নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোবেল পুরস্কারের উদ্দেশ্য কি বিধ্বস্ত ? আপনি কি ভাবছেন??

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০০

নোবেল পুরস্কারের জন্য সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সাহিত্য ও শান্তি। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার তেমন সমালোচনা সৃষ্টি না করলেও শান্তিতে তা বরাবরই নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর সমালোচনা হয় তার নিজ দেশেই। দেশের অন্য অর্থনীতিবিদেরা ড. ইউনূসকে সরাসরি ‘সুদখোর’ আখ্যা দিয়ে তার সমালোনায় মুখর হয়ে ওঠেন। নোবেল কমিটি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে। এবছর শান্তিতে পুরস্কার পেয়েছেন নোবেলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ পাকিস্তানের শিক্ষা অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই ও ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী।

এবারও বিতর্ক জন্ম নিল ‘শান্তির’ পুরস্কার নিয়ে এবং সেটা কৈলাশের নিজ দেশেই। তবে এবারের বিতর্কটি খুবই যুক্তিসঙ্গত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের রোবারের সংখ্যায় সম্পদকীয়তে এ সমালোচনার সূচনা করে। এতে বলা হয়, নোবেল কমিটি আলফ্রেড নোবেলের শর্ত লঙ্ঘন করে শান্তিতে নোবেল দিয়ে অনেক ব্যক্তিকে বিখ্যাত করে তুলছে।

আনন্দবাজারের এ সম্পাদকীয় বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। তবে মূল সম্পাদকীয়র ভাষা রীতি পরিবর্তন করে চলিত রূপ করা হয়েছে।

শান্তি ও ভ্রান্তি
নোবেল সাহেব পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাবিদ্যা, সাহিত্যের সঙ্গে হঠাৎ ‘শান্তি’কে পুরস্কারযোগ্য ক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করলেন কেন, তা ধন্দমূলক। একটি শাস্ত্রে কৃতবিদ্য হওয়া আর জগতে শান্তি প্রসার করার মধ্যে এতটাই পার্থক্য, এই দুটিকে একই বর্গে গণ্য করা প্রায় অসম্ভব। বিদ্যাচর্চা বা জ্ঞানভিত্তিক কর্মের জন্য যে পুরস্কার, তা শান্তিপ্রয়াসের জন্য দেয়া হবে কেন? এর জন্য পৃথক, এমন কি বৃহত্তর পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতেই পারে। কিন্তু সকল প্রকার নৈপুণ্যকেই পাশাপাশি বসালে, মারাদোনাও আক্ষেপ করে বলতে পারেন, আমি নোবেল পেলাম না কেন?

কিছু নিন্দুক বলেন, নোবেল ডিনামাইট ও ব্যালিস্টাইট আবিষ্কার করেছিলেন, উভয়েই হিংসার আয়ুধ (অস্ত্র) হিসেবে ব্যবহৃত, তাই তিনি শান্তিকে তোল্লাই দিয়ে দাঁড়িপাল্লা সমান করতে চেয়েছিলেন। নোবেলের সম্ভাব্য অপরাধবোধের কারণে এতগুলো লোক বিখ্যাত হয়া যাচ্ছেন কি না সেই প্রকাণ্ড প্রহসনের ধার না ধেরে তার উইলে চোখ রাখা যেতে পারে। তিনি স্পষ্ট বলছেন, শান্তি পুরস্কার পাবেন তিনি, যিনি অসামান্য কাজ করবেন বিভিন্ন জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা বা সক্রিয় সেনাবাহিনী বিলোপ বা হ্রাস বা শান্তি সম্মেলন সংগঠনের ক্ষেত্রে। ভাবলেই বুঝা যাবে, রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া বা অন্তত জনআন্দোলনের নেতা/নেত্রী ছাড়া কারও পক্ষে এই কাজগুলো করা প্রায় অসম্ভব। হয়তো সেই জটিলতা কাটাতে নোবেল কমিটি এখন শিক্ষাপ্রসারের জন্যও নোবেল দিচ্ছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও।

স্বচ্ছ ভারতের সদিচ্ছার জন্য কাল কেউ এই পুরস্কার পেলেও বিস্ময়ের কিছু নেই। যা ভালো কাজ তা-ই শান্তি বর্ষণ করে এই তত্ত্ব ওড়াবে কে? ভাবলে বিস্ময় ঘটে, নোবেলবাবুর আরোপিত শর্তগুলো দিব্য লঙ্ঘন করে নোবেল কমিটি পুরস্কার দিয়ে যাচ্ছে!

নোবেল শান্তি পুরস্কার এমন নারীকে দেয়া হয়েছে, যিনি কিনা কোনো এক সময়ে বলেছেন, এইডস অসুখটি কৃষ্ণাঙ্গদের বিলোপ করার জন্য শ্বেতাঙ্গদের আবিষ্কার। আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি ওবামাকে এই পুরস্কার দেয়ার পর প্রাপক নিজেই অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তখন তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাত্র নয় মাস অতিক্রান্ত, কাজ ভালো করে শুরুই হয়নি। বিস্ময় বাড়লো, যখন তারিখ হিসাব করে দেখা গেল, সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকায় ওবামা ঢুকে পড়েছেন তার শপথ গ্রহণের ১২ দিনের মধ্যেই! পুরস্কারটির মান্যতা বিষয়ে ভাবতে ভ্রূ প্রবলতর কুঞ্চন পায়, যখন দেখা যায় ওবামা পেলেও, মহাত্মা গান্ধী এই পুরস্কার পাননি! তবে মনোনয়নের তালিকায় তিনি ছিলেন- ১৯৩৭, ’৩৮, ’৩৯, ’৪৭ ও ’৪৮ সালে। ২০০৬-এ কমিটির সেক্রেটারি বলেন, পুরস্কারটির ১০৬ বছরের ইতিহাসে গান্ধীকে তা না দেয়াই হলো সর্বাধিক বিচ্যুতি। গান্ধীর নোবেল না হলেও চলবে, কিন্তু নোবেল কমিটির গান্ধীকে না পেলে চলবে কি না তা-ই প্রশ্ন।

স্বীকারোক্তিটি প্রশংসার্হ এবং পুরস্কারটির স্বভাবে নিহিত অবিন্যাসের দ্যোতক। কমিটির নির্বাচন দেখে কখনো এ-ও সন্দেহ ঘটে, হয়তো সদস্যরা ভাবেন, পুরস্কারটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। বুঝতে হবে, কমিটির কাজ শান্তি-উদ্গাতাকে বেছে নেয়া মাত্র, পৃথিবীকে সুব্যবস্থিত করার দায় কমিটির স্কন্ধে অর্পিত হয়নি। কিন্তু প্রায়ই, যোগ্য ব্যক্তির বদলে, পুরস্কারটি তাকে/তাদের দেয়া হয়, যাদের দিলে তদানীন্তন রাজনৈতিক অস্থিরতার তীব্রতম বিরোধিতা প্রকাশ করা যাবে। হয়তো প্রাপক কে, তার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়, প্রাপক যার দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা বিশ্বময় পৌঁছে দেয়া। কাজ মহৎ‌, কিন্তু পদ্ধতিটি অসঙ্গত। কারণ তাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে কমিটিকেই বরং শান্তি পুরস্কারটি বারবার দেয়া ভালো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.