নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তাশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি

সাড়ে চুয়াত্তর

আমার লেখার মাঝে আমার পরিচয় পাবেন

সাড়ে চুয়াত্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিধান

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৯


নামাজরত ব্যক্তির দাঁড়ানোর স্থান থেকে সামনের দিকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত জায়গা দিয়ে অন্য ব্যক্তির ইচ্ছাকৃতভাবে অতিক্রম করা গুনাহর কাজ। নামাজির দাঁড়ানোর স্থান থেকে সিজদার জায়গা পর্যন্ত স্থান দিয়ে যাওয়া হারাম ও এটি একটি কবিরা গুনাহ ( শেষাংশে সূত্র ২ ও লিংক ১)। তবে সেজদার জায়গার বাইরে দিয়ে যাওয়া যাবে কিছুটা দূরত্ব রেখে। কিন্তু কতটুকু সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে এটা নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। কেউ বলেছেন সেজদার জায়গার পরে একটি বকরি যাওয়ার মত জায়গা ( আনুমানিক এক বিঘত) রাখতে হবে (শেষাংশে সুত্র ১)। আবার কেউ বলেছেন তিন হাত জায়গা রাখতে হবে ( শেষাংশে লিঙ্ক ২)। আবার অনেক আলেম বলেছেন, যে মসজিদের প্রশস্ততা ৪০ হাতের বেশি, এমন মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয। অর্থাৎ নামাজীর কাতারসহ মোট তিন কাতার দূরত্ব দিয়ে যাওয়া যাবে। এর চেয়ে ছোট মসজিদে নামাজির সামনে দিয়ে সুতরা ছাড়া অতিক্রম করা যাবে না ( শেষাংশে লিঙ্ক ৩ )। কোনো কিছুর আড়ালকে সুতরা বলে। বিনা সুতরায় নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে যে নিরাপদ দূরত্বের কথা উপরে লিখেছি সেই পরিমাণ দূরত্ব বজায় না রেখে কেউ সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয় না। কিন্তু নামাজের ক্ষতি হয় ও যে অতিক্রম করে তার গুনাহ হয়। তবে সূতরা থাকলে তার বাইরে দিয়ে যেতে কোনও সমস্যা নেই। মানুষ চলাফেরা করতে পারে, এমন স্থানে সুতরা না রেখে নামাজ পড়া ঠিক না।

কেউ যদি নামাজীর সামনে বসে বা দাড়িয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ তার আছে। এটা নামাজের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে অন্যের সুবিধার জন্য সে বসে বা দাড়িয়ে থাকতে পারে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। (শেষাংশে লিঙ্ক ৪)
যখন কেউ নামাজ পড়বে তখন তার উচিত সেজদার জায়গার একটু সামনে একটা সুতরা রেখে নামাজে দাঁড়ানো ( শেষাংশে সুত্র ৪)। সুতরা দিয়ে নামাজ পড়ার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। নামাজে দাঁড়ালে সামনে একটি বস্তু অর্থাৎ সূতরা (দেয়াল, পিলার, লাঠি ইত্যাদি) রাখা জরুরি যেন নামাজ অবস্থায় সূতরা ও নামাজির মধ্যকার জায়গা দিয়ে লোকজন চলাফেরা করতে না পারে। সুতরা মাটি থেকে অল্প উঁচুতে হতে হবে। কিছু না পেলে মাটিতে দাগ কেটে দেয়া যাবে ( শেষাংশে সুত্র ৩)। জায়নামাজের শেষ প্রান্তকে সুতরা বলে গণ্য করা যাবে না। সুতরার সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে একটু ডানে-বামে দাঁড়ানোর কথা বলা হয় এটাও ঠিক নয়।

ইমামের সামনে সুতরা থাকলে মুক্তাদিদের জন্য পৃথক সুতরার দরকার নেই। এক্ষেত্রে কাতারের মাঝখান দিয়ে হেটে যেয়ে খালি স্থান পূরণ করা যাবে। আমাদের দেশে সাধারণত ইমামের সামনে সূতরা থাকে। তবে কোনো ইমাম যদি সুতরা না দেন, তাহলে মুক্তাদির সুতরা দিতে হবে (শেষাংশে সুত্র ৫)।

মুসল্লীর সেজদার জায়গা দিয়ে কেউ গমন করলে তাকে বাধা দেয়াও জরুরি। সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে হাত দিয়ে বাধা দেয়া নামাজরত ব্যক্তির একটি আবশ্যক দায়িত্ব (শেষাংশে সুত্র ৬)। এতে নামাজের ক্ষতি হবে না।

এখন প্রশ্ন হলো নামাজী ব্যক্তি সুতরা কোথায় রাখবে এবং সুতরা কিসের হবে? এর উত্তরে বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, সুতরা হতে হবে মাটি থেকে অল্প উঁচু কোনো বস্তু এবং তা রাখতে হবে সিজদার জায়গার অল্প সামনে। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যদি নামাযীর সামনে উটের হাওদার পিছনের লাঠির সমান কিছু রাখে, তাহলে তার সামনে দিয়ে যারা যায় তাদের কোন সমস্যা নেই (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৬৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯৪০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে অনেক ধরনের সুতরার কথা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদের খুঁটিকে, ফাঁকা ময়দানে বর্শা গেড়ে, নিজের সওয়ারি উটকে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে সুতরা বানাতেন। এছাড়াও রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময় উটের পিঠে বসার জিনপোশ (গদি), গাছ ও শোয়ার খাটকে সামনে রেখেও নামাজ পড়েছেন।

আশা করি আমরা উপরের নিয়ম মেনে নামাজির সামনের জায়গা অতিক্রম করবো যেন আমরা গুনাহতে পতিত না হই। এই ব্যাপারে নামাজরত ব্যক্তি ও অন্যান্য সকলেরই দায়িত্ব আছে।

তথ্য সুত্রসমূহ-
সুত্র নং ১ - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজে দাঁড়ানোর স্থান ও দেয়ালের মাঝে একটি বকরী অতিক্রম করার পরিমাণ জায়গা ছিল – (বর্ণনায় বুখারী ৪৭৪ ও মুসলিম ৫০৮)।

সুত্র নং ২ - রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো। হযরত আবুন নাযর বলেন-আমার জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর? (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭০১, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩৩৬)

সুত্র নং ৩ - (i) If the one who is praying has set up a sutrah (object to serve as a screen). In this case it is permissible to pass beyond the sutrah, because the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “If any one of you prays, let him face towards something. If he cannot find anything, then let him set up a stick. If he cannot do that, then let him draw a line, then it will not matter if anyone passes in front of him.”
Narrated by Ahmad, 3/15; Ibn Maajah, 3063; Ibn Hibbaan, 2361. Ibn Hajar said in al-Buloogh, 249: The one who said that it is mudtarab (a kind of weak hadeeth) is not right; rather it is hasan.

সুত্র নং ৪ - And it was narrated that Talhah (may Allaah be pleased with him) said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “If one of you puts something in front of him that is like the back of a saddle, then let him pray and not worry about anyone who passes beyond that.” Narrated by Muslim, 499.

সুত্র নং ৫ - ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একটি গাধীর ওপর সোয়ার হয়ে আগমন করলাম। আমি সে সময় প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন মিনায় সাহাবীদের ইমামতি করছিলেন। আমি একটি কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম। সোয়ারী থেকে নামলাম। গাধীটিকে ঘাস খেতে ছেড়ে দিলাম। এরপর আমি নামাজের কাতারে ঢুকে পড়লাম। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ জানালো না। (বর্ণনায় বুখারী-৭৬ ও মুসলিম-৫০৪ )

সূত্র নং ৬ আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যদি তোমাদের কেউ এমন জিনিস সামনে রেখে নামাজ পড়ে যা মানুষ থেকে তাকে আড়াল করে দেয় আর কেউ তার সামনে দিয়ে (সিজদার জায়গার ভিতর দিয়ে) অতিক্রম করতে চায়, তাহলে সে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আর যদি সে ক্ষান্ত না হয়, তবে তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে; কেননা সে শয়তান ( আচরণ শয়তানের মত বুঝানো হয়েছে)। (বর্ণনায় বুখারী ৪৮৭ ও মুসলিম ৫০৫)

লিংক ১ লিংক ১
লিংক ২ লিংক ২
লিংক ৩ লিংক ৩
লিংক ৪ লিংক ৪

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: জানা ছিল ,আজ আবার পড় ভালো করে জানলাম।

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রথম মন্তব্যের জন্য। অনেকেই এগুলি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে। তাই পোস্ট দিলাম। হয়ত অনেকের কাজে লাগবে।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নামাজীর সামনে দিয়ে যাওয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ। এ কাজ থেকে সবার বিরত থাকা উচিৎ।
কারণ নামাজের সামনে দিয়ে মানুষ চলাচল করলে নামাজি ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত ধ্যান নষ্ট হয়।
মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। অনিচ্ছায় দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরে যায়।'
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামাজির সামনে
চলাচলকারী যদি এর ক্ষতি সম্পর্কে জানত, তবে নামাজিকে অতিক্রম না করে
৪০ (দিন-মাস-বছর) অপেক্ষা করা তার জন্য সহজ হতো।
-সহিহ বোখারি :৫১০

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনি একদম সঠিক মন্তব্য করেছেন। আমাদের এই নিয়মগুলির ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই বিষয়টা আমি জানি। আপনিও খুব সুন্দর করে লিখেছেন।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জি। অনেকে আবার ভালোভাবে জানে না। তাই এই ব্যাপারে প্রকৃত বিধান নিয়ে লিখলাম। ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর ও উপকারী লেখা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আল্লাহ্‌ আপনার মঙ্গল করুণ।

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বিস্তারিত জানলাম ; ধন্যবাদ ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই নিয়মগুলি শুধু মসজিদ না সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আশা করি উপকৃত হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.