![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে
বাংলাদেশের চারভাগের তিনভাগ পানি। পৃথিবীরও তাই। তাই জল ও স্থলভাগের আনুপাতিক দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। এই আদর্শ রাষ্ট্রটির মাঝামাঝি এলাকায় ঢাকা শহর যে নদীটির তীরে অবস্থিত সেই নদীটির নাম বুড়িগঙ্গা। তৎকালীন শাসকরা যে সমগ্র বঙ্গ এলাকাকে কেবল শাসন করার উদ্দেশ্য নিয়েই বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে এই শহরের গোড়াপত্তন করেন তা নয়, বরং এর মাধ্যমে তাদের মনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা, শৈল্পিকতা এবং নান্দনিকতাবোধের প্রকাশ ঘটে। এই নান্দকিতার পরিচয় পাওয়া যায় দেশি ও বিদেশি অনেক কবি, সাহিত্যিক ও লেখকের লেখায়। নদীটি খুব বেশি প্রশস্ত নয়, আবার একেবাড়ে সরুও নয়। যতটা প্রশস্ত হলে, যতটা গভীর হলে, যতটা ¯্রােতস্বীনী হলে একটি নদী মানুষের কাছে আদরের হতে পারে, মানুষের ভালোলাগার, ভালোবাসার ধন হতে পারে এই নদীটি ঠিত ততটুকুই। এ যেন এই এলাকার মানুষের প্রতি প্রকৃতির প্রীতি উপহার। এর পানি নদীর কুলের মানুষের তৃষ্ণা মেটায়, এর মাছ মানুষের আমিশের চাহিদা মেটায়, বুকে পেতে পারাপার করে অসংখ্য যাত্রীকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। যে নদী অকাতরে এর চারপাশের মানুষকে এতটা দিয়েছিল সেই নদী এখন মুমূর্ষু। মৃতপ্রায়।
এই নদীটি মৃতপ্রায় হয়ে গেছে এর তীরের কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষের কারণে। এই নদীটির তীরে গড়ে উঠেছিল যে রাজধানী সেই রাজধানীর সবচেয়ে যারা ক্ষমতাধর, যাদের আমরা শাসক বলি, তারা এদেশের মানুষকে শাসন আর শোষণের সাথে শোষণ করে চলেছে এই নদীটিকে। শাসকদের দ্বারাই এই নদীটি সবচেয়ে বেশি নিপিড়িত, নির্যাতিত, নিগৃহীত। এদের দ্বারাই এই নদীটির দু’কুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। এরা দখল করেছে নদীর পার্শ্বের বিশাল এলাকা। শাসকরা এবং তাদের দাসেরা দানবীয় পশুশক্তি দিয়ে দখল করে চলেছে এখনও। নদীর দু’কুলে এরা গড়ে তুলেছে ইটের ভাটা, দোকান, বাসাবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। এই সব অবৈধ স্থাপনার কারণে এই নদীতে এখন আর ¯্রােতের বালাই নেই। এর পানি এখন স্থির, নিশ্চল।
এই নদীটির কাছ থেকে যারা সবচেয়ে বেশি আনুকুল্য নিয়েছে তারা দেশের বনিক শ্রেণি। বনিক শ্রেণির আর্থিক সাফল্য এসেছে এই নদীর বুক চিরেই। এই অকৃতজ্ঞ বনিক শ্রেণিই এই নদীর বড় শত্রু। এক নম্বরের শত্রু। এই অকৃতজ্ঞ বনিক শ্রেণি আবার নিজেরা খুবই সংঘবদ্ধ। এই সংঘবদ্ধ কুচক্রীমহল নদীর দুই পাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলেছে অসংখ্য কলকারখানা। এসব কলকারখানা থেকে সরাসরি বর্জ্রদ্রব্য নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বনিক শ্রেণি পারদ, সায়ানাইড, সালফারযুক্ত নানান ক্ষতিকর পদার্থ, সীসা.দস্তা, নিকেলসহ প্রায় বাষট্টি রকমের রাসায়নিক দ্রব্য নদীর পানিতে ফেলছে কোন রকম পরিশোধনের ব্যবস্থা না করেই। এসকল বিষাক্ত দ্রব্য কেবল মানুষের জন্যই ক্ষতিকর নয় এগুলো ক্ষতিকর এমনকি কীটেদের জন্যও। বনিক শ্রেণি এই নদীর দু’কুলকে অবলীলায় ব্যবহার করেছে। তারা এর মধ্যে ফেলে চলেছে সকল প্রকারের আবর্জনা আর বর্জ্র পদার্থ। এর অনেকগুলোই মারাত্মক বিষ।
শুধু তাই নয়, এই নদীর পানিতে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন হাসপাতালের ব্যবহার অনুপযোগী বর্জ্রদ্রব্য। এই সকল বজ্র ও বিষাক্তদ্রব্যের কারণে নদীর পানির অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। তথ্য অনুযায়ী জলজ প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য পানিতে প্রতি লিটারে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্যের কাছাকাছি। যেখানে কোন রকমের জলজ প্রাণি বেঁচে থাকতে পারে না।
এই নদীর সুবিধাভোগী আরো যে সকল শ্রেণির মানুষ রয়েছে প্রায় সকলেই এর প্রতি অবিচার করেছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন এই নদীর বুকে বয়ে চলেছে অসংখ্য নৌযান। এসকল নৌযান থেকে কী পরিমাণ জ্বালানি বর্জ্র নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। নৌযানে চলাচল করে যেসকল যাত্রীরা তারা প্রতিনিয়ত পলিথিন, প্যকেট, খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা বিনা দ্বিধায় এই নদীর পানিতে ফেলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের এমন অত্যাচারে নদীটি এখন মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নদীর পানির নিচে জমে গেছে প্রায় ৮ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর। পলিথিনের এই বিশাল স্তরের কারণে এই নদীর পানি মাটির সাথে মিশতে পারছে না, ফলে এই পানি নিজে থেকে পরিশোধিত হতে পারছে না। পলিথিন ছাড়াও নদীর ব্যবহারকারী অকৃতজ্ঞ মানুষেরা প্রতিদিন এর বুকে ফেলে যাচ্ছে রাজ্যেরসকল আবর্জনা আর বিষাক্ত দ্রব্য। নদীর সুবিধাভোগীরা প্রতিনিয়ত এর পানিকে বিষাক্ত করে চলেছে। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষের প্রতিদিনকার মলমুত্র থেকে শুরু করে ময়লা-আবর্জনা এই নদীতেই ফেলা হচ্ছে। তবে এই বজ্রদ্রব্যের প্রকৃত পরিমাণ কত সে হিসেব কারো কাছে নেই। যেটুকু হিসেব আছে তাতে দেখা যায় রাজধানীবাসী প্রায় ১৩ লক্ষ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্র তৈরি করে। এর মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্র পরিশোধনের ক্ষমতা পরিশোধনাগারের রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ১২ লক্ষ ঘনমিটার বর্জ্রের পরিশোধনের কোন ব্যবস্থাই নেই। এই অবশিষ্ট পরিমাণ বিশাল পয়ঃবর্জ্র সরাসরি বুগিড়ঙ্গার পানিতে ফেলা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই নদীর প্রতি যে অত্যাচার করা হয়েছে তাতে এই নদীর প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। এটি এখন মৃতপ্রায়। এই মৃতপ্রায় নদীকে বাঁচাবে কে? নদীটিকে বাঁচানোর দায়িত্ব কার?
এই প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চয়ই অনেকে বলবে একে বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের। কেবল নদী নয়, দেশ, দেশের মানুষ বাঁচানোও তাঁদের কাজ, তাঁদের দায়িত্ব। হয়তো এই উত্তর ন্যয্য। কিন্তু দেশের মানুষ বাঁচানো, মানুষের জীবনমান উন্নত করা যাদের কাজ, যাদের দায়িত্ব, সেই সেবক, রক্ষকই যখন সবচেয়ে বড় ভক্ষক হয় তখন মানুষের আর যাবার জায়গা কোথায়?
তাই বলে রাখি, কোন কর্তৃপক্ষ নয়, সরকার নয়, মানুষই বাঁচাতে পারে এই নদীকে। যে নদী এর কুলের মানুষকে ভালোবাসা দিয়েছে, করুণা দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে, চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে নদীর ঋণ শোধ করতে হবে। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ শোধ করবার। ভালোবাসা দিয়েই নদীর এই ঋণ শোধ করতে হবে। নদীকেতার স্বাভাবিক চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে, এর ¯্রােতধারা সচল রাখতে হবে। নদীর পানির সাথে এর মাটির মিলন ঘটাতে হবে। নদীর প্রতি ভালোবাসা জানাতে হবে ‘প্রাণে প্রাণে মিলিয়ে’। কফিল আহমেদের সেই বিখ্যাত গান ‘গঙ্গাবুড়ি গঙ্গাবুড়ি শোন’র মতো আমাদের দৃঢ় অঙ্গিকার প্রয়োজন, ‘প্রাণে প্রাণ মিলাবোই।’ কেবল প্রাণে প্রাণ মিলিয়েই এই নদীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। [কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ব্যবহৃত সকল ছবিই অনলাইন থেকে প্রাপ্ত]
১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২১
সফিক৭১ বলেছেন: ভাই ঢাকাবাসী, ঠিক বলেছেন।
২| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৬
সামুস কিং বলেছেন:
৩| ১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৫৮
কানা দাজ্জাল বলেছেন: আমাকে যদি কেউ একটা গুলি করার পারমিশন দিত, তাহলে সবার আগে নৌ মন্ত্রীকে গুলি করতাম। একটা জানের বদলে হাজারটা জান বাচত।
৪| ১১ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৭
সফিক৭১ বলেছেন: সন্ত্রাস ও পেশিশক্তির এই দূবৃত্তায়িত রাজনীতি থাকলে একজন দুষ্টু মন্ত্রী মারা গেলে আরেকজন একই রকমের বা তারও চেয়ে ভয়ঙ্কর দুষ্টু মন্ত্রী তৈরি হবে। একজন মোটামুটি খারাপ লোকের বদলে আরো অধিক খারাপ লোকের চাহিদা বাড়বে। কাজেই একজন বা দুইজন মন্ত্রীকে গুলি করলে বা মারলে সমস্যার সমাধান হবেনা। এই রকম দুষ্টু লোক যে মন্ত্রী না হতে পারে এর জন্যই কাজ করা দরকার। আমাদের এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা জরুরি যেখানে খারাপ লোক মন্ত্রী হতে পারবে না। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০২
ঢাকাবাসী বলেছেন: এখন আবার ঐ লোকটা ঠিক করেসে কয়েকশ কোটি টাকা খরচ (?) করে ড্রেজিং করবে!! এই নদী আর ড্রেজিং করার আগে বর্জ সাফ করা দরকার কিন্তু তাতে তাদের মাল কামানোটা দেরী হয়ে যাবে! নদী জাহান্নামে যাক মন্ত্রীদের মাল কামানো চাই!