নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির নিরিখে খুঁজি সত্যের ঠিকানা

সফিক৭১

যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে

সফিক৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশরাফুলের দুর্নীতি এবং আমরা

০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৩



ঘটনা দুইটি কাকতালীয় হইতে পারে, তবে দুর্মূখেরা যদি ইহাদের মধ্যে কোনরূপ সম্বন্ধ খুঁজিয়া বেড়ান তবে তাহাদের দোষ দেওয়া যাইবে না। যেইদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটার আশরাফুলকে পাতানো ম্যাচ খেলার অপরাধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেট হইতে বহিষ্কার করা হইয়াছে; সেইদিনই বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুতে কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সাময়িক বরখাস্তের আদেশটিও প্রত্যাহার করিয়াছে সরকার। বিষয় দুইটির মধ্যে সম্পর্ক খুঁজিতে যাওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই কি ইহাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই?

প্রথমেই আশরাফুলের কথায় আসা যাক। আশরাফুল অত্যন্ত সাধারণ ঘরের একজন ছেলে। চেহারার মধ্যেও সাধারণতার ভাব প্রকট। শিক্ষা দীক্ষায় কতটুকু অগ্রসর তাহা বলিতে পারি না। তবে উচ্চ শিক্ষিত যে নহে তাহা নিশ্চিত। আশরাফুল নিজের চেষ্টায়ই খেলা শিখিয়াছে। খেলা শিখিয়া ভালো করিয়া জাতীয় দলে চান্স পাইয়াছে। নিজের যোগ্যতায়। মামা-খালু বা অন্য কোন পক্ষের তদবির বা প্রভাবে নহে। আশরাফুলের কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অর্জন কম নয়। টেস্ট ম্যাচে সর্ব কনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসাবে তাহার শত রান ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য সাধারণ একটি ইনিংস। আশরাফুল দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করিতে পারিয়াছিল। এই কারণে কেউ কেউ ভালোবাসিয়া তাহাকে আশার ফুল নামে ডাকিত। কেউ কেউ মাঝে মাঝে তাহার বাজে পারফরমেন্সর কারণে তাহাকে অপদার্থ বোধ করিত। যাহারা তাহাকে ভালোবাসিত আর যাহারা তাহাকে অপদার্থ মনে করিত দুই পক্ষই মূলত আশরাফুলকে ভালোবাসিত। ভালোবাসার মানুষ যদি কোন কুকর্ম করিয়া থাকে তবে তাহাতে মনে কষ্ট লাগে। সেই কষ্ট হইতেই কিছু কিছু মানুষ তাহাকে মন্দ বলিত, অপদার্থ বলিত। ইহাও ভালোবাসার এক ধরনের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মানুষ কেন আশরাফুলকে ভালোবাসিতে শুরু করিল? ইহার কারণ অনুসন্ধান জটিল কোন কাজ নয়, একেবারেই সহজ। কারণ আশরাফুল নিজেই। আশরাফুল নিজেই তাহার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা তৈয়ার করিতে সক্ষম হইয়াছে। আশরাফুল ভালো খেলিয়াছে। ভালো খেলা দেখিয়া মানুষ তাহার কাছে আরো ভালো কিছু পাইবার প্রত্যাশা করিয়াছে। ইহাতে দোষের কিছু নাই। সেই আশরাফুল যখন খেলিয়া মানুষকে হতাশ করিতে লাগিল, এবং সবশেষ উৎকোচ গ্রহণ করিয়া ইচ্ছা করিয়া খারাপ খেলিয়া দলকে হারাইল তাহাতে মানুষের হতাশা বাড়িল। ইহা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আশরাফুলের এমন অনৈতিক কাজে তাহার নিজেরও কিছু কম ক্ষতি হয় নাই। প্রথমত তাহার নিজের অর্জিত মান-সম্মান খোয়া গেল। ক্রিকেট খেলা তাহার প্রধান পেশা, সেই পেশা তাহাকে হারাইতে হইল।

এইবার সচিব সাহেবের কথায় আশা যাক। সচিব সাহেব দেশের একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। দেশের মানুষের টাকায় তিনি পড়ালেখা করিয়াছেন বালককাল হইতে। সরকারি চাকুরি গ্রহণ করিয়াছেন। ধরিয়া নিতে আপত্তি নাই তিনি তাহার নিজের যোগ্যতায়ই চাকুরি পাইয়াছেন। তবে নিজের যোগ্যতা তিনি বৃদ্ধি করিয়াছেন দেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে পড়ালেখা শিখিয়া। সরকারি চাকুরিতে থাকাকালিন তাহার বেতন-ভাতাদি, দেশ-বিদেশের প্রশিক্ষণ, যাহাই তিনি পাইয়াছেন সবই দেশের মানুষের রক্ত ও ঘামে অর্জিত টাকা হইতে। দীর্ঘদিন তিনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি করিয়াছেন। চাকুরি করিয়া করিয়া তিনি অভিজ্ঞতা বাড়াইয়া বাড়াইয়া সচিব হইয়াছেন। তাহাকে দেওয়া হইয়াছে এমন একটি মন্ত্রনালয়ে যেই মন্ত্রনালয়ের সহিত দেশের মানুষের অনেক আশা-আকঙ্খা জড়িত রহিয়াছে। তাহাকে সেতু বিভাগের সচিব করা হইয়াছে। সেতু বিভাগের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কর্ম হইতে পারিত পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন। দেশের মানুষের, বিশেষ করিয়া দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের, স্বপ্নের সেতু পদ্মা সেতু। এই সেতু বাস্তবায়িত হইলে কী কী লাভ হইতে পারিত সেই অঙ্ক কষা এখন অবান্তর। তবে এই সেতু বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাংলাদেশ যে কয়েক দশক পিছাইয়া গেল তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই। ইহা দেশের জন্য এমন এক পশ্চাতগমন যাহা কোন দিনও পুরণ হইবার নয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পথে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা ছিল কয়েকজন রাঘববোয়ালের দুর্নীতি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ দুইজন হইলেন আবুল হোসেনের সাথে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। অভিযোগের মূল তীরটি যাহার দিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাহাকে খাঁটি দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়া দীর্ঘদিন স্বপদে রাখিয়া অবশেষে দপতর পরিবর্তন করিয়া পরোক্ষভাবে তাহারই পক্ষ অবলম্বন করিয়াছেন। আর নানা তাল-বাহানার পরে সচিব মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, তাও গতকল্য প্রত্যাহার করা হয়।

সম্প্রতি দুদকের একটি দল কানাডায় গিয়েছিল দুর্নীতি বিষয়ে আরো অধিকতর তথ্য-প্রমাণ আনার জন্য। কানাডাফেরত দলের প্রধান আইনজীবি আনিসুল হক সাংবাদিকদের সাথে বলিয়াছিলেন তাহাদের কানাডা গমনে খুব একটা ফায়দা হয় নাই। অর্থাৎ তাহারা কোন স্বাক্ষ্য-প্রমাণ পান নাই। তাহারা কোন কাগজ পত্র পান নাই। অভিযুক্তরা যে প্রকৃতই দোষী বা নির্দোষ তাহা তাহারা জানিতে পারেন নাই। আনিসুল হকের এ ভাষনের পরপরই অত্যন্ত দ্রুততার সহিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করিয়া নেয়। ইহাও কাকতালীয় হইতে পারে। তবে এই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর এই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, ‘ওই মামলা এখনো শুরু হয়নি, অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়নি। এই জন্য আইনি কোন ঝামেলা না থাকায় বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হইয়াছে।’

আশরাফুলের পাতানো ম্যাচ খেলার অভিযোগ ওঠার পর হইতে ইহা নিয়া সকল মহল বেশ উচ্চকিত। আইসিসিরি দুর্নীতি দমন বিভাগ (আকসু) শীঘ্রই আশরাফুলের অপকর্মের খতিয়ান প্রকাশ করিবে। যদিও পরিপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হইবার আগেই বিসিবির কর্তা ব্যক্তিরা অত্যন্ত তৎপরতার সহিত বিশেষ সভা ডাকিয়া আশরাফুলের অপরাধের শাস্তি ঘোষণা করেন। কেহ কেহ আশরাফুলকে আরো কঠিন শাস্তি দিবার প্রয়োজন বলিয়া মনে করেন। ক্রিকেটীয় শাস্তি ছাড়াও আশরাফুলের আর্থিক জরিমানা এমনকি জেল জরিমানাও হইতে পারে। তবে ইহাতে যে সকলেই সন্তুষ্ট তেমনটি নয়। অনেকেই তাহার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করিতে শুরু করিয়াছে। এই অনেকের তালিকায় মুদি দোকানী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্তও রহিয়াছেন। কিন্তু আশরাফুলের এই ঘটনায় এতটা ক্ষুব্ধ হওয়ার কি কোন কারণ রহিয়াছে? আশরাফুলের এই ঘটনা কি খুবই স্বাভাবিক নয়? আগামীতে যদি শোনা যায় রফিক, পাইলট, কিংবা সাকিবরাও এমন ঘটনার সহিত জড়িত তাহা হইলেও কি খুব একটা অবাক হওয়া আমাদের উচিত হইবে? সকলে অবাক হইলেও আমি অন্তত হইব না। বরং যদি শোনা যায় তাহারা বিশাল অঙ্কের আর্থিক লোভ সামলাইয়া নিজেদেল এই ধরনের অপকর্ম হইতে দূরে রাখিতে সমর্থ হইয়াছে তাহা হইলে বরং কিছুটা অবাক হইব। (পাঠক, নিশ্চয়ই ভাবিবেন না আমি আশরাফুলের অপকর্মকে সমর্থন দিতে চাহিয়াছি। বরং প্রকৃত ঘটনা তাহার সম্পূর্ণই বিপরীত। একটুখানি ভাবিলেই ইহার সত্যতা বোঝা যাইবে।) একটা কথা বোঝা যাইতেছে না, বাংলাদেশে দুর্নীতি করে না এমন একটি প্রজাতিও কি পাওয়া যাইবে? কামলা থেকে আমলা পর্যন্ত, দুর্নীতি করেনা এমন লোকের সংখ্যা ঔষধ খাওয়ার জন্য পাওয়া যাইবে কি না তাহা নিয়া সংশয় রহিয়াছে। ছোট-খাট পাতি নেতা থেকে সর্ববৃহত দলের সর্বোচ্চ প্রধান ব্যক্তি পর্যন্ত অনেকেরই বিরুদ্ধে দুর্নীতির গল্প দেশের হাটে-ঘাটে শোনা যায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণের, দুর্নীতির কাহিনী কি আমরা শুনিতেছি না? কি নিদারুণ অনিয়ম সংগঠিত হইতেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। নি¤œমানের চাল, ডাল, তেল, নুন থেকে শুরু করিয়া বাস-ট্রাক কিংবা যুদ্ধ জাহাজ পর্যন্ত আমদানর ক্ষেত্রে কতইনা দুর্নীতি চলিতেছে আমাদের সমাজে প্রত্যহ। পত্রিকার কল্যাণে এগুলো এখন আর কাহারোই অজানা নয়। সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, সামরিক-বেসামরিক কর্মচারী, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী, আইনবিদ থেকে বিচারক পর্যন্ত কোন প্রজাতির মধ্যে সততা পাওয়া যাইবে পরিপূর্ণরূপে ? বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমন বেশ কিছু ঘটনা জাতির সামনে নগ্ন হইয়াছিল। একজন শীর্ষ নেতার উৎকোচের অর্থ গ্রহণের স্বাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে চেক বইয়ের নম্বরসহ পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। আরেকজন শীর্ষনেতার এতিমখানার অর্থ তসরূপের ঘটনা এখনো মীমাংসিত হয় নাই। একজন শীর্ষ নেতার মামলা তুলিয়া নেওয়া হইয়াছে, আরেকজন শীর্ষ নেতার মামলা তুলিয়া নেওয়ার জন্য তাহার দলের আইনজ্ঞরা দিনরাত্রি ক্রন্দন করিতেছে। মামলা যাহারা উঠাইয়া নিয়াছে আর যাহারা উঠাইতে চাইতেছে দুই দলের সাঙ্গ-পাঙ্গদেরই যুক্তিগুলো বেশ চটকদার। একজনের পক্ষের চামচিকাদের যুক্তি তাহাদের নেতার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি সঠিক নিয়মে করা হয় নাই। আরেক দলের চামচিকাসমরা বলিতেছেন এতিমখানার অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ নহে, তাহা বৈদেশ হইতে প্রাপ্ত অর্থ, তাই এই নিয়া মামলা চলিতে পারে না। তাহারা যদি আইনের মাধ্যমে নিরপরাধ প্রমাণিত হইতেন তাহা হইলে খুশি হওয়া যাইত। আশরাফুল অপকর্ম করিয়াছে। তাহাকে ক্রিকেট হইতে বহিষ্কার করা হইয়াছে। অপরাধ যদি আরো গুরুতর হয় তবে আরো গুরুতর শাস্তি তাহার হইতে হইবে। কিন্তু অন্যদের শাস্তি দেবে কে? সরকারি বড় বড় আমলাদের বহিষ্কার করিবে কে, বড় বড় নেতাদের বহিষ্কার করিবে কে?

আশরাফুল ইহাদের চাইতে কিছুটা ভাল। আশরাফুল তাহার অপরাধ স্বীকার করিয়াছে। তাহার অপকর্মের রিপোর্ট প্রকাশের আগেই তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সকল দায় মাথায় নিয়া সরিয়া পরিয়াছে। চেহারার মধ্যে অনুতাপের প্রকাশ রহিয়াছে। তাহার অপকর্মের জন্য সব ধরনের শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত বলিয়া জানাইয়াছে। অপরাধী আশরাফুল অত্যন্ত ভদ্র লোকের মতোই দেশবাসীর ভালবাসার মান রাখিতে না পারার অপরাধবোধ হইতে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও করিয়াছে সে। কিন্তু আশরাফুলের চেয়েও বড় বড় রাঘববোয়ালরা আরো বড় বড় অপরাধ করিয়া সমাজে বুক ফুলাইয়া দাপটের সহিত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। তাহাদের অভিব্যক্তিতে অনুতাপের লেশ মাত্র নাই। সেই সকল সচিব মহোদয়রা, শিক্ষক-বুদ্ধিজীবিরা, মন্ত্রী-আমলারা, নেতা-নেত্রীরা ইহা হইতে কিছুই কি শিখিবে না?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০

বাংলাদেশি বাংগালী। বলেছেন: কিন্তু আশরাফুলের চেয়েও বড় বড় রাঘববোয়ালরা আরো বড় বড় অপরাধ করিয়া সমাজে বুক ফুলাইয়া দাপটের সহিত হাটিয়া বেড়াইতেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.