নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুহাম্মদ শফিউল আলম

যুগ্মপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

মুহাম্মদ শফিউল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দশ বছর"

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩১

পর্ব - ০১

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কর্মদিবস আজ।

দেখতে দেখতে প্রায় ১০টি বছর কেটে গেল। পহেলা মার্চ, ২০০৫, রোজঃ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করার পর একে একে দশটা বছর পার করলাম।

সহকর্মী সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
যাদের সহযোগিতায় এই পথচলা তাদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা।

পাদটীকাঃ দশ বছরের পথচলা নিয়ে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিব ইনশা-আল্লাহ্

পর্ব - ০২

বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে আমি ঢাকা সিটি কলেজের ফিন্যান্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। প্রায় ছয় মাসের সেই চাকুরী ছাড়ার সময় তৎকালীন প্রিন্সিপাল হাফিজ স্যার আমাকে সেমিস্টার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করেন। তার মানে হলো আমাকে আরও এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে আমাকে ০১ তারিখেই জয়েন করতে হবে। শেষে প্রতিদিন সকালে গিয়ে পরপর দুইটা ক্লাশ নিয়ে অফিসে আসার শর্তে উনি রাজি হন।

এদিকে মার্চের ০১ তারিখে যোগদানের পর আমাদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ (Foundation Course) শুরু হলো। দ্বিতীয় দিনেই বোকার মতো উর্ধ্বতন এক ফ্যাকাল্টী কর্মকর্তাকে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম। স্যারকে অনুরোধ করলাম যাতে ওই কয়েকদিনের জন্য অন্ততঃ ঘন্টা দুয়েক পরে ক্লাশে আসা অনুমোদন করেন। আমার কথাগুলি হয়ে গেল “পাগল তুই সাকো নাড়াবি না” বলার মতো। উনি আমাকে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট দেখালেন। উল্টা আমার উপস্থিতি নিয়ে আরও বেশী সজাগ হয়ে গেলেন।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ১৫ দিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ক্লাশ নিয়ে সিটি কলেজের পাট চুকিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত হলাম। মজার ব্যাপার হলো ওই ১৫দিনের জন্য যেই বেতন পেলাম তা ছিল মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া আমার প্রথম বেতন থেকে বেশী!

পর্ব - ০৩

বাংলাদেশ ব্যাংকের বুনিয়াদী প্রশিক্ষন কোর্স বর্তমানে ০৬ মাস মেয়াদী। ইতিপূর্বে এই কোর্সটি ০১ বৎসর মেয়াদী ছিল। আমরা ছিলাম ০১ বৎসর মেয়াদী বুনিয়াদী কোর্সের শেষ ব্যাচ। তাছাড়া বর্তমানে আমাদের ট্রেনিং একাডেমী মিরপুরে হলেও তখন ৩০ তলা ভবনের ২৫, ২৬ তলা নিয়ে ট্রেনিং একাডেমীটি পরিচালিত হতো। এক্ষেত্রেও আমরা ছিলাম প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বুনিয়াদী প্রশিক্ষন কোর্সের শেষ ব্যাচ।

প্রশিক্ষনের প্রথম পর্বে ছিল ১০টি বিষয়ে তাত্বিক লেখাপড়া অর্থাৎ ক্লাশ, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট জমা দেয়া এবং তার উপস্থাপন। ২য় পর্বে ছিল প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে ঘুরে তাদের কাজ সম্পর্কে ধারনা নেয়া, এবং সেই ধারনার উপর নোট খাতা তৈরী করা। ৩য় পর্বে শাখা অফিস পরিদর্শন; আমরা ১২ জনের একটি গ্রুপ রংপুর গিয়েছিলামে এবং সেখানকার কাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিলাম। সবশেষে বানিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারনা নেয়ার জন্য আমাদের গ্রুপটি ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় মাসখানেক অতিবাহিত করেছিলাম।

ছাত্রজীবনের ন্যায় এখানেও আমার সহকর্মী তথা সহপাঠীরা ধারনা করতেন আমি সব পারি, প্রকাশ করি না, শুধু ভাব নেই। তাদের ধারনা ভুল প্রমান করে দিয়ে বুনিয়াদী প্রশিক্ষনে আমি ব্যর্থতার পরিচয় দেই। তবে কিছু বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় কোনোরকমে ৮০% মার্কস পেয়ে একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট অর্জন করি।

বুনিয়াদী প্রশিক্ষনকালে একটা বিষয় আবিস্কার করি যে, আমার ব্যাচে আমি মোটামুটি সর্বকনিষ্ঠ । ফলে সবাই আমার বড় ভাই/আপু। তাদের স্নেহে ভালই কাটলো প্রথম ১০টি বছর।

যাই হোক, বুনিয়াদী প্রশিক্ষনেই আমি আমার শুভাকাঙ্খী বড় ভাইদের খুঁজে পাই যাদের সাথে বাকী জীবন অনায়াসে কাটিয়ে যেতে পারবো বলে আশা রাখি।


পর্ব - ০৪

বুনিয়াদী প্রশিক্ষন শেষে আমাকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ এ পদায়ন করা হলো। ঐ বিভাগের পলিসি শাখায় নিযুক্ত করার কারণে বাৎসরিক পরিদর্শনসূচী তৈরীর কাজসহ সব ধরনের খুচরা কাজ করতে বাধ্য হলাম। সত্যিকারের পরিদর্শন (Inspection) করার সুযোগ খুব একটা হয়নি। ব্যাংকের অডিট করার জন্য অডিট ফার্মের র‌্যাংকিং করার কাজটি করে ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছে কিছু একটা করছি।

যাই হোক বাস্তব সত্য হলো প্রথম পদায়ন ভাল না লাগায় আমি ওখান থেকে পালানোর উপায় খুঁজতে লাগলাম। বদলির বিষয়টি যেহেতু আমার ইচ্ছায় হবে না, আর তেমন কেউ আমার পরিচিত নেই সেহেতু অন্য উপায় বের করতে হবে। প্রথম সুযোগ আসলো বিআইবিএম এ প্রভাষক পদে আবেদন করার মাধ্যমে। সিনিয়র এক ভাইকে দেখেছিলাম দুই বছরের জন্য প্রেষণে বিআইবিএম এ চাকুরিতে গিয়েছেন। আর আমি যেহেতু শিক্ষকতার চাকুরী থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছি আমার কাছে এটাই সবচেয়ে ভাল সুযোগ মনে হলো। বাকিটা দুই বছর পরে দেখা যাবে। দুর্ভাগ্য আবেদনপত্র নেয়ার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও তারা কল করছিল না।

ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ এ দশ মাস চাকুরীর পর দ্বিতীয় সুযোগটি আসলো। তাও এক সহকর্মীর হাত ধরে। সেই সহকর্মী বিআইবিএমে এমবিএম কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য একটি ফর্ম কিনে এনেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নেন যে উনি পরীক্ষা দিবেন না। ফলে অনেকটা হুট করেই সেই ফর্মটি আমি কিনে নেই এবং এমবিএম ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ন হই।

দূর্ভাগ্যবশতঃ (!) আমি বিআইবিএম এ টিকে যাই এবং আবারো ছাত্র হিসেবে দুই বছরের কষ্টের জীবন শুরু করি ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। মন্দের ভাল এই যে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম!

/
/

(আমার স্ট্যাটাসগুলি আপনাদের কেমন লাগছে জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে আমি কারও সাথে গল্প করছি। বিরক্ত লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। ব্লক করে আপনাকে মুক্তি দিব!)

পর্ব - ০৫

অন্যের কেনা ফর্ম দিয়ে বিআইবিএম এ ভর্তির কথা লিখতে গিয়ে পুরোনো আরেকটা স্মৃতি মনে পড়লো। ঢাবিতে আমাদের এমবিএর ক্লাশ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। ডঃ মাহমুদ ওসমান ইমাম (MOI) স্যারের Fixed Income Securities ক্লাশের চাপে আমরা দিশেহারা। সেই সময়ে ক্লাশের কয়েকজনকে দেখলাম চাকুরীর জন্য আবেদন করছে। জিজ্ঞেস করলাম এই সময়ে চাকুরী? এমবিএর কি হবে? ক্লাশমেটরা বললো আরে এটার পরীক্ষা হতে দেরী আছে। আর অনার্স হলেই আবেদন করা যাবে। ওদের দেখাদেখি আমিও আবেদন করলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের জন্য। জীবনটাই বদলে গেল।

এমবিএর শেষ পরীক্ষা ছিল Research Methodology & Econometrics. সেই পরীক্ষার ঠিক আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা হলো। প্রস্তুতি কেমন ছিল তা বলাই বাহুল্য। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কমার্স কলেজ খুঁজে বের করলাম। পরীক্ষা কেমন হয়েছিলো তাতো সবাই জানেন। আমাদের ক্লাশের মাত্র দুইজন কৃতকার্য হয়েছিলাম সেইবার।

কাকতালীয় বিষয় হলো - যেদিন ভাইভা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসলাম সেদিনও ঢাকা শহরে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছিলো।

পর্ব - ০৬

২০০৭ সালে শুরু হওয়া বিআইবিএম জীবন নিয়ে খুব বেশী কিছু বলার নাই। তবে বিআইবিএম এ ভর্তি হওয়ার বিষয়টা দুর্ভাগ্যের ছিল কেন সেটা নিয়ে কিছু বলা যাক।

প্রথমতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স থেকে বিবিএ এবং এমবিএ করার পর এমবিএম করার কোন প্রয়োজনীয়তা আমি কখনও অনুভব করিনি। নিতান্তই ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে পালানোর জন্যই আমাকে সেখানে যেতে হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ বিআইবিএম এ ছাত্র হিসেবে যাওয়ার কারনে ওখানকার পড়ালেখার ধরণ সম্পর্কে একটা সম্মক ধারনা হয়েছে যা নেতিবাচক। এরকম মাস্টার্স করার কথা আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। এমবিএম কোর্সটি মানসম্মত না হওয়ার কারনগুলি নিম্নরূপ-

- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হওয়া
- প্রশ্ন প্রনয়নে বিআইবিএম শিক্ষকদের একচ্ছত্র আধিপত্য
- ’পাশ করলেই চাকুরী’ এটি প্রতিষ্ঠিত বলে শেখার চেষ্টা ত্যাগ করা, শুধু পাশ করা
- মুখস্থ বিদ্যার তুমুল জয়জয়কার
- একই প্রশ্ন বার বার আসা (হুবুহু)

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন তৃতীয় কারণটি পরের স্ট্যাটাসে বলবো।

(আমার বন্ধুতালিকায় বিআইবিএম এ আমার সহপাঠীরা আছেন যারা বাংলাদেশ ব্যাংকেই আমার সহকর্মী হিসেবে আছেন, অনেকেই এখন স্বনামধন্য ব্যাংকার, বিআইবিএম এর সম্মানিত কয়েকজন শিক্ষকও আছেন - সবার প্রতি বিনীতভাবে বলছি বিষয়টি প্রক্রিয়ার সমস্যা, ব্যক্তিগতভাবে কারও দায় আছে বলে মনে করি না। কেউ আমার স্ট্যাটাসে কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত।)


পর্ব - ০৭

- বিআইবিএম এর ছাত্র হিসেবে ভর্তি হওয়ার বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক বলার মূল কারণ -

এমবিএম, প্রথম বর্ষ শেষ করার আগেই আমার সেই শিক্ষক হওয়ার আবেদনের বিষয়ে পত্র পাই। আমাকে একটি লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানানো হয়। ছাত্রত্ব ত্যাগকরতঃ এমবিএম করার জন্য আমার পেছনে ব্যাংকের ব্যয়ীত টাকা ফেরত প্রদান এবং লিয়েন পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকা স্বত্বেও আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষার হলে শহীদ স্যার (ম্যানেজমেন্ট পড়াতেন) আমাকে প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে চিনতে পারলেও কিছু বলেন নি।

লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে আমি উৎরে যাই এবং ইন্টারভিউতে ডাকা হয়।

ইন্টারভিউ বোর্ড এর সদস্য প্রধান তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা স্যার আমাকে সরাসরি বলে বসেন আমি কেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিআইবিএম এ জয়েন করতে চাই। আমার বিনীত উত্তর ছিল, ”স্যার, আমি লিয়েনে আসতে চাই”, ”শিক্ষকতার প্রতি আমার একটু ঝোঁক আছে, আর বিআইবিএম থেকে আমি হয়তো অনেক কিছু শিখতে পারবো যা ভবিষ্যতে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমীতে কাজে লাগাতে পারবো।”

উনি আমাকে বলেন, ঠিক আছে আপনাকে এখুনি ট্রেনিং একাডেমীতে পোস্টিং দিচ্ছি। আমি বললাম, “স্যার যতদূর জানি যুগ্ম পরিচালক হওয়ার আগে ওখানে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নেয়া হয় না”; স্যার আর কিছু বললেন না। ডিজি স্যারের সাথে আরও কিছু কঠিন কথার কঠিন জবাব দিয়েছিলাম। মহাপরিচালক রুহুল আমিন স্যার কিছু তাত্বিক প্রশ্ন করলেন। যার সবগুলি পারা আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি।

কাকতালীয়ভাবে আমাকে Demo Class নেয়ার জন্য ডাকা হলো এবং তা ২য় বর্ষের বড় ভাইদের ক্লাশে। সকালে ‍১ম বর্ষে নিজের ক্লাশে ছাত্র হিসেবে ক্লাশ করলাম। তার পরের ঘন্টাতেই ক্লাশ ভর্তি ২য় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে Potential Teacher হিসেবে উপস্থিত হলাম। ঐদিন আমার ক্লাশ মূল্যায়ন করার জন্য রুহুল আমিন স্যার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডঃ তৌফিক আহমেদ চৌধুরী স্যার, ডঃ প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী স্যার, আবদুল জলিল স্যার, প্রমুখ। ঐ দিনটি ছিল আমার জীবনের একটি স্মরনীয় দিন।

যাই হোক সফলভাবে ক্লাশ সমাপ্ত করলাম এবং স্যাররা খুব প্রশংসা করলেন। কয়েকদিন পর জানতে পারলাম আমি ঐ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছি।

বিআইবিএম এ ছাত্র হিসেবে ভর্তি না হলে হয়তো ওখানকার শিক্ষক হিসেবে কাজ করা এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতাম। আমার ‍দুর্ভাগ্য। আমি সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম।


পর্ব - ০৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কখনও হলে থাকা হয় নি। বাসায় বাবা-মায়ের সাথে থেকেই পড়ালেখা করেছি। ফলে সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্বাদটা কখনও পাই নি। সেই অভাবটা বিআইবিএম এর হোস্টেলে থেকে কিছুটা পূরণের চেষ্টা করেছি। বড় ভাইদের সাথে আড্ডা দেয়া, বিআইবিএম মাঠে ফুটবল খেলা, শীতকালে বেডমিন্টন খেলা, রাত জেগে ব্রীজ খেলা (খেলা শেষে সবাই মিলে একটি ডিশে ভাত খাওয়া), সবই সুখস্মৃতি। বড় ভাইদের নামগুলি না বললেই নয়। নাজমুল ভাই, অমিতাভদা, মিজান ভাই, নজরুল ভাই, রিফাত ভাই, এনাম ভাই, মিন্টু ভাই, তপু ভাই - উনারা ছিলেন আমার প্রতি রাতে আড্ডা দেয়ার সঙ্গী। প্রায় প্রতি রাতে খাওয়ার আগে টেবিল টেনিস খেলতাম। মাঝে কিছুদিন ক্যারাম খেলাও চলেছে।

এমবিএম চলাকালীন সময়েই ডিপ্লোমা ২য় পার্ট শেষ করি। পড়ালেখার মধ্যে থাকায় পরীক্ষাগুলি অনেকটা সহজভাবে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। এক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয় Asadul Mustafa ভাইকে যিনি সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করতেন।

দ্বিতীয় বর্ষে নন ব্যাংকার সহপাঠীদের মধ্যে পুলক (Wail Al-Islam) ছিল আমার পড়ালেখার সঙ্গী। আমি না পড়তে চাইলেও সে আমার পেছনে লেগে থাকতো।

বিআইবিএম থেকে এমবিএম শেষ করে অফিসে ফেরার পর বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগে আমাকে পদায়ন করা হয় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ছয় বছর যাবৎ সেখানেই কাজ করছি।

পর্ব - ০৯

বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকুরী করতে গিয়ে গত দশ বছরে যেখানেই যার সাথে পরিচয় হয়েছে, জানাশোনা হয়েছে কম-বেশী সবার স্নেহ-আশীর্বাদ-শ্রদ্ধা পেয়েছি। তবে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়। বিষয়টি হলো ঢাবি ফিন্যান্স থেকে আমরা যারা বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেছি তাদের সম্পর্কে অন্যদের মতামত। বেশীরভাগ মানুষের মতে ফিন্যান্সের বেশীরভাগ (সবাই নয়) একেকটা “চিজ”/ “জিনিস”/ ”মাস্টার পিস” / "মাল".... নিজের ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে কথাগুলি শুনতে কখনই আমার ভাল লাগেনি। তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি ডিফেন্ড করার মতো শক্ত কোন অবস্থানও নিতে পারিনি। তাদের মতে আমাদের বিভাগের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্বার্থপরতা, অহমিকা, কুটবুদ্ধি, নিজেকে জাহির করার প্রবনতা, বসদের তেল দেয়া, সিনিয়রদের যথাযথ সম্মান না করা .... এই সকল দোষগুলি প্রবলভাবে বিদ্যমান। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের মধ্যে নাকি Satisfaction নামক বিষয়টি একদমই অনুপস্থিত।

তবে তারা এটাও স্বীকার করেন যে ফিন্যান্স এর ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ মেধাসম্পন্ন।

আমি যা বলছি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বিষয়টি কেউ ব্যক্তিগতভাবে না নিলে খুশি হবো। বরঞ্চ আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে এই বদনাম ঘোচানোর চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমি মনে করি।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)


পর্ব - ১০ (শেষ)

বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার চাকুরীজীবনের দশ বছর সম্পন্ন করা উপলক্ষ্যে আমার ইতিপূর্বের নয়টি স্ট্যাটাস এবং তদসংশ্লিষ্ট পাঠকদের কমেন্টসসমূহ অনুগ্রহপূর্বক দেখা যেতে পারে।

এই স্ট্যাটাস সিরিজের সমাপ্তি টানার জন্য দশম স্ট্যাটাসটির অবতারনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার দশ বছরের পথচলা নিয়ে স্ট্যাটাস লিখতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছি। অপ্রিয় সত্য বলার কারণে আমার অধিকাংশ ব্যাচমেট এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বন্ধু আমাকে অপছন্দ করেন। যেহেতু অধিকাংশ মানুষ আমাকে অপছন্দ করেন ধরে নেয়া যায় সমস্যাটা আমারই বেশী।

আমার এই কাসুন্দি দ্রুত শেষ করি। কয়েকটি বিশেষ দিন -

# প্রথম বিদেশ ভ্রমণ - ২৫ অক্টোবর, ২০১০ (থাইল্যান্ড)
# বিয়ে - ১০ ডিসেম্বর, ২০১০
# প্রথম প্রমোশন - ১০ জানুয়ারী, ২০১১ (উপ পরিচালক পদে)
# বাবা হয়েছি - ১০ অক্টোবর, ২০১৩

বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকুরীর অন্যতম আকর্ষনীয় বিষয় হলো বিবিধ কারণে বিদেশ ভ্রমন। গত দশ বছরে ট্রেনিং, মেলায় অংশগ্রহণ এবং পরিদর্শন কাজে তিনবারে মোট পাঁচটি দেশে (থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র) যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।

এখানে আরও উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে এমবিএ করার সময়েও আমার রোল নম্বর ছিল ১০।

উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষনে '১০' সংখ্যাটি আমার জীবনে বিশেষ গুরুত্ববাহী মর্মে প্রতীয়মান হয়। সুতরাং বর্তমান স্ট্যাটাসের পর্ব সংখ্যাও ১০টিতেই সীমিত রাখা সমীচীন হবে।

এমতাবস্থায়, অনুমোদিত হলে স্ট্যাটাসটি এখানেই শেষ করা যায়।

সদয় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.