নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তাশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি

সাড়ে চুয়াত্তর

আমার লেখার মাঝে আমার পরিচয় পাবেন

সাড়ে চুয়াত্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযোদ্ধাদের দলাদলি জাতির জন্য অকল্যাণকর ছিল

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৬


মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগেই সামরিক নেতৃত্ব সংগঠিত হয় বলে উল্লেখ করেছেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ তার বই ‘আওয়ামীলীগঃ যুদ্ধ দিনের কথা -১৯৭১’ বইয়ে। তবে ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তাজউদ্দিন আহমেদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ঐ সময় পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সকল নেতৃত্ব একত্রিত হয়ে এই ব্যাপারে মতামত প্রদানের সুযোগ পায়নি। ঐ সময় তাজউদ্দিন আহমেদকে পরামর্শ দেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অন্যান্য আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে আলাপ করার সুযোগ বা সময় তখন ছিল না। দেশের প্রয়োজনে তাজউদ্দিন আহমেদ প্রবাসী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দিল্লীতে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন তাজউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক রেহমান সোবহান কাজ করছিলেন তখন সিলেটের হবিগঞ্জে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন বিদ্রোহী সামরিক কর্মকর্তারাও একটা সভা করেন। এটিই ছিল সশস্ত্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা। আওয়ামীলীগের হাই কমান্ডের নেতারা তখনও কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

এই সরকার গঠনের বিষয়টা যখন আওয়ামীলীগের যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ এবং সিরাজুল আলম খান জানতে পারে তখন তারা তাদের সাথে আলাপ না করে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করার জন্য তাজউদ্দীন আহমেদের উপর ক্ষুব্ধ হন। তাদের দাবি অনুযায়ী, তাজউদ্দীনের কলকাতার ভবানিপুরে চিত্তরঞ্জন ছুতারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ছিল। তাদের ভাষ্য মতে, বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, এই চারজন যুবনেতার নেতৃত্বে বিপ্লবি কাউন্সিল হবে এবং কোন ধরণের সরকার গঠন করা হবে না। বিপ্লবী কাউন্সিল তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে এবং দেশের ভিতরে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করবে। চিত্তরঞ্জন ছুতার ছিলেন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি তখন কলকাতাতে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তার আগে থেকে পরিচয় ছিল।

তাজউদ্দীন আহমেদ কলকাতায় ফিরে এলে এই যুব নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। তিনি কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করেন যে চিত্তরঞ্জন ছুতারের বাড়ি তিনি খুঁজে পাননি। কোলকাতা থেকে আগরতলাতে যাত্রার সময় শেখ ফজলুল হক মণির সাথে তাজউদ্দীন আহমেদের কথা কাটাকাটি হয়। শেখ মণি জানতে চান তাজউদ্দীন কার সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।

ক্ষুব্ধ হওয়া সত্ত্বেও এই চার নেতা প্রবাসী সরকারের নেতৃত্ব তখন মেনে নেয় কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই চার যুব নেতা পরে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোরস (বি এল এফ) নামে একটা আলাদা বাহিনী গঠন করে। এই বাহিনীর নাম পরে হয় ‘মুজিব বাহিনী’। এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পরামর্শে এবং এদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র ছিল সাধারণ মুক্তিবাহিনীর থেকে আলাদা। ভারতের মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান ছিলেন এদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে।

ঐ সময় মাওলানা ভাসানি ছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজরদারিতে। ফলে স্বাধীন কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার মত অবস্থায় উনি ছিলেন না। ৩১ মে, ১৯৭১ তারিখে এক সম্মেলনে মওলানা ভাসানির নেতৃত্বে সকল দল মিলে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়। তবে ভাসানি এই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সম্মেলনে ছিলেন সাইফ উদ দাহার, মারুফ হোসেন, কাজী জাফর আহমদ, দেবেন শিকদার, আবুল বাশার, অমল সেন, নজরুল ইসলাম, শান্তি সেন, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, মোস্তফা জামাল হায়দার, নাসিম আলী প্রমুখ। সমন্বয় কমিটির সাথে যুক্ত হয় ন্যাপ (ভাসানি), কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (দেবেন শিকদার), কমিউনিস্ট কর্মী সঙ্ঘ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (হাতিয়ার গ্রুপ), পূর্ব বাংলা কৃষক সমিতি, পূর্ব বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন এবং পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন। ভাসানি সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে পাঁচ দলীয় উপদেষ্টা কমিটিকে আরও বিস্তারিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ তাতে রাজি হয়নি।

বামপন্থিদের ব্যাপারে প্রবাসী সরকারের উৎকণ্ঠা ছিল। অভিযোগ ছিল বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে বামপন্থি, বিশেষ করে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) নেতারাও সতর্ক ছিলেন, যাতে বামপন্থিরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র না পায়। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন যে ন্যাপের (ভাসানি) ব্যারিস্টার আফসার ভারতীয় বি এস এফের সহায়তায় একটা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলেছিলেন। প্রবাসী সরকারের চাপের কারণে ভারত সরকার ক্যাম্পটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

মুজিববাহিনী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যেও যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল। কাজী জাফর আহমদ বলেছেন যে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। শেখ মণি এবং সিরাজুল আলম খান এই ব্যাপারে তাকে বলেন যে বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন কি না আমরা নিশ্চিত নই। উনি যদি আমাদের মধ্যে ফিরে না আসতে পারেন সেই ক্ষেত্রে এই শুন্যতার সুযোগ সামরিক কর্মকর্তারা নিতে পারে। এই কারণেই মুজিব বাহিনীর সৃষ্টি।

স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা গঠিত দল জাসদ ছিল দলাদলির আরেকটা বড় নজির। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে সিরাজুল আলম খান সহ আরও ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে বঙ্গবন্ধুর একটা বৈঠক হয়। নতুন রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে এই বিষয় নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে সিরাজুল আলম খান একটা ১৫ দফা কর্মসূচির খসরা দিয়েছিলেন। ঐ সময় সিরাজুল আলম খানপন্থিদের ধারণা ছিল যে বঙ্গবন্ধু সরকারের কোন পদ গ্রহণ করবেন না। তিনি মাহাত্মা গান্ধীর মত নেপথ্যে থেকে জাতীয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবেন। এই প্রস্তাবগুলি ছিল অনেকটা এই রকম ;

১। বাংলাদেশ একটা বিপ্লবী জাতীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সকল দলের সমন্বয়ে গঠিত এই সরকারের প্রধান থাকবে বঙ্গবন্ধু।
২। মুক্তিযুদ্ধের পরিক্ষিত নেতৃত্ব এই সরকার পরিচালনা করবে।
৩। বঙ্গবন্ধুর মর্যাদার বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪। সকল দলের প্রতিনিধিদের দ্বারা একটা সংবিধান তৈরি করা হবে।
৫। প্রচলিত কোন সামরিক বাহিনী থাকবে না। মুক্তিযোদ্ধা (এফ এফ), মুজিব বাহিনী সহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিপ্লবী গার্ড গঠন করা হবে।
৬। এই বিপ্লবী গার্ডের মধ্যে থাকবে পিপলস আর্মি, কৃষক ব্রিগেড এবং শ্রমিক ব্রিগেড।
৭। পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে একটি বাহিনী থাকবে। পুলিশ শব্দটা ব্যবহার করা হবে না।
৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত খোলা হবে না। ছাত্র এবং শিক্ষকেরা মিলে সাক্ষরতা অভিযান চালিয়ে অন্তত ৬০% মানুষকে স্বাক্ষর করবে।
৯। উচ্চশিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।
১০। অন্তত ২ বা ৩ বছর সিভিল সার্ভিস ক্যাডারদের প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে।
১১। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা জেলা, থানা বা মহকুমা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন তারাই জন প্রশাসনের কাজ করবেন ২ বা ৩ বছর।
১২। জন প্রশাসনে ১ম, ২য়, ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণী থাকবে না।
১৩। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত হবে ১ অনুপাত ৭।
১৪। সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতি চালু করতে হবে।
১৫। ভারত বা রাশিয়া ছাড়াও চীন, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

এই দাবিগুলি কোনটাই বলতে গেলে পরবর্তীতে বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে সিরাজপন্থি ছাত্রলীগের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ‘মুজিববাদ’ ধারণার উদ্ভব হয় কিছু সময়ের জন্যে। জাতীয় শ্রমিক লীগের ব্যানারে ‘লাল বাহিনী’ গঠন করার ঘোষণা দেয়া হয়। ছাত্রলীগের মধ্যে মেরুকরন চলতে থাকে। সমাজতন্ত্রের তীব্রতা বাড়তে বাড়তে ছাত্রলীগের একটা অংশ সব কিছুতেই কমরেড, লাল সালাম ইত্যাদি ব্যবহার করতে শুরু করে। আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছে এটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। লাল সালাম বা মার্ক্সবাদের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সম্মতি ছিল না। এই বিষয়ে ছাত্রলীগের দুই অংশ ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে। সিরাজপন্থিদের সাথে রাজ্জাক পন্থিদের বিরোধ দেখা দেয়। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে সিরাজপন্থিরা একটা গোপন বৈঠক করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব, মনিরুল ইসলাম, শাজাহান সিরাজ, মোঃ শাজাহান, বিধান কৃষ্ণসেন, সুলতান উদ্দিন আহমদ, এম এ আওয়াল, নুরে আলম জিকু এবং আলী রেজা। জাসদ গঠনে একমত হন তারা। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের দুই ভাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু সিরাজপন্থীদের মেনে নিতে পারলেন না শেষ পর্যন্ত। যদিও এদের সংখ্যাই বেশী ছিল। শেষ পর্যন্ত সিরাজপন্থিরা জাসদ গঠন করে। জাসদে বলতে গেলে সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।

পরে জাসদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের বহু সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ঐ সময়ের রাজনীতিকে এলোমেলো করে দেয়ার ক্ষেত্রে জাসদের অনেক ভুমিকা ছিল। শাসক গোষ্ঠীর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায় এই জাসদ। এই জাসদকে লাইনে আনার জন্য আবার ব্যবহার করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা গঠিত রক্ষীবাহিনীকে। এদের বাড়াবাড়ি ছিল দেশের মানুষের জন্য আরেকটা মাথা ব্যথা। সেই সাথে সরকারকে বিব্রত করার জন্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারের দল 'সর্বহারা পার্টি' সহ আরও কিছু বামপন্থি দল যাদের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান ছিল। আবার আর্মির মুক্তিযোদ্ধারা মনে করতেন রক্ষীবাহিনীর কারণে তারা অবহেলিত। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরেও এই হানাহানি, রেশারেশি কয়েক বছর পর্যন্ত ছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে নিজেরা নিজেরা হানাহানি করে মুক্তিযোদ্ধারা রাজনীতির মূল লাইম লাইটের বাইরে চলে যায় এবং এরশাদের মত কুলাঙ্গার দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। জিয়াউর রহমানের হত্যার সময় আর্মিতে যে ক্যুয়ের বিচার হয় সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয় অনেকটা বিনা বিচারে। ফলে পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা বিদায় নেয়া শুরু করে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অ-মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য যে পদক দেয়া হয় সেই ক্ষেত্রেও সাধারণ গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অবহেলিত। বেশীর ভাগ পদক পেয়েছে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা। কাকে পদক দেয়া হবে সেটার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপাত্ত ছিল সেনাবাহিনীর কাছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জানুয়ারী, ১৯৭২ সালেই সামান্য কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যাদের সম্পর্কে কোন তথ্য সেনাবাহিনীর কাছে পরবর্তীতে ছিল না। এই সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারাই স্বাধীনতার পরের ৩০ বছর সবচেয়ে অবহেলিত ছিলেন। জনগণ এদের কথা না ভুললেও শাসকরা কেউ তাদের মনে রাখেনি। অথচ ওনারা ছিলেন জাতির পরীক্ষিত বন্ধু (কিছু ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ছাড়া)।

স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে এভাবে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়েছে। এই দলাদলি দেশের রাজনীতির জন্য অকল্যাণকর ছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনে বহু হত্যা, সহিংসতা হয়েছে এই দলাদলির কারণে। এই দলাদলি সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলাকেও ব্যাহত করেছে এবং ক্যু পর্যন্ত হয়েছে। এই দলাদলির সুবিধাভোগী ছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। এই মতবিরোধ থেকে সৃষ্ট হানাহানির খেসারত জাতি এখনও দিচ্ছে।

সূত্র -
আওয়ামীলীগঃ যুদ্ধ দিনের কথা -১৯৭১ – মহিউদ্দিন আহমেদ
জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি – মহিউদ্দিন আহমেদ
tothakothito.blogspot.com

ছবি- সময় টিভি

মন্তব্য ৩৫ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৩৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪০

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: অনেক কাহিনী, যাই হোক আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি এটাই বড় কথা। মানুষ যখন ভুল করে তখন তা বুঝা যায় না পরে বুঝা যায়। অতীতে অনেকেই অনেক ভুল করেছে তাই আমরা এসব ভুল ভুলে গিয়ে অথবা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এই দেশটাকে আবার নতুন করে সাজাই। পূর্বের মানুষের ভুলের খেসারত আমরা দিবো কেন? সারা দুনিয়া তরতর করে উন্নতি করছে আর আমরা্ এখনো গরিবই রয়ে গেলাম।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খেসারত আমরা দিতে না চাইলেও দিচ্ছি। কারণ স্বাধীনতার ২০ বছরের মধ্যেই এই দেশের বহু দূর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরে আসতেই ২০ বছর লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ২০ বার ক্যু হয় আর্মিতে। ১০০০ হাজারের উপর সেনা সদস্যের ফাসি হয় কোন বিচার ছাড়া। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তানমুখী হওয়ার চেষ্টা করে যেই চেষ্টায় সহায়তা করে আওয়ামীলিগেরই প্রথম সারির কিছু নেতা। একই সাথে স্বাধীনতা বিরোধীরা এই সুযোগ নেয়। তারা সংগঠিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়। তাদের বিচার তো হয়ই না বরং শাসকের সাথে শাসনের অংশীদার হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে জাতি অনেক বছরের জন্য দূরে সরে যায়। এরপরে যারা আসে তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা/ রাজনীতি শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সব ক্রেডিট একা নিতে চায়। ভাবটা এমন যে এই দেশে মুক্তিজুদ্দে আর কারও কোন ভুমিকা না। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুলত একটা জনযুদ্ধ। কিন্তু রাজনীতির রঙ চড়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর। সাধারণ মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের বেকুব ভাবতে শুরু করে। আজ ৫২ বছর পরে দেশে গনতন্ত্র আছে কি না এটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।

এইসব কারণেই আমরা আজ ৫২ বছর পরেও গরীব রয়ে গেলাম। কারণ সঠিক রাজনীতি আর সুশাসন না থাকলে ঐ জাতি পথ হারিয়ে ফেলে। যেটার খেসারত দেয় পরবর্তী প্রজন্ম।

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- পরে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পড়বো।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সেটাই মনে হয় ভালো হবে। তাড়াহুড়া করে পড়ার দরকার নাই। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৭

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এইসব কারণেই আমরা আজ ৫২ বছর পরেও গরীব রয়ে গেলাম। কারণ সঠিক রাজনীতি আর সুশাসন না থাকলে ঐ জাতি পথ হারিয়ে ফেলে। যেটার খেসারত দেয় পরবর্তী প্রজন্ম। :((

ধন্যবাদ।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসা হয়। আমাদের রাজনীতি অতীতমুখী। দেশের মানুষের সমস্যার চেয়ে আমরা ১৯৭১ সাল নিয়ে বেশী রাজনীতি করি। বাংলাদেশ একটা নদীবিধৌত উর্বর সমতল ভুমি। পৃথিবীর অনেক দেশে এই রকম ভূখণ্ড নাই। বেশী বড় দেশের উন্নতি করা অনেক সময় কঠিন হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাতিগত ভেদাভেদ ইত্যাদি কারণে। আমাদের দেশে বলতে গেলে সবাই একই ভাষায় কথা বলে। দেশের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে বেশী সময় লাগে না। দুর্গম কোন এলাকা নাই। জাতিগত দাঙ্গা নাই। দেশ ভর্তি তরুণ প্রজন্ম যারা কাজের জন্য উদগ্রীব। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পাচ্ছি আমরা (যখন কর্মক্ষম মানুষ অনেক বেশী থাকে)। অনেক দেশে বুড়োদের পরিমান এত বেড়ে গেছে যে এটা একটা বোঝার মত অবস্থা। এই দেশে শ্রম সস্তা। শিল্পায়ন ঘটানো সম্ভব এই দেশে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে হচ্ছে না। সরকার মনে করে চাউলের দাম কম থাকলেই সব ঠিক আছে। এই দেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে কোন সরকার বুঝতে পারলো না। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে যে আমাদের আগাতে হবে এটা কোন সরকার বোঝে না। পৃথিবীর উন্নত জাতিগুলিগুলি জ্ঞান আর মেধা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেক অনেক মেধাবী মানুষ আছে। কিন্তু আমরা পাড়ছি না নিজেদের দোষে। উন্নত হওয়ার সবই আমাদের মধ্যে আছে।

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০২

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


মুক্তিযোদ্ধাদের দলাদলি কতটা ভাগ করেছিলো?

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। ১৯৭১ সালেই বামপন্থি মুক্তিযোদ্ধাদের পাত্তা দিত না আওয়ামী লীগ। আবার বামপন্থীদের মধ্যে অনেকগুলি উপদল ছিল/আছে যারা একে অন্যকে দেখতে পারে না। চরমপন্থি ছিল মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি সহ আরও কয়েকটি গ্রুপ। মুক্তিযোদ্ধার দল জাসদের তরুণেরা আবেগ প্রবণ হয়ে অনেক হঠকারী কাজ করেছে, হত্যা, সহিংসতামুলক কাজ করেছে। আর্মির মুক্তিযোদ্ধারা আবার আওয়ামীলীগ সমর্থনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে পারতো না। ১৯৭১ সালেই মুজিব বাহিনী নামে একটা বিশেষ বাহিনী ছিল যেটাকে আর্মির লোকেরা কোন কালেই মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীতে বিএনপিপন্থি মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামীপন্থি মুক্তিযোদ্ধার সৃষ্টি হয়। যুদ্ধের ময়দানে এক সাথে যুদ্ধ করার পরে রাজনৈতিক কারণে কেউ বি এন পির মুক্তিযোদ্ধা আর কেউ আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়োজনে একে অন্যকে হত্যা করতেও কুণ্ঠা বোধ করতো না। আর যারা রাজনীতি, ক্ষমতা নিয়ে মাথায় ঘামায় নাই তাদের কেউ খবর নেয়নি। যাদের আর্থিক সামর্থ্য ছিল তাদের বেশী সমস্যা হয়নি। বাকিদের মধ্যে কেউ রিকশা চালিয়ে বা অন্য ছোটখাট কোন কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। অথচ ১৯৭২ সালেই এসবের সমাধান হওয়া উচিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের পরীক্ষিত সন্তান। তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে পাকিস্তানপন্থি আমলাদের দিয়ে দেশ চালানো হয়েছিল। রাজনীতি না করলে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন মূল্য ছিল না।

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমাদের রাজনীতি অতীতমুখী। দেশের মানুষের সমস্যার চেয়ে আমরা ১৯৭১ সাল নিয়ে বেশী রাজনীতি করি।

ঠিক বলেছেন, বিষয়টা আমার কাছে খুবই বিরক্ত লাগে।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমরা জনগণও নিজেদের ভালো বুঝি না। এই দেশের কোন রাজনৈতিক দলেই এখন আর কোন ভালো নেতা নাই। থাকা সম্ভবও না। অথচ আমরা এই দলগুলিকে সমর্থন করে যাচ্ছি যারা দেশকে লুটেপুটে খেয়ে বেগম পাড়ায় সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। রাজনীতির ময়দানে যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন এদের মধ্যে বিয়েশাদীর মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হচ্ছে না। জনগণ না বুঝেই লাফাচ্ছে এদের পিছনে। দেশের প্রত্যেকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষকরা এই নোংরা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। ফলে দেশের নৈতিক শিক্ষার মান কমছে। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের অতীতমুখীতা ছেড়ে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৭

জুল ভার্ন বলেছেন: মহিউদ্দিন আহমেদ এর জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি এবং
আওয়ামীলীগঃ যুদ্ধ দিনের কথা -১৯৭১ দুটি বই ই পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা সত্য ঘটনা তিনি উল্লেখ করেছে, যার প্রতিবাদ কখনও কেউ করেনি।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধা (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোরস - বি এল এফ) মহিউদ্দিন আহমেদ একজন উচ্চশিক্ষিত লেখক। দক্ষিণ কোরিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন তিনি এক সময়। গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল, ঢাকা কলেজে পড়েছেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টারস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মোহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। কিছুদিন সানবাদিকতা করেছেন। নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গেছেন। পরামর্শক হিসাবে কাজ করেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে অনেক বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। আমি ওনার কয়েকটি বই পড়েছি। উনি কোন মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে শোনা যায় না। নিরপেক্ষভাবে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ইতিহাস তিনি লিখেছেন।

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১৭

শাহ আজিজ বলেছেন: মহিউদ্দিন আহমেদের লেখা বই দুটো অর্ডার করে দিলাম ।



ধন্যবাদ সেনা ও বেসামরিক নেতাদের যে তারা এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেননি । পেছনের কারিগর ইন্দিরা গান্ধী এতটাই চতুর ছিলেন যে তিনি বাঙ্গালদের পালস বুঝতে পারলেন এবং সেভাবেই ফিনিশিং টেনেছিলেন । মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শীর্ষ রাজনিতিক এবং সেনা বাহিনি যে কাদা মাখামাখি করেছেন যা খুব লজ্জার । এই দেশ স্রেফ সেনা বাহিনির অর্জন নয় , এ অর্জন আপামর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জন ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বইয়ের অর্ডার করেছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনি সম্ভবত আগে থেকেই ওনার বই সম্পর্কে জানেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং অবশ্যই একজন ভালো মানের লেখক।

এই যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে ভিয়েতনামের মত হতো অথবা অ্যামেরিকার সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান জিতে যেত হয়তো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ভারতের জন্য একটা সুযোগ ছিল পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার জন্য। ইন্দিরা গান্ধী সেই সুযোগকে ভালো ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। যুদ্ধের অব্যবহিত পরে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা রাজনীতি না করার কারণে লাইম লাইট থেকে হারিয়ে যায়। সশস্ত্র যুদ্ধের পরে দেশ গঠনে এই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয়া হয় নাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুলত ছিল একটি জনযুদ্ধ।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৪৪

জ্যাকেল বলেছেন: এ দেশের জন্ম ছিল সাধারণ মানুষদের জন্য, বেহাত হয়ে ইহা গুটিকয়েক শিল্পপতির কালো থাবার খপ্পরে পড়ে গেছে। ৭১'র স্মৃতি মনে করে কাঁদি।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: শোষণ থেকে মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু শোষণের নতুন রূপ আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সংবিধানে আছে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। কিন্তু এই দুইটারই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে আমাদের সমাজ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাম্যবাদের ধারে কাছেও আমরা নেই। সমাজের একটা শ্রেণী লুটেপুটে খাচ্ছে। অথচ এই শোষকরা অনেকেই যথেষ্ট শিক্ষিত এবং সমাজের মাথা। আপনি ভাগ্যবান যে ৭১ নিয়ে আপনার স্মৃতি আছে। সেই সোনালী সময় দেখার সুযোগ আমরা পরবর্তী প্রজন্ম পাইনি।

৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- পড়লাম। লেখকের বিশ্লেষন ভুল বলে মনে হলো না আমার কাছে। কিছু কিছু বিষয় আগেও পড়া ছিলো। তবে আমাদের সোনা সাহেব একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা না হলে এইসব পোস্ট করার অধিকার আপনার নেই।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই লেখক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন। নিজেও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ওনার বইয়ে উল্লেখ করা তথ্যের বিরুদ্ধে কেউ চ্যালেঞ্জ করেছে বলে শুনি নাই। আমাদের সোনাগাজী সাহেবকে সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জানে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বা ১৯৭১ সাল নিয়ে ওনার কোন পোস্ট আছে বলে আমার মনে হয় না। উনি যদি এই ব্যাপারে ভালো জানেন ওনার উচিত পোস্ট দিয়ে সেটা সবাইকে জানানো। কিন্তু ওনার গতকালের দেয়া পোস্টে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন তথ্য নাই। আছে আমার পোস্টের নিন্দা। কেন নিন্দা করেছেন সেটাও পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেননি। আজকে দেখলাম ওনার পোস্টটা সম্ভবত প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ব্লগেই এক মুক্তিযোদ্ধা আরেক মুক্তিযোদ্ধাকে হেয় করে। জুল ভার্ন ভাই ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সোনাগাজি সাহেব জুল ভার্ন ভাইকে প্রায়ই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। আমরা তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে কি শিখবো।

১০| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২০

কামাল১৮ বলেছেন: তথ্যনির্ভর একটি সুন্দর লেখা।যেখান থেকেই তথ্য নিয়ে লিখে থাকেন ভালো হয়েছে।
বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম।প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ছিলাম।হায়দার আকবরখান ঝনু ছিলো সভাপতি।সে রনোর ছোট ভাই।আতিকুর রহমান শালু ছিলো সম্পাদক।আমরাই প্রথম মুক্ত অঞ্চল গড়ে তুলি।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাই মহিউদ্দিন আহমেদের বইগুলি পড়লে বইয়ে উল্লেখিত তথ্য সঠিক কি না সেটা হয়তো যাচাই করতে পারবেন (যদি না পড়ে থাকেন)। আমরা পরবর্তী প্রজন্ম। তাই অন্যের লেখা পড়ে কিংবা অন্যের কাছে শুনেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জানতে হয়েছে। সবচেয়ে সাহসীরাই মুক্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করেছে।

ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচিগুলি ভালোই লাগে। পুঁজিবাদী দেশ বানানোর জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করা হয় নাই।

১১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৩৭

সোহানী বলেছেন: ভালো লাগলো লিখাটা। যত বেশী লিখা হবে তত বেশী সচেতনতা তৈরী হবে ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহ তৈরী হবে নতুন প্রজন্মে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:১১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ কয়েকটা ভালো বই লিখেছেন তৎকালীন রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর। আমি কয়েকটা বই পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে এই বইগুলি সাহায্য করেছে। ওনার আরও কিছু বই পড়ার ইচ্ছা আছে।

ওনার কিছু উল্লেখযোগ্য বই হল;
১। পার্বত্য চট্টগ্রামঃ শান্তি বাহিনী জিয়া হত্যা মঞ্জুর খুন
২। আল কায়দার খোঁজে
৩। একাত্তর ও পঁচাত্তর
৪। আওয়ামীলীগ বিএনপি কোন পথে
৫। এই সমাজ এই সময়
৬। লাল সন্ত্রাসঃ সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি
৭। জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি
৮। প্রতি নায়ক সিরাজুল আলম খান
৯। এক এগারো ( বাংলাদেশ ২০০৭ - ২০০৮)
১০। বি এন পি সময় - অসময়
১১। আওয়ামীলীগঃ উত্থান পর্ব ১৯৪৮ - ১৯৭০
১২। আওয়ামীলীগ যুদ্ধ দিনের কথা ১৯৭১
১৩। এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল
১৪। বোমা বন্দুকের চোরা বাজার
১৫। একাত্তরের মুজিব
১৬। বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল তিন অধ্যায়
১৭। Seoul Diary
১৮। মারফতি

সবগুলি বই রকমারিতে পাওয়া যায়।

১২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৫

শেরজা তপন বলেছেন: বাঃ রাজনীতিতে দেখি আপনার বেশ দখল!
অনেক কিছু জানলাম। পোস্টে ভাল লাগা+

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ইতিহাস নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। সম্ভবত আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আমার মা ইতিহাস ভালোবাসতেন। ভালো ভালো বই পড়তেন। রিডারস ডাইজেস্ট পড়া শিখেছিলাম মায়ের কাছ থেকে। একসময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই পেলেই পড়তাম। তবে অন্য ইতিহাস তেমন জানি না। নীচের সাইটে প্রচুর বই পাবেন মুক্তিযুদ্ধের উপর। সম্পূর্ণ ফ্রি।

মুক্তিযুদ্ধের ফ্রি বই, প্রবন্ধ

এছাড়া কর্নেল হামিদের ( রানী হামিদের স্বামী এবং কায়সার হামিদের বাবা) লেখা এই বইটা পড়তে পারেনঃ
তিনটি সেনা অভভুথান এবং কিছু না বলা কথা - কর্নেল হামিদ

১৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২০

অপু তানভীর বলেছেন: বর্তমান সময়ে যে কয়জন লেখক গবেষণা তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সর্বাধিক নিরপেক্ষ ভাবে লেখেন তাদের ভেতরে মহিউদ্দিন আহমদ এর নাম বলতে গেলে সবার উপরে থাকবে। তবে কিছু কিছু মানুষ তার লেখা পছন্দ করে না কারণ তার লেখায় এমন অনেক সত্যই চলে আসে যা তার কিংবা তার সমর্থনকৃত দলের জন্য সুবিধার না । তবে আরও এক শ্রেণীর রামপাঠা আছে যারা কোন দিন মহিউদ্দিন আহমদ এর বই পড়েও নি । জানেও না কেমন লেখে কী লেখে কী করেছেন, এসব না জেনেই একটা মন্তব্য করে ফেলে । এমন রামপাঠা পাবেন এই ব্লগেই ।

নিজেদের সুবিধার কারণে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের কেবল সামনে আসা বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চান । এর বাইরে কিছু করলে তারা মনে করেন যে তাতে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি হচ্ছে । কী হাস্যকর এদের মনভাব । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রতিটি বিষয় সামনে আসা উচিৎ । প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ যাতে দেশের মানুষ এই ব্যাপার গুলো আরও গভীর ভাবে বুঝতে ও জানতে পারে । এসব তো লুকিয়ে রাখার কোন বিষয় না ।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলাদলি তো আজকের বিষয় না । আর এটা তো বাঙালির একটা মজ্জাগত ব্যাপার । দলে ভাগতো হবেই।
একদম শুরুতে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দাম দিতেন না । অথচ এদের অবদান ছিল সব থেকে বেশি । এরপর বাম ঘরোয়ানাদের আওয়ামীলীগ দাম দিতো না, আওয়ামীদের বামেরা দাম দিতো না ।
আর এখন তো কেবল মাত্র আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কারো দামই নেই ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বর্তমান সময়ে যে কয়জন লেখক গবেষণা তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সর্বাধিক নিরপেক্ষ ভাবে লেখেন তাদের ভেতরে মহিউদ্দিন আহমদ এর নাম বলতে গেলে সবার উপরে থাকবে। তবে কিছু কিছু মানুষ তার লেখা পছন্দ করে না কারণ তার লেখায় এমন অনেক সত্যই চলে আসে যা তার কিংবা তার সমর্থনকৃত দলের জন্য সুবিধার না । - খুব মূল্যবান কথা বলেছেন। যদি এমন হয় যে কেউ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎকালীন রাজনীতির উপর লেখা নিয়ে সমালোচনা করে কিন্তু এই লেখকের নাম পর্যন্ত জানে না সেই ক্ষেত্রে বলতে হবে সেই ব্যক্তি আসলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন পড়াশুনা করেনি। এই ব্লগেই এই ধরণের ঘাড়ত্যাড়া মানুষ আছে। আপনি সঠিক বলেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকে রাজনীতি করে এবং ব্যবসা করে এরাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপ্রিয় অনেক সত্যকে স্বীকার করতে চায় না। কারণ তাতে তার রাজনীতি এবং ব্যবসার ক্ষতি হবে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির কারণে এই তথ্যগুলি এখন মানুষ জানতে পাড়ছে।

বীরত্বপূর্ণ পদক দেয়ার ক্ষেত্রে যে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত হয়েছে এটা পদকপ্রাপ্তদের তালিকা দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। ৭ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নুরুজ্জামান (নৃত্য শিল্পী লুবনা মরিয়ম যার কন্যা) এই বৈষম্যের কারণে তাকে দেয়া 'বীর উত্তম' উপাধি কখনও তার নামের শেষে ব্যবহার করতেন না। বাম ঘরানার মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশী অবহেলিত ছিল। ১৯৭১ সালেই এদেরকে ট্রেনিং করতে দেয়া হতো না। আওয়ামীলীগ কর্তৃপক্ষের ছারপত্র ছাড়া কাউকে মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং নিতে দেয়া হতো না ১৯৭১ সালে। বিকল্প পন্থায় এই মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিয়েছে বিভিন্নভাবে।

বর্তমানে আওয়ামীলীগ সমর্থন না করলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মেনে নিতে চায় না আওয়ামীলীগের লোকেরা। আওয়ামীলীগ না করাটাই একটা বড় অপরাধ এখন।

১৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সুখে দুঃখে আমাদের বারবার মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করতে হবে। আমাদের প্রথম গৌরব এই মুক্তিযুদ্ধ। দেশে যেমন নব্য ধনী, নব্য ধার্মিক শ্রেনী তৈরি হয়েছে ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীও এক শ্রেনী তৈরি হয়েছে। এদের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।

অনেক মানুষ। অনেক রকম মতবাদ। এটা থাকবেই। কেউ ভাল বলবে, কেউ মন্দ বলবে। আমাদের সঠিক টা খুঁজে নিতে হবে। সত্যের সাথে থাকতে হবে। এই দেশ যুদ্ধ করে পেতে হয়েছে আমাদের। ৩০ লাখ স্বজনদের হারাতে হয়েছে। এদের যারা ছোট করবে তাদের কোনো ছাড়ন দেওয়া হবে না।

আসল সমস্যা হলো- আমাদের দেশে নিরপেক্ষ কেউ নেই। সবাই কোনো না কোনো দল সাপোর্ট করে। তাই দলবাজি কোনোদিন বন্ধ হবে না। সমাজে বহু দুষ্টলোক আছে, এই মুক্তিযুদ্ধ কে কাজে লাগিয়ে ধনী হয়ে গেছে। তবে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাঁরা অমানুষ। তাঁরা রাজাকার। এই শ্রেনী থেকে জাতিকে সাবধান থাকতে হবে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেন দলবাজি থাকবে। মুক্তিযুদ্ধকে রাজনীতি এবং দলবাজির উপরে রাখা যায় না। মুক্তিযুদ্ধকে পুজি করে কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কখনও ব্যবসা করবে না কিংবা রাজনীতি করবে না। মুক্তিযুদ্ধ কি জনযুদ্ধ না। এটার মধ্যে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি ঢুকিয়েই বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের রাতের আঁধারে ঝুকি নিয়ে রান্না করে খাইয়েছে যে নারী তার অবদান কি মুক্তিযুদ্ধে কম।

১৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: ভালোলাগল লেখাটা।
মহিউদ্দিন আহমেদের বর্ণনায় অনেক ভিতরের খবর সহজ ভাবে পাওয়া যায়। যারা ভিতরের খবর জানেন,গভীর ভাবে এবং সৎ ভাবে উপস্থাপনের সাহস রাখেন তেমন মানুষ খুব কম। অনেকেই নিজেদের পক্ষে, নিজের বিশ্বাসে লিখে অনেক কিছু জটিল করে ফেলেছেন, নিরপেক্ষ না থেকে।
সঠিক ইতিহাস জানা কঠিন হয়ে উঠেছে। আর বেঠিকের প্রচার যে কত বেশি তাও আমরা এখন জানি।
যুদ্ধের সময়ই অনেকে নিজেদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে মনে করে নানাভাবে বিরোধীতা করেছেন। পরবর্তি সময়ে সীমা ছাড়িয়েছে সব কিছু।
বঙ্গবন্ধু হত্যা এই অধিকার আদায়ের জ্বলন্ত প্রমাণ।
আমার মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই আসত অনেক ছোটবেলা থেকে, সাধারন মুক্তিযোদ্ধা কেন বীরউত্রম, বীর শ্রেষ্ঠ এমন সম্মান গুলো পাচ্ছেন না।
বেশিরভাগ খেতাব আর্মিদের দেয়া হয়েছে।
পৃথিবীর আর কোনদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবহেলা করেনি যেমন অবহেলিত হয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা।
যুদ্ধে যারাই গিয়েছিলেন কিশোর বয়স থেকে বয়স্ক মানুষ, যে অবস্থান বা পদমর্যাদা থেকেই জান না কেন একটাই ভাবনা ছিল তাদের মনে, দেশের জন্য যুদ্ধে গিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন বা বেঁচে এসেছেন। আর্মি বা সাধারন মানুষ সবার মর্যাদা সমান মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে।
অথচ ভাগাভাগি করা হয়েছে তাদের জীবন মরণ পণকেও।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মহিউদ্দিন আহমেদ বেশ কিছু বই লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের এবং পরের সময়ের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে। বইগুলির প্রতি পাঠকের প্রচুর আগ্রহ দেখা গেছে। মুলত রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে অনেকেই নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি। যার কারণে অনেক অপ্রিয় সত্যি কথা অনেকে স্বীকার করতে চায় না।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছে পরবর্তীতে। জিয়াউর রহমান কোন দিন তার জীবিত থাকার সময় নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেন নি। কিন্তু পরবর্তীতে এটা নিয়ে অনেক জল ঘোলা করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের সুযোগ নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এই পরিবেশ আমরাই তৈরি করে দিয়েছিলাম।

১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসেই জনযোদ্ধাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এদের ব্যাপারে কোন ডেটাবেস কারও কাছে ছিল না। পদক দেয়ার ক্ষেত্রে আর্মি তথ্য সরবরাহ করতো। জন যোদ্ধাদের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য আর্মির কাছে ছিল না। তাই বেশীর ভাগ পদক পেয়েছে সামরিক বাহিনীর লোকেরা। কর্নেল হামিদের একটা লেখায় এই ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।

অথচ এই মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন জাতির পরীক্ষিত সন্তান যাদেরকে দেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করা যেত। অনেক সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীতে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগ ছিল মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ঘরের সাধারণ কৃষক, শ্রমিক আর ছাত্র।

১৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৪

জগতারন বলেছেন:
সুন্দর পোষ্ট !
এখন লাইক দিয়ে গেলাম।
পরে সময় নিয়ে পুরো পোষ্টটি পড়বো সেই সাথে সব্বার মন্তব্যও।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পোস্টটা পড়ার জন্য এবং লাইক দিয়ে উৎসাহিত করার জন্য। সময় করে এসে মন্তব্যগুলি পড়বেন আশা করি।

১৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:০৮

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাঙ্গালীরা সবচেয়ে বড় সমস্যা পরশ্রীকাতরা ও দলাদলি। এজন্যই হাজার বছর এই জাতি পরাধীন ছিলো।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশে যতো সমস্যা তার একমাত্র কারণ এই পরশ্রীকাতরতা ও দলাদলি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সিরাজ শিকদার পাকি সৈন্য ও মুক্তিযোদ্ধা-দুই দলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করেছিলেন যা ছিলো জঘণ্য দলাদলির নিদর্শন।
যুদ্ধের সময় সেনাপ্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী ৩ বার জিয়াকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তার শৃংখলাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য।
১৭৯৫ সালে সেনাবাহিনীর ভিতরে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয়েছে দলাদলির কারণেই।
কর্ণেল তাহের বিপ্লবের নামে ‘‘ অফিসারদের রক্ত চাই ‘’ বলে নিকৃষ্ট হত্যাকান্ডের সুচনা করেছিলেন যার শাস্তি তাকে পেতে হয়েছে ফাসীতে ঝুলে।
বাংলাদেশে কোনো রাজাকার অন্য রাজাকারকে হত্যা করেনি।কিন্ত মুক্তিযোদ্ধা নামধারী হয়েও তাহেরের উস্কানীতে মেজর জলিল বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফ, হুদা ও হায়দারকে হত্যা করে।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা পদক পাওয়ান যোগ্য ছিলেন , তাই পেয়েছেন।
তবে বেসামরিক অনেকেই বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাওয়ার উপযুক্ত ছিলেন।
** মহিউদ্দিন আহমদ যদি কূটনৈতিক মহিউদ্দিন আহমদ হন ,তাহলে তার ব্যাপারেও আমার আপত্তি আছে । কারণ তিনি তার নিজের পরিচিত ব্যাক্তি মিজানুর রহমান শেলীর মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায়ে নাগরিকত্ব বাতিল হলেও তার প্রতি অন্ধ ভক্তি দেখান।
আমার সংবাদপত্রে পাতা থেকে বইয়ের ৫৯ পাতায় এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
* কর্ণেল হামিদ পাকি ফেরত ব্যাক্তি । তার লেখা বিশ্বাসযোগ্য না।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সঠিক বলেছেন। বাঙ্গালীরা পরশ্রীকাতরতা আর দলাদলির জন্য হাজার বছর পরাধীন ছিল এবং গত ৫২ বছরেও এই কারণে আমরা কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি করতে পারিনি।

সিরাজ শিকদারের বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথেও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এই কথাটাও ঠিক। বাংলাদেশের বিখ্যাত যাদুকর জুয়েল আইচ সম্ভবত সিরাজ শিকদারের বাহিনীতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

মেজর জিয়া ছাড়াও বাকি সেক্টর কমান্ডাররাও কর্নেল ওসমানীকে পছন্দ করতেন না। তবে কর্নেল ওসমানীরও সমস্যা ছিল। উনি সামরিক ব্যাপারে একটু প্রাচীনপন্থী ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে বেশীর ভাগ সময়ে উনি ওনার অফিসেই থাকতেন। ক্যাম্পগুলি ভিজিট করেছেন হাতে গোনা কয়েকদিন। উনিও কয়েকবার ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু এগুলি ছিল লোক দেখানো। তাজউদ্দীন আহমেদ এবং আরও অনেকেও তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। উনি মেজর জিয়াকে পছন্দ করতেন না বলেই পরবর্তীতে মেজর জিয়াকে সেনাপ্রধান পদের জন্য সুপারিশ করেননি। যার কারণে জিয়ার চেয়ে জুনিয়র কে এম সফিউল্লাহ সেনা প্রধান হয়। যদিও কে এম শফিউল্লাহ প্রথমে চেয়েছিলেন তার চেয়ে সিনিয়র কেউ সেনাপ্রধান হউক (তখন ব্রিগেডিয়ার জিয়া, কর্নেল রব এবং কর্নেল দত্ত কে এম শফিউল্লাহর সিনিয়র ছিলেন। বাকি দুইজন সম্ভবত পাকিস্তান ফেরত অফিসার ছিলেন) জিয়ার ইগোতে লাগে এটা। এই কারণে জিয়া পরবর্তীতে ফারুক, রশিদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন বলে মনে হয় ( অথবা সে নিজেও এই হত্যা পরিকল্পনার সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। জানা সত্ত্বেও ফারুক, রশিদকে না থামানোর কারণে এই সন্দেহ করা হয়)। সেনাবাহিনীতে জিয়া এবং খালেদ মোশাররফের জনপ্রিয়তা বেশী ছিল। ফলে সেনাবাহিনীর উপর সফিউল্লাহর চেয়ে জিয়া এবং খালেদ মোশাররফের প্রভাব বেশী ছিল। এই কারণে সেনাপ্রধান তখন তেমন কিছু করতে পারেননি।

কর্নেল তাহেরও এক সময় সিরাজ শিকদারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উনি বিপ্লব নিয়ে একটা কাল্পনিক জগতে বাস করতেন। যেটার মধ্যে বাড়াবাড়ি ছিল। তবে ওনার সব আইডিয়া খারাপ ছিল না। অফিসার হত্যার স্লোগান দেয়াটা একটা বড় ভুল ছিল। সম্ভবত একজন লেডি ডক্টরও নিহত হন এই কারণে।

মেজর জলিল নিজেই হত্যা করেছেন নাকি তার নির্দেশে হুদা, হায়দার আর খালেদ মশাররফকে করা হত্যা হয়েছে এটা সম্পর্কে বলতে পাড়ছি না। হয়তো আপনার কথা ঠিক। কাপুরুষের মত এই অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা যোগ্য ছিলেন বলেই পদক পেয়েছিল। ব্যতিক্রম ছাড়া এটা সঠিক। আমার পরিচিত একজন সেনা কর্মকর্তা বীর বিক্রম পদক পেয়েছেন। উনি ছিলেন বাংলাদেশ আর্মির ১৯৭১ সালের প্রথম ব্যাচের একজন অফিসার। একটা বইয়ে উনি সহ আরও কয়েকজন পদক প্রাপ্তদের বীরত্বের কথা পেলাম। কিন্তু ওনার ক্ষেত্রে কোন সম্মুখ সমরে বীরত্ব দেখানোর বর্ণনা পেলাম না। কিন্তু উনি বীর বিক্রম পদক পেয়েছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

এই মহিউদ্দিন আহমেদ অন্য ব্যক্তি। উনি কখনও কূটনীতিক ছিলেন না।

কর্নেল হামিদের যে লেখার কথা উল্লেখ করেছি সেগুলি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত সময়ের ঘটনা নিয়ে লেখা। পাকিস্তানে অনেক অফিসার আটকা পড়েছিলেন। কিন্তু তারমানে এই না যে তারা ভীরু ছিলেন বা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। আমি একটা বই পড়েছিলাম যে বইয়ের লেখিকা পাকিস্তানে তার
অফিসার স্বামীসহ বন্দি ছিলেন। ওনার লেখা থেকে বিস্তারিত কিছু বর্ণনা পেয়েছি ওনাদের বন্দি অবস্থা সম্পর্কে। এছাড়া আমার একজন প্রতিবেশী ছিলেন যিনি ঐ সময় লেফটেন্যান্ট ছিলেন এবং সপরিবারে পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। ওনাদের কাছেও কিছু বর্ণনা শুনেছি। তাতে মনে হয়েছে যে সবার পক্ষে বিদ্রোহ করে বা পালিয়ে চলে আসা সম্ভব ছিল না। ওনারাও দেশের জন্য ভাবতেন এবং অনেক কঠিন সময় পার করেছেন। ওনারা সুখে ছিলেন না ওখানে।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.