল শরীরেই এলোপাথাড়ি কয়েকটা বারি মারে সেজানের গায়ে আরিফ। সেজান কিছু বুঝে উঠবার আগেই। একটু সরে যেতেই বারি পড়ে মোটরসাইকেলে। সামনের অনেকটা ভেঙে যায়। আবার সেজানকে লক্ষ্য করে মারতে শুরু করে আরিফ। রাগের মাথায় শরীরের শক্তি বোধহয় একটু বেশীই বেড়ে যায়। একটা সজোরে আঘাত পড়ে, সেজানের মাথায়। আর একটা মারতে যাবার আগেই, কোথা থেকে স্যার ছাত্ররা এসে থামায় আরিফকে। তবুও আরিফের লাঠি চালানো থামে না। কয়েকটা আঘাত পড়ে স্যার দের গায়েও। আরিফের থেকে বাঁশের লাঠিটা কোন মতে সরিয়ে আরিফকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেজানকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে।

সেদিন রাতেই। বাহিরে বের হয়েছে আরিফ। যেই মেসে থাকে সেখান থেকে। বের হয়ে একটু গলির দিকে যেতেই, কয়েকজন ধরে আরিফকে। ৪-৫ জন হবে। যে যে দিক থেকে পারে, কিল ঘুষি দেয়। শরীর বড় পরিশ্রান্ত আরিফের। চিৎকার করার শক্তি নেই। লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। চলে যাবার আগে একটা চাকু দিয়ে, পেটের কাছে আঘাত করে চলে যায়। রাস্তার ড্রেনের পাশে পড়ে থাকে আরিফ। রক্তে একাকার হয়ে। কখন ব্যথায় জ্ঞান হারায় জানে না। তবে জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে দেখে একটা হাসপাতালের বেডে। আশেপাশে বন্ধুরা। সবাই বিমর্ষ মুখে তাকিয়ে আছে। এই মুখগুলোর ভিড়ে আরিফ মুক্তির মুখ খুঁজছিল। মুক্তি আসে নি। হাসপাতালে ছিল ৬ দিন আরিফ। ৫ দিনের দিন মুক্তি এসেছিল। এসে চুপচাপ দাড়িয়েছিল আরিফের পাশে। আরিফ বলে, কেমন আছ?

মুক্তি উত্তর দেয় না কোন। আরিফের বেডের পাশে বসে মুক্তি। শান্ত মুখে বলে, আমার জন্য অনেক কিছু করলে। ধন্যবাদ। আর তোমার এই অবস্থার জন্য সরি। কথা দিয়েছিলাম, তুমি যা চাইবে দিব। বল কি চাও?





মুক্তি ঝুঁকে তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। মুখের উপর সেই চুলগুলো এসে পড়েছে। আরিফ একটু উঠে বসল।

- যা চাই দিবে?

- দিব।

- তোমার মুখ থেকে চুল গুলো ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেই?





মুক্তি নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে থাকে আরিফের দিকে। আরিফ আস্তে করে একটা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়, মুখের উপর থেকে চুল। অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। মুক্তি উঠে দাড়ায়। আরিফ বলে, তোমাকে সুন্দর লাগছে অনেক। গত দিনের চেয়েও সুন্দর।

- আসি আমি।





মুক্তি উঠে দরজার কাছে চলে যায়। চলে যাবার জন্য। আরিফ পিছন থেকে ডাক দেয়।

- শুনবে একটু?

মুখ ঘুরিয়ে মুক্তি বলে, বল।

- আমি বোধহয় তোমাকে ভালবাসি।





মুক্তি বলে না কিছু। আলতো করে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়। সেই হাসির মানে হয়ত, তোমার মত অনেকেই আমাকে ভালবাসে, সবার ভালবাসায় সায় দেয়া যায় না।

সেই শেষ কথা মুক্তির সাথে। আর কখনও কথা হয় নি। আরিফকে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষককে বিনা কারণে আঘাত করার অভিযোগে, বহিস্কার করা হয় ভার্সিটি থেকে। আর ক্লাসে বসা হয় না। মাথা নিচু করে মুক্তিকে দেখা হয় না। সুন্দর লাগছে বলে, স্টুপিড বকাও শোনা হয় না। আরিফ শুনেছে মুক্তির নাকি, সেজান ভাইয়ার সাথে প্রেম চলছে। আরিফও একদিন সেজানের মোটর সাইকেলের পিছনে, মুক্তিকে দেখেছে। দেখে কষ্ট লাগে নি। একটা সূক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠেছে মুখে। কত স্বার্থপর হতে পারে মানুষ। হোক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে। তবুও সেজান ভাইয়ার সাথে ভাল ব্যবহার না করলে, ভার্সিটিতে থাকতে পারবে না। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও লাভ নেই। তাই স্বার্থ দেখে, ভালবাসায় সায় দিয়ে দিল। ঠিক তেমনি কিছু স্বার্থের জন্যই, একদিনের জন্য , আরিফের সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছিল। জানে, এখন আরিফের থেকে সেজানের সাথে থাকাটাই নিরাপদ। তাই সেজানের সাথে থাকছে, স্বার্থের দায়ে। মেয়েরা অনেক খারাপ, অনেক স্বার্থপর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল আরিফ। রাস্তার পাশটায় রোদের ভিতর বসে আছে। বসে বসে এই আবল তাবল ভাবনা গুলো ভাবছে।

- শুনুন একটু।





আরিফ পিছন ফিরে তাকাল। আবার সেই মেয়েটা। এখনও যায় নি। আরিফ বলল, ও আল্লাহ, আপনি এখনও যান নি? কতবার বলব আমি মেয়েদের সাহায্য করতে পারব না। আর আমার কাছে টাকা নেই। এক টাকাও নেই। কিছু আগে টাকা ছাড়া চা খাইছি। চুরি করে।

- আমার টাকার যোগাড় হয়েছে। আপনার কাছে ২০ টাকার জন্য আসিনি আমি।

- তবে তো হলই। আবার কি জন্য এসেছেন?

- আপনি বললেন কেন মেয়েরা স্বার্থপর? মেয়েরা স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না। মেয়েরা স্বার্থ ছাড়া ভালবাসে না। মানুষকে সম্মান করতে জানে না। ভাল কিছু চিনেও না। চিনে শুধু স্বার্থ , জানে শুধু স্বার্থ? আপনি কয়টা মেয়েকে চিনেন?

- আমার তো সবাইকে চিনতে হবে না। মেয়েরা স্বার্থপর সেটা জানি। এই যে আপনার যদি স্বার্থ না থাকত, আপনি আমাকে ডাক দিতেন?

- এটাকে স্বার্থ বলে? আপনাকে দেখে বিশ্বাস হয়েছে বলেই, আপনাকে ডাক দিয়েছি। এক মানুষ ছাড়া অন্য মানুষ চলতে পারে না। সব কিছুকে স্বার্থের ভিতর টানেন কেন?

- আচ্ছা আপনি কাউকে ভালবাসেন?

- হ্যাঁ বাসি। অনেক বেশী বাসি।

- হ্যাঁ কেন বাসেন তাকে? হয়ত দেখতে অনেক স্মার্ট, অনেক টাকা পয়সা আছে, নয়ত অনেক ক্ষমতা। অন্য কেউ আপনাকে খারাপ কিছু বললে, তার প্রতিবাদ করার মত ক্ষমতা আছে। কোন না কোন স্বার্থের কারণেই বাসেন।





শুকনো একটা হাসি দিল মেয়েটা।

- ভাল বলেছেন। আমি নিলু, আপনি?

- আরিফ। মানলেন তো মেয়েরা স্বার্থপর?

- হ্যাঁ মানলাম।

- মানলেন তো মেয়েরা স্বার্থ ছাড়া কাউকে ভালবাসে না।

- হ্যাঁ তাও মেনেছি।

- হাহ।

- চলেন আমাকে বাসে তুলে দিয়ে আসবেন। আমি মোহাম্মদপুর যাব। ওখানে যাবার জন্যই ভাংতি দরকার ছিল।

- আমি মেয়েদের উপকার করি না।

- উপকার করতে হবে না। আপনার থেকে, মেয়েরা যে স্বার্থপর তা শুনতে শুনতে যাব। চলেন।

- আপনাকে আর কিছু বলার নেই।

- আরে চলেন না। রাস্তায় যদি কোন বখাটে উত্যক্ত করে, আপনি সাথে থাকলে একটু সাহস পাব।

- ওহ। আচ্ছা চলেন।





নিলুর সাথে হেঁটে যাচ্ছে আরিফ। বাস স্ট্যান্ডের দিকে। নিলু বলে, আমার ভালবাসার মানুষটার কথা শুনবেন?

- বলেন।

- ৬ ফুট লম্বা, শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভাল। গায়ের রঙ একটু কালো, সেটা ব্যাপার না। ছেলেরা ফর্সা হলে ভাল লাগে না আমার। মোহাম্মদপুর থাকে। ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

- আপনি কেন দেখা করতে যাচ্ছেন? সে আসে না?

- না সে আসে না। আমিই যাই দেখা করতে।

- কেন?

- কারণ সে আসতে পারে না।

- একটা ছেলে হয়ে আসতে পারে না। আর আপনি মেয়ে হয়ে যান।

- হ্যাঁ যাই, ভালবাসি তাই যাই।

- সেও তো বাসে।

- হ্যাঁ অনেক বেশী বাসে। তবুও আসতে পারে না। আমি যেমন বাসে চড়তে পারি, টাকা ভাংতির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে পারি। সে পারে না। আমি যেমন এখান থেকে মোহাম্মদপুর যেতে পারি। সে মোহাম্মদপুর থেকে এখানে আসতে পারে না।

- কেন?

- কারণ সে হুইল চেয়ারে বসে থাকে। দুইটা পা ই অচল। যখন ভালবাসার সম্পর্ক প্রথম প্রথম, তখন এমন ছিল না। দিব্যি দৌড়াতো। আমায় নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াত। রিকশায় করে। কখনও হাঁটত সন্ধ্যার পর হাতের ভিতর হাত লুকিয়ে। কখনও আমার জন্য বাসার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকত। আমি নেমে আসলে, নিজের লেখা কবিতা শুনাত। ভালবাসা যখন অনেক বেশী গভীর। দুই বছর আগের কথা। ও যেখানে থাকত সেখানে এক দালানের কাজ চলছে। আগের দিনের ঝড়ে, যে সিকিউরিটি পর্দা গুলো ব্যবহার করা হয়, তা ছিঁড়ে গেছে। কাজ করছে শ্রমিকরা। সেই ৬ তলার উপর থেকে, ইট পড়ল কয়েকটা। কাজে অসাবধানতার জন্য। প্রথমটা ঘাড়ের উপর তউসিফের। মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই বাকিগুলো দুই পায়ের উপর। সেই থেকে এই অবস্থায় আছে। এই দুই বছর আমিই দেখা করতে যাই। তউসিফ আমাকে নানা ভাবে তাড়িয়ে দেয়, আমি ফিরে যাই না। ও ভাবে ওকে আমি করুণা করি। কিন্তু না, আমি ওকে সত্যি ভালবাসি। এই যে টাকাটা বললাম ৫০০ টাকা, ওটা ওকেই দিয়ে আসব। আমার হাত খরচের টাকা। আমি বাসায় থাকি। হাত খরচের টাকাটা বেচে যায়। নিতে চায় না, তবুও জোর করে দিয়ে আসি। আমি ভালবাসি, সত্যি বাসি। আমি জানি আমার বাবা মা কোনদিন মানতে চাইবেন না, তউসিফকে তাদের মেয়ের জামাই হিসেবে। তবুও আমি তউসিফ ছাড়া অন্য কাউকে জীবনে ভাবতে পারি না। আমি প্রতিদিন মাকে তউসিফের কথা বলি। মা বুঝায় আমাকে, আমিও বুঝাই মা কে। আমাকে কেউ কটু কথা বললে, তউসিফের ঠেকাবার সাধ্য নেই। অনেক টাকাও নেই। তবুও ভালবাসি। তবুও কাছে যাই। কেন যাই জানেন? মেয়েরা আসলেই স্বার্থপর। আমার তউসিফের কাছে স্বার্থটা হল ভালবাসা। ওর সবকিছুতে আমি ভালবাসা পাই। এই দুই বছর ধরে অবহেলা করছে, তার মাঝেও ভালবাসা পাই। এই স্বার্থটুকুই আমার জীবনের সব। আরে বাস মিস করতে পারব না আর। আসি আরিফ সাহেব। আবার হয়ত কোনদিন দেখা হবে, এই স্বার্থপর মেয়েটার সাথে।





নিলু চলে গেল। বাসে করে। আরিফ চুপ করে দাড়িয়ে আছে। মাথার ভিতর বড় শুন্য লাগছে। নিজেকে অনুভূতিহীন কোন প্রাণী লাগছে। ভাবছে, একটু একটু করে ভাবছে, নিলু মেয়েটা কোন স্বার্থ ছাড়া কিভাবে তউসিফকে ভালবেসে যাচ্ছে? ভাবনার , কিংবা ধ্যান ধারণার অনেকটা বদলে গেছে। নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। পৃথিবীটা অনেক ছোট না, এখানে গুটি কয়েক শুধু মানুষ না। একজনকে দিয়ে সবার বিচার হয় না। মানুষে মানুষে রকম ফের। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে, শুধু একজনকে দিয়ে সব কিছুর হিসেব হয় না। আরিফ বাঁচতে শিখবে নতুন করে। বিশ্বাস করতে শিখবে নতুন করে। ভালবাসতে শিখবে, জীবন পথে চলতে শিখবে।





মানুষ গুলো এমন। ঠিক চারপাশে যেমন দেখে, পৃথিবীটা তেমন ভাবে। নিজের সাথে যেমন ঘটে, বাকি সবও তেমন ভাবে। কারও কাছে, বিশ্বাসের মৃত্যু ঘটলে, পুরো পৃথিবীকে অবিশ্বাস করে। কোন বিশেষ কারও থেকে কষ্ট পেলে, সেই কারও মত সবাইকে ভাবে। তবে নিজের সাথে ঘটা, নিজের দেখা জিনিস গুলোর বাইরেও কিছু আছে। বিশ্বাস না থাকলে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হত না। ভাল আছে বলেই, খারাপ কিছু দেখি আমরা। নিঃস্বার্থ কিছু জিনিস পৃথিবীতে বর্তমান বলেই, এতো স্বার্থপরতা চোখে পড়ে। একটু ভাবলে, একটু দেখলে, জীবনের অসুন্দরের সাথে সুন্দর খুঁজে পাওয়া যায়। দুঃখের সাথে সুখ। স্বার্থের সাথে নিঃস্বার্থ কিছু। অবিশ্বাসের সাথে, খুব বিশ্বাসের কিছু। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

নাসীমুল বারী বলেছেন: শুভ নববর্ষ ১৪২১।

আমরা যে 'পোস্ট' শব্দটি ব্যবহার করি, এই 'পোস্ট' এই ইংরেজি শব্দটা আমরা বাংলা প্রতিশব্দায়ন করতে পারি ' সংযুক্তি' শব্দ দিয়ে। এতে রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করা বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানোটা আরেকটু হৃষ্টপুষ্ট হবে না?

এ সম্পর্কে আপনার মতামত প্রত্যাশা করছি।

আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ভাল বলেছেন। তবুও কিছু ইংরেজি শব্দ আমাদের ভাষার সাথে মিশে গেছে। ইচ্ছা করলেই আমরা তা তাড়াতে পারি না।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৫

অদ্ভূত একজন বলেছেন: ভালো লাগলো

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৩

মামুন রশিদ বলেছেন: মোটামুটি লেগেছে ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৮

হাসিবুল ইসলাম বাপ্পী বলেছেন: সুন্দর লিখেছ। :)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.