নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ দেয়ালিকা

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫


রিনি যখন কলেজে পড়ে আমি তখন ভার্সিটিতে। রিনির বাসার সামনে নিজের নামে লেখা, "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা সেটে দিয়েছিলাম। এই ভেবে যদি কখনও রিনির গৃহ শিক্ষক দরকার পড়ে, আর আমাকে ফোন করে বলে। রিনির বাসার আশেপাশের সব "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা আমি তুলে ফেলেছিলাম শুধু আমারটা বাদে। এটাও এই ভেবে, অন্তত অন্য কারও সুযোগ না থাকুক। আমি বখাটে ছিলাম না, ছিলাম ভীতু। বখাটে হলে রিনির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রিনির জন্য অপেক্ষা করতাম। রিনি আসলে পিছন পিছন যেতাম, শিস মেরে রিনির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম। পথ আগলিয়ে বাসার ফোন নাম্বার চাইতাম। আমি অমন কিছুই করি নি। অমন কিছু করা আমার দ্বারা সম্ভবও ছিল না। আমি রিনির বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। রিনি বিকালে বারান্দায় এসে দাঁড়ালে গলির দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে রিনিকে দেখতাম। রিনির চোখে চোখ পড়ুক আমি চাইতাম না কখনও। আমার ভালবাসা শুধু জমে ছিল ঐ দোতলার বারান্দা আর এই সরু গলির দেয়ালের আড়ালে। ঐ গলির মাঝে দাঁড়িয়েও নিশ্চিন্তে দেখতে পেতাম রিনিকে ব্যাপারটা তেমন না। খেয়াল রাখতে হত আশেপাশের কেউ আমায় দেখছে কিনা। কেউ গলি গিয়ে চলাচল করছে কিনা। আমি প্রতিদিন এখানে আসি, ব্যাপারটা কেউ অন্য ভাবে নিচ্ছে কিনা। আমি ভীতু ছিলাম, ভীতুদের ঐ ভয় গুলো থাকেই। গলি দিয়ে কেউ গেলে, আমি সোজা হয়ে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করতাম। আমাকে কেউ দেখে ফেললে, কোথাও বাড়ি ভাড়া হবে কিনা তা খোঁজার ভান করে এদিক ওদিক ঘুরতাম।
রিনি বিকালে বড় জোর ঘণ্টা খানেক বারান্দায় দাঁড়াত। আমার মাইনাস পাওয়ারের চশমা দিয়েও স্পষ্ট বোঝা যেত না রিনির চেহারা। তবু মনের টানে, কল্পনায়, রিনির একটা স্পষ্ট মুখচ্ছবি দেখতাম। রিনি চুল মেলে দাঁড়াত, বাতাসে চুল উড়ে মুখে পড়লে তা সরাত, বাতাসে ওড়না একটু নড়ে গেলেই ঠিক করে নিত। আমি মুগ্ধ হয়ে সেসব দেখতাম। ছোট ছোট এই বিষয় গুলোও এতোটা ভাল লাগার ছিল, ভালবাসার ছিল আমি জানতাম শুধু। ভালবাসা এমনই, ভালবাসলে ভালবাসার মানুষের প্রতিটা ছোট ছোট জিনিসের প্রতি, কাজের প্রতি, প্রতিটা অঙ্গভঙ্গির প্রতি ভালবাসা চলে আসে, ভালবাসা যতদিন থাকে তা থাকে, ভালবাসা চলে গেলে এই ভাল লাগাও বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কারও শরীরে বাসা বাঁধে।
আমি প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসি, আমার সাঁটানো দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেলল কিনা। নতুন করে কেউ দেয়ালিকা লাগাল কিনা। আমার নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়াল নিজের দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেললে নতুন করে লাগানো। অন্যের দেয়ালিকা তুলে ফেলা। তবে সেসবে খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। আমার ফোনে কেউ কোনদিন ফোন করে পড়ানোর কথা বলে নি। রিনিকে পড়ানোর ব্যাপারেও না, অন্য কাউকেও না।
সে দিনটায় অবশ্য অন্য রকম কিছু ছিল। আমার ছোট মোবাইল ফোনটায় একটা কল আসল। আমি ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভারী গলার কেউ বলেছিল, আপনি মিনহাজ?
- জ্বি।
- আপনি কি আজিমপুরে বাসার সামনে পড়ানোর জন্য পোস্টার লাগিয়েছেন?
আমি ধুরু ধুরু বুকে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিলাম, জ্বি।
---------------

পড়ালেখায় আমার দিন বেশী একটা ভাল যাচ্ছে না। স্কুলের পড়াশুনা আর কলেজের পড়াশুনার মাঝে বিশাল তফাৎ। প্রথম ক্লাস টেস্টের সব গুলোতে ডাব্বা। ব্যাচে স্যারদের কাছে পড়লেও, আমার বুঝতে খুব সমস্যা হয়। কিছু না বুঝলে স্যারদের কাছে জিজ্ঞেস করব সেটাও হয় না। সবাই বুঝছে, আমি একা বুঝছি না, ব্যাপারটা লজ্জার। লজ্জা ভেঙে স্যারদের প্রশ্ন করা হয় না। বাবা মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কোথা থেকে এক গৃহ শিক্ষক যোগাড় করলেন। হাবাগোবা চেহারার গৃহ শিক্ষক। যদিও খুব ভাল পড়ান, তবুও কিছু ব্যাপার আমার কেমন যেন লাগত। আমি "স্যার" বললেই, তিনি এমন ভাবে চমকে উঠতেন, যেন আমি না জানি কি বলেছি। আমার স্যার আমাকে প্রথম দিনই বলেছেন, যদি একটা পড়া একবারে না বুঝো, দুইবার জিজ্ঞেস করবে, দুইবারে না হলে একশ বার। আমি বিরক্ত হব না।
আমার স্যার বিরক্ত হতেন না। তিনি বেশী মাত্রায় ধৈর্যশীল। অতি মাত্রায় লাজুক। একবার অসাবধানতায় আমাকে পড়া বুঝাবার সময়, আমার হাতের সাথে ওনার আঙ্গুলের স্পর্শ হওয়াতে উনি এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, বার বার করে বলছিলেন, সর‍্যি রিনি, সর‍্যি আমি। আমি ইচ্ছা করে কাজটা করি নি। আমি বুঝতে পারি নি। প্লিজ তুমি আঙ্কেল আন্টিকে কিছু বোলো না, প্লিজ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম তার আচরণ দেখে, এটা এতো বড় কোন ব্যাপার ছিল না। উনি কাজটা ইচ্ছা করে করেছিলেন তাও না। আমি সবসময় ওনার সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার চেষ্টা করতাম, উনি সবসময় একটা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করতেন। উনি বন্ধু হতেই পারেন, বেশ ভাল একটা বন্ধু। ওনার কারণে আমার পড়ালেখায় ফলাফল ভাল হচ্ছে। আমি যখন ওনাকে বলি, স্যার আপনি না থাকলে আমি ফেল করেই যেতাম, আপনার গল্প আমি সবার কাছে করি।
উনি তখন বলতেন, দেখো, এটা তেমন কিছু না। প্রথম দিকে কলেজে অমন খারাপ ফলাফল সবাই করেই। আমিও করেছিলাম।
আমার তা বিশ্বাস হত না। ওনার পক্ষে খারাপ ফলাফল সম্ভব না। আমাকে ওনার এক কথায় সবসময় আঁতেল বলেই মনে হত। উনি প্রতিদিন পড়ানো শুরু করার আগে, বইয়ের ঘ্রাণ নিতেন অনেকটা সময় ধরে, আঁতেল ছাড়া এসব আর কারও পক্ষে সম্ভব না।
আমি একবার ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ভালবাসার কোন মানুষ আছে স্যার?
উনি ওনার হাতের চায়ের কাপে রাখা চা ফেলে দিয়ে হতচকিয়ে গেলেন। চা মুছতে মুছতে বললেন, পড়ালেখাটা এতো কঠিন না বুঝলে? যখন পড়ালেখাকে ভালবাসবে, তখন দেখবে পড়ালেখাও তোমাকে ভালবাসা শুরু করবে। একটা কিছুর পিছনে লেগে থাকলে তা তোমার হবেই।
উনি সব কিছুই ঘুরে ফিরে পড়ালেখার দিকে নিয়ে যেতেন। এর মধ্যে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা চলে আসল কাছাকাছি। বাবা মা ওনাকে খুব পছন্দ করেন। আমার স্যার আমাকে পড়ানোর পাশাপাশি বি সি এস এর প্রস্তুতি নিতেন। আমার নিজের ফলাফলের প্রতি যতটা না বিশ্বাস ছিল তার চেয়ে বেশী বিশ্বাস ছিল স্যারের বি সি এস হয়ে যাবে।
হয়েছিলও তাই। আমার স্যার এখন ডি সি অফিসের সহকারী কমিশনার। যদিও ঢাকায় থাকেন না, চাকরির খাতিরে নেত্রকোনা আছেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ঢাকাতেই আছি। মাঝে একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমার স্যারের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার স্যার 'উনি' থেকে 'ও' হয়ে গেল। প্রেম করে বিয়ে করেছি তেমন না, ও প্রেম করার মত ছেলে না। যে ছেলেকে কাউকে ভালবাসে কিনা জিজ্ঞেস করলে, পড়ালেখায় ভাল ফলাফলের একশ উপায় বলে, তার পক্ষে প্রেমকে সম্ভব করা অসম্ভব। বাবা মেয়ের পছন্দ ছিল, পছন্দ ছিল আমারও। না করেনি আমার স্যারও। এখন সংসার চলছে, আমার মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি আর মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া আমার স্যারটার সাথে।
ভেবেছিলাম আগের পরের অনেক কিছুই লিখব ডায়েরিতে। মোটা ডায়েরি ভরে অনেক কিছু থাকবে, ছোট ছোট অনেক কিছু, আমার কথা, ওর কথা, অনেকের কথা। কিছুই হল না। ডায়েরি লেখা এখানেই সমাপ্ত। অনেক কিছুই লেখা হয় না, চাইলেই লিখে প্রকাশ করা যায় না।
----------

সেদিনের সে ফোন আমার জন্য ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে নি। উল্টা ঝাড়ি খেয়েছি। ফোন দিয়ে কর্কশ গলায় দেয়ালে পোস্টার লাগানোর দায়ে এক লোক এক গাদা ধমক, বকা যাচ্ছে তাই বলে দিল। "দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ" দেখেও কেন পোস্টার লাগালাম সে ব্যাপারে জবাব চাইল। পরবর্তীতে আবার পোস্টার লাগালে পুলিশে দিবে বলে শাসিয়ে দিল। দেয়ালে পোস্টার লাগালে পুলিশে ধরে কিনা, পুলিশে ধরলেও কোর্টে চালান করে কিনা, করলেও দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিচার করতে জর্জ সাহেব উকিলেরা আসে কিনা, এই অপরাধে জেল জরিমানা হয় কিনা আমার জানা ছিল না, শুধু জানা ছিল এই অপরাধ করতে হবে। করাটা জরুরী। এতো অপরাধ করেও না আমি পাচ্ছিলাম কোন শাস্তি, না পাচ্ছিলাম কোন পুরষ্কার। "সবুরে মেওয়া ফলে", আমার মেওয়া কোনভাবেই ফলছিল না। মেওয়া গাছের পিছনে এতো সময়, এতো পরিশ্রম করেও না। আমার ভালবাসা দিনে দিনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, দেয়ালে সাঁটানো দেয়ালিকার প্রিন্টের হরফের মত।
সে ফোনের বহুকাল পরে আমার ফোনে আবার ফোন এসেছিল। কতকাল পরে জানি না। এতো বছরের হিসাব আমি রাখি না। শুধু জানতাম আমি একটা মোহে ছিলাম, সে মোহ কাটছিল না। ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি গলায় বলেছিল, হ্যালো, মিনহাজ বলছেন?
- জ্বি।
- আপনি পড়ানোর জন্য বোধহয় একটা পোস্টার লাগিয়েছিলেন?
- জ্বি, জ্বি।
- আমার মেয়েটা ক্লাস টু তে পড়ে। ওকে পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক খুঁজছিলাম।

ফোনটা করেছিল রিনি। আমার এতদিনের ইচ্ছে, এতো দিনে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রিনি ওর ক্লাস টু তে পড়া মেয়েটাকে পড়াবার জন্য আমাকে ফোন করেছে। রিনির বিয়ে হয়েছে। ওকে যে ছেলেটা পড়াত সেই ছেলেটার সাথেই। ছেলেটার নাম আমি জানি না। যে টুকু জানি ছেলেটা সরকারী চাকরি করে, যে টুকু জানি রিনি ভাল আছে, যে টুকু জানি ওদের একটা মিষ্টি করে মেয়ে আছে। আর যে টুকু জানি আমি ভাল নেই। রিনির বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম, দাওয়াত ছাড়াই গিয়েছিলাম। রিনিকে বিয়ের সাজে আরও সুন্দর লাগছিল সেদিন। তবু সে সুন্দর দেখে আমার বুকের ভিতর জ্বালা করছিল, কোথায় যেন একটা ব্যথা করছিল, আমি সে ব্যথাটা ধরতে পারছিলাম না, ছুঁতে পারছিলাম না, বলতেও পারছিলাম না, "ব্যথা পাবার কিছু নেই। সত্যি কিছু নেই।" রিনির শ্বশুর বাড়ির ঠিকানাও যোগাড় করেছিলাম, অকারণে রিনির শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেরাতাম। রিনি আর ওর স্বামীকে দেখতাম। বেশ মানিয়েছে দুজনকে। আমার মত কাউকে ঠিক মানাতো না। রিনির একটা মেয়ে হল, সে মেয়েটা স্কুলে ভর্তি হল। আবার আমার দেয়ালিকা সাঁটানো শুরু হল। আমি রিনিকে তাও দেখি, মেয়ে নিয়ে স্কুলে যায়, মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। আসা যাওয়ার পথে আমার সাথে কখনও চোখাচোখি হয় না। ও দৃষ্টি আমার দৃষ্টিতে পড়বার জন্য নয়, থমকে থাকার নয়, চমকে গিয়ে আটকে যাবার নয়।
আমি পাস করেছি কোনমতে। বাবা, মা নেই, প্রেমিকা নেই। তাই কেউ চাকরি করার জন্য তাড়াও দেয় নি। চাকরি আমি করিও নি, করিও না। টুকটাক টিউশনিতে চলছে দিন। একদিন সে দিন গুলো থমকে যাবে, চমকে ঠিক আটকে যাবে। সে খবর কেউ রাখবে না, সে খবর কেউ কাউকে দিবেও না।
আমি শেভ করে পরিপাটি হয়ে রিনিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রিনির মেয়েকে পড়াব, আর একটা টিউশনি বাড়ল, বাড়তি কিছু টাকা, আর একটু ভাল ভাবে চলা।
রিনিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেয়ালিকাটা এখনও লেগে আছে দেয়ালের সাথে। সেখানে আমার নাম, মোবাইল নাম্বার, আর পড়াতে চাই আমি সে আকুতি। মানুষ খুব মন থেকে কিছু চাইলে, চেষ্টা করলে, একটা কিছুর সাথে লেগে থাকলে, তা পায়। আমি চেয়েছিলাম আমার দেয়ালিকা পড়ে কেউ আমাকে ফোন করুক, রিনির বাসায় যাবার আমার অনুমতি হোক। আমি তা পেয়েছিও। হয়ত এর বেশী কিছু চাই নি, চেষ্টাও করি নি, তাই পাই নি। আমি এক টানে দেয়ালিকাটা তুলে ফেললাম। আমার চাওয়া পূরণ হয়েছে, পাওয়ার আর কিছুই নেই এই দেয়ালিকা থেকে। মাটিতে দেয়ালিকাটা ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে আসলাম। রিনিদের বাসায় গেলাম না, যাবও না হয়ত। কড়া রোদের মাঝে ছাতা ছাড়া আমি চলতে লাগলাম, দেয়ালিকাটা পিছনে ফেলে। দেয়ালিকাটা একদিন হারিয়ে যাবে, গোপনে খুব গোপনে। ঐ দেয়ালিকার খোঁজ কেউ করবে না। ঐ দেয়ালিকার আবেদন কেউ কখনও বুঝতেও পারে না। খুব সাবধানে সবাই এড়িয়ে চলে। দেয়ালিকার মত কিছু মানুষ সারাজীবন কিছু মোহে আটকে থেকেও কখনও বোঝাতে পারে না, আমি কী চাই, আমার কী দরকার, আসলেই কতটা দরকার। খুব নীরবে সে আবেদন হারিয়ে যায়, মূল্যহীনের তালিকায় নিঃশব্দে যোগ হয়। হৃদয়ের অন্তর্দহনে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কোথাও বাসা বাঁধে না। টুপ করে হারিয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায়।

- রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬

মাদিহা মৌ বলেছেন: আগেও যেন পড়েছি।

কলম চলুক …

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: গত রাতেই লিখলাম।
হয়ত দৃশ্যপট গুলো পরিচিত।
ধন্যবাদ।

২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: লেখনি চমৎকার, কাহিনী নয়।

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: অসাধারন লেগেছে। দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে এসে ভেবেছিলাম হ্যাপি এন্ডিং, তৃতীয় চ্যাপ্টারে বিয়ে হয়নি দেখে ধাক্কা খেয়েছি। আরো বড় ধাক্কা খেয়েছি শেষ পর্যন্ত রিনির মেয়েকে না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায়।

ভাল লাগা রইল গল্পে।

আপনার কিবোর্ডে ঝড় উঠুক অনবরত। শুভকামনা :)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: মনের টানা পোড়নে সব হয়ত সম্ভব হয় না, সব সম্ভব হয়েও উঠে না, এলোমেলো হিসেবে।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.