নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
পর্ব ১ পর্ব ২
৫
নাহিনের মৃত্যু ও মৃতদেহ পালিয়ে যাওয়া কিংবা মৃত নাহিনকে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর দেখতে পাবার ঘটনার তদন্তের মাঝেই, আরেকটা খুনের ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশের লোক গুলোর সাথে অদিতও দাঁড়িয়ে আছে এখানে, পাশে কায়েস। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে অদিতের। যে মানুষটা তার জীবনের প্রায় সব কিছু ভাগ করেছে, বলেছে, সব ব্যাপারে সবসময় বুদ্ধি পরামর্শ নিয়েছে, সে মানুষটা এখন অদিতের সামনে প্রাণশূন্য হয়ে পড়ে আছে। ঘাড়ের কাছে গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে, অনেক গুলো ছুরির আঘাত করা হয়েছে সেখানে। প্রফেসর সাজিদ এলাহী খুন হয়েছেন, নিজ কামরায় নিশংসভাবে। কায়েস অদিতের পাশ থেকে সরে এসে, হাতের ক্যামেরা দিয়ে মৃত প্রফেসর সাজিদ এলাহীর আশেপাশের সব কিছুর ছবি তুলে নিল, ছবি তুলল প্রাণহীন পড়ে থাকা প্রফেসরের দেহের। মৃতদেহের পাশেই খুন করা ছুরিটা পড়ে আছে। অদিত কোনো কথা বলছে না, নির্বিকার দাঁড়িয়ে। বিষাদ ও হতাশায় ম্লান হয়ে আছে মুখখানা। প্রফেসর সাজিদ এলাহীকে ভরসা দিয়েছিল অদিত, আশ্বস্ত করেছিল চিন্তা করার কিছু নেই, অদিত দেখবে ব্যাপারখানা। অথচ এখন…
পুলিশ ইন্সপেক্টর জুয়েল রানা অদিতের সামনে এসে দাঁড়াল। অদিতের দিকে তাকিয়ে বলল, "স্যার, খুনের তদন্তের দায়িত্ব কি আপনি নিচ্ছেন?"
অদিত আস্তে করে মাথা নাড়ল। ইন্সপেক্টর জুয়েল অদিতকে নম্রস্বরে বলল, "যে কোনো সাহায্যে স্যার আমরা আছি। এমনিতে তো থাকবই। এছাড়া যদি কোন প্রয়োজন পড়ে, আমাকে জানাতে ভুলবেন না।"
অদিত তাও চুপ করে রইল। ধীরে ধীরে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর লাশের দিকে এগিয়ে গেল। আশেপাশের সব কিছু খেয়াল করল খুব মনোযোগ নিয়ে। লাশটা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে অদিতের। অদিতের কাছে বিপদে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন প্রফেসর সাজিদ এলাহী, কিছুই করতে পারল না অদিত। যে বিশ্বাসটুকু করতেন অদিতকে প্রফেসর, তার কোনো মূল্যই দিতে পারল না, এক বিন্দুও না। প্রফেসর সাজিদ এলাহীর খুনের জন্য নিজেকেই সবচেয়ে দোষী মনে হচ্ছে। নিচু হয়ে লাশটার চারপাশে দেখল অদিত, একটা ছুরি, ছড়ানো ছিটানো রক্তের ছাপ, একটা সিগারেটের ফিল্টার, লাশের পাশে পড়ে থাকা একটা বই, আপাতত এসবই চোখে পড়ল সাধারণ দৃষ্টিতে। পুলিশ ইন্সপেক্টর জুয়েল রানা অদিতের পাশে এসে দাঁড়াল আবাড়, অদিতের মনোযোগ তখনও খুঁটিয়ে চারপাশ দেখায়। জুয়েল রানা বলল, "স্যার, একটু ডিস্টার্ব করলাম।"
অদিত মাথা তুলে তাকাল।
"একজন লোক, খুব করে দরজার কাছে এসে রুমে ঠুকতে চাচ্ছে। বলছে সে না-কি প্রফেসর সাহেবের পার্সোনাল ডাক্তার।"
অদিত নিস্পৃহ চোখে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, "নাম কী বলল?"
"রাদিব।"
"রাদিব? এই নামে আঙ্কেলের কোন পার্সোনাল ডাক্তার ছিল বলে তো মনে পড়ছে না।"
"কিন্তু স্যার, সে তো খুব জোরাজুরি করছে।"
অদিত একটু ইতস্তত করে বলল, "আচ্ছা নিয়ে আসেন।"
কিছুক্ষণ পর রাদিব রুমটায় এসে হাজির হলো। সারাসরি প্রফেসর সাজিদ এলাহীর লাশের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। লাশটা ছুঁতে যেতেই অদিত বলল, "লাশ ছুঁবেন না। পোস্ট-মর্টেম হবে।"
রাদিব কথা গ্রাহ্য না করে বলল, "ডাক্তার এসে পরীক্ষা করবে এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?"
অদিত একটু শক্ত স্বরে বলল, "আপনাকে আমি চিনি না। আপনি যে ডাক্তার, প্রফেসর সাহেবের পরিচিত কিংবা পার্সোনাল ডাক্তার সে ব্যাপারেও আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আগে আমার সাথে কথা বলুন, তারপর যা করার করুন।"
রাদিব ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করল, "আপনি কে?"
পাশে থাকা কায়েসের চোখে মুখে হতভম্ব ভাব। এগিয়ে এসে বলল, "আপনি কে সেটা এখানে ব্যাপার। এখানে যারা আছে সবাই পুলিশের লোক। আর উনি ডিটেকটিভ অদিত পোদ্দার, এই খুনের তদন্তের দায়িত্বে আছেন।"
রাদিব অদিতের দিকে তাকাল। রাদিবের থেকে কম করে হলেও এক ফুট লম্বা হবে লোকটা। একটু হেসে বলল, "আপনিই অদিত সাহেব। স্যার, আপনার কথা আমাকে বলেছেন, আপনার অনেক প্রশংসাও করেছিলেন। নাহিনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে বলেছিলেন আপনাকে, তাই তো?"
অদিত চুপচাপ রাদিবের সামনে এসে দাঁড়াল।
"আপনার পরিচয় বলেন। প্রফেসর সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় কিংবা সম্পর্ক কী সেটা বলুন।"
রাগিব স্বাভাবিক গলায় জবাব দিলো, "উনি নাহিনের ব্যাপারটা নিয়ে যে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন, সে ব্যাপারে আমাকে ডেকেছিলেন ওনার বাসায়। আমি সকাল এগারোটার দিকে ওনার এখানে আসি। কিছু কথা বলি, আজ আবার আসার কথা।"
"আপনি ঘটনার কতটুকু জানেন?" অদিত রাদিবের কথার রেশ কাটার আগেই প্রশ্ন করে বসল।
রাদিব কিছুটা সময় অদিতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, "স্যারের মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে তিনি আমাকে যা বলেছিলেন, সে পর্যন্তই জানি।"
অদিতও রাদিবকে কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করল, এই লোককে সন্দেহ করার কোনো কারণ আছে কিনা তাই ভাবছে। মন বলছে, নেই। রাদিবকে উদ্দেশ্য করে অদিত বলল, "আপনি এখানে কী কারণে এসেছেন, সেটা বলুন।"
"স্যার আমার পেশেন্ট ছিলেন। মানসিকভাবে বিভ্রান্তিতে ছিলেন। তার খুন কিংবা যাই হোক, আমার কারণ জানাটা জরুরি। সহজভাবে ব্যাপারটা নিলে তো হবে না।"
অদিত বিরক্তি না এনেই বলল, "আমরা ব্যাপারটা সহজভাবে নিচ্ছি, সেটা আপনাকে কে বলল? আর ব্যাপারটা আমাদের উপর ছেড়ে দিলেই ভালো হয়। আমরা আমাদের কাজ ঠিকঠাক করতে পারি, ঠিক আছে?"
রাদিব শুকনো হাসি মাখা মুখে বলল, "তা তো অবশ্যই। তবে আপনারা সহজ ভাবে নিচ্ছেন আমি তা একবারও বলিনি, আমার নিজের কথা বললাম আমি। আপনার ব্যাপারে আমি জানি, প্রফেসর সাহেব যথেষ্ট বলেছেন আপনাকে নিয়ে। আপনি আপনার কাজ ঠিকঠাক করতে পারবেন, এটা আমারও বিশ্বাস। আচ্ছা যদি কিছু মনে না করেন, একটু চারপাশটা ঘুরে দেখতে পারি?"
অদিত শক্ত বলায় আবার বলল, "জি না, পারেন না। আপনি এখন চলে যাচ্ছেন এখান থেকে।"
রাদিব কিছুটা অনুনয়ের সুরে অনুরোধ করে, "পাঁচ মিনিট সময় মাত্র।"
অদিত অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুমতি দিলো। রাদিব চারপাশটা ঘুরে দেখতে লাগল। এমন একটা ভাব নিয়ে সব খুঁটিয়ে দেখছে যেন, রাদিবই এ খুনের তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রফেসর সাজিদ এলাহীর ঘাড়ের কাছে অনেক গুলো ক্ষত, ছুরি দ্বারা তৈরি। একটা সিগারেটের ফিল্টার, ছড়ানো ছিটানো রক্তের ছোপ। রক্ত ছিটে চলে গিয়েছে পাশের বুক শেলফের উপরের তাকেও। একটা বই পড়ে আছে পাশে। বইয়ের নাম "TOTAL PAID." বইয়ের উপর রক্তের ছাপ। মারা যাবার আগে, প্রফেসর সাজিদ এলাহী কিছু একটা লিখতে চাচ্ছিলেন। হয়ত কোনো কথা, হয়ত কোনো ক্লু, হয়ত অন্য কিছু। তিনি PAID এ রক্ত দিয়ে আঙুল বুলালেও, TOTAL এর পুরোটায় তিনি আঙুল বুলাতে পারেন নি। TOTAL এর শুধু T এর উপর আঙুল বুলাতে পেরেছেন। হয়ত তারপরেই মারা গিয়েছেন। রাদিব এসে অদিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, "আপনি অবশ্যই এতক্ষণে সব কিছু ভালো করে দেখেছেন। তবুও যে বইটা স্যারের পাশে পড়ে আছে, সেটার উপর তিনি কিছু লিখতে চাচ্ছিলেন, সেটা গুরুত্বের সাথে নিবেন।"
অদিত সরু চোখে রাদিবের দিকে অল্প সময় তাকিয়ে থেকে, সামনে থেকে সরে এসে বইটার উপর ঝুঁকে দেখল, আসলেই বইয়ের উপর রক্তের ছাপে প্রফেসর কিছু লেখার চেষ্টা করেছিলেন। অদিত বিষয়টা আগে খেয়াল করেনি। অদিত রাদিবের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল, "আপনার কাজ শেষ হলে আপনি এখন যেতে পারেন। লাশ পোস্ট-মর্টেমের জন্য এখন নিয়ে যাওয়া হবে।"
"আমি থাকলে এখানে কি খুব বেশি অসুবিধা হবে?"
"অবশ্যই। আপনি যেতে পারেন।"
রাদিব হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসলো। অদিত বিবর্ণ মুখে বইটার লেখার দিকে তাকিয়ে থাকল খানিক সময়। এরপর কায়েসের দিকে ইশারা করল। কায়েস পাশে এসে বসল সাথে সাথেই। অদিত গলার স্বর নিচু করে বলল, "কায়েস, আমাদের খুব সাবধানে আগাতে হবে।"
"জি স্যার।"
অদিত উঠে দাঁড়াল। কায়েসের মুখোমুখি হয়ে বলল, "এ বাড়িতে কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই, নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। কে বা কারা এখানে এসেছিল সে ব্যাপারে আমাদের কাছে বিন্দুমাত্র তথ্য নেই।"
পাশ থেকে ইন্সপেক্টর জুয়েল রানা বলল, "স্যার, বাসার মালিককে ধরে এনে দুইটা লাগাই। ব্যাটা, লাখ লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া পায়, একটা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে পারে না, সিকিউরিটি গার্ড রাখতে পারে না।"
অদিত কথার মাঝে থেমে ইন্সপেক্টরের দিকে তাকাল।
"এখন তাকে ধরে দুইটা লাগালেই তো আর প্রফেসর সাহেবের খুনিকে পাওয়া যাবে না। তাই ওসব কাজে সময় নষ্ট না করে আমাদের এমন কিছু করতে হবে, যেন আমরা জানতে পারি কে খুনি, কেনো এই খুন?"
ইন্সপেক্টর চুপসে গেল, আস্তে করে জবাব দিলো, "জি স্যার।"
অদিত আবার ফিরল কায়েসের দিকে। বলতে লাগল, "আমাদের প্রথম কাজ হলো, একটা তালিকা তৈরি করা, কে কে সন্দেহভাজন। কার কার প্রফেসর সাহেবকে খুন করার কারণ আছে। আমাদের পক্ষে যদিও সবাইকে বের করা কিছুটা কঠিন, তবে অসম্ভব না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো প্রফেসর সাহেবের সাথে আমার সম্পর্ক। ওনার ব্যাপারে আমি বিস্তর জানি। উনি আমার সাথে প্রায় সব কিছু শেয়ার করতেন। তাকে কারও খুন করার কারণ থাকলে সেটা সবার আগে আমার জানার কথা। কী বলো কায়েস?"
"তা তো অবশ্যই স্যার।"
অদিত কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “পরে গোলমেলে বেজে যাবে। আমি নাম বলছি, তুমি লিখে রাখো।”
কায়েস ওর ছোটো প্যাড আর কলম বের করে প্রস্তুত হলো লেখার জন্য। অদিত বলে, "সিরিয়াল অনুসারে লেখো। এদের আমার মতে সন্দেহ করা যায়, এর বাইরে কেউ থাকলে আমাকে বলবে। তো লেখো, এই বাড়ির নিচের ফ্ল্যাট গুলোর মানুষ, মানে চার, তিন, দুই তলার। নাহিনের বড় ভাই দিদার। নাহিনের বন্ধু, দীপ্ত, আরিফ, মিশু। আর সেদিন সন্ধ্যার পর যদি অন্য কেউ এসে থাকে এ ফ্ল্যাটে তারা। আর নাহিন, যদি ওর মৃত্যুর ব্যাপারটা সাজানো হয়ে না থাকে।"
কায়েস লেখা শেষ করে সংকোচের সাথে অদিতের দিকে তাকাল। অদিত ব্যাপারটা বুঝতে পারল।
"কিছু বলবে? কোনো সমস্যা?"
"স্যার, সব ঠিক আছে। তবে আমার মতে সন্দেহের তালিকায় আর একজন আসবে।"
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অদিত জানতে চাইল, "কে?"
"স্যার, একটু আগে যে ডাক্তার আসলো প্রফেসর স্যারের, সে। তার মতিগতি খুব একটা সুবিধার না। সে আপনার কাছেও একদম অপরিচিত, প্রফেসর স্যারের সাথে যদি তার দেখা হয়েও থাকে, মারা যাবার আগের দিন। তাই তাকে সন্দেহ থেকে দূরে রাখা যায় না।"
অদিত অল্প করে ভাবল কিছু।
"খারাপ বলো নি। রাদিব। একেও সন্দেহের বাইরে রাখাটা বোকামি হবে। আচ্ছা, শেষে নাম লেখো, তার।"
তালিকা করা শেষ, এবার তদন্তে আগাবার পালা। অদিত মোবাইলটা বের করল, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার তারেক আজিজকে ফোন করল। ফোন ধরতেই অদিত এপাশ থেকে বলল, "ডাক্তার সাহেব, অদিত বলছি। আপনার ওখানে একটা লাশ যাচ্ছে, প্রফেসর সাজিদ এলাহীর। খুনের কেস। তদন্তে আমি আছি, একটু খেয়াল করে দেখবেন ব্যাপারটা।"
রাদিব এখনও দাঁড়িয়ে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর বাসার সামনে। সাধারণ বিরহ বেদনা রাদিবকে ছুঁয়ে যায় না। কিন্তু হুট করেই এই লোকটার জন্য একটা মায়া অনুভব করছে রাদিব ভিতরে ভিতরে। সে মায়া লুকিয়ে রাখছে। এভাবে একটা মানুষ মরে গেল। যে মানুষটার শেষ ইচ্ছে ছিল রাদিবের কাছে, দ্বিতীয় কারণটা জানা। তাকে দ্বিতীয় কারণটা বলা হলো না। জীবনের বেগে আবেগ হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোরও আবেগ থাকে লুকিয়ে মস্তিষ্কের এক কোণে। সে আবেগ মাঝে মাঝেই হাহাকার হয়ে চারপাশের আকাশে বাতাসে মিলিয়ে যায়, ধরতে গিয়ে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। রাদিব ভাবছে মনে মনে, খুন করল কে? কেনো করল খুন? অদিত লোকটার সাথে লেগে থাকলে, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তবে লেগে থাকাটা অতটা সহজ হবে না, বেশ বুঝতে পারছে, হয়তবা খুনি হিসাবেও রাদিবকে তালিকাবদ্ধ করে ফেলেছে ইতোমধ্যে লোকটা। তবু লোকটার একটা দুর্বলতম দিক আছে, সে দিকটা অতি সহজেই ধরে ফেলেছে রাদিব।
৬
নাসির উদ্দিন, বয়স বেয়াল্লিশ, প্রফেসর সাজিদ এলাহীর নিচ তলার বাসিন্দা। ফ্ল্যাটে থাকেন তার স্ত্রী এবং এক কাজের মেয়েসহ। স্ত্রী জেসমিন নাহার, বয়স ছত্রিশ, কাজের মেয়ের দশ। নাসির উদ্দিনের হাতিরপুলে একটা টাইলস সিরামিকের দোকান আছে, নাম "বেস্ট টাইলস।"
নাসির উদ্দিন এখন বসে আছেন অদিত, কায়েস আর রাদিবের সামনে। রাদিবের উপস্থিতিতে কায়েস বেশ অপমানিত ও বিরক্ত। অদিতের সহযোগী হিসাবে কায়েস আছে, এর মধ্যে এই ডাক্তার লোকের কেনো আসতে হবে? যদিও রাদিব যে শর্ত জুড়ে এখানে বসে আছে তা বেশ ভালোভাবেই মেনে চলছে, রাদিবের শর্ত ছিল যে তদন্তের জেরার মাঝে কোনো রকম কথা বলবে না, সে বলছেও না।
অদিত নাসির উদ্দিনের পরিচয় ও বাসায় কে কে থাকে এবং ব্যবসার ব্যাপারে জানার পর জিজ্ঞেস করল, "প্রফেসর সাজিদ এলাহীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?"
"আমি তো ব্যবসার কাজে দোকানে থাকি, সকালে যাই, রাতে আসি, এসে একটু খেয়েই ঘুমিয়ে যাই। ওভাবে আমার সাথে প্রফেসর সাহেবের দেখা বা কথা হয় না।"
"আচ্ছা, বেশ। আপনি ছয় তারিখ সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে কোথায় কোথায় ছিলেন, একটু বলুন।"
নাসির উদ্দিন একটু চিন্তা করলেন, কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "আমি দোকান থেকে ফিরি রাত এগারোটার দিকে। এসে খাওয়া দাওয়া এরপর ঘুম। আর কিছু করেছিলাম বলে তো মনে হয় না।"
অদিত কায়েসের দিকে তাকাল, কায়েস টুকে যাচ্ছে সব। অদিত জিজ্ঞেস করে যায়, "আপনি সেদিন কোনো কারণে প্রফেসর সাহেবের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন? কিংবা কাউকে ফ্ল্যাটে যেতে কিংবা বের হতে দেখেছেন?"
নাসির উদ্দিন তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন, "না না, আমি তো ফ্ল্যাটে যাই নি।"
"আর কাউকে যেতে কিংবা বের হতে?"
নাসির উদ্দিন চুল চুলকিয়ে ভেবে ভেবে বললেন, "আমি আমার রুম থেকে বের হইনি, তাই জানি না কিছু।"
"আচ্ছা।"
কী ভেবে যেন নাসির উদ্দিন বললেন, "তবে একটা ব্যাপার মনে আছে।"
অদিত আগ্রহ নিয়ে তাকাল নাসির উদ্দিনের দিকে।
"তখন রাত সাড়ে এগারোটার মতন। আমি একবার দরজার কাছে আসি, দরজা আটকিয়েছি কিনা দেখার জন্য। আমার দরজা আটকালেও মনে হয়, আটকাইনি। তো চেক করার সময়, আমার মনে হচ্ছিল, কেউ একজন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। তবে আমার মনে হচ্ছিল ওখানে একজন ছিল না। দুই, তিন জন হবে। মনে হচ্ছিল আর কী। আমি ব্যাপারটায় অত গুরুত্ব দেইনি। প্রফেসর সাহেবের কাছে তো মানুষ জন আসতেই থাকে।"
অদিত চিন্তিত ভঙ্গিতে নাসির উদ্দিনের দিকে তাকাল।
"আপনি নিশ্চিত, আপনি দু তিন জনের নেমে যাবার শব্দ শুনেছেন?"
"জি স্যার, নিশ্চিত।"
অদিত এবার একটু সরে আসল নাসির উদ্দিনের কাছ থেকে। সোজাসুজি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনাকে আর বেশিক্ষণ আটকে রাখব না। শেষ কথা হলো, আপনার সাথে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর টাকা পয়সা বিষয়ক কোন ঝামেলা ছিল?"
"না তো।"
অদিত চোখের দিকে তাকিয়েই বলল, "আপনি ভালো করে চিন্তা করুন।"
"আমি চিন্তা করেই বলছি। কোনো ঝামেলা ছিল না।"
"আপনার তার প্রতি কোনো রাগ ছিল না?"
"তার প্রতি আমার রাগ থাকতে যাবে কেন?"
অদিত এবার উঠে দাঁড়াল, কিছু সময় পায়চারি করল। তারপর নাসির উদ্দিনের দিকে ঝুঁকে বলল, "আপনি আপনার এত বড় একটা ব্যবসার লস, ভুলে গেলেন?"
নাসির উদ্দিন থতমত খেয়ে খেলেন কথাটা শুনে। শূন্য দৃষ্টি নিয়ে অদিতের দিকে তাকিয়ে বলল, "বুঝলাম না স্যার।"
অদিত সরে আসলো কিছুটা।
"প্রফেসর সাহেবের বন্ধু, নোমান কাদের। ফ্ল্যাট বাসা গুলোতে টাইলস লাগিয়ে দেবার ব্যবসা ছিল যার। তার সাথে আপনার পরিচয় প্রফেসর সাহেবের মাধ্যমে। তো, নোমান সাহেব আপনার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার টাইলস, সিরামিকের জিনিস পত্র নেন। কখনও নগদে, কখনও বাকিতে। তার বাকির পরিমাণ হঠাৎ করেই বাড়তে থাকল, বাড়তে বাড়তে পাঁচ লাখ প্রায়। এরপর একদিন নোমান কাদের সাহেব লাপাত্তা। তার কোনো খোঁজ খবর নেই। আপনি নোমান কাদেরকে না পেয়ে, ধরলেন কাকে? ধরলেন প্রফেসর সাজিদ এলাহীকে। এমনকি তার কাছে ক্ষতিপূরণও দাবী করলেন, শুধুমাত্র এই জন্যে যে, প্রফেসর সাহেব তার বন্ধু। হুমকি ধামকিও দিলেন, টাকা না পেলে আপনি প্রফেসর সাহেবের কাছ থেকেই আদায় করবেন। অবশ্য এ জন্য আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, অত গুলো টাকার শোকে আপনি বুদ্ধি হারাবেন এটাই তো স্বাভাবিক। এতো গুলো টাকার শোক ভুলতে পারাটাও কঠিন, তাই নয় কি?"
নাসির উদ্দিন হাঁ করে তাকিয়ে অদিতের দিকে। অদিত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। নাসির উদ্দিন আমতা আমতা করে বললেন, "কিন্তু আমি প্রফেসর সাহেবকে...।"
অদিত বাধা দিয়ে বলল, "আরে না না, আমরা তো একবারও বলছি না, আপনি খুন করেছেন। বলেছি কি? আপনি একটা মিথ্যা বললেন, সেটা শুধু আমি ধরিয়ে দিলাম। আপনি এখন আসতে পারেন। আপনার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিবেন।"
নাসির উদ্দিন উঠে দাঁড়ালেন, তিনি ভালো মাত্রায় ধাক্কা খেয়েছেন। ঠিকভাবে শরীরের সমতা রাখতে পারছেন না। মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবেন। রাদিব উঠে নাসির উদ্দিনকে ধরল। ফিসফিসিয়ে কিছু বলল কানের কাছে নাসির উদ্দিনের। নাসির উদ্দিন চোখ বড় বড় করে রাদিবের দিকে তাকিয়ে রইল। রাদিব আবার যথাস্থানে জায়গা নিল। নাসির উদ্দিন চলে যেতেই রাদিব বলল, "একটা কথা বলব?"
অদিত ফিরে তাকায় রাদিবের দিকে।
"জি বলুন।"
"নাসির উদ্দিন যা বলেছেন, ওনার স্ত্রীও তাই বলবেন। আপনি ভিন্ন কোনো তথ্য পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আপনি তার চেয়ে বরং ওনার কাজের মেয়েকে ডেকে আনুন। অতটুকু মেয়ে মিথ্যে বলবে না।"
কায়েস এবার একটু ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।
"কোন কাজটা করা উচিৎ, কোনটা উচিৎ না সেটা কি আপনার কাছ থেকে জানতে হবে? আপনি স্যারের চেয়ে বেশি বুঝেন?"
অদিত কায়েসকে বাধা দিয়ে বলল, "আহা, কায়েস, রেগে যাচ্ছ কেনো? আমরা একটা তদন্ত করছি, এখানে মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা জরুরি। আর রাদিব সাহেব তো ভুল কিছু বলেননি। আমরা নাসির উদ্দিনের স্ত্রীকে ডাকলে ভিন্ন কোনো তথ্য পাব না, উনি যদি মিথ্যে বলেও থাকেন, তার স্ত্রীও সেই মিথ্যে বলবেন। তার চেয়ে বরং ওনাদের বাসার কাজের মেয়েকে ডাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।"
কায়েস রাগে ফোঁসফোঁস করে অতি কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। নাসির উদ্দিনের স্ত্রী ইতোমধ্যে এসে পড়েছেন। অদিত তাকে বসতে বলে বলল, "আমরা আসলে দুঃখিত, আপনাকে আসলে সেভাবে জিজ্ঞেস করার কিছু নেই। আপনি দয়া করে আপনাদের বাসার কাজের মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিন।"
জেসমিন নাহার কিছুটা আমতা আমতা করে বললেন, "মিতুকে কেন আবার ডাকতে হবে?"
"না না, ম্যাডাম, তেমন সিরিয়াস কিছু না। টুকটাক কিছু কথা জিজ্ঞেস করব। আপনাদের আমি সন্দেহ করছি না। শুধু তদন্তের খাতিরে একটু আধটু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি। আপনাদের উপর তলায় একটা মানুষ খুন হলো, বুঝতেই পারছেন।"
"জি।"
অনিচ্ছা সত্ত্বেও জেসমিন নাহার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।"
কাজের মেয়ে মিতু কিছুক্ষণ পরে এসেই হাজির। ভয়ে কুঁচকে আছে মিতু। অদিত মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব। সোজা সাপ্টা উত্তর দিবে।"
মেয়েটা আরও ভয় পাচ্ছে। সবসময় সত্যি বলা মানুষ গুলো ভয় পেলে মিথ্যে বলে ফেলে, আর মিথ্যে বলে অভ্যস্ত মানুষ ভয় পেলে সত্যি কথা স্বীকার করে দেয়। রাদিব একটু উঠে আসলো আসন ছেড়ে। মিতুর সামনে বসে বলল, "মিতু, ভয় পেও না। তোমাকে আমরা এমনিই গল্প করতে ডেকেছি, ঠিক আছে? তুমি একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে। বুদ্ধিমতীরা ভয় পায় না। এটা বোকাদের কাজ। তুমি কি বোকা বল?"
মিতু দু দিকে মাথা নেড়ে বলল, "না।"
"তাহলে দেখো তো, এই যে লম্বু আঙ্কেলটা সে তোমাকে বোকা ভাবছে। তুমি তার প্রশ্নের সব গুলো উত্তর দিয়ে দেখিয়ে দাও তো, তুমি বোকা না একদমই।"
মিতু একটু হেসে দিলো। চোখ মুখ থেকে ভয়ের ছাপ হাওয়া হয়ে গিয়েছে। লম্বু আঙ্কেল অদিত জানতে চাইল, "তোমার কি মনে আছে, গত পরশুদিন সন্ধ্যার পর তোমার স্যার মানে নাসির সাহেব ঘর ছেড়ে অন্য কোথায় গিয়েছিলেন কিনা? কিংবা সে কখন বাসায় ফিরেছিলেন?"
মিতু ভাবল কিছুটা সময়। ভেবে ভেবে বলল, "আমি জানি না।"
"একটু চিন্তা করো, তুমি তো বাসাতেই থাকো, তাই না?"
"না।"
অদিত এবার চমকে গেল। মিতুর দিকে ঝুঁকল, "বুঝলাম না, তুমি নাসির সাহেবের বাসায় কাজ কর না?"
"হ।"
"তাহলে তুমি ওনার বাসায় থাকো না বলছ যে?"
"অইদিন তো আছিলাম না।"
"মানে গত পরশু তুমি ছিলে না?"
"না।"
"কোথায় ছিলে সেদিন?"
"আমি আর ম্যাডাম, ম্যাডামের বাপের বাড়িত গেছিলাম। কামারাঙ্গাচর।"
"কখন গিয়েছিলে? আর এসেছ কখন?"
"পরশু সকালে গেছিলাম। কাইল দুপুরে আইছি।"
অদিত চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল। মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, "আচ্ছা তুমি আসো এখন।"
মিতু উঠে চলে গেল। অদিত বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে কায়েস আর রাদিবের দিকে তাকাল। অদিত কী ভাবছে, হয়ত দুজনেই বুঝতে পারছে। কায়েস অদিতকে বলল, "তার মানে স্যার, নাসির সাহেব ছয় তারিখ বাসায় একা ছিলেন। প্রফেসর সাহেবকে খুন করা তার পক্ষে অসম্ভব না।"
অদিত চিন্তার ভাঁজ কপালে এনে বলল, "দাঁড়াও কায়েস, মাত্র একজন সন্দেহভাজনের সাথে কথা হলো। এখনি কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক হবে না।"
রাদিব সে কথায় সায় দিয়ে বলল, "আমিও সেটাই বলি। আপনি বিচক্ষণ বলেই, এতো সহজে সব বের করে ফেলতে পারলেন। খুনিও অতি সহজে ধরা পড়বে, আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। আর ডিটেকটিভ অদিতের প্রতি এটুকু বিশ্বাস রাখতেই হবে।"
অদিত একটু করে হাসি দিলো। রাদিবের দিকে তাকিয়ে বলল, "তো, ডাক্তার সাহেব, আপনার কী মনে হয়, নাসির উদ্দিনের ব্যাপারে?"
বিনয় ফুটিয়ে রাদিব বলল, "আপনার থেকে তো আর আমি বেশি কিছু জানব না।"
"তবুও।"
"নাসির সাহেব আরও একটা মিথ্যে কথা বলেছেন, উনি বলেছেন উনি ছয় তারিখ রাত এগারোটার দিকে ওনার দোকান থেকে বাসায় ফিরেছেন।"
অদিত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল, "কী করে বুঝলেন, উনি মিথ্যা বলেছেন?"
"ছয় তারিখ মঙ্গলবার ছিল। হাতিরপুলের সব দোকান সেদিন বন্ধ ছিল। তাই সকাল বেলা ওনার দোকানে যাবার কিংবা রাত এগারোটার দিকে ফিরে আসার প্রশ্নই উঠে না।"
অদিত চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, "উনি এই মিথ্যাটা কেনো বললেন তাহলে?"
"হয়ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন খুব। উনি সেদিন সারাদিন বাসায় ছিলেন জানলে, আপনি সন্দেহ করতে পারেন তাই। তাছাড়া আমি দুপুরের দিকে যখন প্রফেসর স্যারের বাসা থেকে বের হই, তখন আমি ওনাকে বাসার নিচে দেখেছি, হাতে করে ডিম আর পেঁয়াজ নিয়ে ফিরছেন বাজার থেকে।"
"আপনি চেহারাও মনে রেখেছেন?"
"আমি মানুষের চেহারা একবার দেখলে এত সহজে ভুলি না।"
"তো আমরা খুনি হিসাবে নাসির উদ্দিনকেও সন্দেহ করতে পারি, কি বলেন?"
প্রশ্নটা করে অদিত অতি ঠান্ডাভাবে উত্তরের প্রতীক্ষা করল। রাদিব একটু ভেবে বলল, "এখনি না। আমাদের তো আরও সন্দেহভাজন ব্যক্তি আছে। তাদের সাথে কথা বলি।"
অদিত কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল,"কায়েস চলো। বের হই এখন।"
অদিত, কায়েস আর রাদিব যখন বেরিয়ে এসেছে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর বাসা থেকে বেলা গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। অদিত বাসার নিচের গেটে তালা লাগিয়ে চাবিটা পকেটে রাখতেই, রাদিব নিজের পকেটে হাত দিয়ে বলল, "আরে ধুর, মোবাইলটা ভুলে ফেলে রেখে এসেছি।"
অদিত কায়েসের দিকে অন্য পকেট থেকে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর ফ্ল্যাটের চাবিটা বের করে দিয়ে বলল, "কায়েস, ডাক্তার সাহেবের মোবাইলটা একটু নিয়ে আসো।"
কায়েস বিরক্তি নিয়ে চাবিটা নিল। রাদিব তৎক্ষণাৎ বাধা দিলো, "না, না, উনি যাবেন কেন? আমিই নিয়ে আসছি।" বলে চাবিটা কায়েসের হাত থেকে নিয়ে নিল। অদিত ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলল, পকেটে থেকে চাবি বের করে নিচের গেটটা খুলে দিলো। রাদিব বেশ শান্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। যতক্ষণে রাদিব চোখের আড়াল না হয়, কায়েস চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। রাদিব চোখের আড়াল হতেই কায়েস অদিতকে উদ্দেশ্য করে বলল, "একটা অচেনা মানুষকে এভাবে স্যার আমাদের ইন্টারোগেশনে ইনক্লুড করা কি ঠিক হচ্ছে?"
অদিত হাতের তালু দিয়ে নাকের নিচটা মুছে বলল, "আমার থেকে বেশি বুঝতে যেও না কায়েস। আর ডাক্তার সাহেব মোটেও অবিশ্বাস করার মত মানুষ না, এটা তুমিও বুঝতে পারছ। শুধু শুধু এমন করছ কেন?"
"তবুও স্যার..."
"উঁহু, আর কোন কথা না এ ব্যাপারে। এ প্রসঙ্গ বাদ। এখন বলো, অনুর কী অবস্থা?"
কায়েস মাটির দিকে তাকিয়ে ছোটো একটা নিঃশ্বাস গোপন করল। অনু কায়েসের স্ত্রী, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কায়েস ছোট করে উত্তর দিলো, "ভালো স্যার।"
"ডাক্তার দেখাচ্ছ নিয়মিত?"
"জি স্যার।"
"যে কোন প্রয়োজনে আমাকে অবশ্যই জানাবে। এ সময়ে টাকা পয়সা লাগে অনেক, আমি জানি।"
কায়েস আস্তে করে মাথা নাড়ল।
রাদিব ফিরে এসেছে মোবাইল নিয়ে, অদিতের হাতে চাবিটা দিয়ে কায়েসের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসি দিলো। কায়েস সেদিক ভ্রুক্ষেপ করল না।
তিন জন হাঁটলে লাগল, হালকা শীতল হাওয়া গায়ে লাগিয়ে। হালকা কুয়াশা ভেদ করে তিনজন মানুষ তিন ভাবনায় হেঁটে চলছে। ভাবনা ভিন্ন হলেও, লক্ষ্য তাদের এক। এখন গন্তব্য নাহিনের বাসা, নাহিনকে মিশু দেখেছিল যেদিন ঠিক সেদিনই দেখেছিলেন প্রফেসর সাহেব, গত রাতে আবার না-কি আরিফকে দেখা দিয়েছে নাহিন। আজ সকালে মিশু এসে বলল সব। ছেলেটা বড় ভয়ে আছে, প্রফেসর সাহেবের মৃত্যুর পর থেকে। একটা মৃত লাশকে এ ও দেখতে পাওয়াটা তো ভালো কোনো কথা নয়। এ রহস্যের একটা সমাধান হওয়া দরকার।
(২০১৮ সালে প্রকাশিত আমার তৃতীয় উপন্যাস মধ্য বৃত্ত।)
পর্ব ৪
রিয়াদুল রিয়াদ
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালোবাসা নিবেন। পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬
শেরজা তপন বলেছেন: স্যরি ভ্রাতা- আমি ডিটেক্টিভ থ্রিলার একেবারেই পড়ি না ( মানে এধরনের লেখার প্রতি ইন্টারেস্ট নেই)। আপনার লেখাটা তাই পড়া হল না। তবু জানিয়ে গেলাম আমার উপস্থিতি।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৮
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ব্যাপার না, শেরজা তপন ভাই। তবু আপনারে ধন্যবাদ। সব লেখায় সবার আগ্রহ থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক। যদিও এ লেখা ডিটেকটিভ ছাপিয়ে শেষমেশ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। তবু আপনার উপস্থিতিতে ভালো লাগা জানলাম।
পড়ার ব্যাপারে আমি আবার সর্বভূক। সব পড়ি, মানে যা পাই সামনে তাই পড়ি। যত বড় লেখা পাই, বিশাল বই পাই, আমার কাছে তত ভালো লাগে।
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮
মিরোরডডল বলেছেন:
সেকেন্ড মার্ডার হবার কারণে এখন গল্পটা একটু ইন্টারেষ্টিং হয়েছে।
এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে নাহিন খুন হয়নি।
দেখা যাক পরে কি হয়!
সিরিজ পড়াতে খুবই আলসেমি।
এই সিরিজ শেষ হয়ে গেলে আর সিরিজ দিবে না।
আগের মতো এক পর্বের থ্রিলার দিবে রিয়াদ।
১৪ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০০
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আলসেমি তো আমারও। কত শত লেখা পড়া বাকি। তবু ধৈর্য নিয়ে ধীরে ধীরে পড়ছেন জেনে খুশি হলাম।
এক পর্বের দুইটা গল্প লেখা শেষ৷ এটা শেষ করে পড়ে পোস্ট করব। এটার আর দুই পর্ব বাকি আছে দেয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০১
রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে থাকুন।
সুন্দর গল্প। সাস্পেন্স আছে, থ্রিলার আছে।