নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
"শালার কানের ভিতর দুইটা মার তো।"
ওস্তাদের কথা শুনে এসে তার সাগরেদ আমার দুই গালে মোট তিনটা ধাপ্পড় মারলো। বাম গালে দুইটা, ডান গালে একটা। ওস্তাদ মারতে বলেছে দুইটা, তাও আমার কানের ভিতর। সাগরেদ সে কথা অমান্য করে, তিনটা থাপ্পড় মেরেছে, সেটাও আবার গালের উপর।
ওস্তাদের নাম 'কালা হাবীব।' কিন্তু ওস্তাদ দেখতে কোনোভাবেই কালো নয়। বড়জোর টেনেটুনে উজ্জ্বল শ্যামলা বলা যেতে পারে। তার চেয়ে আমার নামের আগে কালা লাগিয়ে 'কালা শামীম' ডাকলে মেনে নেয়া যেত। সাগরেদ পরিচিত 'বাবু সন্ত্রাস' নামে। যদিও এই যাবতকালে আমি তাকে কোনো সন্ত্রাসজাতীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলতে আমার গালে তিনটা থাপ্পড় মেরেছে একটু আগে, এই। এরচেয়ে আমার নাম 'শামীম সন্ত্রাস' হিসাবে পরিচিতি পেলে তা বেশি মানানসই হত। আমি গত কয়েক মাসে এমন কিছু কাজ করেছি, যেগুলো অতি অবশ্যই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে দারুণ 'পারফর্মেন্স' দেখাবার পরও কালা হাবীব আমাকে বেঁধে রেখেছে এখানে, বাবু সন্ত্রাস এসে ধামধুম করে থাপ্পড় মেরে যাচ্ছে। ওস্তাদের কথা অমান্য করে তাও আবার। আমার তা সহ্য হলো না। আমি ওস্তাদকে ডেকে বললাম, "ওস্তাদ, বাবু কিন্তু বাড়াবাড়ি করতেছে। আপনি মারতে বললেন কই, আর ও মারলো কই একবার দেখছেন?"
ওস্তাদ বাবু সন্ত্রাসের দিকে আরেকবার তাকাল। বাবু সন্ত্রাস এসে আমার সামনে দাঁড়াল সোজা হয়ে। ওর বাম হাতে চকচকে একটা চাকু। ডান হাত খালি। এমন একটা চকচকে চাকু আমার কাছেও থাকত বেশিরভাগ সময়, যদিও তা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় নি কখনও। আমার কাজ কারবার ছিলো সব বোমা টোমা নিয়ে, সেখানে চাকু দিয়ে কী হবে? বাবু সন্ত্রাস আমার নাক বরাবর পরপর দুইটা ঘুষি বসিয়ে দিলো সজোরে। এবার আমি আর নিজেকে সামলে নিতে পারলাম না। হালকা করে একটা ব্যথায় কাতরে ওঠার শব্দ করে উঠলাম। মনে হলো ব্যথাটা আমার নাক বেয়ে সোজা মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত করেছে। নিমিষেই চোখের সামনের সব কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে। প্রখর রোদের দিনে সূর্যের দিকে তাকালে চোখের সামনে আলোর যেমন একটা ঝটকা এসে লাগে, কেমন একটা অতি আলোর ঝটকা এসে আমার সব অন্ধকার করে দিচ্ছে। বাবু সন্ত্রাস ডান হাতে চাকুটা এনে আমার সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছু একটা বলছে, আমি তা শুনতে পারছি না, মুখের নড়াচড়াতেও বুঝতে পারছি না। শুধু আবছা ভাবে বাবু সন্ত্রাসের পিছনে একটা নারী মুখ দেখতে পেলাম, বেশ পরিচিত একটা মুখ।
এভাবে আমাকে বেঁধে ধরে মারার পিছনে কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কালা হাবীব যে সন্ত্রাসী গ্রুপ চালায়, এদের মাঝে এই ধরণের ঘটনা আমি আগে দেখিনি। বরং সবসময় কালা হাবীবকে আমার বেশ শান্তিপ্রিয় সন্ত্রাসী বলেই মনে হয়েছে। ছোটকা ছাটকি কিছু বড় অপারেশন ইদানীং করা শুরু করেছে যদিও, তবু সেসবকে অত গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে মেনে নেয়া যায় না। সেসবের সব গুলোই আমি করেছি, নিজ হাতেই করেছি। এই গ্রুপের 'রেপুটেশন লেভেল' ডি থেকে বি তে আমিই এনে দিয়েছি। রেপুটেশন লেভেল জিনিসটা নির্ধারণ করে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে প্রভাবশালি গ্রুপ – ‘ডাইলেমা’। প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাবার পরে ডাইলেমার কাছে তার বিস্তারিত জানাতে হয়। মাঝে মাঝে ডাইলেমা থেকেও কিছু মিশন ঠিক করে দেয়া হয়। কালা হাবীবের শেষ তিন মাসে রেপুটেশন লেভেল বেড়েছে শুধু আমার জন্যই। গত তিন মাসে আমি মোট তিনটি সফল বোমা হামলা চালিয়েছি। তিনটি বোমা হামলাই দারুণ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল মিডিয়া জুড়ে। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ মিডিয়ার ধারণা এই কাজ আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের। কিছু সরকারপন্থি মিডিয়া বলছে, এই কাজ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অতি অবশ্যই বিরোধী দলের। দেশের ভাব মূর্তি নষ্ট করার পায়তারা। তবে আমাদের লক্ষ্য তেমন গুরুতর কিছু ছিল না, শুধু মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আমাদের গ্রুপের রেপুটেশন লেভেল বাড়িয়ে নেয়া।
কালা হাবীবের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল মানুষ যাতে দু এক জনের বেশি মারা টারা না যায়।
প্রথম বোমা হামলা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে, ইদের ঠিক পরপর। মার্কেট সেভাবে খুলে নি, লোক সমাগম কম। সুযোগ বুঝে পরপর দুইটা ককটেল বোম ফাটিয়ে দিলাম। নিহত শূন্য, আহত এক। যে লোক আহত হয়েছে, তাকে আমি দেখেছি। ফাঁকা জায়গা পেয়ে, ড্রেনের মধ্যে প্রস্রাব করছিল। বোমের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে, প্যান্টের চেইন না লাগিয়েই, ড্রেনের মধ্যে ঝাপ।
দ্বিতীয় হামলা বসুন্ধরা সিটির সামনে, আমাকে হামলা করতে বলা হয়েছিল মাসের প্রথম সোমবার। প্রথম সোমবার আমি ডায়রিয়া বাধিয়ে বাসায় স্যালাইনের পর স্যালাইন খেয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার ছাড়া কোনো গতি আমার ছিলো না। হামলা করার পর জানতে পারলাম সেদিন বসুন্ধরা সিটি বন্ধ। নিহত শূন্য, আহত এক। আহত হয়েছে, ককটেল বোমের শব্দে চলন্ত রিকশা থেকে ভয়ে ঝাপ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়া এক যুবতী।
দুই হামলার পরই হুলস্থূল লেগে গেল। সব পত্রিকা অনুসন্ধানী সব রিপোর্ট ছাপা শুরু করল। এক টিভি চ্যানেল সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘোষণা দিলো - এই কাজ কোনো নারীর, বোরকা পরিহিত নারীর। ছেলে হয়ে বোরকা পরে থাকতে আমার যে খুব একটা ভালো লাগত, ব্যাপারটা কিন্তু তেমনও নয়। তবে বোরকার আড়ালে কে আছে, তা বের করতে পারবে না পুলিশ কিংবা মিডিয়া এটাই আসল কথা। এই আলোচনা নিয়ে এসে দিলো কালা হাবীবের গ্রুপকে - ডি থেকে বি রেপুটেশন লেভেল। এ লেভেলে গেলেই ডাইলেমা গ্রুপের ডনের সাথে দেখা করার সুযোগ মিলবে। তবে বি থেকে এ হওয়াটা অতটাও সহজ কোনো কাজ নয়। কালা হাবীবের গ্রুপে জনবল আমি সহ মোটে ছয়জন। কালা হাবীবসহ পাঁচ জনের আমি কোনো কাজ দেখিনা। যা করার করে যাচ্ছি আমি।
তৃতীয় হামলার নির্দেশ আসলো সরাসরি ডাইলেমা থেকে, এই হামলা সফলভাবে করতে পারলেই এ লেভেলে যাওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হয়ে যাবে। ডাইলেমার ডনের সাথেও দেখা নিশ্চিত। এবারের টার্গেট নিউ মার্কেট। দিন বেছে নেয়া হলো শুক্রবার। লোকে লোকারণ্য দিন; বোমা ফুটবে, মানুষের দৌড়াদৌড়ি হুলস্থূলের মাঝে এক দুই জন নিহত হবে। দারুণ! আমি সঠিক সময়ে নিউ মার্কেটে বোমা ফেলে চলে আসলাম। মানুষের দৌড়াদৌড়িতে জনা পঞ্চাশেক আহত, পায়ের নিচে পড়ে মৃত চার। ব্যাস এবার আর এ লেভেল ঠেকায় কে? কিন্তু ঘটনা ঘটল উলটো। হামলা করে আসার পর আমাকে এভাবে আটকে রাখা হলো, বেঁধে ধরে পিটুনি দেয়া হলো। অথচ আমি আমার কাজ করেছি পুরোটাই ঠিকঠাক।
বাবু সন্ত্রাসের ঘুষি খেয়ে, আমি কখন জ্ঞান হারিয়েছি জানি না। যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসলো, দেখলাম আমি না শুধু, আমার পাশে বেঁধে রাখা হয়েছে বাবু সন্ত্রাসকেও। কিছু একটা দিয়ে বাড়ি মেরে চোখের ঠিক নিচে কালশিরা বসিয়ে দিয়েছে। বাবু সন্ত্রাস আমার দিকে তাকিয়ে আলতো করে একটা হাসি দিলো, "ধরে পড়ে গেছ।"
আমার বাবু সন্ত্রাসের হাসি দেখে মেজাজ গেল ভড়কে। শালায় বলে কি না, ধরা পড়ে গেছি। ওকে যে বেঁধে রেখেছে সে খবর নাই, এসেছে আমার ধরা পড়া নিয়ে মাতামাতি করতে।
আমি রাগ সামলে সামনের দিকে তাকালাম, কালা হাবীবের সাথে বাইশ বছর বয়সী এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। আমি এই দাঁড়িয়ে থাকা যুবতীকে চিনি, জানি। মিলি। মিলিই আমাকে সাহায্য করেছে কালা হাবীবের গ্রুপে ঢুকবার ব্যাপারে। সবসময় মিলিকে মনে হয়েছে ও আমাকে সাহায্য করছে। কিন্তু এখন আমি দ্বিধান্বিত, মিলি আসলে কার দলের হয়ে কাজ করছে।
কালা হাবীব আমার সামনে এসে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়াল। আমার বাম কাঁধের উপর ওর ডান হাতটা রেখে বলল, "কেমন আছিস?"
আমি ছোটো করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। কী উত্তর দেয়া উচিত চিন্তা করে যাচ্ছি। কালা হাবীবের পিছনে তার আরও তিন সাগরেদ দাঁড়িয়ে আছে। তিনজনের হাতেই পিস্তল। আমি এই প্রথম এদের হাতে পিস্তল দেখলাম। প্রত্যেকের চেহারার ছাপ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যে কোনো সময় গুলি মেরে আমার খুলি উড়িয়ে দেবার জন্য এরা মুখিয়ে আছে।
আমি আস্তে করে জবাব দিলাম, "ওস্তাদ। আমি আপনার কথা মত কাজ করলাম। তাও এভাবে আমাকে বেঁধে রাখছেন কেনো?"
কালা হাবীব পকেট একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, "আমাদের গ্রুপের তথ্য কোথায় কোথায় দিয়েছিস বল?"
"ওস্তাদ, বিশ্বাস করেন পুলিশের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই।"
কালা হাবীব আমার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে বাবু সন্ত্রাসের দিকে সরে গেল। আমার দিকে তাকিয়েই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
"হাহাহা, তোর পুলিশের সাথে কোনো যোগাযোগ নাই, আরে তুই নিজেই তো পুলিশ রে ভাই। তোর ভয়ে আমাদের হাগা মুতা সব বন্ধ হয়ে গেছে।"
কালা হাবীব সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে একটা স্যালুট ঠুকে দিয়ে, ক্রোধে আক্রোশে আমার থুতনিতে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।
"কুত্তার বাচ্চা। আমার সাথে দুই নাম্বারি। আমাকে চিনিস তুই?"
আমি চুপ করে থাকি, বলি না কিছু। কালা হাবীব বলে যায়, "বাইনচোদ, আবার নিজের নাম রাখছিস শামীম। ঐ তোর নাম শামীম?"
আমি দৃষ্টি ঘুরিয়ে মিলির দিকে তাকালাম। মিলি এই কাজটা না করলেও পারতো। আমি বিশ্বাস করেছিলাম মিলিকে। এই আন্ডার গ্রাউন্ডের খবরাখবর এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে আদান প্রদানের জন্য মিলি সোর্স হিসাবে কাজ করে। মেয়ে মানুষ, সুন্দরি, ওভাবে কেউ সন্দেহও করে না। আমার সাথে মিলির পরিচয় আরও অনেক আগে থেকেই। টুকটাক তথ্য আমাকে দিতো। আমি তার বিনিময়ে মিলিকে খুশি করে দিতাম, তথ্যের উপর নির্ভর করতো টাকার পরিমাণ। সে তথ্যের সব যে আমি আমার কাছ থেকে খালাস করে দিতাম, তেমন না। মিলির সাথে দেখা হওয়াটা আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেলো একটা সময়। নিয়মিত দেখা না হলে কেমন যেন লাগত। মিলিও ব্যাপারটা বুঝতে পারত। শেষ দিকে এসে মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমনিই দেখা সাক্ষাত করে যেত। কোনো তথ্য দেবার জন্য না, আমার কাছ থেকে কোনো অর্থের জন্য না। আমি মিলির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম দিন দিন। মিলির মত অতি সুন্দরি মেয়ের প্রতি যে কারও দুর্বলতা আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমি সে দুর্বলতা ঢেকে রাখার যথা সম্ভব চেষ্টা করতাম। একটা সময় আমার কালা হাবীবের গ্রুপে জয়েন করাটা প্রয়োজনীয় হয়ে গেলো। উপর মহলের নির্দেশ। আমার হাতে একমাত্র উপায় মিলি। মিলির সাথে সব গ্রুপের সবার বেশ উষ্ণ সম্পর্ক। এমনকি এটাও শোনা যায়, ডাইলেমা গ্রুপের ডনকেও একমাত্র মিলিই চিনে, আর কেউ না। কারও সামনে ডন দেখা দেয় না। মিলি যদিও তা অস্বীকার করে গিয়েছে সবসময়। মিলির কাছে কালা হাবীবের গ্রুপে ঢুকিয়ে দেয়ার আবদার করার পর বলেছিলো, "একদম নতুন গ্রুপ এটা। ডি লেভেলের। তুমি বল তো, ভালো কোথাও আমি ব্যবস্থা করে দেই।"
"না। আমার ঐ গ্রুপেই জয়েন করতে হবে। এতোটুকু হেল্প করো প্লিজ। চুমো খেতে তো বলছি না। তুমি পারবে এমন কিছুই বলছি।"
মিলি ঠোঁটের কোণায় অবিশ্বাসী এক হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু এদিক ওদিক দেখে আস্তে করে আমার কাছে এসে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে যায় আমার ঠোঁটে।
"আমি সব কিছুই পারি।"
আমি নিস্তব্ধ নিস্তেজ হয়ে বসে থাকি, আমাকে অনুভূতিহীন করে রেখে মিলি উঠে চলে যায়। পরদিন খবর আসে, কালা হাবীবের গ্রুপে আমাকে জয়েন করতে বলেছে। মিলিই পরিচয় করিয়ে দেয়, "পাক্কা মাল ওস্তাদ এইটা। যা অপারেশন দিবেন, ক্লিয়ার কাট করে দিবে শামীম। কোনো ভেজাল নাই।"
আমার কালা হাবীবের গ্রুপে জয়েন ফাইনাল হয়ে যায়। আমার নাম মিলিই ঠিক করে দেয় - 'শামীম'। আসল নাম নিয়ে জয়েনে ঝামেলা আছে। সেই মিলি এসেই আমার আসল পরিচয় জানিয়ে দিলো।
মিলি এগিয়ে আসলো আমার দিকে। এসে দাঁড়াল কালা হাবীবের পাশে। একটা হাত ধরে কালা হাবীবের বলে গেল, "ঝামেলা রেখে লাভ নাই," আমাকে দেখিয়ে বলে, "মামলা খতম করে দেন।"
কালা হাবীব মাথা নেড়ে সায় দেয়। আমার ব্যাপার ফাইনাল। এবার বাবু সন্ত্রাসের পালা। মিলিকে শরীরের সাথে আর একটু মিশিয়ে নিয়ে কালা হাবীব বলে, "এইটার কী ব্যবস্থা করা যায়?"
মিলি নিজেকে একটু ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, "বাবু সন্ত্রাস আপনার লোক। এর ব্যাপারে আমি অমন কিছু জানি না। আপনার মনে হয়েছে ও দুই নাম্বারি করেছে, এখন আপনি যা করেন ওকে।"
কালা হাবীব বাবু সন্ত্রাসের দিকে ফিরলেন, "মোসাদ্দেক, তুই এই কাজটা কেনো করলি? তোরে আমি কত বিশ্বাস করতাম বল? আমাদের এই প্রজেক্টে শুধুমাত্র তোকে বিশ্বাস করতাম বলেই আমার সাথে এনেছি, এনেছি কি না বল?"
আমার বিস্ময় কাটছে না। আমার আসল নাম যেমন শামীম নয়, সাব্বির। তেমনি বাবু সন্ত্রাসেরও আসল নাম, মোসাদ্দেক।
বাবু সন্ত্রাস মাথা নিচু করে বলে, "স্যার, আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি গোঁজামিল করে ফেলছিলাম।"
"ভুলটা কোথায়? ডাইলেমা থেকে নির্দেশ আসলো নিউ মার্কেটে বোমা ফেলতে হবে। মিলি, মিলি নিয়ে আসলো খবর। আমি শামীমকে বললাম, সাভারের নিউ মার্কেটের সামনে বোমা ফেলতে। যেনো ডাইলেমা থেকে যদি বলে কেনো সাভারে ফেলা হলো, আমরা বলতে পারি নিউ মার্কেট বলতে আমরা সাভারের নিউ মার্কেটই বুঝেছি। শামীম কী করল? ঢাকার নিউ মার্কেটে বোমা ফেলে আসলো। যেখানে ডাইলেমা থেকে ফেলতে বলল। ওকে নিয়ে গেল নিউ মার্কেটে কে? তুই।"
বাবু সন্ত্রাসের মাঝে কোনো আতঙ্ক কিংবা শঙ্কার ছাপ দেখা গেল না। কালা হাবীব বলে যায়, "হয় শামীম না হয় তুই, দুজনের একজন অবশ্যই ডাইলেমার সাথে যোগাযোগ রাখতেছিস। কিংবা দুই জনেই। নয়ত এভাবে একসাথে দুজনের ভুল করার কথা না। মোসাদ্দেক, পুলিশ হয়ে এভাবে বেইমানি খুবই খারাপ একটা কাজ।"
আমার বিস্ময়ের রেশ কাটছে না। পুলিশ মানে? কে পুলিশ? এখানে ঘটছে কী? আমি কাজ করছি ডাইলেমার হয়ে। ডাইলেমার ডনের নির্দেশেই কালা হাবীবের গ্রুপে জয়েন করেছি। নতুন গ্রুপ ভিতরে থেকে সব তদারকি করব, কিন্তু পরিচয় দেয়া যাবে না। সব গ্রুপেই আমার মত ডাইলেমার লোক আছে, সে খবর ঐ গ্রুপের লোকেরা জানেও না। কিন্তু আমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে মিলি। কালা হাবীবের সাথে যোগ বেঁধেছে। তৃতীয় বোমা হামলা করতে হবে- নিউ মার্কেটে। সে খবর আমি পেয়েছিলাম। মাঝ থেকে কালা হাবীব বলল, সাভারের নিউ মার্কেটে হামলা করতে। আমার তখন সন্দেহ জেগেছে, কেনো ডাইলেমার কথা অমান্য করছে? শেষমেশ বাবু সন্ত্রাস ওরফে মোসাদ্দেক আমাকে যখন নিউ মার্কেটে রেখে আসলো, আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম, কালা হাবীব নিজের ভুলের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এখানে বিশাল ঝামেলা চলছে, সে ঝামেলার কিছুই আমি জানি না।
কালা হাবীব তার বাকি তিন সাগরেদের দিকে তাকিয়ে বলল, "কিল দেম বোথ। দুইজনেই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর তোদের তিনজনের ভয় নেই। পুলিশ তোদের ধরবে না। আমি ব্যবস্থা করে দিব।"
তিন সাগরেদ বোকার মত তাকিয়ে আছে। তাদের করণীয় ব্যাপার নিয়ে তারা দ্বিধান্বিত।
কালা হাবীব মিলিকে বলে, "প্লিজ মিলি, এক্সপ্লেইন দেম। আমি টায়ার্ড। ওদের বুঝাতে পারব না।"
এক্সপ্লেইন বা ব্যাখ্যা শুনবার আমারও দরকার আছে। মিলি ব্যাখা করে দেয়। সে ব্যাখার শুনবার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, মিলি সবটাই জানত, সবটাই শুধু লুকিয়ে গিয়েছে আমার কাছ থেকে। কালা হাবীবের আসল নাম মনির হোসেন, পুলিশের সিক্রেট ইন্টিলিজেন্স এর সদস্য। বাবু সন্ত্রাস মানে মোসাদ্দেক তার সহযোগী। এই প্রজেক্টের প্রধান লক্ষ্য ডাইলেমার ডনের কাছে পৌঁছানো, তাকে ধরা। এই খবর জানে গ্রুপের কালা হাবীব এবং বাবু সন্ত্রাসের বাইরে শুধু মিলি। মিলি নিরাপত্তা পাবে। এখন জানিয়ে দিলো, কালা হাবীবের বাকি তিন সাগরেদকে। এরা টাকার বিনিময়ে কালা হাবীবের দলে কাজ করছে। সব শোনার পর, তিনজনের মাঝে একজনের মাথায় কী খেলে গেলো কে জানে। পিস্তল তুলে সোজা গুলি ছুড়ে দিলো, কালা হাবীবের দিকে। একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। তড়িৎ গতিতে পিছন থেকে নিজের পিস্তল বের করে তাক করে কপাল বরাবর গুলি ছুড়ে দিলো কালা হাবীব ওরফে মনির হোসেন। তিনজনের সে একজন কোন শব্দ না করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। শেষ।
মনির হোসেন এগিয়ে আসলো বাকি দুজনের দিকে। হাতের পিস্তল ফেলে বাকি দুজন হাঁটু গেড়ে বসল। মনির হোসেন মিলির দিকে তাকিয়ে বলল, "আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে, আমার সাথে তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি জানো, ডাইলেমার ডন কোথায় আছে।"
মিলি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল, "আমার প্রতি তাহলে আপনার এই বিশ্বাস এতোদিনে? আমি যদি আপনার কাছে কিছু লুকাতাম, তাহলে আজকে এখানে এই অবস্থায় আপনি কিছুই জানতে পারতেন না। এখানে ডাইলেমার ডনই থাকত। আর আমাদের সবার খুলি এক এক করে উড়িয়ে দিত।"
পিস্তলটা নাড়তে নাড়তে মনির হোসেন বলে, "ডাইলেমার ডনের সাথে দেখা করার উপায় কী তাহলে? আমার মনে হয় না, ও আমার গ্রুপ এ লেভেলে গেলেও দেখা দিবে কিংবা কখনও কাউকে দেখা দিয়েছে। তাহলে অন্তত এই জিনিসটা বাজারে ছড়ানো থাকত না যে, ডাইলেমার ডনকে কেউ কোনোদিন দেখে নি।"
"আমি যদি দেখা পাই, আপনি সে খবর পাবেন। আগে এই দুজনের ব্যবস্থা করি।"
মিলি এগিয়ে আসছে আমাদের দুজনের দিকে। হাতে করে নিয়ে আসছে মনির হোসেনের হাতে থাকা পিস্তল। পিস্তল প্রথমে তাক করল আমার দিকে। এরপর ঘুরে বাবু সন্ত্রাসের দিকে। বাবু সন্ত্রাস পিস্তলের দিকে তাকিয়ে বলল, "ফিনিশ ইট।"
মিলি তৎক্ষণাৎ ঘুরে গুলি ছুড়ে দিলো মনির হোসেনের দিকে। বুকের একদম বাম পাশে হৃদপিণ্ড বরাবর গিয়ে গুলিটা লাগলো। ঘটনার আকস্মিকতায় মনির হোসেন বুঝে উঠতে পারলেন না, তার সাথে কী হলো! মিলি আরও দুইটা গুলি খরচ করলো, বাকি দুই সাগরেদের জন্য। এতো দ্রুত অথচ নিখুঁত শট সিনেমা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না।
মিলি এসে বাবু সন্ত্রাস মানে মোসাদ্দেকের বাঁধন খুলে দিলো। চারটা লাশ পড়ে আছে পরপর। বাবু সন্ত্রাস গিয়ে মনির হোসেনের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলেন, একটা মেসেজ লিখে পাঠিয়ে দিলেন, "ডাইলেমার ডন ধরা পড়েছে। সেন্ড ফোর্স।"
বাবু সন্ত্রাস এসে মিলিকে বলল, "তুমি এখন যাও। আমি এদিকে সব সামাল দিচ্ছি। আর লুকোচুরির ব্যাপার স্যাপার থাকবে না। সাব্বিরকে বেঁধে রেখেছি, ওকেই ধরিয়ে দেয়া হবে ডাইলেমার ডন হিসাবে।"
মিলি বলে, "বস, আপনি পুলিশের লোক। এমনিতেও কেউ বুঝত না আপনি ডাইলেমার ডন। সাব্বিরকে শেষ করে দেই তার চেয়ে। জীবিত থাকলে ঝামেলা বাড়বে।"
আমি মিলির দিকে তাকালাম। বাবু সন্ত্রাসই ডাইলেমার ডন। একমাত্র যাকে মিলি চিনে। একমাত্র মিলি। এখন আমি চিনে গেলাম, আমাকে ধরিয়ে দেয়ার চেয়ে মেরে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে তাহলে এদের জন্য।
বাবু সন্ত্রাস কিংবা মোসাদ্দেক কিংবা ডাইলেমার ডন মিলির দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি ছুড়ে তাকাল।
"এজন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি। মালটাকে শেষ করে দাও। আর আমার পায়ে একটা গুলি করো। এতো মানুষ মরে গেলো, আমার কিছু হলো না, পুলিশ ব্যাপারটা ভালোভাবে নিবে না।"
মিলি ডাইলেমার ডনের দিকে এগিয়ে গেলো। তার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে বলল, "আপনি যা বলেন।"
পিস্তলে আর দুইটা গুলি আছে। একটা খরচ হবে আমাকে মারার জন্য, অন্যটা ডাইলেমার ডনের পায়ে। আমি ক্লান্তভাবে চোখ বন্ধ করে বেঁধে থাকা চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিলাম।
পরপর দুটি গুলির শব্দ হলো। আমি কি মারা যাচ্ছি? অতি ব্যথায় মানুষ কি ব্যথার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে? আমি চোখ মেলে তাকালাম। আমার সামনে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মিলি দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে সামনে থাকা, ডাইলেমার ডনের শরীর। দুটি গুলিই বুকের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে মিলি।
আমার দিকে এগিয়ে আসলো এবার। আমার বাঁধন খুলে, ধরে টান দিয়ে বলল, "পুলিশে চলে আসছে, পালাতে হবে আমাদের দ্রুত।"
আমি অবাক বিস্ময়ে মিলিকে দেখি। মিলিকে শুধু জিজ্ঞেস করি, "কখন ঠিক করলে আমাকে খুন করবে না?"
মিলি আলতো হেসে বলে, "যখন ওকে চুমো খেলাম। মনে হলো, তোমাকে চুমো খেতেই আমার ভালো লেগেছিল। চুমো খাবার জন্য বাঁচিয়ে রাখলাম তোমাকে।"
আমিও আলতো হেসে মিলির হাত ধরলাম। আমাদের সব জঞ্জাল ঝঞ্ঝা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। যেখানে অন্তত নিশ্চিন্তে দু-দণ্ড চুমো খাওয়া যায়।
রিয়াদুল রিয়াদ
১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৯
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ, কিছুটা পরীক্ষামূলক লেখা ছিলো তো।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম। ভালোই লিখেছেন।
১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৯
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৪৩
শেরজা তপন বলেছেন: বেশ বড় গল্প করেছি পুরোটা।
ভালো লেগেছে তবে কেন যেন একটু এলোমেলো মনে হয়েছে- মাঝে মাঝে খাপছাড়া লেগেছে!