নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোবাইল ফোন বিড়ম্বনা ও আনন্দ

১১ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

দেশের কোটি লোক এখন মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে । এর সুবিধা অনেক আবার বিড়ম্বনাও আছে । তাৎক্ষনিক যোগাযোগের জন্য মোবাইল অনন্য । দ্রুত খবর দেয়া নেয়া, খুশির খবর , দুঃখের খবর , কাজের খবর, ভালো আছির খবর , অসুস্থতার খবর আরও কত কি !
স্ত্রীর ব্যাগ কেটে মোবাইলটি নিয়ে চোররা শেষ কলকারীকে বলল যে এই ফোন যার সে আমাদের হেফাজতে। ভাগ্নে বউ ফরিদপুরে বসে সবাইকে এই খবরটা দিল কাদতে কাদতে , শুধু আমি ও ছেলে মেয়ে বাদে। আমিও একই সময় স্ত্রীকে ফোন করছি কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে, কথা বলছেনা । কিছুক্ষন বাদে ফোন বন্ধ । আমি মেয়েকে বললাম তোমার মায়ের ফোন ছিনতাই বা চুরি হয়েছে । বড় ভায়রা ফোন করে ওদের সাথে কথাও বলেছেন এবং তিনি নিশ্চিত যে ফোনটা চুরি গেছে । এসব কাহিনী আমরা পরে জেনেছি । মেয়ে জিপি তে সাথে সাথে জানাল এবং কিছু তথ্য দিয়ে ফোনটি বন্ধ করাল । আমি জানি চুরি যাওয়া ফোন দিয়ে ক্রাইম হয় যার দায়িত্ব ব্যাবহারকারির উপর বর্তায় ।স্ত্রী ঘরে ফিরে জানল তার ব্যাগে ফোন নেই । বিমর্ষ হয়ে পড়ল সে।
আসুন মুল পর্বে যাই ।
হাজী সাহেবের লেক্সাসে চড়ে ভুলতা যাচ্ছি । মোবাইল অটো স্পিকারে গাড়ির সাথে যুক্ত ।যে যেখানে বসা সেখান থেকেই আলাপ করছে এবং সবাই শুনতে পাচ্ছে । ফোন এলো , ভাই এইটা কোথায়? হাজী সাহেব বললেন এটা মোবাইল ফোনতো তাই এটার কোন জায়গা নেই , তো আপনি কাকে চাইছেন ? বলল না কাউরেই চাইনা শুধু এইটা কোথায় জানতে চাইছিলাম । গাড়িতে বসে আমরা মুখ চেপে হাসি ঠেকাচ্ছি । হাজী সাহেব বললেন আপনি প্রথম যখন জানতে চাইছেন তখন নারায়ণগঞ্জ ক্রসিঙে , এখন মেঘনা ব্রিজে , গাড়িতো চলছে তো আপনারে কোন জায়গার কথা বলব ?
আপনার কি গাড়ি ভাই?
আপনি কোনটা জানতে চান জায়গা না গাড়ির মডেল? জামাই বসে সামনে , সে খেকিয়ে উঠল এই ব্যাটা তর আসল কাম কি , হুদাই প্যাচাল পাড়তাছস , রাখ তর ফোন , মাগনা পাইছস!
এইটা কোথায় এ প্রশ্ন হাজারবার পেয়েছি । বিরক্ত হয়ে শেষে বলতাম এইটা টানবাজার !!
অপরিচিত নাম্বার আর ধরিনা । গভীর রাতে কল আসে আরব দেশ হতে, কামলারা নাম্বার বড় ভুল করে । এখন রাতে অটো বন্ধ থাকে মোবাইল ।
মিটফোর্ডের মর্গের ফোন লিস্টে আমার নাম্বার দিয়ে রেখেছে টি অ্যান্ড টি । নানা ভাইকে খোজে বেশ কজন । গতবছর একজনকে ধরলাম ঠেসে, তিনি পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার । তিনিই আমায় মুল ব্যাপারটা খুলে বললেন । তাকে অনুরোধ করলাম অন্যদের জানিয়ে দিতে । সেই থেকে আর কল আসে না ।
ভাই ওই শাড়িটা আসছে ?
কিসের শাড়ি ভাই?
এইটা জ্যোতি না ?
না ভাই এইটা বেইজ্জতি ।
জ্যোতি নামের শাড়ির দোকান আমার নাম্বার গাহাকদের দিয়েছে । বিরক্ত হয়ে বলতাম হ আইসা গেছে সেই শাড়ি , চলে আসেন ভাই/আপা । একজন সহৃদয় ব্যাক্তি বললেন ওরা ব্যাগে পর্যন্ত আপনার নাম্বার ছাপিয়েছে , আচ্ছা আমি আজ ওদের বলব ওটা কেটে দিতে । সেই থেকে কোন আপা এবং দুলাভাই শাড়ির খোজ করেনা।
২০০১ এ আমি এবং সাইট ইঞ্জিনিয়ার তিং ইটের ভাটায় গেছি ওদের মালের কোয়ালিটি দেখতে । জি পি নতুন প্যাকেজ ছেড়েছে , আমিও নিয়েছি একটা । আলাপ শেষে তিং ওই মালিককে বলল তোমার ফোন নাম্বার দাও , আমরা যোগাযোগ করব। ভদ্রলোক নিজের মোবাইল বের করে কিপ্যাড চাপছেন । তিং আমায় জিজ্ঞাসা করল ও কি করছে ?
আমি জানিনা তিং ।
মালিক ফোনে আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন তার নিজের নাম্বারটা কত? উচ্চারন হচ্ছে আর আমি লিখে নিচ্ছি , তিং বাংলা না বুঝলে কি হবে ও পরিস্থিতি অনুমান করে ফেলেছে । আকর্ণ নিরব হাসি তিঙের । গাড়িতে উঠে বোমা ফাটানো হাসি শুরু হল ।মালিক অন্যের নাম্বার জানে কিন্তু নিজেরটা জানেনা ।
ফোন সেক্স চালুর কথা শুনেছি কিন্তু জানতে পারিনি কিভাবে হয় মানে অপারেনডি মোডাস কেমন। ক মাস আগে সন্ধ্যা আর রাতে দুদফা দুই মহিলা ফোনে জানতে চাইল আমি কে ? আমি বললাম আপনারা কাকে খুজছেন ? ওরা একটা নাম বলল , আমি বললাম না রং নাম্বার । ভাই আপনার নাম কি? কি বিপদ , দেখুন আমার সময় নেই আপনার সাথে প্যাচাল পাড়ার । কেটে দিলাম । রাতে একই ধরনের ফোন । কড়া ভাবে জবাব দিলে নিজেই কেটে দিল । এরাই শিকার সন্ধানী ।
ডাক্তারের চেম্বারে সিরিয়াল দিতে চায় । বলি আমি ডাক্তার নই , ঠিক নাম্বারে ডায়াল করুন । এক মহিলা কেদে কেটে বললেন তার সিরিয়ালটা না নিলেই নয় , অবস্থা গুরুতর । তাকে বোঝাতে পারলাম যে আমি ডাক্তার নই আর যে আপনাকে নাম্বার দিয়েছে সেটা ভুল।
বিরক্ত হয়ে এক নাছোড়বান্দাকে সিরিয়াল দিলাম রাত ২ টায় । সে বলল হায় হায় করছেন কি? বললাম রোগীর সংখ্যা বেশি তো তাই ।
তিং এর মোবাইলে ফোন এলো যখন আমরা সাইট ঘুরতে ব্যাস্ত । ও আমায় এগিয়ে দিয়ে বলল লোকাল, ধরো। ধরলাম , একটা লোক কোন প্যাচাল না পেড়েই বলল ওখানে আম্বিয়ার মা বসা আছে তাকে দেন ।আমি বললাম ভাই আম্বিয়ার মা এখন নেই তবে আম্বিয়ার আব্বা আছে , সে কঠিন গলায় বলল দেন কথা বলি । আমি তিং কে ইশারায় বল্লাম কথা বল । তিং চীনা ভাষা ছাড়া আর কিছু জানেনা । সে বলল ওয়ে নি হাও---। এরপর তিং মুখে হাসি নিয়ে মিনিটখানেক কিছু শুনে ফোনটা এগিয়ে দিল আমার দিকে , ফোনে তখন গালাগালের শেষ পর্যায় , শেষ গালিটা ছিল ---হারামির বাচ্চা---। আসলে ওই লোকটাই আম্বিয়ার বাবা , কিন্তু আমরা তো ফোন করিনি , করেছে সে তাই আমি আম্বিয়ার চৈনিক বাবার সাথে সতীনের মোলাকাত করিয়ে দিলাম ।
অজানা এক ব্যাক্তি আমার ফোন রিসিভ করতেই গালাগালের মেশিনগান চালু করে দিল, আমি চুপচাপ শুনছি , সে ভাবল আমি হয়ত কেটে দিয়েছি তাই গাল পেড়ে জিজ্ঞাসা করল ওই তুই লাইনে আছস? আমি বললাম জী , আপনি একটু পানি খেয়ে জিরিয়ে নিন তারপর আবার শুরু করুন । এবার সে এমন ক্ষেপে গেল যে আমি মোবাইলটা দূরে রেখে শুনছি। শেষ হলে আমি বললাম এতো গালাগালি দিয়ে আপনি খুশিতো , বাসায় গিয়ে আপনার জননীকে এই গালগুলো আবার দেবেন । পুনরায় মেশিঙ্গান চালু হবার আগেই আমি লাইন কেটে দিলাম ।
এরকম অসংখ্য অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে গত ১৩ বছরে।
দু তিন বছর আগে স্ত্রীর ফোনে কল এলো অজানা নাম্বার থেকে । স্ত্রী ধরলেন জিজ্ঞাসা করল আপু আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি ? বেশ অবাক প্রস্তাব। স্পিকার চালু করে আমরা দুজন তার দুঃখের কাহিনী শুনতে লাগলাম । মেয়ে নয় , মহিলা । তার বিপর্যস্ত জীবন কাহিনী কেদে কেদে বলতে লাগল । তার কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিলো । ২০/২৫ মিনিট সে চালিয়ে গেল অনর্গল । মহিলা নেশাসক্ত এবং ডোজ নেওয়ার পর তার দুঃখ শেয়ার করতে সে আন্দাজে এই নাম্বার ডায়াল করেছে । আবারো ফোন করবে এই প্রতিশ্রুতিতে সে ফোন রাখল ।
এরকম কত মেয়ে বা মহিলা নেশা করে অপরকে জানাতে উদগ্রীব হয় তার জীবন কাহিনী, কিছু সত্যি আর বাকিটা কল্পিত, বানানো ।
হাইটেকের যুগে আমরা যন্ত্র নিয়ে বিব্রত এবং আনন্দ দুটোই ভাগ করে নিচ্ছি । ধন্যবাদ প্রযুক্তি ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:২৯

এহসান সাবির বলেছেন: বাসায় গিয়ে আপনার জননীকে এই গালগুলো আবার দেবেন


উপযুক্ত জবাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.