নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার আড়ালে অন্ধকারাচ্ছন্ন দেবী

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

বলিউডের নতুন যুদ্ধ৷ এবং তার সঙ্গে ছবির তারকাগের প্রায় কোনও সম্বন্ধ নেই৷ অথচ খানেদের প্রতিদ্বন্দীতার থেকেও রক্তক্ষয়ী হতে চলেছে সেই সম্মুখ সমর৷

যদিও তার ছবি 'ওয়ান বাই টু' বক্স অফিসে ভরাডুবির সামনে পড়েছে, কিন্ত্ত সেটাই অভয় দেওলের কাছে এই মুহূর্তে কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়৷ কারণ তিনিই বোধ হয় বলিউডের একমাত্র অভিনেতা যিনি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এবং সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মুখসমরের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন৷

যদিও সাহসী অভিনেতা হিসেবেই খ্যাত তিনি, কিন্ত্ত এই যুদ্ধ এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যখন প্রযোজক হিসেবে তার কেরিয়ার রীতিমতো প্রশ্ন চিহ্নের সামনে৷ আর অভিনয় কেরিয়ারেও আসতে পারে বড় ধাক্কা৷ বহুদিনই এই নিয়ে নীরব ছিলেন অভয়, চেষ্টা করছিলেন বেরিয়ে আসার৷ কিন্ত্ত তা হয়ে ওঠেনি৷ অভয় প্রথমবার প্রযোজনায় এলেন তার 'ওয়ান বাই টু' ছবি নিয়ে৷ যে ছবিতে কাজ করেছেন তার বান্ধবী প্রীতি দেসাইও৷ সঙ্গীতশিল্পী এবং মিউজিক কোম্পানির লড়াইয়ে তার সিনেমার মিউজিক রিলিজও গেল আটকে৷ সঙ্গে সঙ্গে আটকে গেল ছবির প্রচারও৷ কো-প্রোডিউসার ভায়াকম ১৮-র পাশে না দাঁড়িয়ে অভয় আবার দাঁড়ালেন সঙ্গীতশিল্পীদের পাশেই৷ কো-প্রোডিউসারও অভয়ের বিরুদ্ধে কোর্টে আবেদন জানালো৷ কারণ, অভয়ের কারণেই নাকি মিউজিক রিলিজ আটকে গিয়েছে, আর তাই আটকে পড়েছে ছবির প্রচারও৷ প্রচারের অভাবে ছবিটিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে৷

আর এই যুদ্ধ বলিউডের ঐক্যবদ্ধতায় এক বড় ফাটল৷ এই যুদ্ধের অন্য একটি গুরুত্বও আছে৷ সঙ্গীতশিল্পী আর মিউজিক কোম্পানির লড়াইয়ের ফলে গোটা ভারতে এই ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, সেটাই দেখার৷ আর তাই সবাই এখন তাকিয়ে রয়েছে যুদ্ধের অন্তিম পরিণতির দিকে৷

কিন্ত্ত কীভাবে হলো এই যুদ্ধ?
আসল গল্প প্রশ্ন একটাই, একটি নির্দিষ্ট গানের রয়্যালটি কে পাবে? মিউজিক কোম্পানি নাকি শিল্পী৷ ধরা যাক অরিজিত্ সিং যদি একটি গান রেকর্ড করেন, তাহলে সেই গানটি যতবার বিক্রিত হবে, ততবারই কি তিনি রয়্যালটি দাবি করতে পারেন? শিল্পীরা বলছেন: গানটি যদি কারও কাছে বিক্রি হয়, তাহলে তার রয়্যালটির একাংশ আমাদের পাওয়া উচিত৷ মিউজিক কোম্পানি যদি পুরো রয়্যালটি দিতে না পারে, তাহলে অন্তত কিছুটা দিক৷ কারণ গানটা আমরা গাই৷ ওদিকে মিউডিক কোম্পানিগুলোর মত, রেকর্ডিং-এ অনেক খরচ আছে৷ সেই সব খরচ তো বটেই, মার্কেটিংয়ের খরচও আমাদের৷ আমাদের অনুমতি ছাড়া গানটা অন্য কাউকে বিক্রি করা, গানটির অন্য কোনও ভার্সন রেকর্ড করা কিংবা টাকা রোজগারের জন্য কোথাও গাওয়া যাবে না৷ আর রয়্যালটির পুরোটাই আমাদের হাতে থাকবে৷

শুরুর গল্প
সমস্যার শুরু ৬০ বছর আগে৷ যখন লতা মঙ্গেশকর এই ইস্যুতে কিছু প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকার করেন৷ কিন্ত্ত তার লড়াই ধোপে টেকেনি, কারণ অন্য শিল্পীরা সেই লড়াইতে অংশগ্রহণ করেননি৷ গত ৪০ বছর ধরে কেউ তার এই লড়াইকে গুরুত্বই দেয়নি৷

আবার শুরু কীভাবে
সমস্যার সূত্রপাত আবার সোনু নিগমকে কেন্দ্র করে৷ যখন তার গাওয়া একটি গানের সত্ব পুরোটা প্রযোজককে ছেড়ে দিতে তিনি অস্বীকার করেন৷ এই কারণেই পরিচালক হিসেবে শেখর সুমনের প্রথম ছবি 'হার্টলেস'-এর রেকর্ডিং থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়৷ সোনুর নেতৃত্বে, সুনিধি চৌহান আর শ্রেয়া ঘোষালও মিউডিক কোম্পানিগুলোর এই নতুন শর্তে একমত হতে অস্বীকার করেন৷ 'হার্টলেস' ছবি থেকে বাদ পড়ার পর সোনু ট্যুইটারে লেখেন, 'এটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা৷ হূদয়হীন এবং বেআইনি'৷ সুনিধি আর শ্রেয়াও ঘোষণা করেন, তারাও সোনুর সঙ্গে আছেন৷ তাদের লড়াইয়ে আরও শক্তি যোগ হয় যখন লতা মঙ্গেশকর জানান, তার আশীর্বাদ সোনুদের সঙ্গে রয়েছে৷

এর পরে কী?
লড়াই এই মুহূর্তে চরমে৷ 'হার্টলেস'-এর মিউজিক রিলিজ বন্ধ হয়ে যায় চুক্তি সই হয়নি বলে৷ পরিচালক শেখর সুমনকে রেকর্ড লেবেলের তরফে জানানো হয়েছে, সোনু, সুনীধিস শ্রেয়ারদের বদলি হিসেবে অন্য গায়ক-গায়িকা নিতে৷ এবং এর ফলস্বরূপ কিছু মিউজিক লেবেল এই তিন গায়ক-গায়িকাকে প্রায় রয়কট করে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নেয়৷ কিন্ত্ত গায়ক, গানলেখকরা ইতিমধ্যে সোনুদের সঙ্গেই গলা মেলান৷ এবং তার মধ্যে প্রত্যেকেই হেভিওয়েট- অরিজিত্ সিং, কৈলাশ খের, বিশাল দাদলানী, জাভেদ আখতারের মতো শিল্পীরা সোনুদের হয়ে প্রতিবাদ করেন৷

বিদ্রোহের গান
১) সোনু নিগম: প্রচুর বেআইনি চুক্তিপত্র এই ব্যবসায় চলে৷ কোম্পানিগুলো শিল্পীদের এই বেআইনি চুক্তিপত্র সই করার জন্য চাপ দেয়৷ ওরা বলে, যে গান আমি গাইছি, তা নাকি আমার নয়৷ আমি নাকি আবার তা রেকর্ড করতে পারব না৷ সুরকারদেরও নাকি কোনও অধিকার থাকবে না৷ কাউকে ঘরে আটকে রেখে, কিংবা জোর খাটিয়ে সই করানো হয়৷ নতুনদের কেরিয়ার ধ্বংস করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়৷ এভাবে চলতে পারে না৷

২) অরিজিৎ সিং: আমি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন৷ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না৷ কিন্ত্ত সোনু নিগমের সঙ্গে আমি একমত৷ ঠিকঠাক সমাধান হওয়া দরকার৷ প্রত্যেকের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রাখতে হবে৷ আমি একটা গান রেকর্ডিং করলে, সেটা আমার গান৷ আমি তার সঙ্গে একাত্ম হতে পারি৷ সত্যিই রয়্যালটি ভাগাভাগির স্পষ্ট নিয়ম থাকতে হবে৷ সকলেই সেই আইন মানবে৷

৩) লতা মঙ্গেশকর: গত ৬০ বছর এই লড়াইটা চালাচ্ছি৷ কেউ পাশে ছিল না৷ জানতাম একদিন এমনটাই হবে৷ দিনটা এসে যাওয়ায় আমি খুশি৷ মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য এই পদক্ষেপের দরকার ছিল৷ শিল্পীদের যোগ্য সম্মান প্রাপ্য৷ তাদের লড়াইয়ে আমার আশীর্বাদ রইল৷

৪) বিশাল দাদলানী: যদি সোনু নিগমের মতো একজন এত জনপ্রিয় এবং সুযোগ্য শিল্পীর মনে হয়ে থাকে, তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন, তাহলে বুঝতেই হবে চুক্তিতে গোলমাল আছে৷ সময় এসেছে খুঁজে বার করার কেন মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে৷ দেশের যেকোনো জায়গার শিল্পী যদি আপনি হন, তাহলে এটা আপনারও চিন্তার বিষয়৷

৫) কৈলাশ খের: সোনুজির পদক্ষেপ অত্যন্ত সাহসী৷ উনি একদম ঠিক৷ কল্পনা করুন, কিছু খারাপ লোক আমাদের সব সৃজনশীলতাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ আর আমাদের তার জন্য প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিচ্ছে না৷

বাজারের যুক্তি
১) ভূষণ কুমার, অন্যতম কর্ণধার, টি-সিরিজ: আইন ধরে এগোলে দেখা যাবে, শিল্পীরা সেই আইনটা সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করছেন৷ আমরা ছবির প্রযোজকদের সঙ্গে চুক্তি করি৷ শিল্পীদের সঙ্গে নয়৷ তারা যখন কোনও লাইভ অনুষ্ঠানে সেই গানটি গেয়ে অর্থ রোজগার করেন, আমরা কি তাদের থেকে সেই অর্থের অংশ চাই, যে গানটার মালিক তারা আসলে নন? প্রযোজকরা মিউজিকের রাইট আমাদের বিক্রি করে দেন৷ আমরা তাদের ছবির প্রচারেই সেগুলি ব্যবহার করি৷ যদি শিল্পীরা সেই রাইটস চান তাহলে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি হবে, কারণ আমরা যখন সারা পৃথিবীতে সেই মিউজিক রিলিজ করছি তার রাইটস সম্পূর্ণ রূপে আমাদের৷ এটাও বলা দরকার আজ সোনু যা হয়েছেন, তার পিছনে আমার বাবা (গুলশান কুমার)-র ভূমিকা কী তা সবাই জানেন৷ সোনু এইভাবে তার প্রতিদান দিচ্ছেন৷

২) বনি কাপুর, প্রযোজক: আমরা ইতিমধ্যেই প্রচুর করের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছি৷ এর মধ্যে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কপি রাইটের সমস্যা দেখা দিলে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাটাই সমস্যার হয়ে যাবে৷ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির লাভের পরিমাণ কমছে৷ করের বোঝা আর বাড়ানো উচিত নয়, এটা সকলের বোঝা উচিত৷

৩) কুমার তরানি, অন্যতম কর্ণধার, টিপস মিউজিক: আইন নিয়ে অনেক জটিলতা আছে৷ দিনের শেষে কেউ আপনাকে জোর করতে পারে না চুক্তিতে সই করার জন্য৷ আপনি যদি সই না করেন, সেটা আপনার মর্জি৷ এই বাজারে প্রতিভার অভাব নেই৷ পৃথিবীটা ইচ্ছুক মানুষদের মধ্যে যে চুক্তি হয় তার ওপরে নির্ভর করেই চলে৷ আমরা কোনওভাবেই তাকে নষ্ট করব না৷- ওয়েবসাইট।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: 'এটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা৷ হূদয়হীন এবং বেআইনি'৷

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২২

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: অন্যদিকে আমাদের দেশেও এই যুদ্ধ লেগেছিল, মোবাইল কোম্পানীর রিংটোন ডাউনলোডের বদৌলতে যখন পুরাণ গানে নতুন করে পয়সা আসা শুরু করে তখন ।

রেকর্ড কোম্পানী বলে আমরা তো গান কিনে নিয়েছি, শিল্পীরা বলে ক্যাসের নাম করে কিনেছে, মোবাইলে বেচবে কেন ?

শিল্পী হয়েও মুলত রেকর্ড ব্যবসায়ী কুমার বিশ্বজিৎ এর একটা হট ডায়লগ ছিল : কাটা মুরগী কয়বার জবাই করতে চাও !

আসলে সবই পয়সার খেলা, পয়সা থাকলে এ দুনিয়ায় মারামারি লাগবেই, যেমনটা লেগেছিল ইরাকে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.