নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব ভোরেই উঠি সবদিন তবে সাধারনত শুয়েই থাকি । আজ ভিন্ন একদিন ,আজ ছেলের ভর্তি পরীক্ষা । উঠিয়ে দিলাম ওকে । রেডি হতে হবে যাতে ৯ টার আধা ঘণ্টার আগে পৌছুতে পারি । সিট খোজার ব্যাপার আছে। রাতে অনেক মিস কল আর বার্তা আসে মোবাইল এ ,সকালে চেক করি । কি মনে হল বাটন চেপে দেখি একটা ডোমেইন মেসেজ আছে । এম আই এস টি জানাচ্ছে আজকের নির্ধারিত ৯ টার পরীক্ষা দুপুর দেড়টায় হবে । ছেলেকে আবার মশারির নিচে ঢুকিয়ে মেইল চেক আর পত্রিকার আপডেট দেখতে বসে গেলাম ।
১২ টার মধ্যে ভাত খেয়ে একটা স্কুটার এ রওনা হলাম ।
এম আই এস টি মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় । গেটে বেশ ভিড় । প্রচুর ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষার জন্য এসেছে । আর্মিদের কায়দা কানুন আলাদা, রাস্তার নিশানা তো ছিলই , ইন্সটিটিউট এলাকায় বোর্ড এ রোল আর হল নং দেওয়া ছিল । ছেলে ঢুকে গেল আর উল্টোদিকের মাঠে হাজার দুএক লোকের বসার আয়োজন শামিয়ানার নিচে আরামদায়ক চেয়ারে । শীতের দিন আর চারিদিকের প্রচুর গাছপালা আমায় সত্যি শান্তি দিচ্ছিল । অভিভাবকরা বসেছেন আবার অনেকেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন । ওদের স্টুডেন্ট ক্যাফেটা অপ্রতিদন্ধি খাবারের মান আর দামের দিক দিয়ে । মাঠেও দুটো তাবুর নিচে একই খাবার বিক্রি হচ্ছে । অনেকেই ফ্রাইড রাইস খাচ্ছেন কেননা এরা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন । সময় পরিবর্তন এ কারনেই করা হয়েছে । তবু দূর দক্ষিন বা উত্তর এলাকা থেকে কেউই আসতে পারেননি অবরোধ আর বাসের আগুনের ভয়ে ।
ওরা বড় দালান তুলেছে এবং আরও দালান নির্মাণাধীন । ১৯৯৮ এ শুরু এম আই এস টি এর । প্রতি বছর সাবজেক্ট বাড়ছে ক্লাসরুম ও বাড়ছে তেমনি হারে । এর প্রধান কারন নিরাপত্তা বলয়ে রাজনীতিবিহিন ও সেশন জট বিহীন , হরতাল মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়ছে কিন্তু সে তুলনায় সিট বাড়ছে না । এখানে CE,CSE,EECE,ME,AE,NAME বিষয় পড়ান হচ্ছে একেবারে ডক্টরেট ডিগ্রী পর্যন্ত । আমায় স্বরাষ্ট্র সহ সচিব এটার কথা বলেছিলেন যে এখানে নির্ভেজাল পড়াশুনা হয় , ওদের উচিৎ ক্যাম্পাস বৃদ্ধি করা কারন সব গার্জেনরা এখন নিরাপদ একটি স্থান চান নিজের সন্তানের জন্য ।
ওদের গাছপালা ঘেরা ক্যাম্পাস আমায় হাতছানি দিচ্ছিল আবার পড়াশুনা শুরু করতে । দুপুরে একটা ক্লান্তি আসে বয়েস আর রোগ শোকের কারনে । আজ বড় ভালো লাগসে সবুজের দিকে তাকিয়ে , ক্লান্তি নেই , তবু কফির লোভ সাম্লাতে পারলাম না । কাছাকাছি তাবুর টয়লেট সবাইকে নিশ্চিন্তে রেখেছে । ভিতরে টিস্যু রোল দিয়ে দিয়েছে । আমার আগে পেছনে দল বেঁধে সবাই বসে । শুধু আমিই পুব মুখী হয়ে নিশ্চুপ হয়ে অথচ আডডা জমাতে আমিই ওস্তাদ । সবাই সদ্য পরিচিত কিন্তু কান পাতলাম ওদের আলাপে , দেশের আলাপ প্রধান এজেনডা । কি হবে , কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, মানুষ কেন এভাবে পুড়বে ? কাউকেই কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিতে শুনলাম না । দিলদরাজ গালাগাল নেই তবে বিরক্ত প্রতিটি মানুষ। ছোট রাস্তা টিতে গোল হয়ে দাড়িয়ে আড্ডা । আলাপ ওই একই “দেশ ও আমাদের নিরাপত্তা”। চারিদিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আমাদের জীবনটাও যদি এরকম শান্তিময় পরিবেশের মতো হতো । চাওয়াটা অন্যায় নয় কিন্তু কার কাছে চাইব ?
৩ ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে আমরা বাসেই উঠলাম । বাস চলতেই একটা ভয় চেপে বসল । মনে হতে লাগলো পেট্রোল বোমা নিয়ে কেউ দাড়িয়ে আছে ঘাতক বেশে । আমি খুব মনোযোগ দিয়ে সিট আর মেঝে দেখছি কোন ধুসর পাউডার নজরে আসে কিনা । একটা টেনশন নিয়ে বাসায় ফিরলাম কিন্তু ছেলেকে বুঝতে দিলাম না তাহলে ও আমায় টেনে নামিএ স্কুটারে ওঠাতো । অর্থই সব নয় জীবনটা আরও মূল্যবান এই কথা গুলো যদি দেশ ধর্ষক দু পরিবারকে বোঝানো যেত ।
কাল আবার অবরোধের নতুন এপিসোড ভোর ৬ টা থেকে ।
আজ যারা দূর থেকে এসেছিলেন তারা কিভাবে ফেরত যাবেন । ৩ টি ঘণ্টায় অতগুলো অপরিচিত মানুষ কেমন করে হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে যেমন করে রাজনিতিকদের আমরা ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছি যারা আপন হবার চেষ্টা টুকু করেনি ।
ঈশ্বর আগুনে পুড়িয়ে মেরোনা আর ।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০
শাহ আজিজ বলেছেন: ৪ বছর বাদে আবারো দেখছি।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩১
নূর আদনান বলেছেন: বাহ্ বেশ চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন দৃশ্যগুলো, মনে হল আমি যেন সব কিছু আপনার সাথেই দেখতেছি।
সত্যিই যদি এমন শান্তিময় পরিবেশে জীবন কাটানো যেত!!