নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
তিশা তাসিন দুজনের মন ভাল খুব। আজ আম্মু বাসায় থাকবেন। স্কুলও বন্ধ। সবচেয়ে বড় কথা আজ আম্মু মুরগী রান্না করবেন। সপ্তাহে একদিন আম্মু বাসায় থাকেন। এই একদিন মুরগী রান্না হয়। দিনটা অনেক ভাল কাটে। ভাল করে পেট ভরে খাওয়া যায়। সারা সপ্তাহ শাক, আলু খেতে খেতে আর ভাল লাগে না। এই দিনটা ঈদ ঈদ লাগে। দুপুরে মুরগীর একটা রান পায় তিশা, আর একটা তাসিন। মুরগীর কলিজা ভাগ করে দেন মা। পা ২ টা সমস্যা হয় না। যত ঝামেলা বাঁধায় মাথা। আম্মু ঘুরে ফিরে মুরগীর মাথা তিশাকে দেন। আর তাসিন মুখ গোমড়া করে থাকে। তাই এখন এক সপ্তাহে মাথা পায় তিশা। অন্য সপ্তাহে তাসিন। তাসিন এতে খুশি ইদানীং।
আম্মু ঘুম থেকে ওঠার আগেই তিশা উঠে গেছে। ক্লাস এইটে পড়ে তিশা। তাসিন থ্রিতে। তাসিন এখনও ঘুমাচ্ছে মাকে জড়িয়ে। এতো বড় ছেলে ,তাও এখনও ঘুমালে, মুখ দিয়ে লালা পড়ে। মায়ের হাত লালায় ভরে গেছে। হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তাই।
তিশা উঠে খুব আগ্রহ নিয়ে হাড়ি পাতিল সব ধুচ্ছে। পেয়াজ, রসুন, আদা, মশলা সব বেটে ঠিক করে রাখছে। মা আজ মুরগী রাঁধবে।একটু কাজ এগিয়ে রাখা আর কি। মা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মেয়ে ঘেমে একাকার। পাটা পুতা দিয়ে আদা মশলা বাটছে। কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা মনে হচ্ছে। মুখে সরল হাসি নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
" আম্মু, তুমি সারা সপ্তাহ এতো কষ্ট কর। মেশিন চালাও। বাটাবাটি করতে তোমার কষ্ট হবে। তাই আমি বেটে রাখছি। মুরগী রান্না করবা না? সে জন্য। "
মা মেয়ের দিকে এখনও তাকিয়ে আছেন। কত আশা করে আছে আজ মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খাবে। মেয়ের কাছে গিয়ে মা দাঁড়ালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
"মা রে তুই আজ এসব করলি কেন? এই মাসে একটু সমস্যা। হাতে টাকা নাই।"
তিশার হাসি মাখা মুখটা হঠাৎ মলিন হয়ে গেল। মাথাটা নিচু করে বলল,
" আজ মুরগী আনবা না মা? "
- কিভাবে আনব? টাকায় হবে নারে মা।
তিশা মাথা নিচু করেই আস্তে একটা হাসি দিল।তারপর বলল,
- আচ্ছা আম্মু। আমি তাহলে মশলা গুলো রেখে দেই। তাসিন উঠে দেখলে ভাববে তুমি মুরগী আনছ।
- আচ্ছা রেখে দে।
তিশা মশলাগুলো রেখে, হাত ধুয়ে ফেলল। মায়ের দিকে আর তাকাল না। কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখ জ্বলছে। পেয়াজের জন্যও হতে পারে। আবার বুকের কষ্টেও হতে পারে। মায়ের দিকে তাকালে বুঝে ফেলবেন। বিছানায় গিয়ে তাসিনকে জড়িয়ে, আবার শুয়ে পড়ল। তিশা আর তাসিনের মা, একটা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বেতন অত বেশি না। যা পায় তাতে চলে কোন মতে। ছেলে মেয়ে ২ জনকে ,সবসময় একটু হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করেন। ওদের বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে। সেই বউ নিয়ে থাকে। তিশা তাসিন তা জানে না। জানে বাবা ব্যবসা করে ফরিদপুর। কাঠের ব্যবসা। কাজের চাপে আসতে পারে না। কিন্তু ছোট ছেলে মেয়ে দুটো বুঝে না, সত্যি যদি ব্যবসা করত । আর মায়ের সাথে সম্পর্ক থাকত। তাহলে আর সংসারের এই অবস্থা থাকত না। থাক না। সত্যিটা না জানুক। কিছু মিথ্যা মাঝে মাঝে সুখ দিতে পারে । অনেক সুখ।
মা ভাত বসিয়ে দিলেন। ভাতের মধ্যে ২ টা আলু। সিদ্ধ করবার জন্য। ভাত রান্না হয়ে যাবার পর, আলু চটকে ভর্তা বানালেন। ঘরে সরিষার তেল নাই। অল্প একটু ছিল তাই দিলেন ভর্তায়। নিজের ঘরের দিকে তাকালেন। ঘরে আসবাব পত্র খুব একটা নাই। তবুও ছেলে মেয়ে দুটোকে ভাল রাখতে চান তিনি। ঈদ গেল মাসের প্রথম দিকে। তাসিন এসে গল্প করে, জানো আম্মু আরিফ না ২ টা জিন্স কিনছে। আর ২ শার্ট। ঈদে সকালে এক সেট পরবে। বিকালে এক সেট।
ছোট ছেলে ,গল্প তো করবেই। সেদিন বাসায় এসে দেখেন, তিশা মন খারাপ করে বসে আছে। মা বলেন , কি হইছে রে?
তিশা বলে , কিছু না।
কিছু তো হয়েছেই। কারণ ছাড়া মন খারাপ থাকবে কেন? অনেক জোরাজোরির পর তিশা বলল,
" মা, আমার বান্ধবীরা সব ঈদের দিন নাকি ঘুরবে। একসাথে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি যাব কিনা। বলছি যে না। "
- না করছিস কেন?
- ঈদের দিন ওরা সবাই নতুন কাপড় পরবে। তোমার অত টাকা খরচ করতে হবে না।আমি নতুন কাপড় পরব না। তাই না করছি।
মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, পলকহীনভাবে। এতো টুকু মেয়ে কত বুঝে। হয়ত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। অনেক কিছু বোঝার মত বয়স হয়েছে। আস্তে করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে। মেয়েটা অনেক শক্ত, তাই চোখে জল আসেনি। কিন্তু মায়ের চোখ ঠিকই জলে ভরা।
- আম্মু একটা কথা বলব?
-বল, মা।
- তাসিনকে একটা নতুন জিন্স কিনে দিবে? ওকে সেদিন দেখালাম, নিজে নিজে সুঁই সুতা দিয়ে , ওর জিন্সের প্যান্টটা সেলাই করছে। ছিঁড়ে গেছে মনে হয়। ওর তো একটাই ফুল প্যান্ট। ঈদে নয়ত পরবে কি?
মা চুপ করে থাকেন। কিছু বলেন না। মাসের বেতনটা পান তার কয়েক দিন পর। এবার টাকা একটু বেশীই। বেতনের সাথে বোনাস আছে। ঘর ভাড়া দিয়েই, তাসিন তিশাকে নিয়ে বাজারে নিয়ে যান। তাসিনকে কিনে দেন, নীল রঙের জিন্স।সাথে একটা লাল রঙের জামা। তিশার জন্যও বানাতে দেয়া থ্রি পিসটা নিয়ে নেন। আগেই বানাতে দিয়েছেন। তিশাকে না জানিয়েই। কাচ দিয়ে ঘেরা শো রুম গুলোর এক দামের কাপড় কিনেন নি। কিনেছেন রাস্তার পাশ থেকে। জামা কাপড় গুলো পুরনো নয়। তবুও দাম কম। হয়ত কিছু পার্থক্য আছে, ঐ শো রুম আর এই রাস্তার পাশের জামা কাপড়ে। সেসব বুঝতে চায় না তাসিন তিশা। নতুন কাপড়ে ওরা খুশি। তাসিন বাসায় এসে একটু পর পর জিন্সটা প্যাকেট থেকে বের করে আম্মুকে বলে, আম্মু এইটা আমি পরব না?
- পরবি তো। কাল সকালে পরবি। কাল ঈদ না? সবাই যখন পরবে তখন।
তাসিন রেখে দেয়। তিশা এসে চুপি চুপি মায়ের পিছনে দাড়ায়। আস্তে করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, আম্মু তুমি এতো ভাল কেন?
মায়েরা ভালই হয়। অনেক ভাল। তবুও মায়ের কাছে জানতে চায় তিশা। মা বলেন, কেন কি হইছে?
- আমি তো বললাম, আমার কিছু লাগবে না। তাও কিনে আনলে কেন জামা?
- তোর সব বান্ধবীরা ঘুরবে, আর তুই দেখবি?
- তুমি কিছু কিনলে না? তোমার শাড়িটা তো পুরনো হয়ে গেছে।
- আমার আবার কি লাগবে? আমি সারাদিন থাকব ঘরে। আমার আবার লাগে কিছু? আমার বয়স আছে নাকি, নতুন জামা কাপড় পরার? তোরা পরলেই আমার ভাল লাগে।
- তাও।
- তাও কিছু না।
- আম্মু।
- বল।
- ঈদ তো কালকে। আব্বু আসবে না? আব্বুকে দেখি না অনেক দিন।
মা কথাটা শুনে একটু অন্যরকম হয়ে গেলেন। মাথাটা নিচু করে কাঁপা গলায় বললেন, এবারের ঈদে আসতে পারবে না। ঈদের সময় কাজ বেশী থাকে। পরে আসবে।
- ওওও।
আর কিছু বলে না তিশা। বলবেও না। কথাটা জিজ্ঞেস করা উচিৎ হয় নি, জানে তিশা। তিশা অনেক কিছু বুঝে এখন। মা হয়ত ভাবছে, মেয়ে সেই ছোটটি রয়ে গেছে।
ঈদের দিন সকালে সেমাই রান্না করেন মা, দুপুরে পোলাও মাংস। টাকা যা ছিল, প্রায় সব শেষ। সারা মাস কিভাবে যাবে, সেই চিন্তার চেয়ে, ছেলে মেয়েগুলোর এই সুখ দেখতে ভাল লাগে। মায়ের যে খারাপ লাগবে, অন্যরা খাবে আর মেয়ে ছেলে দুটো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। নিজে খারাপ খেয়ে, অন্যকে ভাল কিছু খেতে দেখা কষ্টের। অনেক বেশী কষ্টের। এই কষ্টটুকু পাক চান না মা।
ঈদের সময় এতো টাকা খরচ হল। একটু বেশীই সমস্যায় পড়ে গেলেন মা, এই মাসে। এই সমস্যার কারণেই আজ মুরগী কেনা হবে না। তিশা মেয়েটার খারাপ লাগছে অনেক, জানেন মা। এতো সখ করে ঘুম থেকে উঠে মশলা বেটে রাখল।
ভাত রান্না রয়ে গেছে। তিশা তাসিনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খেতে বসলেন। আলু ভর্তা দিয়ে। খাচ্ছে তিশা তাসিন। খাবার শেষে মা বেরিয়ে গেলেন। বাজার করতে হবে। বাজারে যাচ্ছেন। তাসিন চলে গেল খেলতে। ঘরে তিশা একা। ইদানীং তিশার বাহিরে যেতে ইচ্ছা করে না। একা থাকতে ভাল লাগে। দূর থেকে কিছু দেখতে ভাল লাগে। বুঝতে পারছে মনের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন আসছে। স্কুলের ম্যাডামও সেদিন এই পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ম্যাডাম বলেছিলেন, এই বয়সে এসে মনের মধ্যে আবেগ বুঝতে পারার ক্ষমতা জন্ম নেয়। তিশার সেই ক্ষমতা জন্ম নিচ্ছে কিনা জানে না তিশা। বাংলা বইটা বের করল। একটা কাগজ সেই বইয়ের ভিতর। গত পরশু রেখা এই কাগজটা দিল। রেখার এক চাচাত ভাই, তিশাকে এটা দিতে বলেছে। তিশা বাসায় এসে খুলে পড়ছিল কাগজটা। কাগজে লেখা, তোমাকে আমার ভাল লাগে। আমি তোমাকে ভালবাসি।
কয়েকবার পড়েছে এই দুই লাইন। ভাল লাগা , ভালবাসা এসব আবার এভাবে বলার কি আছে? তাসিনকে ভালবাসে তিশা, মাকে ভালবাসে। এদের তো কোনদিন এমন কাগজে লিখে বলতে হয় না। এই ছেলে তিশাকে বলবে কেন? কাগজটা ফেলে দিল জানালা দিয়ে বাহিরে তিশা। আজ বাবার কথা মনে পড়ছে। জানে তিশা, বাবা আর আসবে না কখনও। ভাল মা টা তাও মিথ্যে আশ্বাস দেয়, বাবা ফিরে আসবে। পাশের বাড়ির আন্টি বলেছে সেদিন, তিশার বাবা নাকি আরেকটা বিয়ে করেছে। শুনতে ভাল লাগে নি তিশার। একবার ভেবেছিল মাকে বলবে। আবার ভাবল, না বলা ঠিক হবে না। ইদানীং তিশা অনেক ঠিক বেঠিক বুঝতে শিখেছে। অনেক কিছু মানিয়ে নিতে শিখেছে। তবুও কেন যেন বাবাকে মনে পড়ছে। বাবাকে ভালবাসে তিশা। অনেক ভালবাসে। জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া কাগজটা আর একবার দেখল। ভালবাসার কথা কাগজে লিখে বলে দেয়া যায়। বাবা কোথায় থাকে জানে না তিশা। তবুও বাবাকে ভালবেসে একটা চিঠি লিখল। চিঠিতে অনেক কিছু লেখা। শেষ লাইন গুলো হল, আব্বু তোমাকে অনেক ভালবাসি। খুব দেখতে ইচ্ছা করে তোমাকে। তাসিন আর আমার তোমার গলা জড়িয়ে ধরতে আবার ইচ্ছা করে। তুমি কি একদিন ১০ মিনিটের জন্য আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে?
চিঠিটা লিখে তাও জানালা দিয়ে ফেলে দেয় তিশা। বাবার কাছে পৌঁছাবে না। কিছু আবেগ অমন জানালার নিচের আবর্জনার মত, বন্ধী থাকে। কখনও বুঝতে পারে না কেউ। জানালা ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে তিশার। ইদানীং অকারণেই খুব অভিমান হয়, কাঁদতে ইচ্ছা করে। এই যে সকাল বেলা, তাসিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। এতো ইচ্ছে নিয়ে মশলা বেটে রেখে দিল। মা বলে কি আজ মুরগী আনবে না। আজকেই কেন? অন্য দিন কেন হল না। মাঝে মাঝে তিশার খুব খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্য সবার বাবা আছে। শুধু তিশারই কেন থাকবে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্য সবাই ভাল আছে। শুধু তিশার পরিবারের অবস্থাই কেন এমন হবে? শুধু তিশারাই কেন গরীব হবে?
জানালা ধরে কেঁদে কেঁদে, আবেগ গুলো আবার তিশা ঐ জানালার নিচের আবর্জনার সাথে রেখে দিচ্ছে। কেউ দেখবে না। কেউ বুঝবে না।
একটু পরেই মা এসে ঢুকলেন ঘরে। হাতে বাজারের ব্যাগ। তিশা ঘুরে তাকাল না। জানাল ধরেই বসে রইল। মা এসে ডাক শুরু করলেন, কিরে মা, এই দিকে আয় তো।
- কেন?
- কাজ আছে। আয় না।
তিশা চোখ মুছে, মায়ের কাছে গেল। মা মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বললেন, বাজার গুলো বের কর। তোকে আজ একটা জিনিস শিখাব।
- কি শিখাবে?
- বাজার বের করত আগে।
তিশা মুখ গোমড়া করে বাজার গুলো মেঝেতে ঢেলে দিল। ঢেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, কি শিখাবে?
- তোকে আজ মুরগী, কাটা শিখাব। আর রান্না করা।
তিশা মায়ের মুখের দিকে, একটু তাকিয়ে মেঝের দিকে তাকাল। বাজারের ব্যাগ থেকে বের হওয়া, বাজার গুলোর মধ্যে একটা মুরগীও আছে। তিশার গোমড়া মুখটা হঠাৎ হাসি হাসি হয়ে গেল। মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। কেন যেন ভাল লাগছে অনেক।
- আম্মু তুমি এতো ভাল কেন? টাকা পেলে কোথাও? মুরগী আনার টাকা?
- যোগাড় হয়ে গেছে।
তিশা আলতো করে হাসল। মাকে অনেক ভালবাসে তিশা। মনে মনে ভেবে নিল, আজ রাতে মায়ের কাছে একটা চিঠি লিখবে। ছোট চিঠি। যেখানে লেখা থাকবে মাকে ভালবাসার কথা।
তিশা মুরগী কাটছে। পিস পিস করছে। মা দেখিয়ে দিচ্ছেন। আর মাথার কাছে দাড়িয়ে তা দেখছে তাসিন। তিনজনের মনই অনেক খুশি। অনেক ভাল লাগছে। কোনমতে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর সুখ কত অদ্ভুত। কত অল্পতে এরা সুখী। কত অল্প এদের চাওয়া। এদের অল্পতে মন খারাপ, অল্প কিছুতেই দূর হয়ে যায়। তাসিন খুশি, আজ মুরগী দিয়ে ভাত খাবে। মা খুশি, ছেলে মেয়ে দুটো পেট ভরে খাবে। তৃপ্তি নিয়ে খাবে। তিশাও খুশি। তবে আজকের খুশিটা অন্য কারণে। কিছু একটা বুঝতে পারছে তিশা। কিছু আবেগ বুঝতে পারার বয়সটাতে, বুঝতে পারছে, মাকে অনেক ভালবাসে। বুঝতে পারছে ছোট ভাইটার হাসি মুখ দেখতে ভাল লাগে। বুঝতে পারছে, অনেক দূরে থাকা বাবাকেও ভালবাসে।
জানালাটা মেলে দেয়া। বাহিরে দগদগে রোদ। তবুও জানালা দিয়ে একটু একটু বাতাস আসছে। এসে অনেক ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছে। তিশার ঘামে ভেজা ক্লান্তি। অপ্রাপ্তির ক্লান্তি। জানালার নিচ দিকে শুধু ময়লা আবর্জনার সাথে, আবেগ গুলো হারিয়ে যায় না। মৃদু বাতাসের সাথে কিছু সুখও আসে। এই অভাবের ঘরের তৃপ্তি আসে। অনেক না পাওয়ার ভিড়ে, কিছু পাওয়া অনেক সুখ দেয়। কিছু আবেগ, অনেক দামী। জানালা ধরে কাঁদতে কাঁদতে কিছু আবেগ যেমন, হারিয়ে যায়। আবার একটু হাসিমুখে, কিছু আবেগ হৃদয় জুড়ে জায়গা নেয়। বুঝতে পারার উপলব্ধি দেয়। অনেক না পাওয়ার ভিড়েও, পাওয়া বলে কিছু থাকে।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
মন ছুঁয়ে গেলো। গল্পে +++
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৬
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৯
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: গল্পের একটা ঘর তৈরি হয়েছে। তার ভেতরে টিমটিম করে জ্বলছে একটা বাতি। বাতির আলোয় ছায়াময় কিছু মুখ। সেই মুখগুলো কত বিচিত্র রকম আবেগে পরস্পর কে ছুঁয়ে আছে! লেখকের গল্প নির্মাণ ভাল লাগল।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
দোয়া করবেন।
৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:১২
আজীব ০০৭ বলেছেন: হৃদয় কে স্পর্শ করে গেল ...+++
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮
সমুদ্র কন্যা বলেছেন: সুন্দর গল্প। ভাল লাগল খুব।
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩২
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০১
নওরীন ইশা বলেছেন: অনেক সুন্দর।।হৃদয় কে স্পর্শ করে গেল।।।