নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: অস্তিত্ব

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:২৬


অদ্ভুত এ শহরের রঙচটা দেয়ালে, ভেঙে পড়া স্বপ্নেরা বিলীন হয়ে গেলে হয়ত মেনে নেয়াই যেত। মেনে নেয়া যেত খুব ভোরে পকেটে রাখা পাঁচ টাকায় কেনা চায়ের ধোঁয়ায় মিলিয়ে যাওয়া। মেনে নেয়া যেত প্রিয়তমার করা মিথ্যে কেসে ফেঁসে গিয়ে, অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ার হয়ে যাওয়া। কিংবা মেনে নিলে ক্ষতি ছিল না, কনকনে শীতের রাতে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে গলা ছেড়ে ‘বেঁচে থাকার গান’ গাইবার সময়, ঝুম বৃষ্টির ভিজিয়ে দেয়া। হয়ত কাছে থাকা মানুষটা অবহেলায় দূরে সরিয়ে দিলেও, মেনে নিতে কোনো বারণ ছিল না। কিন্তু মেনে নেয়া যায় নি প্রিয়তমার পাশে অন্য পুরুষকে কোনোভাবেই। নবীন পুরো শহর খুঁজে সুনীলের মতন ১০৮ টি নীলপদ্ম খুঁজে আনতে পারে নি, কোন অজুহাতে ধরে রাখতে পারে নি তমাকে। ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে এই ঘুপচি গলির মোড়ের চায়ের দোকানে। ধোঁয়া ওঠা দুধ চায়ের সাথে, সিগারেটের ধোঁয়া নামিয়ে দিচ্ছে গলা বেয়ে। এই অভ্যাস কিংবা বদভ্যাস তমাকে হারাবার বেদনায় আসে নি, এসেছে আরও বছর চারেক আগেই যখন বাবা মায়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। কেউ বুঝতে চায় নি নবীনকে। নবীন শুধু বলেছিল আর পারছে না ও সংসারের ঝামেলা গুলো বয়ে বেড়াতে। ধার দেনায় জর্জরিত একটা পরিবারকে টেনে তোলার সাধ্য নবীনের নেই। সে দিন গুলোতে মোটে সাত হাজার টাকা উপার্জন হতো দুটো টিউশনি হতে, ও টাকায় নিজের চলে ফিরে বেড়ানোটা হয়ে গেলেও, বাবা মায়ের প্রতি মাসে আবদার পূরণ করাটা সম্ভব ছিল না। সে কথা জানাতেই বাবা রেগে গেলেন, মা করুণ চোখে নবীনের দিকে ফিরে শুনিয়ে দিলেন কীভাবে কত কষ্ট করে মানুষ করেছেন নবীনকে। সে সব নবীন কীভাবে ভুলে যেতে পারে? কীভাবে পারে এভাবে কথার পিছনে কথা ছুড়ে তাদের কষ্ট দিতে?
নবীন গলে যায় নি সে কথায়, আরও কঠোর হয়ে দু চারখানা উঁচু গলায় কথা শুনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিল। আর ফিরে যায় নি।
ফিরে এসেছিল তমার কাছে। কী দুরন্ত সময় গুলো কাটিয়ে দিয়েছিল দুজনে, হুড খোলা রিকশায় কিংবা মতি মিয়ার মোড়ের ঐ বটতলায়। এক কাপ চা দুজনে ভাগ করে খাবার সময় আড়চোখে লোকে তাকাত, দূর থেকে আদিখ্যেতায় হাসাহাসি করত। নবীন আলতো করে তমার হাত ধরে বুঝিয়ে যেত, লোকের কথায় কিছুই যায় আসে না।
এত ভালোবাসা, এত আহ্লাদ, এক নিমিশে হারিয়ে যায় নি। সময়ে সময়ে বদলে গিয়েছে। নতুন কিনে আনা পোশাকের যে যত্ন থাকে, সময়ের সাথে মলিনতায় যেমন সে যত্ন অযত্ন হয়ে যায়। ঠিক তেমন কি অযত্নে হারিয়ে গিয়েছিল ভালোবাসা? নবীন হয়ত তমার দূরত্বে বার কয়েক বলেছিল কবিতার ভাষায়, জলের আবেগে তুমি চ’লে যাও— জলের উচ্ছ্বাসে পিছে ধুধু জল তোমারে যে ডাকে।
তমার জীবনে আমার আগমনটাকে কাকতালীয় বলা যায় কি? নয়ত এত ভালোবাসায় আমার কারণেই তো ভাঙন ধরে গেল। দুজনের নিশ্বাসের যে অবিরাম বিনিময় ঘটত, তা তো আমার উপস্থিতিতেই থেমে গেল।
তমার সাথে আমার পরিচয় কিন্তু ওর বাবার মাধ্যমেই। আমাকে একদিন বাসায় নিয়ে গিয়ে তমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি বার কয়েক চোখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও, চোখ আটকে রেখেছিলাম তমার দিকে। হৃদয় হতে বেজে যাওয়া আমার আক্ষেপের সুর তমা কি সেদিন শুনতে পেয়েছিল? বুঝতে পেরেছিল, আরও আগে তমার সাথে কেন পরিচয় হয় নি সে বেদনায় আমি পুড়ছিলাম? তবু আমার মাঝে দৃঢ় একটা স্পৃহা ছিল, যত ভালোবাসার বাঁধনেই বাঁধা থাকুক না কেন, তমাকে আমি ফিরিয়ে আনত পারব।
ঐ হুড খোলা রিকশায় নবীনের সাথে যখন ঘুরে বেড়াত, কিংবা এক কাপ চায়ে দুজনের ভাগাভাগি চলত, আমি দূর থেকে ওদের দেখতাম। সে দৃশ্য দেখে আমার অন্তরে ‘দুজনের ভালোবাসা চলুক না’ নামক যে যুক্তি উঁকি দিত, আমি তা অনেক কষ্টে উড়িয়ে দিতাম। এ পৃথিবীতে মাঝে মাঝেই স্বার্থপর হতে হয়, নিজের কাজটা করে যেতে হয়।
আমার আর তমার মাঝের কথার বিনিময়ে সময় গুলো আমার দুরন্ত যেতে লাগল। মাঝে মাঝেই নবীনের সাথে দেখা করবার সময় গুলোকে বেছে নিতাম। তমা ভুলে যেত মাঝে মাঝেই নবীনের কথা। নবীনের তাতে প্রবল অভিমান জমত, হয়ত নেমে আসত বুকে পৃথিবীর অমানিশার রাত। সে রাতের আঁধারে হাতড়ে খুঁজে বেড়াবার মানুষটা পাশে থাকত না, ধীরে ধীরে দূরে সরে যেত।
তমার সাথের সম্পর্কটায় চিড় ধরতে লাগল, আমার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই। অসহায় নবীনের হয়ত কিছুই করার সাধ্য ছিল না, ঐ মতি মিয়ার বটতলার মোড়ে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া।
অপেক্ষার আঁধারে জোনাকির মতন কখনও কখনও তমার দেখা নবীন ঠিকই পেত, তবে তা ঐ নিকষ আঁধারকে বিচূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট কখনই ছিল না। আমি সেখানে বাধা হলাম, তমার আলোর সবটা একসময় আমাকে ঘিরে তৈরি করলাম। আমার মৌন আকাঙ্ক্ষার প্রবল বাস্তবায়ন একসময় ঠিকই হলো। নবীন তমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল কিংবা তমা নবীনকে জীবন থেকে তাড়িয়ে দিলো। একটা কাল্পনিক চরিত্র থেকে তমাকে বের করে আনার কাজটায় ঠিকই সফল হলাম। তমা জানত অথচ মানত না, ঐ বাসায় রাগারাগি করে আসার পরই নবীন এক জ্যোৎস্নার রাতে ট্রাকের নিচে পড়ে ধুপ করে মরে গেল। চাঁদের রূপোলী আলোয় কালচে হয়ে থাকা লালচে রক্ত গুলো নবীনের বিদায় বলে দিয়েছিল। সবাই অশ্রুজলে নবীনকে ভাসিয়ে দিলেও, তমা অশ্রুহীন নির্বাক চোখে নবীনকে আকড়ে ধরেছিল। মতি মিয়ার মোড়ে চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা দুজনে ভাগ করে খেত, অদৃশ্য কারও সাথে কথার বিনিময় দেখে লোকে হাসত। অদৃশ্য নবীন সে হাসাহাসি তমাকে উড়িয়ে দেবার সাহস দিত। হুড খোলা রিকশায় অদৃশ্য কাউকে নিয়ে তমা ঘুরে বেড়াত। টানা পোড়নে থাকা নবীনের বদলে তমাই ভাড়া মিটিয়ে দিত।
তমার বাবা আমার শিক্ষক, তিনি আমার চেম্বারে এসে যেদিন তমাকে সুস্থ করে দেবার আবদার করলেন, আমি না করতে পারি নি। কথা দিয়ে দিলাম। কথা রাখলাম।
আমার বাম পাশে বসা তমার সাথে এক কাপ চা দুজনে আমরা ভাগ করে খাচ্ছি। তমার জীবনে এখন আর নবীনের কোনো অস্তিত্ব নেই। এই চায়ের দোকানে শুধু আমরা দুজন মানুষ এখন। তমা জানে নবীন ছিল শুধু কিছু দিনের কল্পনা।
কিন্তু প্রিয়তমার পাশে অন্য পুরুষকে এত সহজে মেনে নেয়া যায় কি? ব্যর্থ হয়ে নবীন আবার ফিরে এসেছে এই ঘুপচি গলির মোড়ের চায়ের দোকানে। ধোঁয়া ওঠা দুধ চায়ের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া নামিয়ে দিচ্ছে গলা বেয়ে। বসে আছে আমার ঠিক ডান পাশে, যার অস্তিত্ব এখন অনুভব করছি শুধু আমি।

রিয়াদুল রিয়াদ

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:০৭

স্মৃতিভুক বলেছেন: বাহ, বেশ অন্যরকম একটা গল্প তো! ট্যুইস্ট আছে গল্পটাতে। একই রকম না হলেও কাছাকাছি প্লটের কোনো এক বাংলা মুভি মনে হয় আছে; যেখানে ডাক্তার নিজেই পরে মানসিক রোগীতে পরিণত হন (ঠিক মনে নেই, উত্তম-সুচিত্রা মনে হয় অভিনয় করেছিলেন)।

আপনার গল্প লেখার স্টাইলটা বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। সিনেমাটা দেখি নি, নিচে একজন নাম বলেছে দেখলাম। অবশ্যই দেখব।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:১৭

কামাল১৮ বলেছেন: @স্মৃতিভুক, দীপ জ্বেলে যাই

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: দেখব সিনেমাটি

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৪৫

স্মৃতিভুক বলেছেন: ধন্যবাদ, কামাল।

দীর্ঘদিন থেকেই আপনার মন্তব্য পড়ছি। বর্ণিল জীবন আপনার; কতরকম অভিজ্ঞতায় ভরপুর। তার কিছু কিছু যদি আপনি শেয়ার করতেন আমাদের সাথে, আমরা এই প্রজন্ম বড়োই উপকৃত হতাম|

প্রচুর পড়াশুনা করা মানুষ আপনি এবং তা আবার তথাকথিত একাডেমিক পড়াশুনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি মুক্তিযোদ্ধা, তাও কথা প্রসঙ্গে বলেছেন - নিজেকে জাহির করার জন্য নয়।

আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধের অন্যতম কারণ - এতকিছুর পরেও আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র হামবড়া ভাব কখনো দেখিনি।

ভালো থাকবেনা আপনি, সুস্থ্য থাকবেন।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: নবীন এবং তমার গল্প ভালো লাগলো।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: অনেক সুন্দর একটা ছোটগল্প উপহার দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৫১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার গল্পের হাত ভালো।

১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৫১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালোবাসা নিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.