নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির নিরিখে খুঁজি সত্যের ঠিকানা

সফিক৭১

যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে

সফিক৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ছাগল দিয়ে হাল চাষ হয় না’

০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ যখন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তখন দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন, আশান্বিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে এইবার এই মন্ত্রণালয়টি একজন ‘দক্ষ’, ‘ভালো’ মানুষের হাতে পড়ল। বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন তারা একটু বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব পাবার পর একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। এই কাজে দেশের মানুষ যথেষ্ট সাড়াও দিয়েছিল। যদিও শিক্ষানীতি প্রণয়নে গঠিত কমিটির সদস্যদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। তদুপরি মানুষ আশা করেছিল একটি ভালো শিক্ষানীতি প্রণীত হবে। কিন্তু কিছুটা হোচট খেতে হল যখন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করল। অবশ্য ‘ছাগল দিয়ে যে হালচাষ হয় না’ সেই পুরোনো প্রবাদটিই সত্য প্রমাণিত হল শিক্ষানীতি প্রণয়নের পরে। কমিটির সদস্যদের নি¤œমানের শিক্ষাভাবনা থেকে যে নীতিমালা প্রসব হল তাতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন উন্নতি হওয়া সম্ভব নয় এই তথ্য পাওয়ার পরও দেশের মানুষ এই নীতিমালা মেনে নিয়েছিল এই ভেবে যে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল’। একইসাথে এই তথ্যও প্রমাণিত হল যে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে বৈপ্লবিক কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়, তা সে যতটা নিরংকুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা নিয়েই আসুক না কেন।

শিক্ষানীতি প্রণয়নের পরে তা বাস্তবায়নের পালা যখন শুরু হল তখন বের হয়ে আসতে লাগল শিক্ষামন্ত্রীর প্রকৃত রাষ্ট্র দর্শন। কারণ শিক্ষানীতির নি¤œমান থাকার পরেও এতে যে দুয়েকটি ভালো কথা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নেও যথেষ্ট আন্তরিকতাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করল। রাজনৈতিক ও দলীয় এজেন্ডার বাস্তবায়নই হয়ে উঠল শিক্ষানীতির একমাত্র উদ্দেশ্য। এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তাবয়নে অত্যাধিক ব্যস্ত থাকার কারণেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়টি একদিকে যেমন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে অন্য দিকে তেমনি দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান নি¤œগামী হয়ে পড়ে। ফলে তিনি যে কলেজের ছাত্র ছিলেন সেই কলেজের শতবর্ষপ্রাচীন ছাত্রাবাস পুড়ে ফেললেও তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন, পিএসএর শত দুর্নীতির কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেও তিনি বহাল তবিয়তে মন্ত্রীর যোগ্য সহচর হিসেবে সাথে থাকতে পারেন, যোগ্য প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দলীয় বিবেচনায় বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বরাদ্দ হয়, দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরেও এমন ব্যক্তিই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় শতভাগ দলীয় নিয়োগ শুরু হয়, অপদার্থ অযেগ্য ব্যক্তিবর্গ কেবল দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে উপাচার্য পদ লাভ করেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় নির্বিঘেœ শিক্ষা-ব্যবসা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগের পরেও সরকার দলীয় ছাত্র নামধারীদের ভর্তি বাণিজ্য, হল ও ছাত্রাবাসগুলো সিট বরাদ্দের নামে অর্থ ও অবৈধ লেনেেদনের নিরাপত আশ্রমে পরিণত হতে পারে।

সরকারের দায়িত্ব শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। শিক্ষাদান করবে শিক্ষকবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ করবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরির বদলে মন্ত্রণালয় নিজেই পাশের হার বাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। সরকারি পাশ শুরু হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা পাস করছে না, সরকার পাস করাচ্ছে। বোর্ডগুলো উত্তরপত্র বিতরণের শুরুতে বেশি বেশি নাম্বার দেওয়ার জন্য নসিহত করছে। বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রতিযোগিতার বদলে পাসের হার বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতেও যখন কাজ হচ্ছে, না তখন শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অবাধ বাণিজ্য। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন ওপেন সিক্রেট। যদিও শিক্ষামন্ত্রী বাহাদুর তা মানতে নারাজ। ফলে সংসদে বসেই তিনি স্মরণকালের সবচেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যা ভাষণটা দিতে পেরেছেন। তিনি বাজেট অধিবেশনের বক্তৃতায় বলেছেন তার আমলে একবারের জন্যও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নি। যদিও পরের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গঠিত কমিটির রিপোর্ট পেয়ে শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার করলেন, কেবল ওই একদিনের প্রশ্নই ফাঁস হয়েছে। আর কোন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নি।

শিক্ষামন্ত্রীর এহেন রসিকতায় কি লিখব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কীভাবে শেষ করব তাও ভেবে পাচ্ছি না। তাই একটা গল্প বলে লেখা শেষ করছি। গল্পটি হল এরকম, ‘‘এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কিছু লাশ রাখা আছে। সকল লাশেরই ডাক্তারী সার্টিফিকেট রয়েছে। মর্গের ডোম একটি লাশের পোস্টমর্টেম করার জন্য পা ধরে হেঁচকা টান দিতেই লাশটি কথা বলে উঠল। লাশটি বলল, ‘আরে ভাই করেন কি, এভাবে টানছেন কেন? ব্যাথা পাচ্ছি তো।’ ডোম বলল, ‘তুই ব্যাথা পাবি কেন? তুইতো মরে গেছিস।’ লাশটি বলল, ‘আমি তো মরিনি। আমি বেঁচে আছি। দেখছেন না কথা বলছি।’ ডোম ব্যাটা এক ধমক দিয়ে বলল, ‘ব্যাটা তুই ডাক্তারের চেয়ে বেশি জানিস। ডাক্তার বলছে তুই মরে গেছিস। ডাক্তারের কথাই শেষ কথা।’’ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থাও এখন লাশের মতো হয়ে গেছে। স্ময়ং শিক্ষামন্ত্রী বলছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। যে দুর্বৃত্ত চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে, যে অসৎ শিক্ষার্থীটি প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, যে অসৎ শিক্ষক ফাঁস হওয়া প্রশ্œপত্র সমাধান করে দিয়েছে ওরা নিশ্চয়ই শিক্ষামন্ত্রীর এই কথায় লজ্জায় পেয়েছে।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫২

ঢাকাবাসী বলেছেন: এমন অপদার্থ চাকরীবাজ অদক্ষ শি.মন্ত্রী এদেশে আর হয়নি।

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৫

সফিক৭১ বলেছেন: তিনি কাজের মাধ্যমেই নিজেকে চিনিয়েছেন।

৩| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

দাকুড়াল বলেছেন: আল্লাহ এইসব পদার্থ চাকরীবাজ অদক্ষ শি.মন্ত্রী জাতিকে হেদায়েত করুক।

৪| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

দাকুড়াল বলেছেন: আল্লাহ এইসব পদার্থ চাকরীবাজ অদক্ষ শি.মন্ত্রী জাতিকে হেদায়েত করুক।

৫| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

দাকুড়াল বলেছেন: আল্লাহ এইসব পদার্থ চাকরীবাজ অদক্ষ শি.মন্ত্রী জাতিকে হেদায়েত করুক।

৬| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪১

দাকুড়াল বলেছেন: সরি,
আল্লাহ এইসব পদার্থ চাকরীবাজ অদক্ষ শি.মন্ত্রীর হাত থেকে জাতিকে হেদায়েত করুক।

৭| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

ডার্ক ম্যান বলেছেন: তাঁর সব ভাল অর্জন এক ঘটনায় বিফলে গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.