নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তাশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি

সাড়ে চুয়াত্তর

আমার লেখার মাঝে আমার পরিচয় পাবেন

সাড়ে চুয়াত্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসীদের আয় বাংলাদেশের জিডিপিতে যোগ হলে কতই না ভালো হত

১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫


একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য জিডিপি যদিও কোন আদর্শ সূচক না তারপরও এই সূচক অর্থনীতিবিদ এবং নীতি নির্ধারকরা ব্যবহার করে থাকেন। সরলভাবে বলতে গেলে একটা দেশের ভৌগলিক সীমাতে এক বছরে যে পরিমান চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদিত হয় এবং যে পরিমান সেবা দেয়া হয় তার সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট)।

তিন ভাবে জিডিপি পরিমাপ করা যায়। আয় পদ্ধতি, ব্যয় পদ্ধতি এবং উৎপাদন পদ্ধতি। সঠিকভাবে হিসাব করলে তিন পদ্ধতিতেই একই ফলাফল আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় পদ্ধতিতে জিডিপি পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশে ব্যয় পদ্ধতি এবং উৎপাদন পদ্ধতি দুইভাবেই জিডিপি হিসাব করা হয়।

জিডিপি নিয়ে একটা মজার প্রশ্ন আছে। যেমন অ্যামেরিকার এক বিলিয়নিয়ারের একজন গৃহপরিচারিকা ছিল। সে ঐ বিলিয়নিয়ারের বাসার যাবতীয় কাজ করতো। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেম হয় এবং বিলিয়নিয়ার ঐ পরিচারিকাকে বিয়ে করে ফেলেন। এই ধরণের বিলিয়নিয়ার আরও হয়তো আছে। এখন প্রশ্ন হোল বিয়ের আগে ঐ পরিচারিকার আয় জিডিপিতে আসত কিন্তু বিয়ের পরে যেহেতু সে স্ত্রী হিসেবে সেই একই কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করছে সেই ক্ষেত্রে কি দেশের জিডিপি কমে যাবে? সব বিলিয়নিয়ার যদি এভাবে পরিচারিকাকে বিয়ে করে বসে তাহলে দেশের জিডিপি তো হুমকির সম্মুখীন হবে।

আমাদের দেশের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে চাকরী করে থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক হোল তাদের আয় যোগ হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশের জিডিপিতে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা যে আয় করছেন সেটা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার বাইরে।

আবার জিডিপিতে অনেক আয় আসে না। যেমন কালোবাজারি থেকে আয়, ট্যাক্স ফাঁকির আয়, পুরাতন জিনিস কেনা বেচার আয় ( এটা অবশ্য বৈধ) ইত্যাদি। অথচ এই কার্যকলাপগুলি পণ্য উৎপাদন বা সেবা বৃদ্ধি করছে এবং বহু মানুষ এই আয়ের উপর নির্ভরশীল। যে কোন দেশের এই ধরণের বেআইনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বলা হয় ‘গ্রে ইকনমি’। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গড়ে জিডিপির প্রায় ৪৫% হোল গ্রে ইকনমি। অর্থাৎ যদি কোন দেশের মাথাপিছু আয় হয় ৫,০০০ ডলার প্রকৃত পক্ষে মাথাপিছু আয় হবে আরও ২,২৫০ ডলার বেশী যদি গ্রে ইকনমিকে হিসাবে ধরা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ২,৫০০ ডলার। আমরা যদি বাংলাদেশের গ্রে ইকনমির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসাবে ধরি তাহলে এটা হবে প্রায় ৩,৬২৫ ডলার ( ধরে নিলাম বাংলাদেশের গ্রে ইকনমি জিডিপির ৪৫%)।

পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যাদের গ্রে ইকনমি জিডিপির প্রায় ৬৭% ( যেমন, জিম্বাবুয়ে)। এছাড়া হাইতি, জর্জিয়া, নাইজেরিয়া, গ্যাবন, মিয়ানমার, বেনিন, কঙ্গ, গুয়াতেমালা, বলিভিয়া, মাদাগাস্কার, লাইবেরিয়া, আজারবাইজান, গাম্বিয়া, থাইল্যান্ড, ইউক্রেন, এল সাল্ভেদর, আইভরিকোস্ট, গিনি এবং পেরুতে গ্রে ইকনমির হার জিডিপির ৪০% বেশী।

উন্নত বিশ্বে গ্রে ইকনমির হার অনেক কম। গ্রে ইকনমি কম এই ধরণের দেশগুলি হোল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউ কে, নিউজিল্যান্ড, অস্ত্রিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন,চিন, হংকং, কাতার, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি।

আমাদের দেশের প্রবাসীরা এত কষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন কিন্তু সেটা জিডিপিতে আসছে না। যদিও এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্ছিতি তৈরিতে তাদের অবদান অনেক। রফতানির পরেই তাদের স্থান। ইউ এন মিশনে যারা চাকরী করেন তারাও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসেন।

সুত্র- Click This Link
ছবি - baltictimes.com

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২৮

অধীতি বলেছেন: বিষয় অজানা ছিল। ধন্যবাদ।

১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:১৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ধন্যবাদ ব্যাপারটা আপনার জ্ঞাত হওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৩৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বাংলাদেশে বেশিরভাগ নাগরিকদের আয়কর নিবন্ধন (টিন) নম্বর নেই।
বিপুল সংখক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসায়ীদের ভ্যাট নিবন্ধনও নেই, অনেকের আয়কর নিবন্ধনও নেই।
দেশের অর্থনীতিতে এদের অবদান অনেক, কিন্তু নিবন্ধিত না থাকায় জিডিপির হিসেবে যুক্ত হয় না।

আর রেমিটেন্স জিডিপিতে অন্তভুক্ত না হলেও সরকারের লাভ শতভাগ।
ধরেন আমি ১০০ ডলার দেশে পাঠালাম, বাংলাদেশ ব্যঙ্ক ডলারগুলো রেখে কাগজ ছাপিয়ে ১০০ ডলারের সমমান টাকা আমার পরিবারে সদস্যের হাতে তুলে দিল।

১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: টাক্স-জিডিপি অনুপাত দিয়ে একটা দেশের মানুষের ট্যাক্স দেয়ার প্রবণতা বোঝা যায়। অর্থাৎ আয়ের অনুপাতে মানুষ কি হারে ট্যাক্স দিচ্ছে। বাংলাদেশ এই ব্যাপারে অনেক পিছিয়ে আছে (১০% মাত্র)। উন্নত বিশ্বে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত হোল গড়ে প্রায় ৩০% ভাগের উপরে। সবার উপরে আছে ফ্রান্স (৪৬%)। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই অনুপাত গড়ে ৩৫%। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান ভালো না। ভারত ১৮%, পাকিস্তান ১২%, শ্রীলঙ্কা 13%, নেপাল ২০%, ভুটান ১৪%, মালদ্বীপ ২১%।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ এর আগে জিডিপির বদলে জিএনপি (গ্রস ন্যাশনাল প্রডাকট) পদ্ধতি অনুসরণ করতো। জিএনপিতে সকল নগরিকের আয় ধরা হয়, যে দেশেই সে থাকুক না কেন। জিএনপি পদ্ধতি অনুসরণ করলে বাংলাদেশের প্রবাসীদের আয় জিএনপি যোগ হত।

প্রবাসী আয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতির বড় উৎস। প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভর করে কয়েক কোটি মানুষের জীবন চলে।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: জিডিপি নিয়ে চমৎকার একটা পোস্ট লিখেছেন। তবে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে প্রবাসীদের আয় বাংলাদেশের জিডিপিতে যোগ হচ্ছে বললে ভুল বলা হবেনা। রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি ও অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো রেমিট্যান্স। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি এবং বেসরকারি ঋণ সংস্থান ও পোর্টফোলিও ইকুইটি প্রবাহের চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিশীল। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ প্লাস। প্রবাসীরা যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন, তা দেশের মোট রফতানি আয়ের অর্ধেক।

@হাসান কালবৈশাখী যেমন বলেছেন, "রেমিটেন্স জিডিপিতে অন্তভুক্ত না হলেও সরকারের লাভ শতভাগ"!- সত্যিই তাই।

জাতীয় অর্থনীতিতে রফতানি খাতের অবদান তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পণ্য রফতানি বাবদ যে অর্থ উপার্জিত হয়, তার একটি বড় অংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। কিন্তু জনশক্তি রফতানি খাত এমনই এক অর্থনৈতিক খাত, যার উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কর। প্রবাসীদের পাঠানো টাকার বিরাট অংশ তাদের স্বজনরা বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ব্যয় করেন, ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলে। আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করে। জাতীয় অর্থনীতির তাই অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিট্যান্স।





১৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রফতানির ক্ষেত্রে অর্ধেক ডলার চলে যায় আমদানি করতে। তাই আসলে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার সব চেয়ে বেশী অবদান রাখে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্ছিতি তৈরিতে।

বিদেশী ঋণ এবং ইকুইটি ধীরে ধীরে ফেরত চলে যায়। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো ডলারকে ফেরত দিতে হয় না।

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩৭

পোড়া বেগুন বলেছেন:
আমি জানতাম প্রবাসীদের আয় দেশের জিডিপিতে যোগ হয়,
আমি কী ভুল জানতাম?

২০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৪৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যে সব দেশ জিএনপি (গ্রস ন্যাশনাল প্রডাকট) পদ্ধতিতে হিসাব রাখা হয় সেখানে ভৌগলিক সীমা নির্বিশেষে ঐ দেশের নাগরিকদের আয়কে হিসাবে আনা হয়। সেই ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আয়কেও হিসাবে আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় জিএনপি ব্যবহার করা হত। জিডিপির ক্ষেত্রে একটা দেশে বসবাসরত বিদেশীদের আয়কেও হিসাবে ধরা হয় এবং প্রবাসী নাগরিকদের আয়কে বাদ দেয়া হয়। এটাই নিয়ম।

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৩৪

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সাচু ভাই এটা তো সব দেশেই একই রকম।জিডিপির সাথে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ইনকাম তো রেমিট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। এটা কি জিডিপিতে যুক্ত করার যুক্তিযুক্ততা রাখে?

আপনার লেখা ভালো হয়েছে।

২০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জি, সব দেশেই এক রকম যদি জিডিপি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে যে সব দেশ জিএনপি অনুসরণ করে তারা ভৌগলিক সীমা নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের আয়কে হিসাবে ধরে এবং প্রবাসীদের আয়কে বাদ দেয়। আমি জিডিপির সমালোচনা করছি না। হিসাব ঠিক আছে। শুধু এই ব্যাপারটা শেয়ার করার জন্য লিখেছি। কারণ অনেকে ব্যাপারটা জানে না। উপরে ৪ এবং ১ নং মন্তব্যে সেটা ফুটে উঠেছে।

৬| ২০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:০৬

জটিল ভাই বলেছেন:
জিডিপি, জিএনপি'র এই অর্থনৈতিক খেলা আমার মতো নাদানের কাছে শুভংকরের ফাঁকি মনে হয়......

২০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:১৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আসলে এগুলি একটু জটিল। :) আপনার মত।

সাধারণ মানুষের কাছে এই সব জিডিপি আর জিএনপি হোল তাদের বোকা বানানোর হাতিয়ার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.