![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘নতুনদের জন্য একবারেই সহজ, ইনকাম করার রাস্তা- মাসে আয় ৪০০০-১০০০০ টাকা’, ‘ঘরে বসে মাসে ইনকাম করুন ২০০০০ টাকা’, ‘মোবাইল দিয়ে ক্লিক করে মাসে আয় করুন ২০০০০ টাকা’, ‘চলে যাওয়ার জন্য .......... আসে নাই’, ‘আমরা থাকব না, কিন্তু ............ থাকবে’
আসুন টাকা কামাই
---------------
ক্লিক করে ঘরে বসে টাকা কামানোর কথা বলে প্রতারণা সাইবার জগতে নতুন নয়। মূলত শুরু থেকেই এ ধরণের প্রতারণার ফাঁদে পরে বিপুল অর্থ খোয়া গেছে অনেকের। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-চাকুরে কেহই বাদ যায় নি এসব প্রতারণার ফাঁদ থেকে। শুরুতে সাইবার জগতে ডোলেন্সার, স্কাইল্যান্সার, বিডিএসের মত প্রতারক সাইটের ক্ষপ্পরে পরেছেন অনেকেই। তবুও যেন হুঁশ ফেরেনি এ জগতের বাসিন্দাদের। ডোলেন্সার, স্কাইল্যান্সারদের প্রতারণার পরও বর্তমানে এই ক্লিকের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খুইয়েছেন অনেকে। এ তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে টামাডিল (tamadeal.com) নামে এমনই এক ক্লিক কোম্পানির নাম। যারা কিনা তাদেরই তৈরিকৃত একটি সংবাদ ভিত্তিক নিউজপোর্টালের লিঙ্কে ক্লিক করে টাকা কামানোর উপায় বাতলাচ্ছিল গতবছর ধরে। আর চলতি বছরে অফার দিয়ে একাউন্ট করার নাম করে এদেশের অনেক মানুষের কয়েকহাজার কোটি টাকা মেরে লাপাত্তা কথিত আউটসোর্সিংয়ের এ চক্রটি।
সাধারণত ইন্টারনেট ভিত্তিক আউটসোর্সিং সাইটগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। থাকে ফেসবুক, টটুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ নানা স্যোশাল মিডিয়ার ফেসবুক পেজ। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য হেল্প লাইন বা কাস্টমার সাপোর্ট। কিন্তু এসবের কোনটিই নেই টামাডিলের। যা একটি ওয়েবসাইট ছিল তাও গায়েব গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। যা কি’না পূর্ব থেকেই ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা একদিন টাকা মেরে পালাবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইন্টারনেট ঘেটে না পাওয়া যায় তাদের কোন ওয়েবসাইট বা কোন অফিশিয়াল স্যোশাল পেজ। এদের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ওয়েবসাইটই সরিয়ে নিয়েছে এ ‘ক্লিকবাজ’ প্রতিষ্ঠানটি। যা আছে সদস্যদের তৈরিকৃত বিভিন্ন জেলার নামে পেজ বা সিক্রেট গ্রুপ কিংবা পাবলিক গ্রুপ। যেগুলোর মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ বা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত এর সদস্যরা। (পালানোর ইঙ্গিত)
আর এর থেকে প্রতারিত হয়েও ‘অবলা প্রাণির’ মত সহ্য করে প্রকাশ্য কথা বলছেন না কেউই। টামাডিলের প্রতারণা থেকেও রেহাই পায়নি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরেরাও। মূলত, টামাডিলের বিভিন্ন লোভনীয় ফাঁদে পড়ে আজ ভুক্তভোগী তারা। (পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে না লাগানো)
জানা গেছে, টামাডিল ২০১৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে। (বাংলাদেশে কাজ শুরু করবে নাতো কেথায় করবে, প্রতিষ্ঠাতার বাড়িই তো বাংলাদেশে)। এর প্রতিষ্ঠাতা ফরিদপুর জেলার নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। যিদি কথিত টামাডিলিয়ানদের নিকট ‘এমডি স্যার’ নামে পরিচিত। (তার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানি না, প্রয়োজন নেই)।
শুরুতে এরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বা ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করার নাম করে ৩০ ডলারের বিনিময়ে একটি একাউন্ট করে দিত, মাসে চার থেকে বিশ হাজার বা চল্লিশ হাজার টাকা কামানোর প্রলোভন দেখিয়ে। আর ১০ টি বিজ্ঞাপন লিঙ্কে ক্লিক করলে ০.৫ ডলার আর ৫ টি ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করলে পাওয়া যেত ১ ডলার। আর এদের আকর্ষণীয় ইনকাম হচ্ছে রেফরেল বোনাস। আপনার নিচে চারজনকে জয়েন্ট করলে পাওয়া যায় ৪ ডলার। আবার এর মধ্যে সরাসরি যদি আপনি কারও রেফার করেন তবে তার ইনকাম থেকে ৫% পাবেন আপনি। আর আপনার রেফারেন্সকৃত ব্যক্তি যাদের জয়েন্ট করাবে তাদের উপার্জন থেকেও আপনি পাবেন ১%। আর প্রথমদিকে সদস্যদের উপার্জিত ‘ডলার’ পরিশোধ করে আস্থা অর্জন করে এঁরা। (আউটসোর্সিং নাম, এমএলএম সিস্টেম)
আরও একটি বিষয়, এই ক্লিক সাইট থেকে কেউ যদি কথিত ডলার ক্রয় করে তবে তাকে প্রতি ডলারে দিতে হতো ৮০ টাকা। কিন্তু উপার্জিত টাকা উঠাতে তারা দিত প্রতি ডলার ৭০ টাকা করে। এতবড় প্রতারণার পরও প্রথম থেকেই কেউই বিষয়টি মাথায় নেয়নি। ‘ক্লিকে ইনকাম বলে কথা’। (চিটিংয়ের ইঙ্গিত)
আস্থা অর্জনের জন্য টামাডিল প্রথম দিকে উপার্জিত অর্থ পরিশোধ করলেও শেষমেষ ‘তল্পিতল্পা’ গুটিয়ে ভেগেছে পুরো অনলাইন জগত থেকে। আর চলে যাওয়ার আগে অফার আর হাজার হাজার টাকা কামানোর লোভ দেখিয়ে নতুন একাউন্ট করার নাম করে মেরেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। (যার হিসাব তারাই ভালো বলতে পারবে, আর যদি সরকার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে তবে বের হওয়া সম্ভব)। জানা গেছে, টামাডিল ভেগে যাওয়ার কয়েকমাস পূর্ব থেকে নানা অফার আর লোভনীয় ইনকামের আশ্বাস দেয় । বাইরের দেশ থেকে ডাটা এন্ট্রি, ডিজাইনসহ বিভিন্ন কাজ দেওয়া হবে জানিয়ে সদস্যদের নতুন একাউন্ট করার এবং নতুন নতুন সদস্য করার জন্যও প্রলুব্ধ করে। আর শেষমেষ সবাইকে ধোকা দিয়ে উধাও হয়। (উদ্দ্যেশই যা) tamadeal
টামাডিলের সাইটে ঢোকা যাচ্ছে না, সাইট উধাও !
গচ্চা যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার আশা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না ভুক্তভোগীরা কেউ, না কেউ অভিযোগ করছেন আদালতে কিংবা করছে না কোন আন্দোলন, সমাবেশ বা মানববন্ধন। কেউ কথা না বললেও পূর্বে থেকে এই পথে আহুতদের থেকে পূর্বে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একজনের ছোট্ট একটা হিসাব আছে আমার কাছে। টামাডিলের ) ছোট ভাই ( একজনের হিস্টোরি শুনেছিলাম। তার তথ্য, টামাডিলে তিনি জয়েন্ট করিয়েছেন ৩৩০০ জনকে। অর্থাৎ সে টামাডিলকে দিয়েছে ) ৩৩০০x২৪০০ = ৭৯২০০০০ (ঊনআশি লাখ বিশ হাজার টাকা)। আর ওই সময়ের মধ্যে তাকে বেতন দেওয়া হয়েছে বা সে উপার্জন করেছে ১০৩০০০০ টাকা। (মন্তব্য: কাউকে যদি কেউ আশি লাখ দেওয়া যায়, তবে দাতাকে প্রথম কয়েক মাস ৫০০০০ করে বেতন দেওয়া কোন ব্যাপার না/ওই টাকা দিয়ে ওই ব্যক্তি নানান ব্যবসা করবে (উঠতে পারলে লাক, নয়তো ফাক), পরে পালিয়ে যাবে/মনে হচ্ছে, ওই টামাডিল নামক চক্রটি এইকাজটিই করেছে)
আরও একটা ছোট্ট হিসাব আছে আমার কাছে, সর্বশেষ যেসব আইডি খোলা হয়েছে সেসবে ১০ ডিজিট ছিলো। অর্থাৎ ১০০০০০০০০০; এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য কোটি তারও বেশি আইডি হয়েছে টামাডিলে। ধরে নিলাম ১ কোটি আইডি খোলা হয়েছে (এটা হবেই, এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা; এটা এমন ভাইরাসের মত ছড়িয়েছে এবং এতটাই প্রলোভনে পরেছে যে একেকজন ২০০/৪০০/৫০০/১০০০ আইডি বা তারও বেশি আইডি খুলেছে)। প্রথম দিকে আইডি খুলতে লাগতো ২৪০০, শেষ দিকে ২০০০ টাকা = গড়ে: ২২০০ টাকা x ১ কোটি = আউট অব রেঞ্জ (মোবাইলে)। টামাডিল মেরেছে ২২০০০০০০০০০ কোটি। (২ হাজার ২ শ কোটি)। এটা নূন্যতম, হবেই। এর চেয়েও অনেক বেশি হওয়ার কথা। (বাহ টামাডিল; দুনিয়ার সব প্রতারক তোমাকে স্যালুট করবে)
উপরোক্ত মন্তব্যটি নিয়ে টি নিয়ে আরও কথা আছে। টামাডিলের এ বছরের প্রথমদিকে একটি প্রোগ্রামের ভিডিও পেলাম ইউটিউবে। ভিডিওতে কথা বলছিলেন টামাডিলের কোন একজন উর্দ্ধতন ‘কমকর্তা’। যা শুনে যে কেউই বুঝবে এঁদের প্রতারণা। তিনি বলছিলেন, ‘পত্রিকার স্টাবলিশের কথা (তাদের একখান অনলাইন নিউজপোর্টাল, নাম সবখবর ডটকম), আর এটা দিয়ে মাসে ৭/৮ কোটি টাকা ইনকামের কথা বলছিল ওই ‘কমকর্তা’। আরও বলছিল, শপিংমল, টিভি, ২০১৮ সালেই ১০০০ রেস্টুরেন্ট চালু, ৫০০০ জেন্টস পার্লার চালু, আরও বলছিল ৫ বছর পর দিনে টামাডিল ৫-১০ কোটি টাকা ইনকাম করবে ইত্যাদি ইত্যাদি’। আমার কথা, এঁ এত টাকা পেলো কোথায়? কাদের টাকা দিয়ে টামা ...রা টিভি, ১০০০ রেস্টুরেন্ট, ৫০০০ জেন্টস পার্লার চালু করার কথা বলে। যদি তার বাবার টাকা (নিজের টাকা) ইনভেস্ট করেই এসব করে তবে এ সব বালের স্বপ্ন কথিত টামাডিলিয়ানদের (টামাডিলে যারা কাজ করে তাদেরকে বলা হয় টামাডিলিয়ান) দেখাবে কেন। সে নিজে .......ক না, কত বুকের ..........। আর যদি মানুষের টাকা নিয়ে এত বড় ‘বিজনেস প্ল্যান’ করা হয়ে থাকে, তবে ক্লিক এর আড়ালে কেন?
নেটে সার্চ করে জানলাম, সরকার অনুমোদিত এদের মূল প্রতিষ্ঠান তানহা আইটি প্রা. লি.। টামাডিলে এটির এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। টামা শপিং, সবখবর ডটকম নিউজ পোর্টালসহ এর কয়েকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যা হোক, কিন্তু মানুষের টাকা মেরে এভাবে ফ্রড করা মোটেই কাম্য নয়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের উচিৎ এঁ চক্রকে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। আর ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা।
একটা কথা, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ইনকাম করার একটা সিস্টেম আছে বলে জানা যায়। যেটাকে বলা হয় পিটিসি (পেইড টু ক্লিক)। হয়তো আছে। যদিও করি নাই। তবে এমন হাজার হাজার উদাহরণ আছে যারা এরকম সাইটে কাজ করেছে, সময় দিয়েছে কিন্তু টাকা পায়নি। এতদিন যারা করেছে কোনটাই টিকে নাই, মানুষের কোটি কোটি টাকা মেরে পালিয়েছে। এই পালানো শুরু হয়েছিল ২০১২’র দিকে। ডোলেন্সার, স্কাইল্যান্সার, বিডিএস যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে যদি ভালো কোন সাইট থাকে, থাকতে পারে। এ বিষয়ে এক্সপার্টরা বলেন, অনেক ধৈর্য্য আর সময় দিতে হয় আর ধোকারও সম্ভাবনা থাকে। বলা হয়ে থাকে পিটিসি সাইটগুলোর ৯৯% ই ভূয়া হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৮ ভোর ৬:৩৮
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। শুভ কামনা আপনার জন্য।