নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অর্থনীতির ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও জীবন ঘনিষ্ঠতার কারণে অর্থনীতি নিয়ে আমাদের প্রায়শই চিন্তা ভাবনা করতে হয়। ধনীরা চিন্তা করে কিভাবে আরও সম্পদ বাড়ানো যায় আর গরিবরা চিন্তা করে কিভাবে জীবনটা বাঁচানো যায়। আর মধ্যবিত্তরা চিন্তা করে কিভাবে মান সম্মান বজায় রেখে আরও উপরে ওঠা যায়। মানুষের মধ্যে যেমন ধনী-গরীব আছে একইভাবে পৃথিবীর জাতি বা রাষ্ট্রসমূহের মধ্যেও ধনী-গরীব আছে। গরীব হওয়ার পরও কেউ ঋণমুক্ত হতে পারেন আবার অনেক ধন সম্পদ থাকার পরও কেউ ঋণগ্রস্ত হতে পারেন। রাষ্ট্রসমূহের ক্ষেত্রেও দেখা যায় অনেক গরীব দেশের ঋণ কম পক্ষান্তরে অনেক ধনী দেশের ঋণ বেশী। আসলে ঋণ কম থাকলেই যে একটি দেশ অনেক সমৃদ্ধ হবে এমন কোন কথা নেই। আবার অনেক ঋণ থাকলেই যে একটি রাষ্ট্র কঠিন বিপদে আছে এমনটা বলা যায় না। ঋণ ও বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর দেশগুলিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম দলে আছে সেই দেশগুলি যাদের অন্য দেশ থেকে ঋণ গ্রহণের চেয়ে বিনিয়োগ বেশী। দ্বিতীয় দলে আছে সেই দেশগুলি যাদের অন্য দেশে বিনিয়োগের চেয়ে ঋণ গ্রহণ বেশী।
'নেট আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অবস্থা' (Net International Investment Position) এমন একটা সূচক যার দ্বারা বিভিন্ন দেশের ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগের নেট (Net) পরিমান পাওয়া যায়। একটি দেশ কর্তৃক অন্য দেশ সমুহে বিনিয়োগকৃত অর্থ বা সম্পদ থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণ বাদ দিলে দেশটির নেট আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অবস্থা জানা যায়। ঋণ গ্রহণ বলতে শুধু সরকারের ঋণ বুঝায় না বরং ঐ দেশের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি বিদেশী ঋণ গ্রহণ করে থাকে সেটাও এই গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইভাবে বিনিয়োগ বলতে শুধু সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ নয় বরং ঐ দেশের কোন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশে বিনিয়োগকেও বুঝায়। সাধারনভাবে যেসব দেশের ঋণের চেয়ে বিনিয়োগ বেশী তাদেরকে দাতা দেশ বলা হয়। তবে দাতা দেশেরও ঋণ থাকতে পারে। একইভাবে যাদের বিনিয়োগের চেয়ে ঋণ বেশী তাদের গ্রহিতা দেশ বলা হয়। এই ক্ষেত্রেও অনেক গ্রহিতা দেশ অন্য দেশে বিনিয়োগ করে থাকে।
'নেট আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অবস্থা'র উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছিল সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। কিন্তু মজার ব্যাপার হোল গত কয়েক দশকে এই যুক্তরাষ্ট্র পরিনত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণ গ্রহিতা দেশ। ১৯৮০ সালের পর থেকে জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতা দেশে পরিনত হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে চীন ও জাপান পরস্পর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছে সবচেয়ে বড় দাতা দেশ হিসাবে প্রথম স্থানের জন্য। মজার ব্যাপার হোল চীনের মাথাপিছু আয় ( নমিনাল) এখনও ১১,৮১৯ ইউ এস ডলার যা কি না জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক ধনী দেশের চেয়ে অনেক কম। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত চীন ধনীদের চেয়ে বেশী ঋণ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর যে দেশগুলি বেশী ঋণগ্রস্ত তারা হোল স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, ব্রাজিল, তুরস্ক, ভারত, গ্রীস। দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি ধনী দেশের ঋণ গ্রহণের পরিমান বেশী। কাজেই ঋণ গ্রহণ মানেই খারাপ এমন নাও হতে পারে। ঋণকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ঋণ খারাপ না।
অপরদিকে সব চেয়ে বড় দাতা জাপানের পরে দাতা হিসাবে আছে জার্মানি, হংকং, চীন, তাইওয়ান, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, ক্যানাডা, সিংগাপুর, সুইজারল্যান্ড, সৌদি আরব, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ইসরাইল।
বাংলাদেশের নেট ঋণ তার জিডিপির সাড়ে ১৩%। যেখানে পাকিস্তানে এটা ৪৫%, যুক্তরাষ্ট্রে এটা প্রায় ৬৬%। জিডিপির উপর শতকরা হারের অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে চিলি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড এবং আরও অনেক দেশ।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের বিদেশী ঋণের বোঝা এখনও অসহনীয় নয়। অনেকে ভেবে থাকেন যে বাংলাদেশ অনেক বিদেশী ঋণগ্রস্ত। আসলে অন্যান্য অনেক দেশের সাথে তুলনা করলে বোঝা যায় যে ঋণের বোঝা আমাদের চেয়ে অনেক দেশের বেশী। আমাদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের হার খুব বেশী না। আমার ধারণা ১০% এর বেশী না। তবে আমাদের সমস্যা আমরা গৃহীত ঋণের সুফল জনগণের কাছে পৌছাতে পারছি না।
যুক্তরাষ্ট্র একটা স্বপ্নের দেশ। তারাই দেখা যাচ্ছে ঋণ গ্রহণের তালিকায় এক নম্বরে। আবার জাপানও অনেক ধনী দেশ হলেও তাদের নীতি হোল ঋণ গ্রহণ না করে ঋণ দেয়া। শেষ কথা হোল ঋণ কম থাকা মানেই ভালো না আবার ঋণ বেশী থাকা মানেই খারাপ না। একটা দেশের মানুষ ভালো আছে কি না এটা পরিমাপের আরও অনেক মানদণ্ড আছে। বিভিন্ন ধরণের সূচককে বিবেচনায় নিয়ে আমাদেরকে একটা দেশের সার্বিক অবস্থা বুঝতে হবে। শুধু ঋণগ্রস্ততা দ্বারা একটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝা যায় না। ঋণ গ্রহণ করে সেই ঋণ দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না এটাই মূল বিষয়। নতুন খবর হোল বাংলাদেশও অন্য দেশকে ঋণ দেবে।
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া Net International Investment Position
০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:১০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপাতত আপনি একমাত্র মন্তব্যকারী। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্নবাদ। যদিও এই লেখার ব্যাপারে আপনার মনের ভাব বোঝা গেলো না।
২| ১০ ই জুন, ২০২১ রাত ১:২৬
ঢুকিচেপা বলেছেন: আমিও আগে ভাবতাম আমাদের দেশ বুঝি ঋণে জর্জরিত।
“ঋণ গ্রহণ করে সেই ঋণ দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না এটাই মূল বিষয়।”
এই কথার উপরে আর কোন কথা নাই। ঋণের টাকা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করলে যেকোন দেশ উন্নতি করতে বাধ্য।
১০ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৪৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ঢুকিচেপা ভাই অনেক দিন পর কথা হচ্ছে। আপনি একটা গান শুনান অথবা গানের উপর একটা পোস্ট দেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: পোস্ট টি পড়লাম, জানিয়ে গেলাম তাই।