নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাইয়ুম চৌধুরী বিলীন হলেন নিঃসীম অজানায়।।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৪


চারুকলাতে প্রথম বর্ষেই আমাদের ডিজাইন অ্যান্ড কম্পোজিশন ক্লাস নিতে এলেন কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক কাইয়ুম চৌধুরী। খুব গম্ভীর এবং আদেশ করতে অভ্যস্ত দীর্ঘকায় গড়নের লম্বা চুলের কাইয়ুম স্যার
ফুলহাতা শার্ট ইন করে বেশ কেতাদুরস্ত হয়ে এলেন। তখন এটি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই এটি ঢাবির অংশ হিসাবে ইন্সটিটিউট হয়ে গেল।
প্রথমেই তিনি কম্পোজিশন কি তা নিয়ে একটা লেকচার দিলেন। কটা বিস্কিট আর একটা হাফ প্লেটের সমন্বয়ে তিনি চমৎকারভাবে কম্পোজিশনের তারুন্যভরা বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন। অন্তত আমি খুবই উপকৃত হয়েছিলাম তার এই সরাসরি ডিসপ্লেতে। ক্যানভাসের কতটুকু ছাড় দিয়ে বিষয়বস্তুর সংযোজন হবে আর ভাস্কর্য বা পটারির উচ্চতা হিসেবে স্ট্যান্ড কতখানি উচু নিচু হয়ে তার নান্দনিক উপস্থাপনার রীতিনীতি আজাবধি এবং আজীবন সঙ্গী হয়ে রইল।
তিনি একটি পুরাতন লাল গাড়িতে আসতেন। ও সময় হাতে গোনা কজন শিল্পী গাড়িতে চড়তেন।যাহোক শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী তখন সন্ধানী পত্রিকার শিল্প সম্পাদক ছিলেন এবং অজস্র ইলাসট্রেশন , প্রচ্ছদ, লোগো ডিজাইন করতেন।ওই ক্লাসটুকুই আমাদের আপাত সম্পর্কের ছেদ এনে দিল। ওই সময় তার চলাচলের পথে কেউ থাকলে সটকে পড়তাম তবে ক্লাস নেবার পর দাড়িয়ে সালাম দিতাম। ওই সময়টায় লক্ষ্য করেছি কাইয়ুম চৌধুরী হাসতে জানতেন না।
৮১ সালে ছাত্রদলের পেটোয়া বাহিনীর হাতে আমরা যারা আওয়ামি ও প্রগতিশীল দলের সমর্থক ছিলাম ঘুমন্ত অবস্থায় রক্তাক্ত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে চিরতরে সাসপেন্ড ব্যাবস্থার সিদ্ধান্ত নিলে এক বিশাল ছাত্র শিক্ষকদের সভায় আমি বললাম আমাদের জীবন এখন ঝুকির মধ্যে পড়বে। ওরা শর্ত সাপেক্ষে মুচলেকা দিয়ে ফেরত আসুক । কাইয়ুম স্যার এক গর্জন ভরা কণ্ঠে যা বললেন তা হল শিল্পীরা এখন তুলি ছেড়ে চাকু , পিস্তল হাতে নেয়ায় আমি স্তম্ভিত। আর একবার যদি দেখি তবে সোজা আইনের হাতে তুলে দেবো। এ লজ্জার অংশীদার হতে আসিনি-------।
৮২তে চীনা বৃত্তির ইন্টারভিউতে তিনিও সদস্য ছিলেন এবং সবার অকুণ্ঠ সমর্থনে আমার যাত্রা সুগম হয়।
৮৯এ বাংলাদেশের শিল্পীদের চিত্রকলা প্রদর্শনী হল বেইজিঙে । আগেই ঠিক করা ছিল আমার ভিডিওতে গোটা অনুষ্ঠান ধারন হবে। পৌঁছে দেখি আর্ট গ্যালারির চত্বরে সিড়ির ওপর দাড়িয়ে রাজ্জাক স্যার ও কাইয়ুম স্যার। মন্ত্রী কিছু বলছেন এবং সবাই সিঁড়িতে দাড়িয়ে। সামনে ছোটখাটো সমাবেশ। ক্যামেরার ভিউ ফাইনডারে দেখলাম রাজ্জাক স্যার কাইয়ুম স্যারকে আমার উপস্থিতি দেখাচ্ছেন আঙ্গুল নির্দেশ করে। বা হাতে সায় দিলাম।পুরো গ্যালারি কভার করলাম মন্ত্রীসহ স্যারদের। পরে ভিডিও ক্যাসেটটি কাইয়ুম স্যারকে দিয়ে দিলাম। পরদিন রাতে আমার অ্যাপার্টমেনটে রাতের খাবার । স্যাররা ঘুরে ফিরে তার ছাত্রর বাসস্থান দেখলেন এবং আনন্দ প্রকাশ করলেন । আমরা দীর্ঘ সময় কাটালাম গল্প করে। রাতে পৌঁছে দিলাম হোটেলে।
দেশে ফেরার পরে বেঙ্গলই ছিল আমাদের দেখাশোনার একমাত্র জায়গা। তার ৮০ তম জন্মদিন পালনে আমিও উপস্থিত ছিলাম । ৭৬ সালে যখন আর্ট কলেজে ভর্তি হই তখন কাইয়ুম স্যার যৌবন আকড়ে আছেন ভালো করেই। দেখতে দেখতে বয়স ৮০তে পড়ল!!
বাংলাদেশের যেকজন শিল্পী তাদের স্বকীয়তা নিয়ে দেদীপ্যমান তাদের মধ্যে একজন কাইয়ুম প্রতাপের সাথে বিচরন করছেন।তার মধ্যে বাংলার গাছপালা , পাখি, নদী , রমণী ও নিঝুম গ্রামের এক পরিযায়ী মননশীলতা সক্রিয় ছিল। দেশজ মোটিফ তুলে আনতে তিনি অকৃপন ছিলেন।
কিছুদিন আগে একান্তে বসে তার শরীরের খোজ নিলাম । বললেন তিনি ভালই আছেন । তার বাইপাসের বয়স ২৫ বছরের বেশী হয়ে গেছে । শুকিয়ে গেছেন তবু কুজো হননি, বেশ সোজা হয়ে হাঁটেন তবে টলে যান মাঝে মধ্যে। ডায়াবেটিস নেই বলে শংকা কম। সাধারনত ২০ বছরের একটা টাইম লিমিট দেন সার্জনরা । ওটা সরাসরি কি বলা যায় কিন্তু স্মার্ট কাইয়ুম স্যার আমার অভিসন্ধি বুঝে রহস্যময় হাসি নিয়ে বললেন “বোনাস জীবন কাটাচ্ছি বুঝেছ, তবে জেনো আমি অনেকের থেকে ভালো আছি”।
নিতুন কুণ্ডুর মহাপ্রয়ানে আমিও চারুকলার ছোট্ট কামরাঙ্গা গাছের নিচে দাড়িয়ে একাকী। ক্রমে হাদি ভাই, আরও একজন বর্ষীয়ান শিল্পী, সৈয়দ হক , কাইয়ুম চৌধুরী দাঁড়ালেন। সবাই স্মৃতিচারণ করছিলেন তাদের প্রিয় বন্ধুর জন্য। রাতে এই লেখাটি লিখলাম ঠিক এভাবেইঃ
১৬,০৯,২০০৬
এইসব অসাধারন প্রস্থান
আমাদের এনে দেয় সৌভাগ্য
যুগবন্ধ্যা পুনর্মিলনের আনন্দ
দুঃখকে হৃদয়ের অপর কোঠরে
করে চালান ক্ষনিকের তরে।
শব শবাধারে ফুল্লেল ফুলে
কাছের মানুষেরা ক্ষনিক দাড়িয়ে
আত্মার অনুগামীরা শোকাহত আরো
ঝুকে দেখে মুদিত চোখ পাতায় সাঁটা
নাকে গোজা তুলো, মুখের কোনে
ঈষৎ কালচে রক্তধারা- বয়েছিল
শেষক্ষনে, মোছেনি কেউ গেছে শুকিয়ে।
তারা বিড়বিড় করে আর বলে
দাড়াও নিতুন, আমরাও লাইনে
আসছি আসছি যখন আসবে ডাক
আড্ডাটা ভেঙ্গে দিয়ে গেলে?
জমবে আবারো – আমরা আসলে,
লাইনে দাড়িয়ে সৈয়দ হক,কাইয়ুম
আরও অনেক তারকা অপেক্ষার প্রহরে
দূর আকাশে নতুন তারা হওয়ার তাড়নায়
সেখানে বর্শা হাতে আকাশ প্রহরী, ঠায়
দাড়িয়ে অনন্তকাল , নব তারাদের বরনে
(শাহ্‌ আজিজ ২০০৬, অপ্রকাশিত)
----------------------
আমি পুরো ব্যাপারটি এখনো জানিনে তবে টি ভির দৃশ্যে মনে হচ্ছে একটা ম্যাসিভ অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন কাইয়ুম স্যার। তিনি কি রাতের খাবার,ঔষধ খেয়েছিলেন? মনে হয়না।এই বয়েসে ত্রুটিপূর্ণ শরীরে রাতের খাবার ৮টার মধ্যেই খেয়ে নেয়া উচিত । তেমনি নজর দেয়া উচিত বিশ্রামে। কিছু একটা হয়েছিল বা ভুল হয়েছিল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের লোভে রাত জাগার কারনে।
মৃত্যুই মানুষের জীবন চক্রের শেষ পরিনতি।
আত্মা আছে কি নেই কেউ দেখাতে পারেনি তাই শান্তি কামনা বা ভালো থাকুক এই শব্দগুলো কোথায় ব্যাবহার করব! বরং কাইয়ুমের অসংখ্য শিল্প সম্ভার সময়ের সাক্ষী হয়ে থাক, তার স্মৃতি বিচরন করে সজ্জনরা সুখ ও দুঃখের যুগপৎ সঙ্গী হোক।
আমার কবিতায় প্রতীকী যে আশা তা কেন সত্যি হয়ে গেল তা আমিও জানিনে।
ওরা কি সত্যি সত্যিই আড্ডায় মেতেছেন ?????




কাইয়ুম চৌধুরী , আব্দুর রাজ্জাক , মাঝে আমি আমার স্ত্রী , দুদিকে চারুকলার দুজন ছাত্র - আমার বেইজিং অ্যাপার্টমেনটে ।




আমার কন্যার সাথে । ছবি থেকে ছবি ।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: অসম্ভব ভাল লাগল স্মৃতিচারণ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪১

জানা বলেছেন:
চমৎকার স্মৃতিচারণ আজিজ ভাই।

শেষ পর্যন্ত আসলে সবটাই কেবল স্মৃ্তি হয়েই বেঁচে থাকে রয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্যে। সম্ভবত গভীর দুঃখটিও ফিকে হতে থাকে এক সময় কিন্তু মনের কোঠায় স্মৃতির দাগ গভীর হতে থাকে। একটা 'কি যেন নেই' মানুষের জন্যে খুব দামী অনুভব।

ভাল থাকবেন, আনন্দে থাকবেন আজিজ ভাই। শরীরটাকে নিয়মের প্রশ্রয়ে রেখে দরকারী জল-হাওয়ায় প্রতিদিন পুষে চলাটাই উচিত হবে।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যাঁ, তাই । ভালো থাকতে হবে , সুস্থ থাকতে হবে।

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৩

দাম বলেছেন: ''ওই সময়টায় লক্ষ্য করেছি কাইয়ুম চৌধুরী হাসতে জানতেন না।''

কি বলেন ভাইয়া!! ওনার মত চমৎকার মুচকি হাসি হাসতে আমি অনেক কম লোককেই দেখেছি।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৬

শাহ আজিজ বলেছেন: ৭৬ /৭৭ সালে কাইয়ুম স্যার ভীষণ রাগি ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে বোধকরি ওপেন হার্টের পড়ে তার আচরন পালটে যায়। শেষ জীবনে অমায়িক হয়েছিলেন ভীষণ ।

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

দাম বলেছেন: ৭৬/৭৭ সালে আমার বাপ-মার বিয়েই হয় নাই।


কিন্তু আমি আমার ২৮ বছরের জীবনে কখন তাকে রাগতে দেখি নি।

আপনাকে ধন্যবাদ, চমৎকার লেখাটির জন্য।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫

শাহ আজিজ বলেছেন: দুজন শিল্পী খুব স্টাইলিস্ট ছিলেন ১ আমিনুল ইসলাম ২ কাইয়ুম চৌধুরী। কাইয়ুম স্যার হয়ত বন্ধু মহলে অমায়িক ছিলেন কিন্তু কলেজে নয়। একদিন কজন পিওন কে ধমকাচ্ছিলেন , পিওনদের লুঙ্গির গিট খলার মতো অবস্থা। আমাদের ক্লাসেও গম্ভীর হয়ে নির্দেশ দিতেন, খুব রাগি মনে হতো। আবার বেইজিঙে পেলাম যখন তখন ভীষণ অমায়িক । আবার আমিনুল ইসলাম খুব সজ্জন ধরনের ছিলেন । কারো সাথে জ্বরে কথা বলতেন না। সবচে নিরব নিথর ছিলেন শফিউদ্দিন আর কিবরিয়া স্যার । আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে যারা আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক নন তারাই আমায় পছন্দ করতেন খোজ নিতেন ।
তোমার বাবা মা নিশ্চয় আমার বয়সী হবেন??

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৭

খেলাঘর বলেছেন:


জন্মিলে মরিতে হয় ভুবনে

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭

দাম বলেছেন: তোমার বাবা মা নিশ্চয় আমার বয়সী হবেন??


হুম! তাইতো মনে হচ্ছে। আপনাকে তো ভইয়া না চাচা ডাকতে হবে।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২০

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যাঁ =p~ ১৬ই ডিসেম্বর দেখা হবে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.