নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোজা পার্ক, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক আন্দোলন, জিম ক্রো ল ও মার্টিন লুথার কিং এর আই হ্যাভ এ ড্রিম

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৫৯

রোজা পার্ক, এক বাসে করে ১৯৫৫ সালের এক সন্ধ্যায় ফিরছিলেন নিজের বাসায়। মাত্রই এক সিটে বসার পর একটু পরেই কিছু লোক বাসে ওঠে, বাস ড্রাইভার সাথে আসে। রোজা পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তাকে বাসের সিট ছেড়ে পিছনে গিয়ে বসতে হবে।
রোজা পার্ক অস্বীকৃতি জানান। তিনি ঐ সিট ছাড়বেন না, পিছনেও যাবেন না।
বাস ড্রাইভার এই অস্বীকৃতি জানাবার জন্য রোজা পার্ককে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ঘটনাটা আমেরিকার। আর রোজা পার্কের এই আচরণের সম্মুখীন হবার প্রধান কারণ সে কৃষ্ণাঙ্গ।

আই হ্যাভ এ ড্রিম, পৃথিবী বিখ্যাত এই ভাষণ প্রদান করেন, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তার সাথেও প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটে ১৯৪৩ সালের দিকে। স্কুল থেকে বর্ণবাদ ও সমাজে বিভক্তিকরণের উপর রচনা লিখে পুরষ্কার পাবার পর, বাবার সাথে বাড়ি ফেরার পথে, তাদেরকেও শ্বেতাঙ্গদের জায়গা দেবার জন্য বাসের সিট ছেড়ে দিতে হয়। প্রায় ৯০ মাইল রাস্তা দাঁড়িয়ে আসতে হয় বাবা ছেলেকে।

এই ঘটনা মার্টিন লুথার কিংকে সেই ছেলেবেলায় নাড়িয়ে দেয়।
আর রোজা পার্কের সাথে ঘটা ঘটনার সময় মার্টিন লুথার কিং বর্ণবাদ, নাগরিক অধিকার নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার।


আব্রাহাম লিংকনের সময় কৃষ্ণাঙ্গ দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার দেয়া হয়, সাধারণ জীবন যাপনের শ্বেতাঙ্গদের সাথে পাশাপাশি চলার। কিন্তু পাশাপাশি চলার জন্য বেঁধে দেয়া হয় জিম ক্রো আইন নামক অদ্ভুত নিয়ম কানুন।


তুমি কালো, তুমি সাদাদের মতন একই ট্যাক্সিতে চলাচল করতে পারবে না। তোমার জন্য জিম ক্রো কার।
তুমি কালো, তুমি সাদাদের থেকে আলাদা থিয়েটারে আরাম আয়েশে সিনেমা দেখবে।




তুমি কালো, তোমার চাকরির সুযোগ সুবিধা সাদাদের মতন না।
তুমি কালো, তোমার সুইমিং পুলে সুইমিং করার কোনো দরকার নাই।


তুমি কালো, তোমার ভোট দেয়ার কোনো দরকার নাই। ভোট দিতে হলে, কিছু টেস্টে পাশ করতে হবে।
টেস্ট নাম্বার ১- একটা জেলি বিনের বোতল দেখিয়ে বলা হবে, এই বোতলে কতগুলা জেলি বিন আছে। যা বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
টেস্ট নাম্বার ২- আমেরিকান লিটারেসি টেস্ট দিতে হবে। পারলে ভোট দিতে পারবে, না পারলে নাই। শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া কালোদের পক্ষে সেসবের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
এছাড়াও যদি ভোট দিতে চাও, দারুণ সুযোগ পুল ট্যাক্স দিয়ে ভোট দিতে পারবে। গরীব কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষে ট্যাক্স দিয়ে ভোট দেয়া সম্ভব ছিলো না।


বাসেও কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আলাদা সিট রাখা ছিলো। প্রথম সারির সিট সাদাদের, পিছনের সারির সিট কালোদের।


শ্বেতাঙ্গদের সিটের একদম শেষে যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের সিট শুরু হয়েছে, সেখানেই নিয়ম মেনে বসেছিলেন রোজা পার্ক। আরও শ্বেতাঙ্গ বাসে ওঠাতে, কৃষ্ণাঙ্গদের সিটও ছেড়ে দিতে বলে রোজা পার্ককে। রোজা পার্ক তা না মানাতে জেলে যেতে হয়।

এরপরই কৃষ্ণাঙ্গরা আন্দোলনে নামে, সে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় সে আন্দোলনও হয় অহিংস। অহিংস আন্দোলনের প্রথম ধাপ ছিলো বাস বয়কট। কৃষ্ণাঙ্গরা বাসে চড়া বন্ধ করে দেয়। হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যায়। এরপর নিজস্ব কার সার্ভিসে চলাচল। সে কার সার্ভিসের চালকদেরও নানা ভাবে করা হয় হেনস্থা।
মোট ৩৮১ দিন কালোরা বাসে চড়ে না। বয়কট মানে বয়কটই। ১৯৫৬ সালে এসে বাসে কালো ও সাদাদের সেই নিয়ম বিভাজন বাতিল হয়।


নাগরিক অধিকার নিয়ে মার্টিন লুথার কিং তার অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যান। কিছু ছাত্র নিয়মিত রেস্টুরেন্টে সাদাদের সিটে গিয়ে বসত। নরম সুরে খাবার চাইতো। সাদারা মাঝে মধ্যেই খাবার ছুড়ে মারত তাদের দিকে। তবু চুপচাপ বসে থাকত তারা। কিছুই বলত না। অহিংস আন্দোলন ছিলো এমনই।


১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং তার বিখ্যাত “আই হ্যাভ এ ড্রিম” ভাষণ দেন লাখ লাখ মানুষের সামনে। এ ভাষণে নাড়া পড়ে যায় সারা বিশ্বে।


১৯৬৪ সালে মার্টিন লুথার কিং শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান এবং সে বছরই কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বর্ণ বিভক্তিকরণকে ইলিগ্যাল ঘোষণা করা হয়।
মার্টিন লুথার কিং দেখিয়েছিলেন, অহিংস থেকেও দাবী আদায় সম্ভব।
পরবর্তীতে তিনি আরও অনেক বৈশ্বিক বিষয়ে তার আন্দোলন চালান। এই অহিংস মানুষটাকে ১৯৬৮ সালে, হোটেল বেলকনিতে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে এক শ্বেতাঙ্গ। তবে তিনি মারা যাবার আগে, হয়ত পুরোটা মুছতে পারেন নি, তবে আমেরিকায় কিছুটা হলেও বদলে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন, সাদা কালো বিভক্তি।

এই ঘটনার বহু বছর পরে ২০০৯ সালে আমেরিকা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পায়। বারাক ওবামাকে। বারাক ওবামা আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ৬ নভেম্বর ২০২২, আমার বিয়ের ৪৪ মাস উপলক্ষে স্ত্রীকে উইশ করেছিলাম এই লেখার মাধ্যমে।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: আমেরিকায় তো এখনও এই সাদা-কালোর দ্বন্ধ চলছে...
এই দ্বন্দের নাকি নিষ্পত্তি হওয়া সহজ না...

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: এখন কাগজে কলমে অনেক কিছুই আছে, সে জন্য লোক দেখানোর জন্য হলেও আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের গুরুত্ব দেয়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট দিয়েছেন। ধন্যবাদ।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ । ভালোবাসা জানবেন।

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমরা গনতন্ত্রর কথা বলি
তা কি পালন করি বা সঠিক গনতন্ত্র পাচ্ছি ???

......................................................................
তেমনি সাদারা তাদের সব সুবিধা কেন কালোকে দিবে ?
পৃথিবীতে এমন মহান জাতিকি আছে ???
আমেরিকার শয়তানী গনতন্ত্রর জ্বালা কেমন ?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অধিকার কিংবা সম অধিকার যুগে যুগেই শুধুমাত্র মুখে আওড়ানো বুলি।

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬

নাহল তরকারি বলেছেন: আমেরিকাতে চামড়া নিয়ে মারামারি আর ভারত বর্ষে ধর্ম নিয়ে মারামারি।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধর্ম, নারী, চামড়া আর সবশেষে ক্ষমতা, এ নিয়ে গ্যাঞ্জাম মানুষের আদিকাল থেকেই। বদলাবে না হয়ত কখনও।

৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।

গল্প বাদ দিয়ে এটা পোস্ট করেছেন।

ভাল করেছেন।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আমি মূলত গল্প লেখক। বাদ বাকি যা পুরোটাই চেষ্টা করা আর কী। ভালো থাকবেন নিয়মিত পাঠক।

৭| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৫১

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ছবির সাথে চমৎকার বিবরণ। পোস্ট ভালো হয়েছে।


বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।

গল্প বাদ দিয়ে এটা পোস্ট করেছেন।

ভাল করেছেন।


ব্লগিং এ বৈচিত্র থাকা ভাল।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আমি বোধ করি গল্প, উপন্যাসটাই ঠিকঠাক লিখতে পারি শুধু।

তবু এই চেষ্টা ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৮| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: মার্টিন লুথার কিং এর প্রচেষ্টার পরেও বর্ণবাদ এখনো শিকড় গেঁড়ে আছে। তার প্রমাণ black lives matter আন্দোলন। চমৎকার ছবি সম্বলিত ইতিহাস আশ্রিত পোস্ট।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আদতে কিছুই পরিবর্তন হয় নি, সাদা কালোর দ্বন্দ হয়ত আজীবন থাকবে, তবু রোজা পার্ক ও মার্টিন লুথার কিং যে কাজটা করেছিলেন তা হলো একটা হাওয়া লাগিয়েছিলেন, একটা পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। সে হাওয়ায় এখন লোক দেখানোর জন্য হলেও অনেক ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গদের গুরুত্ব দেয়া হয়।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.