নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে স্বল্পালোকিত আকাশে। এটাই অভ্যাস ।
আবার ঘুমিয়ে যাই ইচ্ছে হলে। আমার মনে হল খুব চাপা ক্ষীণ কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ। বিড়াল নয়তো ! আবারো শুনলাম এবং উঠে দরজা খুলে গেটের দিকে এগুলাম। গেটের কাঠে লাগোয়া একটি বস্তা আর তা থেকে ক্ষীণ চিৎকার । গেট খুলে সাবধানে বস্তার মুখ খুললাম, ভেতরে সদ্যজাত একটি শিশু ।
নাইট গার্ড ডিউটি শেষ করে যাবার পথে থেমেছে। ওইই দুহাতে বাচ্চাটিকে বের করল। নাভির ব্যান্ডেজ উল্টে পাল্টে বলল নাহ নাভি ঠিক করে বাধা আছে। ছেলে সন্তান । গার্ডের কোলে চুপ হয়ে আছে ।
আমরা মুখোমুখি তাকিয়ে, কি হবে এখন??
আমি বললাম আগে নিয়েতো যাই তারপর যা হবার হবে।
গার্ড বলল মেয়ে হলে আমি নিতাম।
আমি কাঁথা পেঁচানো শিশুটিকে বুকের মাঝে চেপে ধরে ভেতরে গেলাম। আমার বিছানায় শুইয়ে দিতেই আবার চিৎকার। কোলে তুলে নিতেই চুপ।
বড়ভাবী ভেতর দরজায় দাড়িয়ে অষ্টমাচার্য্য দেখছেন স্থির চোখে।
কাছে এলেন , দেখলেন এবং বললেন বড় বাজারের মোড়ের ওষুধের দোকানে বেবি ফরমুলা আছে । সাথে ফিডার , তুলো , গজ , ডেটল নিয়ে এসো ।
স্বস্তি পেলাম বড্ড ।
মেঝভাবীও একই কায়দায় দেখে ছ্যা ছ্যা করে বললেন বাপ মার ঠিক নেই আর তুমি এই জারজ রাস্তা থেকে তুলে এনেছ নিপুন?
সারা বাড়ি জেগে গেছে। বড়ভাবী ছাড়া কেউ ওকে ছোয়নি । মা এলেন ,বাবা লাঠিতে ভর দিয়ে। মা বাবা দুজনই বললেন তাড়াতাড়ি খাবার ব্যাবস্থা করো , ডিহাইড্রেশন হবার আগেই। একটু সুস্থ হলেই শিশু সদনে দিয়ে দেব।
বাকি সবাই সুড় সুড় করে বেরিয়ে গেল কামরা থেকে।
ভাবী বললেন জলদি যাও!
আমি যেতে যেতে দেখলাম ভাবী ব্লাউজ উঠিয়ে ওর মুখে বোটা গুজে দিলেন। তারও ছোট বাচ্চা তবে দুধ ছেড়েছে সম্প্রতি । এক আধটু থাকতেও পারে।
ফিরে দেখি শিশুটি বেদম চিৎকার করছে । তার শরীর মোছানো , মাথা ধোয়ার কাজ চলছে। বাবা কাছে চেয়ারে বসে সব খেয়াল করছেন। ভাবী দুধ বানিয়ে মুখে ধরতেই চো চো করে দুধ টানছে শিশুটি , আহা বেচারা না জানি কতক্ষন না খেয়ে ছিল।
বাড়িতে দুটি দল এখন ।
বাচ্চার পক্ষে চার আর বাকিরা অপজিশনে ।মেঝভাবী ওদিকের রুমে ভাষণ দিচ্ছেন তিনি বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবেন এখুনি ।
ভাইয়েরা উঠলেন এবং খোজ খবর নিয়ে বললেন দেখ, আমাদের কারোর ছেলে সন্তান দরকার কিনা, দিয়ে দে , বাড়িতে এখন হেফাজতের আন্দোলন চলছে, দেখি নাস্তা পাই কিনা আজ।
বন্ধুর বাসায় চলে এলাম । ওরা অবাক আমার সঙ্গে এক নবজাতককে দেখে। ওর ছবি আর ঘটনা ফেসবুকে চাউর হলে ভিড় নামল বন্ধুর বাসায়। বিব্রতকর অবস্থায় আমি এবং পরিবারটি উভয়েই। আগত সবাই যে যা পারল হাতে গুজে দিল। রাতেই আরেক বন্ধু তার একাকী জীবনের বিশাল বাড়িতে নিয়ে গেল আমাদের দুজনকে । আমাদের রাজকীয় আবাস । দুজন ফেসবুক ব্লগার তরুণী রাতে রয়ে গেল শিশু ধরিত্রীর খাওয়া ঘুম তদারকির জন্য। আমি এতটাই ক্লান্ত যে ঘুমিয়ে পড়লাম সাথে সাথেই। বাসার সাথে যোগাযোগ নেই যদিওবা ওরা ফেসবুকে খবর পাচ্ছে সাথে সাথেই। আমার আর ধরিত্রীর পলাতক জীবন শুরু হল। লাখ টাকার উপর উঠে গেল চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে। অচিরেই ওরা আমাদের ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দিল । টুপি-দাড়িওয়ালা কজন সন্দেহভাজন আশপাশের চায়ের দোকানে খোজ খবর করছিল আমাদের।
আমি কোলকাতার একটি হোটেলে উঠলাম যার পরিচিতি ঢাকা থেকে দেয়া । ডাক্তার দেখালাম । সব ঠিক আছে ।
ট্রেনে কেরালায় থিরুভানানথাপুরাম যাচ্ছি । কিছুই চিনিনা , সম্বল বাঙ্গালী হোটেলগুলো । ওরা খুব সহায়তা করছে। ওটাই আমার জন্য নিরাপদ জায়গা , ওরাতো তাই বলল কোলকাতায় । কেরালায় বেশ কিছু শিশু সদন আছে কিন্তু আমি ধরিত্রীকে ত্যাগ করবনা , কক্ষনো না। উল্টো দিকের বাথে এক বৃদ্ধা খুব আদরের সাথে ধরিত্রীকে কোলে নিয়ে সব খোজ নিতে গিয়ে যেই জানলেন এটি পরিত্যাক্ত শিশু অমনি আমার কোলে চালান করে সঙ্গী মহিলাকে বললেন দ্রুত তার হাত দুটো গঙ্গাজল দিয়ে মুছে দিতে । তার শাড়িতেও ছেটালেন কিছু । ভয়ে রইলাম যে আমাদের অন্য কোথাও পাঠিয়ে না দেয় । ছোট্ট ধরিত্রীকে বুকের কাছে নিয়ে কাত হয়ে ঘুমালাম ।
থিরুভানানথাপুরাম নামলাম এবং সহজেই রামবাবুকে পেলাম তার হোটেলে । রামবাবু পরদিন আমায় বেশ কিছু আশ্রমের ঠিকানা দিলেন বিভিন্ন শহর সংলগ্ন গ্রামগুলিতে । আমি সিদ্ধান্তে এলাম বেঙ্গালুরু যাব , ধরিত্রীকে ডে কেয়ারে দিয়ে আমি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরি করব। আবার ভাবলাম এসেছি যখন তখন দেখেই যাইনা ।
বেরিয়ে পড়লাম উত্তরের শহরগুলোতে। ধরিত্রীকে কোলে নিয়েই অ্যাডভেঞ্চার । ও চুপ করে ঘুমিয়েই থাকে । একা শুয়ে একটা ছোট খেলনা নিয়ে হাত পা নাড়ে।একটা বেবি পাউচে আমার বুকের সাথে সেঁটে থাকে সারাদিন ক্লান্তিহীন । নির্মল হাসি হাসতে শিখেছে ধরিত্রী । একটা আশ্রম পেলাম যাতে শিশুকে ১৮ বছর পর্যন্ত রাখা যায় । কিন্তু ডি এন এ টেস্টের কথা শুনে পিছিয়ে গেলাম। বাকি সবগুলো দত্তক নেবে আর কখনো ফিরে পাবার সুযোগ নেই । আমি ধরিত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম ওকে আসলে কোথাও দেয়া যাবেনা , কাছেই রাখব সারাটা জীবন।
একটি গ্রাম এলাকায় বিশাল মন্দির এবং ধর্মশালা। প্রতিদিন পাচ হাজার লোকের খাবার হয় এখানে । এখানেই উঠলাম । দোতালার বারান্দায় প্রচুর মানুষ শুয়ে বিশ্রাম করছে । আমরা দুজন জায়গা করে নিলাম । তীর্থে আসা এসব পূজারী দুএক দিন থেকে চলে যায় দল বেধে । গনেশ দেবতার মন্দির। সেবকরা শিশু দেখে কম্বল এনে দিল ভালবেসে।
মাছ ডালের ঘণ্ট দিয়ে ভাত খেলাম, কিযে ভাল লাগলো ।
একজন বৃদ্ধ মত পরিপাটি এবং দায়িত্বশীল লোক এসে আমার কাছ থেকে জানলেন পুরো ঘটনা । মনে হচ্ছে গেটের আলাপ তিনি জেনে গেছেন আরও জেনেছেন মুসলিম লোকরা কি আশ্রয় পেতে পারে?
তিনি মাথা নাড়লেন এবং বললেন দেবতার দরজায় একবার এসেছ একটা হিল্লে হবে। আমি ঘুরে ঘুরে আগান বাগান সাথে অনেক ঘর পেলাম যাতে তীর্থযাত্রীরা আশ্রয় নিয়েছে। এতো বড় গনেশ মন্দির আর তার যশ খ্যাতি শহরে বসে বোঝার উপায় নেই। পুরোহিত বলেছিলেন আপনি মুসলিম তাতে কি আসে যায়? ভগবানের এই জায়গায় মানুষের একটাই ধর্ম , মনুষ্যত্ব ।
সন্ধ্যারাতে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ল মহারাজা এসেছে বলে। এই গোটা মন্দির আর তাবৎ কাজের তিনিই দাতা । তার আয় থেকে চলে নিত্য দিনের খরচ। শুভ্র কাপড়ে কোলাপুরি চপ্পলে লাঠি হাতে ধীরে ধীরে সবার খোজ খবর নিচ্ছেন। সবাই তাকে সেজদা করছে।
আমার সামনে একটা হাতলওয়ালা দামি কাঠের চেয়ার রেখে গেল কেউ। তিনি আমার সামনে দাঁড়ালে আমি জোড় হাতে কুর্নিশ করলাম। তিনি বসলেন এবং আমাকে বসতে বললেন । তার ইংরেজি উচ্চারন অসাধারন । মনে হল তিনি সব জানেন। তার খুব ইচ্ছে এসব নিষ্পাপ শিশুদের নিয়ে আশ্রম গড়ার । ‘আজ একজনকে পেলাম দূর থেকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে নিয়ে আমার মন্দিরে আশ্রয়প্রার্থী , আমি ভাবলাম এমন লোকই আমার প্রয়োজন’ । মন্দিরের পিছনে শত একর জমি । ওরা তোমার আর শিশু ধরিত্রীর জন্য একটি ঘরে স্থায়ী আয়োজন করে দেবে। আমার পতিত শিশু প্রকল্পের প্রধান হয়ে তুমি কাজ শুরু করো । আমার দুচোখ ফেটে পানি এলো।
কিন্তু প্রথম থেকেই আমি মহারাজ ভিলু পিল্লাইয়ের মুখখানি দেখতে পাচ্ছিনা , কেমন জানি একটা ধোয়াটে ভাব। এর মধ্যেই কোল বদল হয়ে ধরিত্রী কোথায় গেল , আমি চঞ্চল হয়ে উঠলাম ।
মহারাজ বললেন উদ্বিগ্ন হয়োনা ও দেবতার পদতলে শুয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছে । কিন্তু আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ছুটতে লাগলাম নিচতলায় দেবসভায় । কিছু একটা পায়ে বেধে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড আঘাত পেলাম এবং আবিস্কার করলাম আমি ঢাকায় আমার বিছানায় শুয়ে । দ্রুত পাশ ফিরে ধরিত্রীকে খুজতে লাগলাম মেঝেতে , খাটের নিচে । নেই নেই কোথাও নেই । জানালা দিয়ে ভোরের সাদা আকাশ । গেটে এলাম প্রায় দৌড়ে , নাহ । ধীর পায়ে ঘরের দিকে ফিরতে ফিরতে ভাবলাম আহা! স্বপ্নটা যদি সত্যি হত। ধরিত্রীর ডাগর চোখ আর মৃদু হাসি আমায় টানছে অন্য কোথাও , কোনখানে।
© শাহ আজিজ
গল্প কবিতায় প্রথম প্রকাশ ২০১৬
১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০৮
শাহ আজিজ বলেছেন: উৎকণ্ঠা জল হয়ে গেল ঘুম ভেঙ্গে ।
২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন আপনার ভাবনা ।
১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৭
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: স্বপ্নের ভেতরে স্বপ্ন। আমি এক রাতে ৫/৭ টা স্বপ্ন দেখে ফেলি। এক স্বপ্ন থেকে আরেক স্বপ্নে চলে যাই। হাঁ হাঁ হাঁ---
১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪০
শাহ আজিজ বলেছেন: তাই , খুব ভাল
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি পোষ্ট দেয়ার পরপরই পড়েছিলাম; মনে হচ্ছিল যে, আপনার জীবনের ঘটনা; শেষদিকে বুঝলাম ঘটনা নয়, গল্প। শিরোনামে গল্প লিখে দিলে, আমাদের জীবনটা কিছুটা সহজ হবে।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪৩
শাহ আজিজ বলেছেন: একটু এড়িয়ে গেলাম কারন গল্প কবিতা কেউই তেমন পড়েনা ।
হা হা হা
৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৭
ইসিয়াক বলেছেন: গল্পটি মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। খুব সুন্দর মানবিক গল্প।সবাই যদি এমন করে ভাবতো তাহলে পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯
শাহ আজিজ বলেছেন: ভারতের কেরালায় এরকম শিশু আশ্রম আছে । আমি একটা রিপোর্ট পড়ে বেশ মজা পেয়ে স্বপ্নের এই গল্পটি লিখে ফেললাম । আমার ভেতরেও শিশু লালনের এই বিষয়টি খুব কাজ করে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০৫
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: বাহ! খুব সুন্দর লেখা।
পড়তে পড়তে উৎকন্ঠায় ছিলাম।