নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির নিরিখে খুঁজি সত্যের ঠিকানা

সফিক৭১

যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে

সফিক৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পরকালীন জীবন পদার্থবিদ্যার সূত্রের বাইরে নয়’ মিশিও কাকু

২৮ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:১৯



[মিশিও কাকু আমেরিকার নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। স্ট্রিং থিউরির এই গবেষক নিউ ইয়র্কের একটি জনপ্রিয় রেডিও অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেন। ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সাড়া জাগানো বই ভবিষ্যতের পদার্থবিজ্ঞান । এ বইয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন আগামী শতকে কীভাবে প্রযুক্তি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। জাপানি বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান বিজ্ঞানী পৃথিবীর বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর বহুল বিক্রীত বই ভবিষ্যতের পদার্থবিজ্ঞান এ তিনি ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবী কেমন হতে পারে তার একটি রূপরেখা দেখিয়েছেন। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে তাঁর খোলামেলা বক্তব্য প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রিকা ও বিজ্ঞান জার্নালে। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তাঁর কিছু অংশ প্রকাশিত হল।]



প্রশ্ন : অধ্যাপক কাকু, আপনার বইয়ে আপনি লিখেছেন ভবিষ্যতে আমরা মানুষেরা অনেকটা দেবতার মতো হয়ে যাব। তাহলে কি আপনি বলতে চেয়েছেন যে আমাদের নাতি-নাতনিরা এক একজন অবতার হয়ে উঠবে? আপনার এই ঘোষণা কি কিছুটা বাড়াবাড়ি নয়?



কাকু : চোখ বন্ধ করে একটু ভাব ১৯০০ সালের দিকের আমাদের পূর্ব পুরুষদের কথা। তাঁদের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৯ বছর, তারা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ত। জানালার ফাঁক দিয়ে তাঁরা দূরের যোগাযোগের কথা ভাবত। সেই লোকেরা যদি আমাদেরকে দেখত কানের কাছে মোবাইল, কম্পিউটারের পর্দায় ফেসবুক, এরোপ্লেনে চড়ে দূরের পথে যাত্রা, তারা এগুলোকে মনে করত বিস্ময়কর ঘটনা।



প্রশ্ন: কিন্তু এই বিস্ময়কর অবস্থা থেকেও অবতারে পৌছানো অনেক দূরের পথ।

কাকু : অবতারেরা আসলে কি করে? এপোলে সূর্যের কাছ থেকে অসীম শক্তি সঞ্চয় করে, জিউস যেকোন রূপ ধারণ করতে পারে- এমনকি হাঁসেরও, ভেনাস অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী। অবতারেরা যেকোন বস্তুকে সরাতে পারে কেবল ইচ্ছা করলেই, পুনর্গঠন করতে পারে, এবং রূপেরও পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের নাতি-নাতনিরাও তাই পারবে।



প্রশ্ন: আমরা যদি সময়ের পথে পরিভ্রমণ করি। চোখ বন্ধ করে একটু ভাব ২১১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন এক সকালবেলার কথা। তুমি কি দেখবে?

কাকু : সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা দেখি তা হল সর্বব্যাপীতা (ড়সহরঢ়ৎবংবহঃ)। বুদ্ধিদীপ্ততার ছোঁয়া থাকবে সর্বত্র, এখন যেমন বিদ্যুৎ দেখা যায় সর্বত্র। আমরা এখন অনুমান করতে পারি দেয়ালে, মেঝেতে কিংবা ছাদে বিদ্যুৎ রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা দেখব সর্বত্রই রয়েছে বুদ্ধিদীপ্ততা, অত্যধিক বুদ্ধিদীপ্ততা থাকবে সর্বত্র আবার কোথাও নয়। শিশু হিসেবে, আমদের কেবল শেখানো হবে কিভাবে এগুলোকে পরিচালনা করতে হয় কেবল কথার দ্বারা এবং চিন্তার দ্বারা। শিশুরা মনে করবে সব কিছুই জীবন্ত।



প্রশ্ন: আমরা এই প্রশ্নটিকে ভিন্নভাবেও করতে পারি? ২১১২ সালের এক সকালে আমরা কি দেখব?

কাকু : আমরা যখন ঘুম থেকে জেগে উঠব, প্রথমেই আমরা দেখতে চাইব পৃথিবীতে কি ঘটে চলেছে। কাজেই আমরা নেটের কন্টাক্ট লেন্সের দিকে তাকাব। যদি তুমি তথ্য চাও, সিনেমা, কিংবা ভার্চুয়াল বাস্তবতা সবই পাবে এই কন্টাক্ট লেন্সে। তারপরেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজ করতে শুরু করব।



প্রশ্ন: গাড়ি চালানো? কি বিরক্তিকরই না!

কাকু : ও, তুমি উড়তে চাও। এমনকি গাড়িও উড়তে পারবে, কিন্তু আমাদের এই গাড়িগুলোকেও পরিচালনা করতে হবে কেবল বুদ্ধিময়তা দিয়ে। তুমি যদি একটি গাড়িতে চড়তে চাও, কেবল একটু চাও, এবং গাড়িটিকে ডাক। সাঁই সাঁই করে গাড়িটি নিজে থেকেই এসে হাজির হবে।



প্রশ্ন: তাহলে আমাদের নাতি-নাতনিরা কাজের জন্য উড়বে। এবং তাহলে কি পরিবর্তন হবে ?

কাকু : তুমি যদি একজন কলেজের শিক্ষার্থী হও, তুমি দেখবে তোমার ফাইনাল পরীক্ষার সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমার কন্টাক্ট লেন্সের চারপাশে ঘুরছে। শিল্পীরা তাদের হাত বাতাসে দোলাবে এবং এঁকে ফেলেব চমৎকার সব শিল্প। যদি তুমি একজন স্থাপত্যশিল্পী হও, তুমি যা বানাতে চাও কেবল তোমার ঘাড় ও মাথা নাড়াও, যেন তুমি দুটি এপার্টমেন্ট বানাচ্ছো।



প্রশ্ন: কেনই তবে আমরা আমাদের ঘর ছাড়তে দ্বিধান্বিত হবো যদি আমাদের সকল চাওয়া, প্রশ্ন এবং আকাঙ্খার আমাদের পরবর্তি প্রজন্মেও কন্টাক্ট লেন্সের ভার্চুয়াল জগতের মধ্যেই থাকে?

কাকু : ভাল, তুমি বাইরে যেতে চাও কারণ তুমি মানুষ, এবং আমাদের ব্যক্তিত্ব গত এক লক্ষ বছরেও পরিবর্তিত হয়নি। আমরা সামাজিক জীব। আমরা আমাদের প্রত্যেককে নিয়ন্ত্রণ করি এবং নির্ধারণ করি কে প্রথম হবে কে হবে দ্বিতীয়। কিন্তু প্রযুক্তিই তা করবে। একুশশত সালে, তুমি যদি কোন ব্যক্তির কাছে যাও তুমি তার পরিপূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত তোমার সামনে পাবে। তুমি যদি কোন নির্দিষ্ট তারিখের কথা জানতে চাও, কেবল একটু তারিখ সূচির জন্য স্বাক্ষর কর। যখন তুমি বাইরে যাবে এবং কেউ যদি তোমার কাছ দিয়ে যায়, তবে তাদের চেহারায় দ্যুতি ফুটে উঠবে। কেউ যদি তোমার সাথে চীনা ভাষায় কথা বলে, তোমার কন্টাক্ট লেন্স তোমাকে তা ইংরেজিতে তর্জমা করে দেবে। কিন্তু তবুও আমরা কিছু প্রযুক্তির বিরোধীতা করব, কেননা তা আমরা যা তার বিরুদ্ধে যায়।



প্রশ্ন: যেমন একটা উদাহরণ ?

কাকু : কাগজবিহীন অফিসের কথাই ধরা যাক। কাগজবিহীন অফিস একটি ব্যর্থতার নাম কারণ আমরা ভৌত বস্তু চাই। তোমাকে যদি তোমার পছন্দের রক স্টারের কনসার্টের একটি টিকিট দেওয়া হয় অথবা একটি ভিডিও গান দেওয়া হয়, তুমি কোনটা পছন্দ করবে?



প্রশ্ন: অবশ্যই কনসার্টের টিকিট?

কাকু: এটাই হল আমাদের আদিম প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তি আমাদের বলছে, ‘আমি বস্তু চাই, আমি কোন ছবি চাই না।’ তোমার শরীরের প্রবৃত্তি প্রত্যহ তোমাকে বলছে তোমাকে বাইরে যেতে হবে। আমাদের সরাসরি মানুষের সাথে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে এবং যথার্থই কাজ করতে হবে।



প্রশ্ন: বস্তুর কথা যখন আসলোই, আমরা আপনার বইয়ের বর্ণিত শৌচাগারের কথা শুনে উজ্জীবিত হই।

কাকু : হ্যা। তোমাকে অবশ্যই শৌচাগারে যেতে হবে কারণ আমাদের জৈব প্রবৃত্তি এমনই। কিন্তু তোমার শৌচাগারটি এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চিকিৎসালয় থেকেও অধিক কম্পিউটারাইজ্ড হবে।



প্রশ্ন: শৌচাগার হবে যেন একটি সুপারকম্পিউটার?

কাকু : তোমার শৌচাগারে থাকবে এক ধরনের চিপ, ডিএনএ চিপ। যা তোমার এন্জাইম, প্রোটিন এবং ক্যানসারের জিন বিশ্লেষণ করবে। এর মাধ্যমে তোমার ক্যান্সার হওয়ার অনেক আগেই তুমি জেনে যাবে ফলে তুমি তা থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবে। একইভাবে তুমি অন্যান্য রোগের কথাও জানতে পারবে এবং তা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাবে। কিন্তু তারপরেও আমাদের সর্দি-কাশি থাকবেই। প্রায় ৩০০র মতো ক্ষতিকর ভাইরাস রয়েছে এবং এর প্রত্যেকটির জন্য এক একটি ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। কোন কোম্পানিই এই সকল ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাক্সিন তৈরি করতে পারবে না। কারণ এতে করে তারা দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারে।



প্রশ্ন: কী পরাজয়! আপনি কি ভেনাসের মতো সুন্দর আর নিখুঁত শরীরের কথা বলেন নি?

কাকু : ঔষধের প্রকৃতিই পরিবর্তিত হয়ে যাবে, বর্তমানের মতো জীবন রক্ষা করার চেয়ে জীবনকে নিখুঁত করার কাজেই তা ব্যবহৃত হবে।



প্রশ্ন: আমার মনে হয় আপনি বোঝাতে চাইছেন তা আমাদের আরো সুন্দর, সবল ও উন্নততর করবে?

কাকু : এই আকাক্সক্ষাতো থাকবেই।



প্রশ্ন: আমরা যদি পর্যাপ্ত জেনেটিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারি, আমরা কি তবে আরো বেশি নকশাশালী শিশু তৈরি করব না?

কাকু : এই ইস্যুটি নিয়ে আমাদের আরো অনেক বিতর্ক করা প্রয়োজন। এটি অনেক সামাজিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তোমাকে অবশ্যই একটি শিক্ষিত গণতান্ত্রিক গণ-বিতর্কে অবতীর্ণ হতে হবে যার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে হবে আমরা মানব জাতির জন্য কতটা সুন্দর শিশু চাই।



প্রশ্ন: আমরা কি প্রকৃতই মৃত্যুকে জয় করতে পারব?

কাকু : মজার বিষয় হল, পরকালীন জীবন পদার্থবিদ্যার সূত্রের বাইরে নয়। মোটের ওপর আমরা মৃত্যুবরণ করি কেবল একটি কারণে, তা হল ‘ভুল’। আমরা যত দীর্ঘ জীবন বাঁচব আমাদের শরীর তত বেশি ভুল করবে। তার মানে আমাদের কোষগুলো অলস হয়ে যাবে। আমাদের শরীরও আগের মতো কাজ করবে না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো নিষ্ক্রিয় হবে, কাজেই তারা মরবেই।



প্রশ্ন: তাহলে আমরা কি করতে পারি?

কাকু : আমরা এমন জিন আবষ্কিার করতে পারি যা একে পরিশুদ্ধ করতে পারে। কাজেই আমরা যদি জেনেটিক মেরামত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারি, তবে আমরা কোষগুলো সারাতে পারব এবং এভাবেই চলতে পারে। এটার সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছি। আমরা আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর পুনরুৎপাদনও করতে পারি। এর কিছু কিছু ইতোমধ্যেই করা হচ্ছে।



প্রশ্ন: তাহলে আমরা মৃত্যুকে পরাজিত করতে পারব?

কাকু : তেমনটাই মনে হয়।



প্রশ্ন: তাহলে আমরা কীভাবে নির্ধারণ করবো কে বাঁচবে আর কে মরবে? কে সন্তান ধারণ করবে?

কাকু : আমি মনে করি না শিশুরা এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা কোন সমস্যা হতে পারে। যখন মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচবে তখন তাদের সন্তানও কম হবে। যেমনটি আমরা দেখছি জাপানে, আমেরিকায় এবং আরো কিছু সমৃদ্ধ, শিক্ষিত এবং আধুনিক রাষ্ট্রে।



প্রশ্ন: আবারও শৌচাগার প্রসঙ্গে আসা যাক। আমি তখন কি করব যখন শৌচাগার বলবে যে আমার ক্যান্সার কোষ রয়েছে?

কাকু : তুমি তখন পর্দার সাথে কথা বলবে এবং বলবে---



প্রশ্ন: পর্দার সাথে?

কাকু : আমি যেমনটি বলেছি, সবকিছুই বুদ্ধিমান হবে, এমনকি পর্দাও। তুমি পর্দার সাথে কথা বলবে এবং বলবে, ‘আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে চাই।’ তাৎক্ষণিক পর্দায় একজন ডাক্তার এসে হাজির হবে। যা হবে রোবোটডাক্তার। যা ডাক্তারের মতোই দেখতে, ডাক্তারের মতই কথা বলবে। কিন্তু যা মূলত এনিমেটেড একটি চিত্র। এটা তোমাকে বলবে তোমার শরীরের মধ্যে কি ঘটছে। এবং তা তোমাকে প্রায় নব্বই শতাংশ সঠিক উত্তর দেবে। কারণ এর কাছে পৃথিবীর প্রায় সকলের ডাক্তারী ইতিহাস জানা রয়েছে।



প্রশ্ন: আমাদের কি তাহলে গাড়ি চালানো কিংবা রান্না করার জন্যও রোবট থাকবে?

কাকু : হ্যাঁ, অবশ্যই।



প্রশ্ন: কিন্তু রোবটগুলো কি নির্বোধ হবে না? কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন রোবট আবিষ্কারের গবষেণার এই পঞ্চাশ বছর পরে অন্তত তেমনটিই মনে হয় না?

কাকু : তা ঠিক। আসিমে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বুদ্ধি সম্পন্ন রোবট যার বুদ্ধি তেলাপোকার মতো। কিন্তু এর পরিবর্তন হবেই। আগামী দশকে রোবটগুলো ইদুরের মতো বুদ্ধিমান ও স্মার্ট হতে পারবে। তারা দ্রুত দৌড়াতে পারবে, কোন বস্তুর পেছনে লুকাতে পারবে, খাবার দেখাশোনা করতে পারবে। আমি দেখতে পাচ্ছি দশ, বিশ ত্রিশ বছরে আমরা ইঁদুরের মতো রোবট পাব, তারপর খরগোশের মত, কুকুরের মত এবং সম্ভবত এ শতাব্দীর পরে পাব বানরের মত। তারা আমাদের জন্য ময়লা, কষ্টসাধ্য এবং ভয়ঙ্কও কাজগুলো করবে। তার মানে হল তারা ব্যাথা অনুভব করবে।



প্রশ্ন: আপনি কি এমন মেশিনের কথা বলছেন যা ভুগবে?

কাকু : আমাদের এমন রোবট বানাতে হবে যার ব্যাথ্যা অনুভব করার মত ইন্দ্রিয় থাকবে, কারণ আমরা চাই না তারা নিজেরা ধ্বংস হয়ে যাক।



প্রশ্ন: তবে কি আমরা রোবট সম্পর্কে এখনকার মত কথা বলব না?

কাকু : একবার আমরা রোবটের ডিজাইন করবো যা অনুভব করবে, সেটাই হবে সবচেয়ে জটিল কাজ। তখন মানুষেরা বলবে, ‘এগুলো কুকুর বেড়ালের মত।’



প্রশ্ন: কখন এই যন্ত্রই আমাদের জন্য হুমকির কারণ হবে, ’২০১১ সিনেমার HAL এর মত?

কাকু : কোন এক সময়ে আমরা একটি চিপ তাদের ব্রেইনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেব। যখন তারা কোন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করবে তখন এটা তা বন্ধ করে দেবে।



প্রশ্ন: কিন্তু তারা কি এই চিপ বের করতে পারবে না?

কাকু : পারবে, তবে তা অবশ্যই ২১০০ সালের আগে না।



প্রশ্ন: শুনে শান্তি পেলাম।

কাকু : আমাদের সবসময়েই আরো দক্ষতর হতে হবে।



প্রশ্ন: আমরা সেই পুরোনো বিজ্ঞানের ধারণা নিয় চলব যেখানে বলা হয়েছে আমাদের মস্তিষ্ক অসীম দক্ষ ।

কাকু : ঠিক তাই, এবং সারাদিন আমরা ব্যয় করব আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে। আমি তা মনে করি না। আবারও আমাকে সেই গুহাবাসীদের কাছে যেতে হবে। গুহাবাসীরা তাদের সঙ্গীদের খুবই সম্মান করত। তারা তাদের বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মঙ্গল কামনা করত। তারা মর্যাদার সাথে চলতে চাইত। আমরা যদি সারাদিন কম্পিউটারে বসে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে হিসাব কষতে বসি, তবে কে তা চাইবে?



প্রশ্ন: তাহলে একদিন আমরা এক একজন সুপারম্যান হয়ে যাব যা এখন শুধু কল্পনারই বিষয়?

কাকু : আমি যা মনে করি যা ঘটবে তাহল আমরা আসলে এক একজন অবতার হয়ে যাব। আমরা এখন যে শক্তি চাই তার সবই তাদের হবে- যথার্থ সুপারম্যান, দেখতেও খুব সুন্দর।



প্রশ্ন: চমৎকার! তার মানে যে সকল মিটিংয়ে আমাদের যেতে ইচ্ছা করবে না আমরা সেখানে অবতারদের পাঠাতে পারব?

কাকু : তুমি অবতারদের চন্দ্র অথবা অন্য কোন ভার্চুয়াল ভ্রমণে পাঠাতে পার। কিন্তু তোমার অবশ্যই একে বন্ধ করার এবং সাধারণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকতে হবে। সাধারণ মানুষ সুপারম্যান হবে না। কিন্তু তারা চাইলে কোন এক বিকেলের জন্য তারা সুপারম্যান হতে পারবে। ক্ষণিকের জন্য সুপারম্যান হওয়া খুবই মজার। কিন্তু তারপরেই তারা বলবে, ‘চল বন্ধুদের সাথে বিয়ারের আড্ডায় যোগ দেই।’ তুমি কি বুঝতে পেরেছ আমি কি বলছি?



প্রশ্ন: হ্যা, অবশ্যই। প্রাচীনত্ব অবতারদের পরাজিত করছে। কিন্তু এই প্রাচীনত্ব কতটা শক্তিশালী। কোন একদিন সকল নতুন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে কি তারা আন্দোলন করতে পারবে?

কাকু : এই ধরনের আন্দোলন সর্বদাই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে করে ঘটে। যখন টেলিফোন প্রথম আসল, এটা ছিল খুবই বিতর্কিত। সমগ্র ইতিহাসব্যাপী আমরা কেবল আমাদের বন্ধুদের সাথে, আত্মীয়স্বজনদের সাথে এবং বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছি। এ পর্যায়ে এইই ছিল। তারপর টেলিফোন আসল। এর বিপক্ষে অনেকে দাঁড়িয়ে গেল। তারা বলতে লাগল আমাদের পরিবারের সাথেই কথা বলতে হবে। এমন আরো অনেক কিছু।



প্রশ্ন: আপনি আপনার বইয়ে দাবী করেছেন আমরাই মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম। সকল প্রজন্মই কি এভাবে মনে করে না?

কাকু : পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত প্রজন্ম এসেছে, কেবল আমরাই গ্রহ-সভ্যতার শুরুটার দেখেছি। আমরাই নির্ধারণ করব মানবতা বেঁচে থাকবে কি না।



প্রশ্ন: গ্রহ সভ্যতা বলতে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?

কাকু : আমার পদার্থবিদরা সভ্যতাকে ভাগ করি শক্তির উপরে ভিত্তি করে। (ক) টাইপ -১: গ্রহ সভ্যতা পৃথিবীর সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে শক্তি ব্যবহার করবে। একশ বছরের মধ্যে আমরা টাইপ-১ এ পৌছে যাব। আমার সেই পথেই আছি। আমরা আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করব। আমরা ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত নিয়ন্ত্রণ করব। টাইপ-২ নক্ষত্রিক সভ্যতা। আমরা নক্ষত্রকে নিয়ন্ত্রণ করব। তারপর টাইপ-৩ সমগ্র গ্যালাক্সি কেন্দ্রিক। যখন আমরা সমগ্র গ্যালাক্সিকেই নিয়ন্ত্রণ করব।



প্রশ্ন: থামুন, থামুন। আমরা কি এখনো তার কাছাকাছি আসতে পারি নি?

কাকু : না, আমরা আছি গতিশীলতার মধ্যে। আমরা এখনও শক্তি পেয়ে থাকি মরা গাছ থেকে, তেল থেকে অথবা কয়লা থেকে। কার্ল সাগান আরো যথার্থ গণনা করেছেন। তাঁর মতে আমরা এখন রয়েছে টাইপ-০.৭ এ। কাজেই আমরা টাইপ-১ এর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁচেছি। আমাদের দুটি বৈশ্বিক ভাষা রয়েছে। ইংরেজি এবং মান্দারিন। অলিম্পিকের দিকে তাকাও। এটা একটি বৈশ্বিক খেলা। ফুটবলের দিকে তাকাও। এটাও একটি বৈশ্বিক খেলা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বৈশ্বিক অর্থনীতির শুরুটা করে দিয়েছে, এখন যদি এটা ঠিকভাবে এগোতে পারে।



প্রশ্ন: শেষেরটি নিয়ে আমাদের এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে।

কাকু : ভাল, কিন্তু যখন আমরা বড় একটি বিষয়ের দিকে যাব, আমি নিশ্চিত আমরা একসাথেই যাচ্ছি। আমরা বৈশ্বিক ফ্যাশনের শুরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক সংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। পৃথিবীতে গণতন্ত্রায়ন হচ্ছে।



প্রশ্ন: বর্তমান বিশ্বের কাছ থেকে কোন একটি বিষয়কে আপনি আজ আশা করেন?

কাকু : ভাল, আমি কিছু মনে করব না যদি আরো কয়েকটি দশক আমি বেঁচে থাকি। যেমন ধর, প্রথম নক্ষত্রিক যানটিকে দেখে যেতে পারি। একই সাথে এটাও লজ্জার যে আমি একাদশতম মাত্রায় বাঁচতে পারি না।



প্রশ্ন: এর দ্বারা আপনি কি বোঝাতে চাইছেন?

কাকু : উষ্ণগহ্ব, কৃষ্ণগহ্বর এবং বৃহৎ বিস্ফোরণের শক্তি। তুমি টাইপ-৩ সভ্যতার দিকে যাবে শক্তির গুণন ছাড়াই। এটাই আমার গবেষণার বিষয়বস্তু। স্ট্রিং তত্ত্ব।

[স্পাইজেল থেকে অনুদিত]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

এস বাসার বলেছেন: লেখাটা ভালো লেগেছে। চিন্তায় অভিনবত্ব আছে। তবে এটার কোন শেষ নেই।

"ফাইনালি সবই ধ্বংস প্রাপ্ত হতেই হবে" কাকু এই কথাটি বলার পর্যায়ে এখনো পৌছতে পারনে নাই!!! তবে আমি বলে দিলাম B:-/ B:-/ B:-/ B:-/ B:-/ B:-/

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩২

সফিক৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: ভালো পোষ্ট

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

সফিক৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলো --------আল্লাহ অসীম শক্তির অধিকারী--- একসময় পৃথিবীর সব কিছুই ধ্বংস হবে-------

৪| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১২

মুদ্‌দাকির বলেছেন: পড়ব

৫| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩

সফিক৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার কল্পনা শক্তি বেশ দুর্বল। তাই মন্তব্য করতে পারছি না।
ধন্যবাদ।

৭| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

নাটশেল বলেছেন: লেখাটি বেশ সুন্দর হয়েছে। আমি মিশিও কাকু'র বেশ কিছু প্রোগ্র্যাম দেখেছি। খুব সুন্দর করে উনি বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। উনি সুপার স্টিং থিওরির একজন পুরোধা। সম্প্রতি আমি একটি ছটো লেখা পোস্ট করেছি এই ব্লগএ, নিচে লিংকটা দিলাম। আমার ধারণা আপনাদের মধ্য কেও কেও লেখাটি পড়ার উত্সাহ বোধ করতে পারেন! ধন্যবাদ

View this link

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১:১৪

সফিক৭১ বলেছেন: নাটশেল, আপনার লিঙ্ক এর জন্য ধন্যবাদ।

৮| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: অবে আফসোস থাকবে সেই সময়ে জন্মালে ভেনাসের মতো সুন্দর হতে পারতাম :( :( :((

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১:১৫

সফিক৭১ বলেছেন: এটা ভেবেও শান্তি পাওয়া যেতে পারে যে অন্তত আপনার নাতি নাতনিরা ভেনাসের মতো সুন্দর কিংবা আইনস্টাইনের মতো মেধাবী হতে পারবে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.