নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: পরিমিত পরিমিতি

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


মিতি আমাকে ফোনের ওপাশ থেকে বলল, "ঘুমিয়ে যাও, রাত হয়েছে অনেক। কাল দেখা হবে।"
আমি ফোন রেখে তাকিয়ে দেখি, মিতি আমার পাশে শুয়ে আছে। আধো ঘুমে মিটিমিটি করে তাকাচ্ছে।
"লাইটটা নিভিয়ে দাও," বলে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
আমি লাইট নেভানোর সময় ওয়ারড্রবের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়ল, মিতিকে আমি খুন করে ওয়ারড্রবের মধ্যে ভরে রেখেছি দুই দিন আগে। তাহলে ফোনের ওপাশে কে ছিল? আমার বিছানায় শুয়ে আছে কে? আমি লাইট না নিভিয়ে চলে আসলাম। আমার হাত পা কাঁপছে, শরীর জুড়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে। মাথা বড় এলোমেলো লাগছে। কী ঘটছে আমি তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আস্তে করে মিতির পাশে শুয়ে পড়লাম। আমার শরীর ধরধর করে ঘামছে। মিতিকে ছুঁয়ে দিতে ভয় করছে। আমার পাশে মিতির থাকার কথা না, কোনভাবেই না। আমি উঁকি দিয়ে নিশ্চিত হলাম। মিতির চোখ জোড়া বন্ধ, ঘুমাচ্ছে।

মিতির সাথে আমার বিয়ের বয়স বছর দুই। প্রেমের বিয়ে, পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম দুজনে। দুজনের কারও পরিবার মেনে নেয়নি। আলাদা থাকছি মিরপুরের এক ফ্ল্যাটে। এক বছর যা কেটেছে ভাল। এরপর থেকে দুজনের মাঝে কলহ শুরু। ছোটখাটো বিষয়ে সন্দেহ, ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়া। মিতির ভার্সিটি জীবনের বন্ধু শিহাবকে আমার অপছন্দ। মিতি তবু ওর সাথে কথা বলবে। আমার সাথে সানজিদার সম্পর্ক বন্ধুত্বের বাইরে কিছুই না। তবু মিতির প্রবল অভিযোগ, আমাদের মাঝে কিছু আছে। আমার তা শুনে রাগ লাগে, মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি মিতিকে বুঝাই, মিতি বুঝতে চায় না। কথা কাটাকাটি হয়, মিতির গায়ে হাত তুলি। মিতি চুপ করে থাকার মেয়ে না। পাল্টা হাত তুলে আমার গায়ে। রাগ করে দরজা আটকে বসে থাকে। আমার ধারণা, সে সময়টায় মিতি শিহাবের সাথে কথা বলে। মিতি তা স্বীকার করে না। আমি সানজিদাকে সব খুলে বলি। মেয়েটা আমাকে সান্ত্বনা দেয়। আমার খারাপ লাগার সময়টায় পরম বন্ধুত্বের ছোঁয়া হয়ে পাশে থাকে। মিতি তবু মেয়েটাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে।

আমি যখন অফিসে থাকি, আমি জানি এ বাসায় শিহাব আসে। মিতি তাও অকপটে অস্বীকার করে যায়। মাঝে মাঝে আমি অফিস না করে চলে আসি বাসায়। শিহাবকে খুঁজি বেডরুমে, বাথরুমে, খাটের নিচে। কোথাও শিহাবকে পাওয়া যায় না। মিতি বড্ড চালাক। আগেই সরিয়ে ফেলে শিহাবকে। মিতি সাইকোলজির ছাত্রী। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে, "তুমি যে ওথেলা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত একটা মানুষ, সেটা কি জানো?"

আমি বিছানার পাশে রাখা কাচের জগ ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলি, "আমাকে সাইকোলজি শিখাতে আসবে না একদম। নিজের জামাই রেখে অন্য পুরুষে আসক্তি থাকলে তাকে কী বলে? সেটা বলো।"
মিতি চুপ করে থাকে। নিশ্চুপ চোখের ভাষায় এক রাশ ঘৃণা খেলা করে যায়, আমি তা বুঝতে পারি বেশ।

আমি মিতির মত চালাক হতে পারিনি। আমার খারাপ লাগার সময়টায় যতবার সানজিদার সাথে দেখা করেছি। ততবারই মিতির কাছে ধরা খেয়ে গিয়েছি। আমিও একজন মানুষ। আমারও খারাপ লাগা আছে, আমি তা মিতিকে বুঝাতে পারিনি। বুঝাতে পারিনি, সানজিদা আমার শুধুই বন্ধু, এর বাইরে কিছুই না।

মিতি একদিন রাগ করে আমার বাসা ছেড়ে চলে যায়, ওর এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে হয়ত উঠে যায়। আমাকে ফেলে যায় বিপদে। আমি যাবতীয় সেদ্ধ করা ব্যতিরেক আর কিছুই রান্না পারি না। আমি না খেয়ে থাকব, ব্যাপারটা সানজিদা মানতে পারে না। মিতি চলে যাবার পর, সানজিদা চলে আসে আমার এখানে। রান্না করে ভাল মন্দ খাওয়াবার জন্যে। মিতির বিশাল রাগ একদিনেই গলে যায়। যা নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বাসা থেকে, হাতে করে তা নিয়ে আবার ফেরত আসে পরদিন সকালেই। এসে আবিষ্কার করে সানজিদা আমার জন্য পরোটা আর ডিম ভাজি বানাচ্ছে। মিতি আমাকে কিছু বলে না। সানজিদার সামনে গিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "পাঁচ মিনিটের মধ্যে তুমি এখান থেকে চলে যাও। নয়ত তুমি আর তাহের দুজনেরই কপালে খারাপ কিছু আছে বলে দিলাম।"

সানজিদা লহ্মী মেয়ে। চুপ করে চলে যায়। মিতি অপেক্ষা করে সানজিদার চলে যাবার। সানজিদা চলে যেতেই, পরোটা আর ডিম ভাজি ছুড়ে ফেলে দেয়। আমার সকালের নাস্তা করা হয় না। না খেয়েই চলে যাই। অফিস ফিরে আমি বুঝতে পারি, দারুণ রেগে আছে মিতি। রাগ আছে আমারও। দুজনের মাঝে তর্কাতর্কি, হাতাহাতি খুনের পর্যায়ে চলে যায়। ডাইনিং টেবিলের উপরের কাচের জগের আঘাতে মৃত্যু হয়, লাশ চলে যায় লুকাবার জন্য ওয়ারড্রবে।

আমার শরীর এখনও ঘামছে। একটা মৃত মানুষের এভাবে আমার পাশে শুয়ে থাকার কথা না। কলিং বেল বেজে উঠল। কলিং বেলের শব্দে আমি আরও চমকে উঠি। মিতি ঘুমায়নি। চোখ মেলে তাকায় কলিং বেলের শব্দে। উঠে বসে বিছানায়। আমি ভাবি, এতো রাতে কে আসতে পারে? মিতিকে না পেয়ে নিশ্চিত শিহাব এসেছে। আমি ভেবে পাই না কী করব। মিতিই উঠে যায়। দরজার লুকিং হোলে তাকায়। কাউকে দেখে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে। দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে সানজিদা দাঁড়িয়ে। ঘেমে অস্থির সানজিদা রুমের ভিতর একবার উঁকি দিয়ে বলে, "তাহের কোথায়? ওকে গত দুইদিন ধরে ফোনে পাচ্ছি না। অফিসেও যাচ্ছেনা।"

মিতি সানজিদার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে একবার ওয়ারড্রব আর একবার বিছানার দিকে তাকায়। মিতি এখনও আমাকে বিছানার উপর দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু আমার লাশটা থাকার কথা ছিল ওয়ারড্রবের ভিতর। সেদিন মিতি নয়, খুন হয়েছি আমি। তবু মিতি দেখতে পাচ্ছে আমাকে বিছানায়।
০২/০৩/২০১৯

রিয়াদুল রিয়াদ

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১২

সোনালি কাবিন বলেছেন: চমৎকার

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৪১

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ" হুমায়ূন স্যারের এই উপন্যাসটার কথা মনে পড়ে গেলো...
চমৎকার লিখেছেন...

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: পছন্দের একটা উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের ব্যতিক্রমী উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম।

ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৪১

জনারণ্যে একজন বলেছেন: আহা, বরাবরের মতোই চমৎকার।

এবার গল্প শুরুর প্রথম থেকেই অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম - গল্পের সমাপ্তি কি হতে পারে; তা। এবং ডাহা ফেইল মেরেছি।

বেশ মেধাবী লেখক আপনি, শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৪৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। সুন্দর মন্তব্যের জন্য। লিখে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি। ভালোবাসা জানবেন।

আরও অনেক লিখতে চাই।

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬

বিজন রয় বলেছেন: কালকে আপনাকে বলেছিলাম আপনার লেখার হাত আছে।

লিখুন।

একটু গভীরে লিখুন।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। লিখছি, আপনার মতামতটা অবশ্যই মাথায় রাখব।

নিচের লেখা দুটো সময় করে পড়তে পারেন।

সমীরণ
কোনদিন জাগিবে না আর

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪

জেরী বলেছেন: ভালো লিখছেন ভাই।

এই লেখাটা পড়ে ঠিক করেছি আপনার বাকি লেখাগুলো ও পড়ব।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। লেখা পড়ে ভালো মন্দ জানাবেন আশা করি।

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ, সব লেখায় আপনার মতামত ভালো লাগে।

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

মিরোরডডল বলেছেন:




লেখার শেষে টুইস্ট এক্সপেক্ট করেছিলাম, রিয়াদের লেখা মানেই তাই :)

তাহেরকে মেরে ঠিক করেছে, একটা মেন্টাল সন্দেহবাতিকগ্রস্ত X((

রিয়াদের লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:১৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: মিরোরডডল, অনেক অনেক ধন্যবাদ। লিখে যাচ্ছি। মাঝে লেখালেখি, ব্লগে ওভাবে আসা হয় নি। এখন আবার নিয়মিত ব্লগে আসব।

ভালো লাগা জানবেন। লেখায় ভালো মন্দ লাগা জানাবেন।

৮| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:১২

আরোগ্য বলেছেন: সাসপেন্স! থ্রিলার! গল্পে ভালোলাগা রইলো।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:১৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.