নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিশোরদের মাথার তালু থেকে কপাল পর্যন্ত এবং কাঁধ থেকে দুই হাতের বাহু বরাবর নিচের দিকে লম্বা লম্বা করে কাটা।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

কিশোরদের মাথার তালু থেকে কপাল পর্যন্ত এবং কাঁধ থেকে দুই হাতের বাহু বরাবর নিচের দিকে লম্বা লম্বা করে কাটা। অঝোরে রক্ত ঝরছিল। জরুরি বিভাগের মেঝে রক্তে ভেসে গেছে। ২০ জনকেই সেলাই দিতে হয়েছে।’
এই বর্ণনা টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রাশেদুজ্জামানের। এই ২০ জন টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ‘সদস্য’।
গত মঙ্গলবার রাতে নিজেদের দেহ ধারালো ব্লেডজাতীয় অস্ত্রে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে তারা। হাসপাতালে তারা চিকিৎসক ও সেবিকাদের বলেছে, ঠিকমতো খাবার না দেওয়ায় এবং নির্যাতন করার প্রতিবাদ হিসেবে তারা এ কাজ করেছে।
তবে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, এক কিশোরের কফ সিরাপ খাওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। জানালার বা টিউবলাইটের ভাঙা কাচ দিয়ে তারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছে।
টঙ্গী হাসপাতালের নথিপত্রে আহত কিশোরদের সবার নাম ও বয়স উল্লেখ করা আছে। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সূত্র জানায়, এদের মধ্যে তিনজন কেন্দ্রের আবাসস্থলের তিনতলায়, বাকিরা পাঁচতলায় থাকে। মঙ্গলবার রাত আটটায় রাতের খাবার খেয়ে তারা নিজেদের কক্ষে যায়। তার পরই ভয়ংকর এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে কেন্দ্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বিষয়টি জানতে পারেন।
হাসপাতালের কর্মীরা জানান, সাতজন করে কিশোরকে মাইক্রো-বাসযোগে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভোররাত পর্যন্ত পর পর ২০ কিশোরের কাটা স্থান সেলাই করে ব্যান্ডেজ করা হয়। এ সময় কিশোরদের কান্নায় হূদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়। চিকিৎসা শেষে ওই অবস্থায়ই তাদের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত জরুরি বিভাগে সেবক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও তাঁর সহযোগী মোহামঞ্চদ আলী কাজ করেছিলেন। জানতে চাইলে গতকাল বুধবার বিকেলে সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবশেষে যে পুলাডারে আনল, ওর ঘাড়ে দুই ইঞ্চি কাটা। পোয়া ইঞ্চি গভীর কাটা আধা ইঞ্চি ফাঁক অইয়া রইছে। আমি সাথে সাথে ইএমওকে (ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার) দেখাই। স্যারে ওরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড (রেফার্ড নম্বর ৯০৪/২০ সময় ভোর পাঁচটা ২০ মিনিট) করে দেন। তার পরও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আমারে অনেক রিকোয়েস্ট করে কয়, “সিলাই কইরা দেন।” আমি রাজি হই নাই। স্যাররে বলার পর সে বলছে, “আমি এই রিক্স নেব না।” এর আগে আরেকটা পুলারও ঘাড়ে কাটা ছিল। তয় তারডা তত মারাত্মক না।’
সাখাওয়াত আরও জানান, প্রত্যেকের শরীরের পাঁচ-ছয়টা করে জায়গায় কাটা। মাথা, দুই হাত ছাড়াও দু-একজনের পা এবং পেটেও কাটা ছিল। তিন, চার, ছয় থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা কাটা। এক কিশোরের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওর কাঁধ থেকে হাতের কনুই পর্যন্ত প্রায় ১০ ইঞ্চি ফাড়া ছিল।
কাটা কতটুকু গভীর, জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বুঝেন না, সব সিলাই করতে অইছে। প্রায় পোয়া ইঞ্চি গভীর। আমি সবকিছু সুন্দর কইরা খাতায় লিখা রাখছি।’
আরেক কিশোরের নাম উল্লেখ করে সাখাওয়াত বলেন, ‘আমার সামনেই তত্ত্বাবধায়ক তার কাছে জানতে চায়, “তুই নিজেই কাটছস, না কেউ কাইটা দিছে?” ছেলেটা একজনের দিকে ইশারা করে বলল, “আমারে হে কাইটা দিছে”।’
সাখাওয়াত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই, সারা রাত একা একা সেলাই করছি। এত বড় ইজতেমায়ও হাসপাতালে এমন খারাপ অবস্থা হয় না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মী প্রথম আলোকে জানান, আহত কিশোরেরা বলেছে, তাদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। নির্যাতন করা হয়। পশুর মতো আচরণ করা হয়। এ কারণে তারা এভাবে প্রতিবাদ করেছে।
তবে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক এস এম আনোয়ারুল করিম এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কফ সিরাপ খেয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে।’
ঘাড় কাটা এক কিশোরকে ঢাকায় পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রথমে বলেন, ‘কই, তেমন কিছু তো হয় নাই।’ পরক্ষণেই বলেন, ‘ও আচ্ছা, ওকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে আমাদের এখানেই আছে।’
কিশোর উন্নয়ন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত এক কিশোর ঢাকা জজকোর্টে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে তার ভাই তাকে শ্যাম্পুসহ কিছু জিনিস কিনে দেন। কেন্দ্রের কাছে এসে সেই কিশোর চা খেতে চায়। পুলিশ কেন্দ্রের কাছেই তাকে চা খেতে দেয়। এ সময় সে ব্যাগ থেকে দুই বোতল কাশির সিরাপ বের করে খেয়ে ফেলে। ঘটনাটি দেখে ফেলেন কেন্দ্রে কর্মরত একজন। তিনি কেন্দ্রে এসে বিষয়টি জানান। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তারা জানায়, ওই কিশোরের ভাই তাকে কিছু জিনিস কিনে দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ এরপর ওই কিশোরের ভাইকে ফোনে ডেকে আনান। কফ সিরাপ কেন দেওয়া হয়েছে—এ জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিশোরের ভাইকে অপমান করা হয়। কিশোরটি তাতে কষ্ট পায়। প্রতিক্রিয়া হিসেবে রুমে ফিরে অন্যদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে এ ঘটনা ঘটায়।
জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আইয়ুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) জুলফিকার হায়দারকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরিচালক যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ছেলেরা এখন ভালো আছে।
মহাপরিচালক জানান, কিশোরেরা জানালার কাচ বা টিউবলাইট ভেঙে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। পরে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের হাসপাতালে না রেখে কেন্দ্রে আনা হলো কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। কেন তাদের হাসপাতালে রাখা হয়নি, তা দেখব।’
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কের পদটিও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক এস এম আনোয়ারুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক পদের জন্য প্রস্তাব দেওয়া আছে সরকারের কাছে। একজন কম্পাউন্ডার আছেন।
কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০৯ জন কিশোর ছিল। এদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বা নিরাপদ হেফাজতের জন্য পাঠানো কিশোরের সংখ্যা ১৪। অন্যরা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। বয়স বিবেচনায় তাদের কারাগারে না রেখে এখানে রাখা হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: জেল খানা কি এর চেয়ে ভাল না ?
কি দরকার এমন সংশোধনীর ?

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৭

শাহ আজিজ বলেছেন: সংশোধনীর চাকুরীজীবী পাণ্ডাদের সংশোধনের আশু প্রয়োজন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.