![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে
এইটা কোন গল্প না। বাস্তব ঘটনা। সত্য ঘটনা। আমার নিজেরই নির্বুদ্ধিতার ঘটনা। এইটা এমনই এক নির্বুদ্ধিতার গল্প যে সকলের সাথে শেয়ার করতে না পারলে মজা পাওয়া যাইবে না। আসল ঘটনার বয়ান দেওয়ার আগে নিজের সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন।
মোর নামটা কমুনা। মোগো বাড়ি কই তাও কইতে চাইনা। তবে এইটুকু কইতে পারি মোগো গেরামডা এক্বেবারে অজো। যেই থানায় মোগো গেরাম এক্বালে সেই থানার অনেক নাম আছিল হুনছি। এখন আর তা নাই। মানচিত্রে দেখলে মনে হইবো ছেঁড়া-ভেঢ়া একখান ব-দ্বীপ, শরীয়তপুর-মাদারীপুর-নোয়াখালী-লক্ষীপুর-ভোলার মাঝামাঝি। এক সময়ে এই থানাডা মোগো জেলার সবচেয়ে বড়ো থানা আছিল। পূর্ব-পুরুষের কাছে হুনতাম এই থানায় তিনশ ষাট ঘর জমিদারের আবাস ছিল। এই নিয়া তাগো গর্বের শেষ নাই। এই থানার অবস্থা এখন বড়ই বেগতিক। বছর বছর নদী-ভাঙ্গায় এইখানকার মানুষের এখন নাভীশ্বাস। অনেক মানুষ এলাকা ছাড়া। তবে নদীতে এলাকার বসতবাড়ি-আবাদ জমি যত ভাঙ্গে, মানুষের কপাল তার চেয়েও বেশি। এই কপাল ভাঙ্গার মধ্যেই টাউট শ্রেনির মানুষের মঙ্গল নিহীত। কারণ সাধারণ মানুষের কপাল ভাঙ্গার সাথে টাউট মানুষের কপাল খোলার একটা সাধারণ সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে। এই কারণে মোগো থানায় টাউট-বাটপারের রাজত্ব বহুদিনের।
তবে পেশায় মুই সরকারের গোলাম। অর্থাৎ সরকারি চাকুরিজীবী। কিন্তু কী চাকুরি কওয়া নিষেধ। সরকারি চাকুরির পেছনে মোর একটা স্লোগান আছিল ছোটবেলা থেকে। স্লোগানটা হইল ‘সরকারিটা দরকারী।’ দেশের বিভিন্ন সরকারগুলা যখন বেশি কইরা বেসরকারি করার কাজে মহামত্ত তখনও মুই এই স্লোগানে অটুট। মোর ছাত্র-ছাত্রীরাও এই স্লোগানের কথা জানে। কারণ ক্লাসে গিয়া এইটা বয়ান করা আমার চরিত্রের একটা অংশ হইয়া গেছে। এই যা! কইতে না চাইলেও আপনেরা জাইনা গেলেন মোর সরকারি গোলামির ধরণ। পেশায় মুই একজন মাস্টার। সরকারি মাস্টার। তাও যেই সেই বিষয়ের না। গণিতের। অনেকে বলেন অঙ্কের মাস্টার।
মাস্টারগো একটা বড় দোষ শুধু জ্ঞান দেয়। সুযোগ পাইলেই জ্ঞান দিবার চায়। এই দোষ সকলের মতো আমার মধ্যেও আছে। এই দোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একবার ভাবলাম নিজে জ্ঞান না দিয়া একখান বাতিঘর করমু। বাতিঘর মানে লাইব্রেরি। মোগো গেরামে একখান বাতিঘর করার ইচ্ছাডা মোর অনেক দিনের। বাতিঘরে মানুষ আইবো, বই পড়ব, জ্ঞান পাইবো। জ্ঞানের আলোতে এলাকার টাউট-বাটপার শ্রেনিরা না হোউক, সাধারণ মানুষের ছেলে-মেয়েরা মানুষ হইতে পারবে। লাইব্রেরি করার লাইগা অনেক ভাবতে লাগলাম। এর জন্য যা যা লাগবে তাহার একখানা তালিকা বানাইলাম রাত্রি জাইগা। তালিকার প্রথমেই দরকার একটু জমি। তার পরে জমির উপরে একখানা ঘর। ঘরে কয়েকটা বইয়ের তাক। কিছু চেয়ার, টেবিল। আর বই। তালিকা ছোটই। বইয়ের একটা সিদ্ধান্ত আছে। নিজের কাছে যে হাজার তিনেক বই আছে তাই ডোনেশন করলে আপাতত একটু গতি হইব। মরহুম বাপের বাগান থেকে দুই-একটা গাছ কাইটা চেয়ার, টেবিল, বইয়ের তালিকা করা যাইবে। বাকী রইল দুই। একখানা ঘর আর একটুকরো জমি। মনে মনে একটা ধান্দা করলাম। বন্ধু-বান্ধব দুয়েকজন আছে মালদার। কোন মতে একখান জায়গার ব্যবস্থা করতে পারলে তাগো হাতে পায়ে ধইরা ঘরের একটু ব্যবস্থা করা যাইব।
তাই এক টুকরা জমি দরকার। জমির দাম কেমন সেই বিষয়ে মোর কোন পূর্ব জ্ঞান নাই। মনে পড়ল বছর পচিশেক আগে মুই যখন গেরাম থেকে বিদায় লইলাম সেই সময়ে এক কড়া জমির দাম হাজার খানেক টাকার মত ছিল। গণিতের মাস্টার। মনে মনে অঙ্ক করলাম পঁচিশ বছরে পচিশ গুণ বাড়লে এখন সেই জমির দাম কড়া প্রতি পঁচিশ হাজার টাকার মত হবে। কিন্তু অত টাকা নাই। উপয়ান্তর না দেইখা সরকারি একটা ব্যাংকের অফিসারের কাছে গেলাম পরিচিত একজনকে নিয়া। উদ্দেশ্য কিছু টাকা ধার নেওয়া। ধারের নাম কনজিউমার লোন। মাল কেনার বিনিময়ে টাকা। এক লাখ টাকা ধার নিয়া, উৎফুল্ল চিত্তে এলাকার বাল্যকালের এক বন্ধুরে ফোন করলাম আমার জন্য এক টুকরা জমি দেখার জন্য। নিজের গেরাম। তাছাড়া গেরামে মোর একটা ইজ্জ্বতও আছে। তাছাড়া সরকারি মাস্টার, বিশাল বড় চাকুরি। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথেই তালিম করার জন্য তারা লাইগা গেল। দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই ফোন করল। জমি পাওয়া গেছে। রকেট গতিতে গেরামে গেলাম। পকেটে এক লক্ষ টাকা। বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করলাম। বন্ধু কইল জমি পাওয়া গেছে। কলেজের কাছে। তিন কাঠার প্লট। দুই লক্ষ টাকা প্রতি কাঠা। এক কাঠা দুই লক্ষ টাকা। তিন কাঠা ছয় লক্ষ টাকা! এত টাকা জীবনে চৌক্ষেও দেখি নাই। বন্ধুর কথা শুইন্যা বেলুনের মতো চুপসাইয়া গেলাম। আমার মুখের অবস্থা দেইখা বন্ধুর বুঝি মায়া হইল। বন্ধু কইল ভাই, সরকারি খাস জমি দেখতে পারেন। যদি পাইয়া যান তবে কম পয়াসা পারবেন। পরের কয়েকদিন গেরামের বিভিন্ন মানুষের লগে কথা কইলাম। খাস জমি কোথায় আছে খোঁজ করতে লাগলাম। এইবার যা অভিজ্ঞতা তা আরো বেশি ভয়াবহ। এক কাঠাতো দূরের কথা, একটুকরা সরকারি জমিও বেদখল নাই। সব দখল হইয়া গেছে। দখল হওয়ার কাহিনী জানতে চাইলাম বিভিন্ন মানুষের কাছে। গত বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে গেরামের সরকারি জমি দখল শুরু হয় জামাতের এক ল্যাংড়া পোলার হাতে। আর বর্তমানে আওয়ামী চ্যালা-চাম-ারা দখলের বাকী কাজ ষোলকলায় পূর্ণ করেছে। ডোবা, খাল, নদীর পার কোনটাই আর বেদখল নাই। বাতিঘর তো দূরের কথা মুতাখানা করার জন্য সরকারি জায়গা পাওয়া যাইবে না। সব দখল হইয়া গেছে।
বাতিঘর করার প্রজেক্টে হতাশ হইয়া ফিরা আইলাম। মনে মনে নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেই মুগ্ধ হইলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩
গরম কফি বলেছেন: বাহ্ আপনি তো চমৎকার ঢোল বাজাতে পারেন !