নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে গানগুলি লিখেছেন ও সুরারোপ করেছেন সেই গানগুলিকে রবীন্দ্রসঙ্গিত বলা হয়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের নতুনদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক সুরারোপিত রবীন্দ্রনাথের গানগুলিকেও রবীন্দ্রসঙ্গীত বলা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাকেও অনেক সুরকার সুরারোপ করে গান তৈরি করেছেন। এই গানগুলির কথা রবীন্দ্রনাথের হলেও এগুলিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলা হয় না।
আবার রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরের সাথে সম্পূর্ণ মিল রেখে বা আংশিক পরিবর্তন ক’রে ভারতের বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে (বিশেষত হিন্দি সিনেমায়) গান তৈরি করা হয়েছে। গানের কথা রবীন্দ্রনাথের না কিন্তু সুরের মিল আছে রবীন্দ্রনাথের গানের সাথে। এই পোস্ট এই দুই ধরণের কিছু গানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো।
রবীন্দ্রনাথের কবিতাকে সুরারোপ ক’রে তৈরি করা কিছু বাংলা গানঃ
এখানে মুলত পঙ্কজ কুমার মল্লিকের গানের উল্লেখ করা হোল। একটি গান আছে যেটা এ আর রহমানও পরে সুরারোপ করেছেন। এছাড়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায় শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথের কিছু কবিতায় সুর দিয়েছিলেন। কিন্তু ওনার গানগুলি জনপ্রিয়তা পায়নি ও দুষ্প্রাপ্য তাই এখানে উল্লেখ করা হোল না।
১ ও ২। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার পঙ্কজ মল্লিককে অনুরোধ করেছিলেন, সে যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু কবিতা থেকে গান তৈরি করে। পঙ্কজ মল্লিক বঙ্গবন্ধুর কথা রাখেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশে যখন আসেন তখন এই রকম দুইটি গান নিজে গেয়ে, রেকর্ড করে বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন। গান দুটি হোল
‘ ভগবান তুমি যুগে যুগে দুত পাঠায়েছ বারে বারে’ ( কবিতার নাম প্রশ্ন, কাব্যগ্রন্থ পরিশেষ)
‘ রুদ্র তোমার দারুণ দিপ্তি এসেছে দুয়ার ভেদিয়া’ ( কবিতার নাম সুপ্রভাত, কাব্যগ্রন্থ ‘পুরবী’)
(সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৩। ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’- রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্য গ্রন্থের ‘খেয়া’ কবিতাকে সুর দিয়ে এই গানটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৩৭ সালে। রবীন্দ্রনাথ নিজে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে গানটি শুনে অনুমতি প্রদান করেন। এই গানটি ‘মুক্তি’ নামের একটি সিনেমাতে ব্যবহৃত হয় ও খুব জনপ্রিয় হয়। পঙ্কজ মল্লিক নিজেই গানটি গেয়েছিলেন। পরবর্তীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং কিশোর কুমারও গানটি গেয়েছিলন। রবীন্দ্রনাথ চলচ্চিত্রের নাম ঠিক করে দেন এবং গানের কথায় রবীন্দ্রনাথ সামান্য একটু পরিবর্তনের পরামর্শও দেন। ‘চোখের জল ফেলতে হাসি পায়’-এর পরিবর্তে ‘অশ্রু যাহার ফেলতে হাসি পায়’ করা হয়। ( সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৪। ‘আদি অন্ত হারিয়ে ফেলে’ - কবিতার নাম মেঘ। ( সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৫। গান- হে মোর দুর্ভাগা দেশ – কবিতার নাম অপমানিত ( সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৬। আজি এ প্রভাতে রবির কর – কবিতার নাম নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ ( সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৭। সন্ন্যাসী উপগুপ্তা ( কবিতা – অভিসার- কাব্য গ্রন্থ- কথা) ( সুরকার – পঙ্কজ কুমার মল্লিক)
৮। চিত্ত যেথা ভয় শুন্য ( কবিতার নাম প্রার্থনা )
এই কবিতা থেকে পঙ্কজ মল্লিক এবং এ আর রহমান দুই জনেই গান তৈরি করেছেন।
উপরের সবগুলি গান শোনার জন্য লিংক নীচে দেয়া হোল ;
রঞ্জিত কুমার মল্লিকের সুরারোপিত রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে গান
এ আর রহমানের সুরারোপিত চিত্ত যেথা ভয় শুন্য উচ্চ যেথা শির
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে ভিন্ন ভাষায় গানঃ
ভারতের হিন্দি চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে কিছু গান পাওয়া যায়। কিছু উদাহরণ দেয়া হোল;
১। মূল রবীন্দ্রসঙ্গীত – সেদিন দুজনে দুলে ছিনু বনে
এই গানের সুরে হিন্দি ছবি ‘আফসার’ এ শচিন দেব বর্মণ তৈরি করেন ‘ নয়না দিওয়ানে’।
মূল গানের লিংক সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ফুল ডোরে
হিন্দি গানের লিংক নয়না দিওয়ানে
২। মূল সঙ্গিত – একদা তুমি প্রিয়ে
সুজাতা ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘‘জ্বলতে হুয়ে জিসকে লিয়ে’
মূল গানের লিংক একদা তুমি প্রিয়ে
হিন্দি গানের লিংক জালতে হুয়ে জিস্কে লিয়ে
৩। মূল সঙ্গিত - ‘যদি তারে নাই চিনি গো’
শচিন দেব বর্মণ এই গানের সুরে তৈরি করেন ‘তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে রেয়না’। এই গানটি অভিমান ছবিতে ব্যবহৃত হয়।
মূল গানের লিংক যদি তারে নাই চিনি গো
হিন্দি গানের লিংক তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে রেয়না
৪। মূল সঙ্গিত - তোমার খোলা হাওয়া
আরতি মুখারজি এই সুরে ‘রাহগির’ সিনেমাতে গেয়েছেন ‘দো দো পঙ্খ লাগাকে’।
মূল গানের লিংক তোমার খোলা হাওয়া
হিন্দি গানের লিংক দো দো পঙ্খ লাগাকে
৫। মূল সঙ্গীত – খর বায়ু বয় বেগে চারিদিক চায় মেঘে
১৯৫২ সালে নির্মিত জালজালা সিনেমাতে এই সুরে গান আছে ‘ পাওয়ান চালে জোর’। সঙ্গীত পরিচালক – পঙ্কজ মল্লিক, গায়ক কে এল সায়গাল।
মূল গানের লিংক খর বায়ু বয় বেগে চারিদিক ছায় মেঘে
হিন্দি গানের লিংক পাওয়ান চালে জোর
৬। মূল সঙ্গীত – মন মোর মেঘের সঙ্গি
১৯৬২ সালে নির্মিত ‘ মা বেটা’ ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘ মান মেরে উরতা জায়ে বাদাল কে সাং’। সঙ্গিত পরিচালক – হেমন্ত কুমার মুখারজি, গায়িকা – লতা মঙ্গেশকার।
মূল গানের লিংক মন মোর মেঘের সঙ্গি
হিন্দি গানের লিংক মান মেরে উরতা জায়ে বাদাল কে সাং
৭। মূল সঙ্গিত- তোমার হোল শুরু আমার হোল সারা
১৯৮১ সালের ইয়ারানা ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘ ছুকার মেরে মানকো কিয়া তুনে কেয়া ইশারা’ ( প্রথম অংশের সুরে মিল পাওয়া
যায়, পরের অংশ ভিন্ন সুরে। ) সঙ্গিত পরিচালক রাজেশ রোশান, গায়ক- কিশোর কুমার
মূল গানের লিংক তোমার হোল শুরু আমার হোল সারা
হিন্দি গানের লিংক ছুকার মেরে মানকো কিয়া তুনে কেয়া ইশারা
৮। মূল সঙ্গিত – তুমি কেমন করে গান করো হে গুনি
১৯৯৮ সালে নির্মিত ইয়গ পুরুষ ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘ কই জেয়সে মেরে দিলকা দার খাতকাইয়ে’। সঙ্গীত পরিচালক – রাজেশ রোশান, গায়িকা – আশা ভোষলে।
মূল গানের লিংক তুমি কেমন করে গান করে হে গুনি
হিন্দি গানের লিংক কই জেয়সে মেরে দিলকা দার খাতকাইয়ে
৯। মূল সঙ্গিত – পাগলা হাওয়া বাদল দিনে
১৯৯৮ সালে নিরিত ইয়গ পুরুষ ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘ বাধান খুলা পাঞ্ছি উরা’ । সঙ্গিত পরিচালক – রাজেশ রোশান, গায়ক – প্রীতি উত্তম।
মূল গানের লিংক পাগলা হাওয়া বাদল দিনে
হিন্দি গানের লিংক বাধান খুলা পাঞ্ছি উরা
১০। মূল সঙ্গিত- ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে
২০০৫ সালে নির্মিত পরিনিতা ছবিতে এই সুরে গান আছে ‘ পিউ বোলে পিয়া বোলে’। সঙ্গিত পরিচালক – শান্তনু মৈত্র, গায়ক- সনু
নিগাম ও শ্রেয়া ঘোষাল।
মূল গানের লিংক ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে
হিন্দি গানের লিংক পিউ বোলে পিয়া বোলে
আশা করি ব্লগাররা গানগুলি উপভোগ করবেন।
২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই তথ্য জানাতে পেরে আমারও ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন সোনা বীজ ভাই। প্রিয় পোস্টে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ইদানিং কিছু কুছু রবীন্দ্রসঙ্গীতকে আধুনিকিকরণ করা হয়েছে। আমার কাছে শুনতে খারাপ লাগে না। অনেকেই সেগুলি অখাদ্য মনে করেন।
সোমলতা আচার্য্য
২৬ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ব্যাপারে এই প্রবন্ধটা পড়তে পারেন Click This Link
এই লেখার কিছু কথা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। যেমন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেছেন - “রবীন্দ্রনাথ সায়গলকে রেকর্ড করার যে-স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তাতে মনে হয় আজ উনি বেঁচে থাকলে তেমন-তেমন শিল্পীকে কিছু স্বাধীনতা হয়তো দিতেন। স্বরলিপি নিরেটভাবে ফলো করলে শিল্পীর নিজস্ব কোনও অবদান থাকে না। ওটা একধরনের স্বরলিপি-চর্চাই হয়ে যায়। নিষ্প্রাণ স্বরলিপি-চর্চা দিয়ে কোনও গানকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। স্বরলিপি হচ্ছে একদম আনকোরা শিল্পীকে পথে বেঁধে রাখার জন্য। কিন্তু একজন খুব বড় শিল্পী যদি সামান্য একটু স্বাধীনতা নেন তাতে গানের মহাভারত অশুদ্ধ হয় না।”
এই লেখার আরও কিছু কথা ভালো লেগেছে যেমন - রবীন্দ্রনাথ নিজেই শেষ বয়সে তাঁর গানের সর্বত্রগামিতার সম্ভাবনা অনুভব করেছিলেন। এই সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাবার মত উদারতার অভাব তাঁর কোন দিনই ছিল না, তিনি দিলীপকুমার রায় আর সাহানা দেবীর মত শিল্পীকে সুরের মূল কাঠামো বজায় রেখে এক্সপ্রেশনের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, নিজের ‘শেষ খেয়া’ (দিনের শেষে ঘুমের দেশে) কবিতায় পঙ্কজকুমার মল্লিকের সুরারোপ সানন্দে অনুমোদন করেছিলেন—যদিও তাঁর মৃত্যুর পর ‘গীতবিতান’-এর পরিমার্জিত সংস্করণে সেটিকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পর্যায়ভুক্ত করা হয়নি।
...... শিল্পীর প্রকাশভঙ্গির স্বাধীনতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি কথা মনে রাখা দরকার, ‘সুরকারের সুর বজায় রেখেও এক্সপ্রেশনে কম বেশি স্বাধীনতা চাইবার এক্তিয়ার গায়কের আছে। কেবল প্রতিভা অনুসারে কম ও বেশির মধ্যে তফাত আছে এ কথাটি ভুলো না।’ (সংগীত চিন্তা) এই স্বাধীনতা তিনি দিয়েছিলেন অ-বাংলাভাষী গায়ক কুন্দনলাল সায়গলকেও। সায়গলের রবীন্দ্রসঙ্গীত ভাল করে শুনলে মনোযোগী শ্রোতা বুঝতে পারবেন, দু-একটি ক্ষেত্রে (উদাহরণস্বরূপ ‘আমি তোমায় যত’ গানটির কথা বলা যেতে পারে) তাঁর গায়নে স্বরলিপি-নির্দিষ্ট স্বর সামান্য এদিক-ওদিক হয়েছে, কিন্তু তাতে মূল সুরের বা প্রকাশভঙ্গির বিরাট কিছু ক্ষতি হয়ে যায়নি। সে-কালে রেকর্ড বের করতেও তেমন সমস্যা হয়েছিল বলে জানা যায় না। অথচ বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতির প্রতাপ বাড়ল যে সময় থেকে, তারপর - এরকমই কিছু সামান্য শৈল্পিক স্বাধীনতা নিতে গিয়ে, প্রকাশভঙ্গি, লয় এবং যন্ত্রানুষঙ্গে কিঞ্চিৎ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে দেবব্রত (জর্জ) বিশ্বাসকে কতখানি যন্ত্রণায়, অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়েছিল—সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালিমাত্রেই সে ইতিহাসের সঙ্গে অল্পবিস্তর পরিচিত। অবশ্য তিনি প্রতিবাদের হাতিয়ার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকেই, স্বপক্ষ সমর্থনে তাঁরই উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। ‘রুদ্ধসঙ্গীত’-এর পাতায় পাতায় আছে সেই নান্দনিক প্রতিস্পর্ধার বিবরণ।
৩| ২৬ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৯
ইসিয়াক বলেছেন: পোস্টে ভালো লাগা জানবেন।
প্রিয়তে রাখলাম। সময় নিয়ে পড়বো।
শুভ কামনা রইলো প্রিয় ব্লগার।
২৬ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রিয়তে রাখার জন্য ধন্যবাদ। এই পোস্টে পড়ার, শোনার ও দেখার উপাদান আছে। তাই সময় করে পড়বেন, শুনবেন এবং দেখবেন। তাহলে বেশী ভালো লাগবে। আপনার জন্যও শুভ কামনা।
৪| ২৬ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুল বা লালনের গানের আধুনিকীকরণের কাজে যা দেখেছি আমার নন-টেকনিক্যাল চোখে, তা হলো মূলত মডার্ণ ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবহার। সুরে সামান্য তারতম্য, কিংবা ভেরিয়েশন এটা সর্বযুগে সব গায়কের মধ্যেই ছিল। একই গান সুচিত্রা মিত্র আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গায়কীতে এক হবে না। সোমলতা যে ভাবে গেয়ে থাকেন, সেখানে মডার্ন মিউজিকের সাথে তার পাওয়ারফুল ভয়েস অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। একই গান রেজওয়ানা কিংবা সাগর সেন, অদিতি মহসিন বা শ্রাবণী সেন গাইলে সোমলতার মতো হয় না, এবং এদের মধ্যেও প্রত্যেকের গায়কীতে এত পার্থক্য তা গভীরভাবে রেকর্ডিং ফলো না করলে বোঝা যায় না। এতদিন যে গানে কোনো আকর্ষণ বোধ করি নাই, এখন সেই গানই জয়তী চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচী, সাহানা বাজপেয়ী, মনোময়, অর্ণবের কণ্ঠে মাদকতাময় হয়ে উঠছে। যে-কোনো একটা গানকে স্যাম্পল হিসাবে নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে, প্রত্যেকেই তাদের গায়কীতে নিজ নিজ স্বকীয়তা প্রয়োগ করেছেন। অর্থাৎ, আবার, দেবব্রত বিশ্বাস, কাদেরী কিবরিয়া, পাপিয়া সারোয়ার- এদের গান শুনলেও দেখা যায়, প্রত্যেকের গায়কীতেই বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। কিন্তু, আজ থেকে ৩০ বছর আগের রেকর্ডিং আর আজকের রেকর্ডিঙের মধ্যে প্রধান পার্থক্য যেটা সৃষ্টি করে সেটা হলো মিউজিক। এই হাইবিট/পিচের মিউজিক গোড়া রবীন্দ্রশিল্পীরা গ্রহণ করতে নারাজ। কিন্তু, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রি যেভাবে টেকনো বেস্ড হয়ে যাচ্ছে, সঙ্গীত থেকে এসব মৌলবাদিতা পরিহার করতে হবে। নইলে এগুলো হারিয়ে যাবে, এগুলো শোনার মানুষ কেউ থাকবে না ভবিষ্যতে।
২৬ শে মে, ২০২১ রাত ৮:২২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার কথার সাথে আমি একমত। রবীন্দ্র শিল্পীদের একটা অংশের মধ্যে এই জাতীয় কৌলীন্য বা গোঁড়ামি দেখা যায়। কিছু দিন আগে মিতা হক মারা যাবার পর একটা পত্রিকাতে ওনার বিষয়ে ওনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী একটা লেখা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন যে অনেক রবীন্দ্রসঙ্গিত শিল্পী গান গাওয়ার সময় একটা বিশেষ ধরণের স্টাইল বা স্বরভঙ্গি অনুসরণ করে। মিতা হক এটা পছন্দ করতেন না এবং নিজেও সেভাবে গাইতেন না। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিল্পীদের সীমিত পরিসরে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। আসলে গানের ক্ষেত্রে শিল্পী কর্তৃক গানটাকে থ্রো করতে পারার ক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন। এর দ্বারাই একজন শিল্পী তার নিজস্ব গায়কি তৈরি করেন।
বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্রের সমাহার ঘটতে পারে গানের কথা, সুর, তাল ও লয় অনুযায়ী। তবে কখনই যেন শিল্পীর কণ্ঠের প্রাধান্য ব্যাহত না হয় এটা খেয়াল রাখা উচিত। আজকাল অনেক সময় বাদ্যযন্ত্রের আধিক্য গানের ক্ষতি করে। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কণ্ঠকেও শ্রুতিমধুর করা যায়। ফলে কার গলা ভালো আর কার গলা খারাপ এটা ধরতে সমস্যা হয়।
৫| ২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, খুবই সুন্দর একটা পোষ্ট দিয়েছেন।
আমি এই সামু ব্লগে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ১০০ পর্বের ধারাবাহিক পোষ্ট দিয়েছি। পরে সেটা বই আকারে বের হয়েছে।
২৭ শে মে, ২০২১ ভোর ৬:৩৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ১০০ পর্বে পোস্ট দিয়েছেন মানে আপনি ওনার ব্যাপারে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন। আপনার বইয়ের নাম কি এবং কত সালে প্রকাশ হয়েছিল? আপনার এই ১০০ পর্বের পোস্ট কোন সময়ের? আমার পড়ার ইচ্ছা আছে।
৬| ২৯ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:৫০
মিরোরডডল বলেছেন:
পঙ্কজকুমার মল্লিকের সুরে গানগুলো মৌলিক সুর হতে পারতো ।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে নেয়া তাই সুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুকরণে করেছেন ।
এটা না হলে মনে হয় ভালো হতো ।
এ আর রহমান যেটা করেছে এটা ঠিক আছে, তার স্টাইলে করেছে ।
৩, ৭, ১০ এই গানগুলো বাংলা হিন্দি দুটোই সুন্দর ।
বাকি গানগুলো বাংলাটাই বেশী পছন্দ হয়েছে ।
কেমন আছে সাচু ? কতো সহস্র বছর খবর নেয়া হয়নি
২৯ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৫৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার সাথে একমত এই ব্যাপারে যে রবীন্দ্রনাথের বা তার কবিতার সম্মানে রঞ্জিত মল্লিক নিজস্ব স্টাইলের সুরের বদলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদলে কবিতাগুলির সুর করেছিলেন। আমার মনে হয় উনি রবীন্দ্রনাথের সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এরকম করেছেন। দিনের শেষে ঘুমের দেশে গানটির অনুমতি পেতে ওনাকে নিজে গানটি গাইতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সামনে। তবেই অনুমতি মিলেছিল। রঞ্জিত মল্লিক নিজের মত সুর দিলে আরও ভালো হতো। এ আর রহমান তার স্টাইলে আধুনিক ধাঁচে গানটি সুরারোপ করেছেন ও গেয়েছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ বেচে থাকলে গানটাকে কিভাবে নিতেন এটা বলা মুশকিল।
উপরের দ্বিতীয় অংশের বেশীর ভাগ গানে মূল বাংলাটাই ভালো লাগে কারণ রবীন্দ্র সঙ্গীতের যে ভাব গাম্ভীর্য সেটা হিন্দি সিনেমার গানে সাধারনত থাকে না। রবীন্দ্রসঙ্গীতে যে ধরণের ধ্যান মগ্নতা আসে সেটা হিন্দিতে আসে না। তাছাড়া সিনেমার প্রয়োজনে গানের কথার কারণে ভাবেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে মূল গানের তুলনায়।
আমি ভালো আছি। আন্তরিকভাবে আমার খবর নেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি যেমন একটু ব্যস্ত হয়ে গেছেন আমিও একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। আপনার ল্যাপটপের সমস্যার আশা করি সমাধান হয়েছে। আপনারা করোনা মুক্ত হয়েছেন মোটামুটি কিন্তু আমাদের এখান থেকে করোনা যে কবে বিদায় নেবে বুঝতে পারছি না। গানগুলি মনোযোগ দিয়ে দেখে ও শুনে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৭| ৩১ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৫২
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+
৩১ শে মে, ২০২১ রাত ৮:৩৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সেলিম আনোয়ার ভাই অনেক দিন পরে দেখা। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৮| ০৭ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:০১
খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট লিখেছেন। অনেক নতুন তথ্য জানা হলো, যেমন রবীন্দ্রনাথের গান মাত্রই রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়। তার কবিতায় অন্য কেউ সুরারোপ করে গানে রূপান্তর করেছেন, এমন গানগুলো ররবীন্দ্রসঙ্গীত নয়।
২ নং মন্তব্যে দেয়া লিঙ্ক ধরে সোমলতা আচার্য্যের ভিডিওতে গিয়ে দেখলাম রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর "আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে" গানটিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। আজব ব্যাপার! তবে ২ নং প্রতিমন্তব্যটি চমৎকার হয়েছে, লাইকড। +
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই (৪ নং মন্তব্য) এবং মিরোরডডল এর মন্তব্যগুলো ভাল লেগেছে। আপনার প্রতিমন্তব্যদুটোও।
সময় নিয়ে অবসরে পোস্টে উল্লেখিত লিঙ্ক ধরে গানগুলো শুনবো, এই আশায় পোস্টটাকে "প্রিয়" তে তুলে রাখলাম।
০৭ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৫২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: 'আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে' গানটিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলে কেন চালাতে চাচ্ছে তা সত্যিই বোধগম্য নয়। পোস্টটা প্রিয়তে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেকগুলি গান তাই একবারে শোনার চেয়ে সুবিধা মত সময়ে শোনাই ভালো হবে। মনোযোগ দিয়ে পোস্ট পড়া এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য আবারও ধন্যবাদ ভাই।
৯| ০৭ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:০৯
রানার ব্লগ বলেছেন: বাহ!! বেশ লাগলো!!
০৭ ই জুন, ২০২১ রাত ৯:০১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ নিজেও কিন্তু পাশ্চাত্য সঙ্গীত দ্বারা অনেক সময় প্রভাবিত হয়েছেন। তার কিছু গানে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এটা নিয়ে আরেকটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে।
১০| ৩০ শে জুন, ২০২২ ভোর ৬:৫৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৩০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট। অনেক নতুন তথ্য জানা হলো।