নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তাশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি

সাড়ে চুয়াত্তর

আমার লেখার মাঝে আমার পরিচয় পাবেন

সাড়ে চুয়াত্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭১ সালে একজন পাকিস্তানি সামরিক অফিসার কর্তৃক একজন বীরাঙ্গনাকে বিয়ের প্রস্তাব

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪২


১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া একজন বীরাঙ্গনার জীবনের একটা ছোট গল্প বলি। আসলে গল্প না সত্যি ঘটনা। এই মহীয়সী নারী পরবর্তীতে সাক্ষাতকারের সময় এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলে চাকরীরত অবস্থায় এই বীরাঙ্গনা নারী ১৯৭১ সালে ৯ মাস পাকিস্তানীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকার কারণে। অক্টোবরের দিকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য শান্তি কমিটির এক নেতার হত্যা মামলায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি আসলে ঘটনাচক্রে রাস্তায় দাড়িয়ে দূর থেকে ঘটনাটা দেখেছিলেন মাত্র। এই কারণ দেখিয়ে তাকে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয় জেরা করার জন্য। পথিমধ্যে তিনি কয়েকবার পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হন। যশোর পৌঁছানোর পরে প্রথমে দুইজন অফিসার তাকে কিছুটা শারীরিক নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার জন্য। পরে মেজর আলতাফ করিম নামের একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

মেজর আলতাফ করিম রুমে আসার পরে এই বীরাঙ্গনা তার পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এই বন্দি অবস্থা থেকে তাকে মুক্ত করার জন্য মেজর সাহেবকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। মেজর আলতাফের মনোভাব কিছুটা নমনীয় ছিল। তিনি বীরাঙ্গনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং যাওয়ার আগে বলে যান যে তিনি একটা নমনীয় এবং পজিটিভ রিপোর্ট দিবেন যেন সেটা বীরাঙ্গনার জন্য ভালো হয়। বীরাঙ্গনা মেজর আলতাফ করিমের দুই হাত ধরে অনুরোধ করেন তিনি যেন তাকে মুক্ত না করে কোথাও না যান। শেষ পর্যন্ত এই দয়ালু অফিসারের সার্বিক সহায়তায় যশোর সেনানিবাস থেকে এই বীরাঙ্গনা মুক্তি পান। মেজর আলতাফ করিম একজন জওয়ানকে বীরাঙ্গনার সাথে দিয়ে দেন তাকে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু সেনানিবাস থেকে মুক্ত হলেও খুলনার যে মিলে তিনি চাকরী করতেন সেখানে তিনি নিয়মিত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা এবং মিলের অবাঙ্গালী অফিসারদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন।

এই ঘটনার পরে মেজর আলতাফ মাঝে মাঝে খুলনার ক্রিসেনট জুট মিলে আসতেন। বীরাঙ্গনার মুখে পরবর্তী ঘটনা শোনা যাক।

তারপর থেকে ভদ্রলোক আমাকে …… মেজর আলতাফ করিম আমাকে যিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে আমার প্রতি একটা মানবতা দেখিয়েছিলেন, তার প্রতি আমি মানসিকভাবে একটু দুর্বল হয়েছিলাম। আমার তো …… যদি তার সাথে সম্পর্কটা আরও আগে হত হয়ত এতটা কষ্ট নাও হতে পারতো। কিন্তু আমি একেবারেই শেষ দিকে পেলাম তো, আমি মানসিকভাবে তার প্রতি ইনভলভড হয়েছিলাম। আমার একটা ভালোবাসা বোধ জন্মেছিল তার জন্য। কারণ তিনি সেইভাবেই এসেছিলেন আমার কাছে। তো এক পর্যায়ে তিনি আমাকে খুব বড় একটা …… একদিন যেতে যেতে উনি আমাকে বললেন যে যদি …… একটা কথা বলবো যদি তুমি অসন্তুষ্ট না হও তাহলে তোমাকে আমি একটা কথা বলি। তো উনি আমাকে মাঝে মাঝে নিয়ে মানসিক কষ্টের জন্য …… নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন এবং তখন ঐ মিলের অফিসারদের অত্যাচারটা আংশিকভাবে একটু কমে আসল। ওনার হ্যা… ওনার… উনি একটু খুব … ইয়ে ছিলেন …… ওনার একটা প্রভাব ছিল। রেস্পেকট করতো আমার মিলের মালিকরা। তো বলছে যে …… উনি গেলেই বলত যে আমি … (বীরাঙ্গনার) বাসায় একটু ঘুরে আসব। আমার জেনারেল ম্যানেজার বলত কোন …… (বীরাঙ্গনার নাম)? উনি বলতেন তোমার পিএসের বাসায় একটু ঘুরতে যাব। ওকে তুমি চেন কি করে (জেনারেল ম্যানেজার বলছে)? তো বলে যে তুমিই তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছ। বলে, আমি তার প্রটেকশনটা চাচ্ছি তাই ...... এই জন্য ফিদাই সাহেব (জেনারেল ম্যানেজার) একটু থমকে গিয়েছিল ব্যাপারটাতে। তো যখনই উনি বলতেন যে আমি …… বীরাঙ্গনার বাসায় যাচ্ছি …… হঠাৎ ওরা …… অত্যাচার করতো অন্যভাবে … আমাকে ফোন করে বলত আলতাফ কাহা গায়া? আমি বলতাম উনি তো অনেকক্ষণ আগে চলে গেছেন। সে তো বাসায় পৌছায়নি । তুমি তাকে কোথায় হত্যা করেছ? তুমি তাকে কোথায় মেরে ফেলেছ? (জেনারেল ম্যানেজার বলছে) এরকমভাবে উত্তর দিত ।

তো এই ভদ্রলোক (মেজর আলতাফ করিম) আমাকে একদিন বললেন যে ....... আমাকে একটা বিয়ের প্রপসাল দিলেন। তোমার যা অত্যাচার দেখলাম তোমার যা নয় মাসের … আমি তো অনেকদিন ধরে খবরও রাখি এবং আমি কিছুটা শুনতে পাচ্ছি যে তোমাকে তো সবাই কোলাবোরেটর বলছে। তুমি তো এখানে …… বাংলাদেশ স্বাধীন হবে শিগগিরি। তুমি কি স্বাধীন বাঙলা শোন? আমি বলি না। ওর কাছেও আমি সত্যি কথা বলতাম না। কিভাবে শুনবো? আমি একটা রেডিও দেই তোমাকে? আমি বলি, না, আমি রেডিও নেব না। বলে যে তাহলে এক কাজ কর। তুমি তোমার ব্যাগটা আমাকে দাও আর আমার ব্যাগটা তুমি নাও। আমি বলি আমার ব্যাগ তুমি নিয়ে কি করবে? মেয়েদের ব্যাগ। তোমার ব্যাগ ছেলেদের ব্যাগ, সেটাই বা আমি নিয়ে কি করবো? নেও না … আমি দেখি যে ওর ব্যাগে অনেক টাকা আমার ব্যাগে একশ দেড়শ টাকা। তো, ও বোধ হয় আমাকে কিছু টাকা দিতে চায় খুব সম্মানের সাথে। আমি বলি না এটা তো সম্ভব না। ব্যাগ চেঞ্জ এটা তো নিয়ম নাই। তো ও আমাকে পরীক্ষাও করলো যে আমি কোন টাকা পয়সা নেই না কারও কাছ থেকে। আমাকে বলছে যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এখন এটাকে তুমি কিভাবে একসেপ্ট করতে পারো। আমি তোমার ছেলেদের পড়াশুনার ভার নেব, অ্যামেরিকাতে পড়াশুনা করাব। সব কিছু আমাকে খুলে বললেন। আমি শিক্ষাবিদের ছেলে। এটাও আমি লিখিত দেব যে আমি আর্মিতে আর থাকবো না। আমার ফিয়ান্সে যে ছিল আয়ুব খানের ছেলে গওহর আয়ুবের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার মনে ভীষণ কষ্ট। নয় বছরের বন্ধুত্ব চলে গেছে। আমি এখান থেকে বিয়ে করে ফিরবো। আমি চাচ্ছি যে তুমি যদি সম্মতি দাও তাহলে আমি তোমাকে একটা সম্মানে নিয়ে যেতে পারি। আর আমি এখান থেকে ছুটি পাব। কারণ বিয়ের জন্য ছুটি দেয়, অন্য কারণে ছুটি দেয় না। আমি তখন বলতে বলতে … এ কথা বলার পর আমি বললাম যে দেখ আমি খুব ভেবেই ৫ মিনিটেই বলে দিচ্ছি। ও বলে তুমি ভাব, তোমাকে আমি সময় দিলাম। তুমি দুই তিন দিনের মধ্যে আমাকে জানাও। আমি বললাম আমি ৫ মিনিটেই বলে দিচ্ছি যে এটা সম্ভব না কারণ বাংলাদেশ আজকে না হলেও একদিন স্বাধীন হবে। সেদিন আমার নাম না থাকুক বা আমাকে কেউ চিনুক বা চিনুক কিন্তু আমার বিবেক আমাকে খুজবে যে আমি একটা শত্রু .... যারা আমার দেশের উপরে এত ম্যাসাকার করলো তাদেরই একজনকে আমি বিয়ে করে সংসারী হয়ে চলে গেলাম। আমি আমার স্বদেশকে কি কৈফিয়ত দেব? তো আমি বললাম …… তখন আমি খুব গুছিয়ে … একটা কথাই খুব গুছিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমার স্বদেশের কাছে আমি কি জবাব দেব? আমার জন্য এটা অত্যন্ত নিরাপদ একটা প্রস্তাব। এই মুহূর্তে, এই ভয়ংকর ঝড়ের মধ্যে যেন তীরে ওঠার একটা নৌকা অপেক্ষা করছে। আর সত্যি কথা বলতে কি তোমাকেও আমি খুব পছন্দ করতে শুরু করেছি। ওকে আমি খুব সুন্দর করেই বুঝিয়েছিলাম যে ভালোবাসার তো খুব দীর্ঘ পথ অতদুর পথ আমি না এগুলেও তোমাকে আমার পছন্দ হয়। আমি এটার ডিসিশন সিদ্ধান্ত যাই বল নিতে পারি। কিন্তু এটা নেওয়াটা …… আমার বিবেক বলে যে এটা নেওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ আমার স্বদেশের কাছে এটা হঠকারিতা হবে। আমার স্বদেশকে আমি কি জবাব দেব বল। আমি কোন পরিচিত কেউ না আমি কোন খ্যাতিমান কেউ না কিন্তু আমি একটা মানুষ। আমার স্বদেশ আছে। নিজের দেশ আছে। যে দেশের জন্য ....... আমি।বিভিন্নভাবে জানতে পাড়ছি যে … দেখতে পাড়ছি সচক্ষে এবং নিজেও নিগৃহীত হয়ে চলেছি ৯ মাস ধরে। সেখানে আমি আমার শত্রুপক্ষের যত লোভনীয় প্রস্তাবই হোক, শত্রুপক্ষের কাউকে আমি জীবনসঙ্গী করে চলে গেলাম এটা আমার …… কখনও সুস্থ মাথার কথা না।

তখন ভদ্রলোক অদ্ভুতভাবে গাড়ি থেকে নেমে, উনি ড্রাইভিংএ ছিলেন, হ্যাট অফ করে আমাকে একটা স্যালুট দিয়ে বললেন যে আমি এত বড়…… কেউ জানবে না তুমি কে, আমিও কোথায় হারিয়ে যাব, কিন্তু তুমি দেশকে এত ভালোবাসো তোমার এই এইজে, তোমার পরিপূর্ণ তারুণ্য, আর তুমি যে দেশকে ভালোবাসার জন্য এতদুর চিন্তা করেছ এটা তোমার সবচেয়ে বড় ত্যাগ। তুমি মুক্তিযুদ্ধ না করতে পারো, তুমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কর নাই কিন্তু আমি মেজর আলতাফ করিম বলে যাচ্ছি যে এটা তুমি … একটা বড় ত্যাগ এবং আমাকেও শেখালে। আই এম সরি, আই উইদড্র মাই প্রপসাল এন্ড স্যালুট টু ইউ জাস্ট লাইক এ মাদার এন্ড সিসটার …।

নভেম্বেরের মাঝামাঝি সময়ে উনি এই প্রপসালটা দিয়েছিলেন। বলেন আমি তাহলে ছুটি পেতে পারি। বিয়ের জন্য ছুটি দেয় কিন্তু মা বাবার অসুখ হলে ছুটি দেয় না। কিন্তু যদি আমি বলি যে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি তাহলে আমাকে ছুটি দেবে। আমি আর এই যুদ্ধ করতে চাচ্ছি না। কারণ, ইয়াহিয়া খান ইজ কাটিং হিজ লেগস। তারপরে বলল যে ভুট্টো কাটিং হিজ লেগস। সুতরাং আমি এই যুদ্ধের সাথে …… যদিও আমি আমার সোলজারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আরেকটা কথা মনে রেখ ইট ইজ বেটার টু ডাই মোর দ্যান সারেন্ডার। আমি এই শপথ নিয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি আর থাকতে চাচ্ছি না। ১২৫ রেজিমেন্ট (এই অফিসার নিয়োজিত ছিলেন)। তখন উনি এটা বলাতে… আমাকে সাঙ্ঘাতিকভাবে উনি একটা …… আজকে আমাকে কেউ চিনুক বা না চিনুক যে ই ভুল বুঝুক কিন্তু তার এই কথাটা …… আমি কিন্তু চিরদিনের জন্য সংলাপটা মনে রেখেছি। সে খুব বড় করে আমাকে দেখেছিল …… যে আমি তোমাকে একটা বড় করে তোমাকে চিন্তা করলাম … যে এত বড় একটা ঝড়ের মধ্যে এই এত বড় রেপ সিন …… এত রেপ সিন তুমি দেখছ, এত বড় দুর্যোগের মুখে তুমি যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে এটা আমার জন্য একটা বিরাট অনার। একটা হিউম্যান বিইংয়ের একটা বিশাল মাইল ফলক তুমি তৈরি করলে। তারপরে আমি যখন ৪ ডিসেম্বর অফিস করি উনি আমাকে বলছেন যে …… উনি একটা কথা …… খুব … বাংলা শিখেছিলেন। কোথা থেকে জানি না। ফোন করলেই বলতেন আমি মানুষ বলছি। ঠিক এই শব্দটা ব্যবহার করতেন, আমি মানুষ বলছি। বলার সাথে সাথে আমি বলতাম হ্যা মেজর তুমি মানুষ। সত্যিই মানুষ। আমি তো মনে করবো যে তুমি among the ...... আমার যে নয় মাসের…… নয় মাস তো তখন জানি না… তখন আমি কত বছর জানি না… যে এত বড় একটা যুদ্ধময় সময়ে তুমি একটা মানুষ এটা ...... আমি তোমাকে খুঁজে বের করেছি এবং I love you immensely. এই কথাটা আমি বলেছি।

তোমার এই কথাটা নিয়েই আমি হয়তো খুব …… কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাব। আমি শিরোমনিতে যুদ্ধ করছি (মেজর বলছে)। (সাক্ষাৎকার গ্রহিতার উদ্দেশ্যে - শিরোমণি এখান থেকে খুব কাছে। এই সেই জুট মিল। ক্রিসেন্ট জুট মিলে এসে আমরা কথা বলছি।) আমি তোমাকে মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে পারি? আমি বলি, তুমি অবশ্যই দেখা করতে পারো। আমিও তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তখন মিলে গুটিকয়েক মানুষ আসা যাওয়া করে। তখন উনি দেখি যে খোলা জিপ চালিয়ে মাথায় হেলমেটের মধ্যে গাছ গাছরা দিয়ে …… আর সেই মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না। যাকে কিছু দিন আগেই এত সুদর্শন … খুব…… সে কাটাকাটা… বলে যে আমাদের পানি বন্ধ, খাওয়া বন্ধ, অনেক টাকা আছে। কিন্তু আমি তোমাকে দেব না কারণ এই অসম্মান …… আমি জানি …… কারণ এটাও তুমি শিখিয়েছ যে সম্পর্কের সাথে টাকার কোন সম্পর্ক নাই। আমি রাস্তায় ফেলে দেব যদি কারও কাজে লাগে কিন্তু আমার এই টাকা কোন কাজে লাগছে না। আমি তোমাকে লাস্ট স্যালুট জানাতে আসলাম। আমার বাড়ির একটি ঠিকানা দিচ্ছি…… (লাকাতুরা …… রাওয়ালপিণ্ডির একটা কোন জায়গা।) ঠিকানা দিলাম, তুমি আমার যদি কক্ষনও লাশের খবর তুমি পাও, আমার ডেডবডি তো কেউ এখান থেকে নেবে না। তুমি শুধু জানিয়ে দিও যে আমি নেই। যদি তুমি জানতে পারো। আর তোমার যদি আমার …… কোন অব্লিগেশন … তোমার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে তুমি আমার বাড়িতে জানাবে। আমার বড় ভাই আমারই মত। দে আর রেডি টু একসেপ্ট ইউ। তোমার সব কিছু …… মানে তোমার সেখানে যেতে হবে না…… কিন্তু তুমি তোমার যাবতীয় আর্থিক সুবিধা বা তোমার …… যদি কোন রকম অনটন বা আর্থিক সাপরট যদি তুমি চাও তুমি যে কোন এসিসটেন্স তার কাছ থেকে পাবে। আমার বড় ভাইকে এটা বলা আছে।
তার ভাইয়ের নামও আমার মনে নেই। …… সেগুলি সবই বন্ধ… চাপটার ক্লোজ কারণ আমি তখন মুক্তিযুদ্ধ…… আমি তখন স্বাধীনতা পাচ্ছি…… আমি সত্যিকার অর্থেই ঐ কৃতজ্ঞতাটুকু অল্প একটু থাকলেও ঐ ভালোবাসাটুকু অল্প একটু থাকলেও আমি খুব বড় একটা নির্ভর করেছি আমার দেশের চিন্তায়ই। তখন স্বাধীনতা হচ্ছে এই আনন্দটাই আমাকে আচ্ছন্ন রেখেছিল। আমি ওটা রেখে দিলাম। তারপরের ঘটনা ঘটল…… আমাকে স্যালুট করে উনি চলে গেলেন। আমি কিন্তু দাড়িয়ে …… আমার কিন্তু চোখের পানি পড়েছিল। একটা রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট হয়েছিল ওখানে। এটা আমি অপরাধী হলে অপরাধী …… কিন্তু আমি করেছিলাম। তারপরে উনি শিরোমণিতেই যুদ্ধ করে মারা গেলেন। আমি পরে জানতে পেড়েছিলাম। কিন্তু ওনার বাসার সাথে আমি কোন যোগাযোগ করিনি। ঠিকানাটাও আমার হারিয়ে গেল।


এই বীরাঙ্গনার নাম ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ - ৬ মার্চ ২০১৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ভাস্কর। মূলত ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কিভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তার শিল্পচর্চার শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কিভাবে অল্প খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে সে বিষয়গুলো তিনি দেখিয়েছেন। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুড়ি দিয়েই মূলত তিনি গৃহের নানা শিল্পকর্ম তৈরি করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান।

নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী (বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা বেগম আফরোজা বুলবুলের স্বামী) ছিলেন প্রিয়ভাষিণীর বাবার বন্ধু। হায়দার আকবর খান রনো এবং আরেক ভাই জুনো। এদেরকে প্রতিবেশী হিসাবে ভাই বলে ডাকতেন প্রিয়ভাষিণী। এদের পরিবারে কোন বোন ছিল না তাই ওঁদের মা প্রিয়ভাষিণীকে প্রায়ই বাসায় নিয়ে আসতেন এবং মেয়ের মত আদর করতেন।

ওনার মামাদের বন্ধু ছিলেন অভিনয় শিল্পী গোলাম মোস্তফা। নানা বাড়ি কে এম দাস লেনে ছিল। এখানে প্রথম কবি সুফিয়া কামালকে কবিতা আবৃত্তি করতে শোনেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন ওনাদের প্রতিবেশী এবং ওনার বাবার দূর সম্পর্কের মামা। শেরে বাংলার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন কিছু দিনের জন্য। পাড়ায় এবং নিজের জেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান, আবৃত্তি করে সুনাম অর্জন করেছেন তখন।

মায়ের ফুফাতো ভাইয়ের দ্বারা ধর্ষিত হতে নিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে। খুলনার দৌলতপুরে তিনি শিল্পী চিত্রকর এস এম সুলতানের সান্নিধ্য লাভ করেন। ভাস্কর্যের অনুপ্রেরণা প্রথম ওনার কাছ থেকেই পান। বাবার প্রিয় ছাত্র জামি ভাইয়ের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হতে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাবাকে এবং বেগম মুজিবের সাথে দেখা হয়েছিল ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে। তখন উনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স তখন ৫/৬ বছরে হবে। প্রিয়ভাষিণী তাকে খেলার জন্য ডাকেন। তখন বেগম মুজিবের শাড়ির আচল ধরে ঝুলছিলেন শেখ হাসিনা।

এই সাক্ষাৎকারটা ইউটিউবে আছে। লিঙ্ক হল Interview of Ferdousi Priyabhashini shot for Tanvir Mokammel's mega-documentary film “1971” ( ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড থেকে এই বর্ণনা আছে)

এছাড়া ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নিজের আত্মজীবনীমূলক একটা বই আছে যেটার নাম ‘নিন্দিত নন্দন’। ১৯০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ওনার শৈশব থেকে শুরু করে প্রায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আছে। এই লিঙ্কে বইটা পাবেন

সূত্র – উইকিপিডিয়া
ইউটিউব

ছবি – বাতায়ন ২৪ ডট কম

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৪

চারাগাছ বলেছেন:

১৬ ডিসেম্বর সবার যুদ্ধ যখন শেষ হলো তখন কিছু মানুষগুলোর জন্য আরেকটি যুদ্ধ শুরু হলো বলাবাহুল্য। সেই যুদ্ধে তাদের প্রতিপক্ষ করা ছিল ? চেনা মানুষগুলো, আত্মীয়স্বজন, এমনকি নিজের পরিবার। সেই যুদ্ধে কেউ ঘর হারালো, কেউ স্বাভাবিক জীবন হারালো, আর কেউ কেউ জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে আত্মহত্যা করলো ।

বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সেই যুদ্ধেও টিকে ছিলেন , জিতে ছিলেন।



ভালো একটা বিষয় বস্তু নিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে একতা ছিল সহযোগিতা ছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে কিছু মানুষের জীবনে নতুন যুদ্ধ শুরু হল। আপনি সঠিক বলেছেন, সেই যুদ্ধে কেউ ঘর হারাল, কেউ স্বাভাবিক জীবন হারালো, আর কেউ কেউ জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে আত্মহত্যা করলো।

অনেক ক্ষেত্রেই এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষ ছিল নিজের আত্মীয় স্বজন, পরিবার এবং সমাজ। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর মত সাহস নিয়ে কোন বীরাঙ্গনায় এই দেশে বাঁচতে পারেননি। এত ঝড় ঝাপটার পরেও মাথা নোয়াননি এই মহীয়সী নারী। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাও তাকে স্যালুট করেছে তার উঁচু নৈতিকতার জন্য।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৭

শাহ আজিজ বলেছেন: খুলনার আলতাপোল লেনের মাথায় ৬ টি লাশ পড়ে আছে শুনে ওই ভোরবেলায় ড্রেনের উপর দিয়ে চলে গেলাম অকুস্থলে । বাসায় কাউকে জানাইনি । প্রচুর মানুষ সেখানে । ২০০ গজ ওপাশে আর্মি ক্যাম্প । শুনলাম এক মহিলাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে । অনেক বাদে জেনেছি তিনি ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী । তার সাথে চারুকলায় পরিচিতি ছিল কিন্তু তখন জানতাম না এই সেই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া মহিলা।

খুব আধুনিক মহিলা ছিলেন ৬৭/৬৮ তে । ভোরে হাটতে গিয়ে সার্কিট হাউজ ময়দানের পাশের রাস্তায় তিনি তার স্বামীর সাথে কোমরে হাত পেচিয়ে প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছেন , কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার । তখন তাকে চিনিনা , তাকে চিনেছি অনেক পরে ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ভদ্রমহিলার জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। মানুষ কত তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা করে। কিন্তু উনি আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যে এই জীবনটাকে যাপন করতে হবে যত বড় বিপদই আসুক না কেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছেন। যদিও অনেক বীরাঙ্গনাই আত্মহত্যা করেছেন, পাগল হয়ে গেছেন কিংবা নিভৃতে জীবন চালিয়ে গেছেন।

ওনার স্বামী ওনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। স্বামীহারা হওয়ার কারণে ওনার অনেকগুলি বাচ্চা এবং মাকে নিয়ে উনি ১৯৭১ সালে ভীষণ বিপদে পড়ে যান। যার কারণে এই ধরণের নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ১৭-১৮ বছর বয়স থেকে জীবন সংগ্রামে ওনাকে নামতে হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৭১ এর যুদ্ধ চলে আসাতে ওনার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। ঐ সময়ের সমাজ যাই বলুক সমাজ ওনাকে কোনভাবে সাহায্য করেনি।

আপনার সাথে যেহেতু পরবর্তীতে পরিচয় হয়েছিল তাই আপনি আরও অনেক কিছু জানেন ওনার ব্যাপারে। আমি বই পড়ে এবং ইউটিউব থেকে সামান্য কিছু জেনেছি ওনার সম্পর্কে।

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম ঘটনা নিয়ে একটা নাটক দেখেছলাম।
নাটকটি হুমায়ূন আহমেদের লেখা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হয়তো এই ধরণের কোন ঘটনা থেকে হুমায়ূন আহমেদ আইডিয়াটা পেয়েছিলেন।

শুনেছি একটা সিনেমাও নাকি হয়েছে এই জাতীয় একটা ঘটনা নিয়ে। তবে ভালো মত বলতে পাড়ছি না।

৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৪

জুল ভার্ন বলেছেন: "......থাক ওরা পরে থাক ইতিহাস নিয়ে জীবনের দীনতা হীনতা নিয়ে.....- আমরা তোমাদের ভুলবো না।"



শ্রদ্ধেয়া প্রিয়ভাষিণীর মামা কবি নাজিম শাহরিয়ার ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আছে....অনেক সম্মানিত মানুষ। খুলনার অধিবাসী। । ফেসবুক মেসেঞ্জারে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়...
এখন অসুস্থ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই মানুষদের কথা রবে সাধারণ মানুষের ভীড়ে। মাঠে মাঠে কৃষাণের মুখে, ঘরে ঘরে কৃষাণীর বুকে। স্মৃতি বেদনার আঁখি নীড়ে। তবু এই বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা, তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।

যুদ্ধপরবর্তী সময়েও ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীকে সংগ্রাম করতে হয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকের সাথে। স্বাধীনতার অনেক বছর পরে মানুষ তাকে সম্মানের চোখে দেখা শুরু করে।

বীরাঙ্গনাদের পরিণতি নিয়ে নীলিমা ইব্রাহীমের একটা বই আছে। বইটার নাম 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি'।

ওনার মামার অনেক বয়স হওয়ার কথা। ওনার নানা এক সময় পাকিস্তানের স্পিকার ছিলেন।

৫| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১০

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: এমন অনেক ঘটনায় হৃদয়ে নাড়া দেয়

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: নারীদের সাথে এই ধরণের অনাচার করেছে জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ আর্মি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।

৬| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:২৫

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: আমি আমার স্বদেশকে কি কৈফিয়ত দেব?.............আমার স্বদেশের কাছে আমি কি জবাব দেব?

এই জিনিসটা আজকাল আমরা কিভাবে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছি! বড় দামি এই জিনিসটা....

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দুর্নীতিবাজ বড়লোকদের কাছে আমাদের স্বদেশ এখন বেগম পাড়া। দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে রাজনীতিবিদ এবং তাদের চামচা এবং সুবিধাভোগীরা। সাধারণ জনগণ দেশ নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে।

৭| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- মুক্তিযুদ্ধে কতো কিছু যে ঘটেছে। মানুষেন নানান রূপ তখন প্রকাশ পেয়েছে। কারো কারো ভিতরের পশু সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে এসেছে। কারো কারো ভিতরের ভাল সকলের জন্য নিজেকে উজার করে দিতে চেয়েছে। আহা!!

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বহু দেশ যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং অল্প সময়ে ভুল শুধরে উন্নত হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জাপান আর পরের জাপান এক না। অল্প সময়ে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে উন্নত জাতিতে পরিনত হয়েছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধের আগেও নোংরা রাজনীতি করেছি যুদ্ধের পরেও এই ৫২ বছর ধরে সেই কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ জনগণ পপকর্ণ খাচ্ছে নিজেদের বারোটা বাজা নিজের চোখে দেখা সত্ত্বেও।

৮| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এমন কতশত ঘটনা অজানা এমন কতশত ঘটনা হৃদয় নাড়া দেয়। সঠিক ইতিহাস আজও অজানা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাতে পারেনি। এই দোষ মুক্তিযুদ্ধের না আমাদের। পৃথিবীর অনেক দেশ যুদ্ধের পরে আমুলে পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিন্তু এই দেশ চালিত হয়েছে আগের মতই। আগে পাকিস্তানীদের ঠেলা খেয়ে আমাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন ঐক্যের প্রয়োজন কেউ বোধ করে না। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের কথা বলা আছে। এই দুইটার কোনটাই এই দেশে খুঁজে পাওয়া যায় না।

৯| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৬

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশ এতো সহজে স্বাধীন হয়নি।
লাখ লাখ মানুষের জীবন আর সন্মানের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে।
আর কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে নোংরা নীচ নষ্টরা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ১৯৭২ সালেই নেতারা যেন ভুলে গিয়েছিল যে এই দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। অপ্রিয় হলেও সত্য যে দলের ঊর্ধ্বে কোন নেতাকে উঠতে দেখা যায়নি। এত বড় একটা যুদ্ধের পরে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আর ভোট চুরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে কিছু নেতা। ঐ সময়ের ভুক্তভুগিরা জানে দেশে কি অরাজকতা কায়েম হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সাইডে ঠেলে দিয়ে ছাত্রনেতারা হয়ে যায় মূল পরামর্শক। মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গঠনে সক্রিয় ভুমিকা রাখার সুযোগ দিলে পরিস্থিতির এত অবনতি হতো না তখন। তখনকার মন্ত্র ছিল প্রতিপক্ষকে খতম করে দাও। দেশের স্বার্থে সমঝোতা বা আপোষ করার কথা কারও মাথায় আসেনি। কিছু ফ্যানাটিক গ্রুপ অবশ্যই ছিল। কিন্তু এদেরকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করা হয়নি। আগুন নিয়ে খেলা করেছে সব পক্ষ। সাধারণ জনগণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মূল্য কোন দলের নেতাদের কাছে ছিল না।

শেষে আপনার কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয় 'কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছে নোংরা নীচ নষ্টরা'

১০| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: একজন সাহসী নারী শ্রদ্ধা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ওনার জীবন দর্শন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।

১১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:০০

কামাল১৮ বলেছেন: আমরা প্রকাশ্যে সন্মান করি না।ব্লগে যেহেতু আমাকে কেই চিনে না তাই সন্মান দেখাই।রাজীব নুর প্রক্যাশেই সন্মান দেখান।
আপনার সত্যি বলা গল্পটি মন ছুয়ে গেলো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৩৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

১২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৪৮

নীল আকাশ বলেছেন: ১৯৭১ সালের বীরাঙ্গনা নারীদের নিয়ে আমি একটা উপনাস লিখেছি। এটা একটা প্রকাশনী থেকে প্রথামিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। সম্ভবত এই বইমেলায় এটা আসতে পারে। দেখা যাক। নিশ্চিত হওয়ার পরেই সবাইকে জানাবো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৪৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার উপন্যাসের সফলতা কামনা করছি। এই বিষয়ে খুব কমই লেখালেখি হয়েছে। সবার আগে সম্ভবত লিখেছেন নীলিমা ইব্রাহীম।

১৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৩১

বিটপি বলেছেন: বীরাঙ্গনা শব্দটা কেমন যেন হাস্যকর লাগে। বিকল্প কোন শব্দ ব্যবহার করা যায় কি সম্মানিত এই নারীদের জন্য? আমার প্রসাতবিত শব্দগুলো হলঃ
অপরাজিতা - তাদেরকে পরাজিত করা যায়নি, তারা দেশত্ববোধে অটল ছিলেন।
দূর্জয়া - তাদেরকে জয় করা যায়নি।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার দেয়া নাম দুটি আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। তবে ওনাদের সম্মান দেখানোর জন্যই বীরাঙ্গনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আসলে বীরত্ব দেখানোর সুযোগ ওনাদের ছিল না। তাই বীরাঙ্গনার চেয়ে আপনার দেয়া শব্দ দুটিই বেশী উপযুক্ত বলা যায়।

১৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: এই রকম কত শত সত্য গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের দেশের সব স্থানে । এগুলো নতুনদের সামনে নিয়ে আসার দায়িত্ব আসলে আমাদেরই ।
ব্লগ ছাড়াও যদি ফেসবুকে একটিভিটি থেকে থাকে তাহলে এই লেখাটা সেখানেও প্রকাশ করুন । তাহলে এটা বেশি মানুষের পড়ার সম্ভবনা রয়েছে ।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র' নামে ১৫ খণ্ডের বই ছিল আমাদের কলেজের পাঠাগারে। মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক কাহিনী এই দলিলপত্রের কয়েক খণ্ডে পড়েছি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই দেশের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল, কেন হয়েছিল সকলের এটা জানা দরকার।

আমার ফেইসবুক নাই তাই সেখানে দেয়ার সুযোগ নাই। তবে আপনি বা অন্য কেউ চাইলে এই লেখা শেয়ার করতে পারেন যে কোন মাধ্যমে। ধন্যবাদ আপনাকে।

১৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এ রকম বিরল ঘটনা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিকুল পরিবেশে কিভাবে টিকে থাকতে হয়।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এটা খুবই বিরল একটা ঘটনা আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। অনেক নারী এই ধরণের পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করেছেন বা পাগল হয়ে গেছেন। কিন্তু উনিই সম্ভবত একমাত্র নারী যিনি সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে সমাজের সাথে মিশে যেতে পেড়েছেন এবং অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ওনার দ্বিতীয় স্বামীর অনেক ভুমিকা আছে এই ব্যাপারে।

১৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০১

রানার ব্লগ বলেছেন: বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী !! আপনাকে সালাম জানাই !!!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি অবশ্যই সকলের সালাম পাওয়ার যোগ্য। ওনার মত হাজার হাজার নারী বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে নির্যাতিত হয়েছে বড় বড় যুদ্ধগুলির সময়ে। এই ধরণের নির্যাতন যেন যুদ্ধের সময়ের একটা নিয়মিত ঘটনা। হত্যার চেয়েও জঘন্য কাজ এই ধরণের নির্যাতন।

১৭| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আবার আসার জন্য ধন্যবাদ।

১৮| ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৩৯

মুদ্‌দাকির বলেছেন: সত্য বিচিত্র ...............

২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:২৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেক সত্য ঘটনা নাটক, সিনেমাকে হার মানায়।

১৯| ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর এই সাক্ষাৎকারটি দেখেছিলাম অনেক আগে। ঘটনা শুনে অবাক হয়েছিলাম। মহিলা সত্যিই মহিয়সী। ওনার জায়গায় অন্য কেউ হলে প্রস্তাবটা লুফে নিত।

২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:২৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ভদ্রমহিলা সত্যিই মহীয়সী একজন নারী। আপনার মত আমারও মনে হয় অন্য কেউ হলে এই প্রস্তাব লুফে নিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.