![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি ও বিজ্ঞানই পারে মানুষ , রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিবর্তন করতে
দেশে টাকার অভাব পড়িয়াছে। রাজস্ব বাড়াইতে হইবে। তাই বয়োবৃদ্ধ অতিঅভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী মহাশয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিয়ের উপর ৭.৫% ভ্যাট বা মুসক (মূল্য সংযোজন কর) ধার্য করিয়াছেন। তাঁহার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সঙ্গত কারণেই দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করিয়াছে।
সাধারণত মূল্য সংযোজন কর পণ্যের বেলায় প্রযোজ্য হইয়া থাকে। আপনি যদি একশ টাকার কাঁচামাল ব্যবহার করিয়া দুইশ টাকার পণ্য উৎপাদন করেন তাহা হইলে অতিরিক্ত একশ টাকার উপরে একটা ট্যাক্স প্রদান করিবার রীতিই ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর নামে অর্থনীতিতে পরিচিত। টিউশন ফি-এর উপর ভ্যাট আরোপ করায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠিয়াছে শিক্ষা কি তাহা হইলে পণ্য হইল?
শিক্ষা পণ্য কি না তাহা নিয়া বিতর্ক চলিতে পারে। অতীতে ইহা নিয়া বিভিন্ন মহলে বিতর্ক হইয়াছে। এই বিষয়ে দার্শনিকগণও একমত হইতে পারেন নাই। যেমন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস শিক্ষাকে পণ্য মনে করিতেন না। অন্যদিকে প্রোটাগোরাস এবং এই ঘরানার দার্শনিকগণ শিক্ষাকে পণ্য বলিয়া মনে করিতেন। তাই তাহারা শিক্ষার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করিতেন। প্রোটাগোরাস মনে করিতেন শিক্ষা দানের কারণে একজন শিক্ষার্থী আগের চাইতে অধিক পরিমাণে অর্থ উপার্জন করিতে সক্ষম। তাই শিক্ষার্থীর উপার্জিত এই অতিরিক্ত অর্থের একটি অংশ শিক্ষকের পাওয়া উচিত। এই যুক্তিতে প্রোটাগোরাস প্রতি শিক্ষার্থী থেকে দশ হাজার দ্রাকমা (স্বর্ণমুদ্রা) গ্রহণ করিতেন বলিয়া জানা যায়। আপনি যদি সক্রেটিসের দলভুক্ত হইয়া থাকেন তাহা হইলে এক কথা আর আপনি যদি প্রোটাগোরাসের অনুসারী হইয়া থাকেন তাহা হইলে ভিন্ন কথা।
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সেই বিতর্কে যাওয়া অনুচিত। আপনি যে দর্শনের অনুসারী হউন না কেন সেইটিই আপনি ভালো মানিয়াই গ্রহণ করিবেন। আপনি যে মতাদর্শের অনুসারী হউন সমস্যা নাই। রাষ্ট্রেরও নিজস্ব একটি দর্শন থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণে শিক্ষাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে তাঁরা সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এবং স্বাধীনতার পরপর স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে কিছু কার্যক্রমও গ্রহণ করিয়াছিলেন। একই গতিতে না হইলেও পরবর্তি সরকারগুলোও প্রায় সেই পথেই অগ্রসর হইয়াছে। ১৯৯১ সালে যখন তৎকালীন সরকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেন তখন তাহারা ইহাকে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়াছিলেন। তবে ইহা অস্বীকার করিবার কোন উপায় নাই যে এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে অনেকের জন্য সোনার ডিম পারা মুরগির নামান্তর হইয়া উঠিয়াছে। সম্ভবত এই দিকটা বিবেচনা করিয়া অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী মহাশয় এই টিউশন ফির প্রতি মূল্য সংযোজন করিয়াছেন।
তিনি তাহা করিতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হইল কেন করিবেন তাহার সুনির্দিষ্ট গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকা আবশ্যক। বয়স্ক মানুষের মধ্যে শিশুসুলভ সরলতা থাকে। আমাদের অর্থমন্ত্রীর মধ্যেও তেমটি লক্ষ্য করা যায়।তাই তিনি সহজ সরলভাবেই বলিয়াছেন রাজস্ব আহরণের জন্যই এই কাজ করা হইয়াছে। ইহার ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলিয়াছেন তাহার অর্থ এমন যে যাহারা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়া এখানে পড়িতে পারিবেন তাহাদের জন্য মাত্র ৭.৫% ভ্যাট প্রদান কঠিন কোন বিষয় নয়।
অর্থমন্ত্রীর এমন ব্যাখ্যায় অনেকেই খুশি হইতে পারেন নাই। তাই ভ্যাট আরোপের পর হইতেই দেশের নানান মহল নানান কারণে ইহার পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছেন । কেউ কেউ বলিতেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল ধনীর দুলালেরাই পড়ালেখা করেন না, গরীবের বাচ্চাকাচ্চাও এইখানে পড়েন। তাই ভ্যাট আরোপ করিলে গরীবের প্রতি অন্যায় করা হইবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।বিশ্ববিদ্যালয়েরর মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এক চেয়ারম্যান ফতোয়া দিলেন সরকার এমন একটা ব্যবস্থা করিতে পারেন যেখানে টিউশন ফি-এর পরিমাণ (ধরা যাক তিন লক্ষ টাকা) এর উর্ধ্ধে উঠিলেই কেবল তাহারা ভ্যাট দিতে বাধ্য হইবেন। তাহার এই বক্তব্যের সহিত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের খুব একটা প্রভেদ নাই। কারণ যাহারা ধনী তাহারাই ভ্যাট দিবেন। সম্প্রতি শিক্ষা সচিব এক অনুষ্ঠানে আরো একটু আগ বাড়াইয়া একটি প্রস্তাব করেছেন। তাহার প্রস্তাব হইলো এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হেইতে আদায়কৃত টিউশন ফিয়ের সাথে সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে উচ্চতর গবেষণার জন্য। বলাই বাহুল্য এই প্রস্তাব সরকারের রাজস্ব বাড়াইবার উদ্দেশ্যেরি সহিত একেবারেই সাংঘর্ষিক। তাহা ছাড়া ট্রাস্ট গঠনের ধান্দা বাদ দিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা নিশ্চিত করিবার জন্য চার আনার কলমের কালি ব্যবহার করিয়া হুকুম জাড়ি করিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। যদিও দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষণার অবস্থা এতটাই বেহাল যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই হুকুম জারি করিলে পাগলেরও মাথা খারাপ হইয়া যাইতে পারে।
দেশের বিভিন্ন মহলের মধ্যে সকলেই সাধুসন্যাসী নন। তাহাদের মধ্যে সকলেই সক্রেটিসের বরপুত্র নন। তাহাদের অনেকেই ব্যক্তিগত লাভালাভের উর্দ্ধে উঠিয়া কাজ করিতে পারেন না। আমার যতদূর জানি দেশের তথাকথিত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অনেক শিক্ষক, সরকারি অনেক অবসরে যাওয়া আমলাকুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাপ মারিয়া প্রচুর অর্থ-বিত্ত উপার্জন করিয়া থাকেন। ফলে নানান মুনি নানান কারণে নানান মত প্রদান করিবেন ইহাই স্বাভাবিক। ফলে তাহারা তাহাদের ধান্দায় কথা বলিবেন ইহাই স্বাভাবিক।
আমি এই বিষয়ে কিছু বলিতে চাই না। শুধু কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট হইতে আগ্রহী। প্রথম বিষয় হইল সরকার কি শিক্ষাকে এখন আর অধিকার হিসেবে মানিয়া লইতে রাজি নন, তাহারা ইহাকে পণ্য বলিয়া গ্রহণ করিবেন? আমরা জানি মানুষ অভাবের তাড়নায় অনেক কিছুই করিতে বাধ্য হয়। যাহারা পরিশ্রমী যাহারা নিজের শক্তি, সামর্থ ও মেধার প্রতি আস্থাশীল তাহারা পরিশ্রম করিয়া অর্থ উপার্জন করেন। তবে সবার আগে তাহারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাইয়া অর্থ সাশ্রয় করেন। আর যাহারা নিজের মেধা, যোগ্যতা ও শক্তির প্রতি আস্থাশীল নন তাহারা অর্থ উপার্জনের জন্য যাহা ইচ্ছা করিতে পারেন। এমনকি চরিত্র বিক্রিও করিতে পারেন। এই কারণেই বাংলায় প্রবাদ হইয়াছে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট।’ তাই দেশের সংবিধানের চরিত্র নষ্ট করিবার পূর্বে সরকারের উচিত চুরি-ডাকাতি বন্ধ করা, দুর্নিতি বন্ধ করা, অপচয়, অপব্যয় বন্ধ করা।
দ্বিতীয়ত. ধনীর দুলালেরা পড়ে বলিয়াই শিক্ষাখাত হইতে ভ্যাট গ্রহণ করিতে হইবে বলিয়া যাহারা মনে করেন তাহাদের জন্য প্রশ্ন এই সকল ধনীরা কি তাহাদের উপার্জিত অর্থ হইতে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করেন না? এই সাথে একটি কথা বলিয়া রাখা প্রয়োজন ধনীদের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন সহমর্মিতা নাই। দেশের একজন সাধু লেখক হুমায়ুন আজাদ অনেক আগেই বলিয়াছেন, ‘বাংলাশের সকল ধনীরাই কোনও না কোনও ভাবে দণ্ডযোগ্য।’ কিন্তু এই দণ্ডও যেন অন্যায্য না হয়। অপরাধীকে তাহার অপরাধের কারণে অন্যায়ভাবে দণ্ড দেওয়াও এক ধরনের অপরাধ।
ইহাতেও যদি অর্থকষ্ট লাঘব না হয় পরে চরিত্র নষ্ট করিবার সুযোগ থাকে। তবে চরিত্র নষ্ট করিবার আগে কয়েকটি বিষয় ভাবিতে হয়ে। কারণ চরিত্র হারাইলে নাকি সবই নষ্ট হইয়া যায়। ছোটবেলায় শিখিয়াছিলাম when character is lost, everything is lost. এইবার যদি চরিত্র নষ্ট করিবার জন্য দৃঢ়চিত্ত হইয়াই পড়া যায় তাহা হইলে সবার আগে রেট নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
এইবার এই রেট সম্পর্কে কিছু কথা বলিয়াই লেখা সমাপ্ত করিব। আপনার কাছে যদি একশ টাকার পাট থাকে তাহা দিয়া আপনি যদি দুইশ টাকার রশি বানাইয়া থাকেন তাহা হইলে আপনাকে বাড়তি একশ টাকার জন্য ভ্যাট প্রদান করিতে হইবে। আর আপনি যদি একশ টাকার পাট দিয়া আড়াই শ টাকার বস্তা বানাইয়া থাকেন তাহা হইলে আপনাকে অতিরিক্ত দেড়শ টাকার জন্য ভ্যাট প্রদান করিতে হইবে। আর আপনি যদি একশ টাকার পাট দিয়া ৪০০ টাকার কাপড় তৈয়ার করেন তাহা হইলে আপনাকে বর্ধিত ৩০০ টাকার উপর আপনাকে ভ্যাট দিতে হইবে। ফলে সকলের জন্য একই হারে ভ্যাট প্রেযোজ্য হইতে পারে না। কারণ সকল বিষয়ে শিক্ষালাভ করিয়া শিক্ষার্থীরা সমান পরিমাণ অর্থউপার্জন করিতে পারে না। কারণ কোন শিক্ষা হইতে কেমন অর্থ বৃদ্ধি হইবে তাহা অঙ্ক কষিয়া বাহির করিবার মতো গণিতবিদ এই বাংলাদেশে নাই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল শিক্ষা খাতের উপর ভ্যাট আরোপের আগে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীন শেষে তাহাদের শিক্ষা বিক্রী করিবার অর্থাৎ উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করিতে হইবে। তাহার পরেই কেবল শিক্ষা ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ হইতে পারে। ইহার আগে নয়।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৮
সফিক৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ ধূসরছায়া
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা এই বিজ্ঞ মন্ত্রী বলিয়াছিলেন হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা নাকি তেমন নয়!!!
শেয়ার বাজারের লক্ষ কোটি টাকার লুটপাটও সামান্য..
সেই তিনি কিনা সামান্য ৭.৫% টাকার জণ্য এত কাঙাল!
অবশ্য উনার অংক জ্ঞানের যে বহর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেখাইলেন তাহাতে মাথঅ খারাপ হইবার কথাই বটে!
হাজার টাকায় ৭.৫% এ ৭৫০ টাকা ধরে উনি লক্ষ কোটি হিসাক কষে দেখেন টাকাই টাকা... বাজেট ঘাটতিতো, বিধ্যুতে লুটপাট, কমিশন বাজি চুরি চামালীর সব ঘাটতিতো প্রাইভেট দিয়েই করে ফেলা যায়
তাই মনে হয় এত গোলমাল
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
সফিক৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
মধু নদীর জোলা বলেছেন: প্লাস দিলাম
৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫
তিক্তভাষী বলেছেন: শিক্ষা সম্পর্কীয় দর্শনতত্ব ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
ধূসরছায়া বলেছেন: খুবই চমৎকার লিখেছেন।