নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাদর ম্যানেজ করতে পারতাম না বলে কায়দা করে প্যাচ দিয়ে একটা গিটঠু মেরে দিলে আমি দৌড়ানোর উপযুক্ত হতাম । লম্বা বারান্দা দিয়ে ছুটতাম । অবাক চোখে পৌষের কুয়াশা দেখতাম বেল গাছের মাথায় । আমাদের গাভী আর বাছুরটিকে বস্তা দিয়ে ঢেকে পেটে বেধে দিত । ওরাও শীতে কাহিল । আরেকটু বড় হয়ে গ্রামে আমাদের কেটে আনা ধানের গোছায় শুয়ে চাদর পেচিয়ে সূর্যের কাবু তেজ দেখতাম । আমার চোখের কাছে ধানের শীষে রাতের ওষের ফোটা সূর্যের আলোয় চকচক করত । খুব ভাল লাগত । চাদর গায়ে দেওয়া একটা কমন বিষয় ছিল ৬০ এর দশকে আর নতুন বাংলাদেশে । হাতে বোনা সুয়েটার একমাত্র সম্বল । প্রতি বছর উচ্চতা বাড়তে থাকলে সুয়েটারের হাতা ছোট লাগত । চাদর তখন ফ্যাশন হয়নি । প্রবাসে চাদরের বালাই ছিল না । দেশে ফিরলে বড়ভাই কলকাতা থেকে কাশ্মিরি শাল এনে দিলে তা গায়ে দিতাম । বেশ ফ্যাশন শুরু হল । শখের চাদর চুরি হল বাসের সিটের ওপর থেকে নিচে নামার অপরাধে । পিকিঙ্গে আমার স্ত্রীর নেপালি সহপাঠীরা ভেড়ার লোমের শাল এনে দিল । এত দারুন ওম দেওয়া জিনিষ আর পাইনি । এক পিস এখনো আমার দখলে আছে , সাদা ধুসর মেশানো , কারুকার্যবিহীন । পাকিস্তানি শাল বিক্রি হত খুব কাজ করা । পাকিস্তানি মহিলারা নিয়ে আসত বিক্রি করার জন্য । ব্যাবহার হত মাইনাস শীতের শুরু বা শেষের দিকে পার্টিতে বা মার্চের স্বাধীনতা দিবসে আমার স্ত্রী ব্যাবহার করতেন । নানা কারুকাজ করা পুরুষ ও মহিলাদের শাল এখন বাজার জমজমাট । চীনারা অবিকল ভারতীয় শাল বানাচ্ছে পাকিস্তান , ভারত আর বাংলাদেশের বাজার ধরার জন্য ।
ফোম জ্যাকেট কিনতে ৮২ সালে পিকিঙ্গের একমাত্র বড় মার্কেটে গেলাম । নীল রঙের জ্যাকেট কিনলাম । সাদা , লাল , সবুজ মার্কেট আউট । অল্প আয়োজনে বিপুল চাহিদা । মানুষ লেপ স্টাইলের লম্বা ওভার কোট পরত । ওটা সস্তা এবং ভারী বটে । আমি প্যাকেট হয়ে টুপি মানে মাংকি ক্যাপ , মাফলার , মোটা প্যাডেড জুতা আর মোজায় সাইবেরিয়ান ঠাণ্ডা বাতাসে শীত ঠেকাতাম । ক্লাসরুম , রুমে হিটিং ছিল বলে রক্ষা । তারপরেও জ্বরে পড়ে হাসপাতাল বাস । পরের বছর থেকে ইজি হল লাইফ । জ্যাকেটে শরীরের আয়তন বাড়ত বলে বাসে জায়গা কমে যেত । সাইকেল আরোহীদের সংখ্যা কমে যেত , বাসে ভিড় এমন যে অসভ্যতা বা অশ্লীলতা বলে কোন বিষয় ছিল না । বমি এসে যেত রসুন খাওয়া আর দাত ব্রাশ না করা মহাজাগতিক দুর্গন্ধে । হাত মোজা দিয়ে টাকা গোনা যেত না । কি বিষম যন্ত্রনা । ওটা খুলে মানিব্যাগে হাতড়িয়ে টাকা বা অ্যালুমিনিয়ামের পয়সা দিয়ে টিকিট নিয়ে সামনের বুক পকেটে রেখে দিতাম । ক’বার সূর্য না ওঠা ভোররাতের পিকিঙ্গে সাইকেলে চালিয়ে যখন ক্লাসে পৌঁছতাম তখন কাপড় মাফলার টুপি ত্যাগ করে প্রথম কাজ ছিল জমে যাওয়া হাতের আঙ্গুল সচল করতে ওয়াটার হিটিং এর ওপর বোলানো । প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ডরমিটরি থাকবেই । আমি চার কিলো দূরে স্ত্রীর ডরমিটরিতে ফেরত আসতাম বলেই এই ঝামেলা করতে হত । স্নো ফল বেশি হলে থেকে যেতাম রুমে টোগোর রুমমেট আমুজুর সাথে । আমি থাকতাম না বলে আমুজুর ইদ লেগে যেত । বাইরের সিঁড়ি দিয়ে জাপানি বান্ধবী রাতে চলে আসত । আমি থাকলে মিস যেত । আমাদের ডরমিটরি বা স্ত্রীর ডরমিটরিতে বা সব বিদেশীদের ফ্রি লিভিং ছিল । কেউ কারো বিষয়ে নাক গলাত না । কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি । আমাদের ক্লাসগুলো অত্যধিক গরম থাকত এজন্য যে বস্ত্রবিহীন মডেলরা দাঁড়াত পোজ দিতে ।
এখন চাদরে নিজেকে পেচিয়ে মনে হয় পৌষ বেস্ট । পাজামা পাঞ্জাবি আর শাল ব্যাস ধরিত্রীতে এর’চে ভাল আর আমারদায়ক স্টাইলের পোশাক আষাক আর নেই বা হতে পারেনা ।
শুভ পৌষ ।।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২
শাহ আজিজ বলেছেন: হুম , পৌষ আবাহন হবে বলেই লিখেছি । পৌষ খুব প্রিয় , পৌষে দেশ হানাদার মুক্ত হয়েছিল ।
ধন্যবাদ ।
২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'আমাদের ক্লাসগুলো অত্যধিক গরম থাকতো এজন্য যে বস্ত্রবিহীন মডেলরা দাঁড়াত পোজ দিতে।' চোখে পানি এসে গেছে ----------------- হাসতে হাসতে।
লেখাটা ভালো লাগলো। 'ওষ' শব্দটা শুনলাম বোধহয় কম পক্ষে ৪০ বছর পর। ছোটোবেলায় গ্রামে এ শব্দটা আমরা ইউজ করতাম।
চাদর আমার খুব প্রিয় ছিল ছোটোবেলায়, এমনকি কলেজে থাকা অবস্থায়ও ছাদর পরেছি। লাইট ফক্স কালারের চাদর খুব জনপ্রিয় ছিল। তবে, চাদর বা শালের চল উঠে গেছে। সাধারণ মানুষকে চাদর গায়ে দিতে দেখা যায় না। স্যুয়েটার, হুডিসহ এখন ভ্যারাইটি অনেক বেশি। চাদর গায়ে দিতে একটু ঝামেলাও। তবে, অভিজাত শ্রেণির কিছু মানুষ এখনো চাদর পরেন।
পোস্টে ভালো লাগা।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৯
শাহ আজিজ বলেছেন: বাড়তি হিটিং থাকতো বলেই ওরা মডেল দিতে পারত । আর আমরা ঘেমে নেয়ে উঠতাম । বাইরে মাইনাস ভিতরে প্লাস হা হা হা ।
চক্ষু মুইছা ফালান ।
৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: গ্রামের শীত উপভোগের জন্য আগামী কাল যাচ্ছি কালীগঞ্জের নাগরিতে।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২০
শাহ আজিজ বলেছেন: শুভ শীতের আয়োজন
৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৮
আমি সাজিদ বলেছেন: চমৎকার বর্ণনায় উঠে এসেছে আপনার ছোটবেলার পিকিংয়ের শীতকাল। চাদর জড়াতে বেশ লাগে। আমার দুটো আছে। জ্যাকেটগুলো সবচেয়ে বেশী অসহ্য লাগে। পড়লে ফুলে ঢোল হয়ে থাকা লাগে। এখনকার শীতে মানুষ ফ্যাশনটাই বেশী দেখে। হুডিতে শীত মানায় নাকি সন্দেহ হয়। তবুও কেনা হচ্ছে, পড়া হচ্ছে।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৩
শাহ আজিজ বলেছেন: যার যেমন সুবিধা হয় । চাদর পুরাতন আমলের , হুডি চলতি সময়ের । বাংলাদেশে দুমাসের শীতকালটাই ফ্যাশনের সময় ।
৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১২
আমি সাজিদ বলেছেন: *ছোটবেলা ও পিকিংয়ের শীতকাল। আগের কমেন্টের কারেকশন।
সাবেক রুমমেট আমুজুর সাথে যোগাযোগ আছে এখনো? পাজামা পাঞ্জাবী আর শাল ধরিত্রীর অন্যতম আরামদায়ক পোশাক, কোন সন্দেহ নেই।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৫
শাহ আজিজ বলেছেন: নাহ , কারো সাথেই আর যোগাযোগ নেই । আমুজু এমন একজন রুমমেট যার সাথে আমি খুব ভাল ছিলাম ।
৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: বর্ণনা এমনভাবে দিয়েছেন, যেন ট্রেন ধরার তাড়া আছে! একটু রয়ে সয়ে দিলে রস আস্বাদনে সুবিধা হতো। দেশের গ্রামের শীত, পিকিংয়ের শীত; ছোটকাল, বড়কাল সব মিলে মিশে একাকার। তারপরেও ভালো লাগলো। স্মৃতিচারণ বলে কথা!
শহরে থাকার কারনে সেভাবে গ্রামে যাওয়া হয় নাই। গ্রামের শীতও তেমন একটা দেখি নাই। তবে, একবার গ্রামে ভোরবেলা খেজুরের রস খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে এক দারুন অভিজ্ঞতা! এখন তো গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারনে সব খানেই শীত অনেক কমে গিয়েছে। আপনাদের সময়ে গ্রামে নিশ্চয়ই প্রচন্ড শীত পড়তো!!
ইংল্যান্ডে একসময়ে যেখানে মাইনাস ১৬ ডিগ্রী শীত অনুভবের সুযোগ হয়েছিল, এখন আর তেমনটা হয় না। কদাচিৎ মাইনাস ৪ কিংবা পাচ হয়। তাও অল্প কয়েকদিন। মনে হয়, একসময়ে এখানে দেশের মতোই হবে শীতকালের স্থায়ীত্ব!!
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৯
শাহ আজিজ বলেছেন: মুল বিষয়ে লেগে থাকতে গিয়ে ট্রেন ধরার তাড়া এসে গেছে ।
আমি গ্রামে যেতাম এবং ৭৩ থেকে ৭৫ সেখানেই ছিলাম বখে যেতে পারি এই ভয়ে । এসময় নিবিড় ভাবে গ্রাম দেখেছি । ফসলের মাঠ, পাখির দল, খেজুরের রস চুরি , পুরো ছাগল গায়েব করে দেওয়া , হাস , নৌকায় চড়ে মাঘী পূর্ণিমা উপভোগ , প্রেমে হাবুডুবু , পত্রিকা প্রকাশ , কবিতায় মনোযোগ , পশুর নদীর পাড় ধরে দীর্ঘ হাঁটাহাঁটি । বলা চলে জীবনান্দ দাসের চোখ দিয়ে আকাশ আর মেঠো ইদুর দেখে নেয়া।
পিকিঙ্গে মাইনাস ২০ অনুভব করা । দারুন শীতে বি বি কিউ করা । পেট ভর্তি হুইস্কি আর সামারে বিয়ার । কি একটা জীবন ছিল । আমাদের গ্রামে মাঘের শীতে মাঠ কাঁপত , পাশেই সুন্দরবন , বাঘ কাঁপত বনে ।
৭| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: হঠাৎ করে শীত এসেই গেল। মহামারী শীত সবই গরিবেব জন্য কষ্টদায়ক কারণ রোজগার কম
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২১
শাহ আজিজ বলেছেন: সব শীতেই কম্বল দেই এবার নতুন জায়গায় বন্ধ আছে আমাদের প্রোগ্রাম । গরিবের জন্য সব শীতই কষ্টকর ।
৮| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমার শীত কম। ঢাকা শহরে হাড় কাপানো শীত আসে না। তাই আমার শীতের জামা পরতে হয় না। তবে ঢাকার বাইরে গেলে শীতের জামা পড়ি।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪১
শাহ আজিজ বলেছেন: আমার এবার শীত বেশি লাগছে । কাল জর ভাব ছিল । রাতে ঠাণ্ডা গরম কাহিল করে ফেলেছে ।
৯| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৭
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আজ কয়েক দিন থেকেই মাইনাসে আছি। করোনাও একটু বেড়েছে,তার উপর থেকে থেকে তুষারপাত।
শাল আরাম দায়ক বটে,তবে ছোট বেলায় অনেক শাল হারিয়েছি।সকালে শাল গায়েদিয়ে বের হতাম এগারোটার পর গায়ে রাখা যেত না,খুলে হাতে নিতাম।কোথাও বসে গল্প করলে ,আসার সময় শাল রেখেই চলে আসতাম।এই ভুলটা আমার এখনো হয়।এটা সেটা হারাই।
পুরানো দিনের অনেক কথা বললেন,ভাল লাগলো।আরো শুনার অপেক্ষায় রইলাম।
২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩০
শাহ আজিজ বলেছেন: হু , সাবধানে থাকবেন । চাদর হারাইনি কারন তাইলে ধোলাই হত ।
১০| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
চাদর আমার প্রিয় তবে ৫-৭ বছর চাদর পড়া হয়না।
তবু প্রিতে শীতে কোন না কেনভাবে এক মূহুর্তের জন্য হলেও চাদের নিজেকে জড়াই।
২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৪
শাহ আজিজ বলেছেন: চাদর উপমহাদেশীয় ফ্যাশন ।
১১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি আমার মায়ের কাছ থেকে সোয়েটার বোনা শিখেছিলাম। কিছু ডিজাইনও তুলতে পারতাম। ঐ সময় ঘরের মা, খালা, বোনেরা অবসর সময়ে সোয়েটার বুনতো। হাতে বোনা সোয়েটারই মানুষ বেশী পড়তো। শীতকালে আমি এখনও ঘরে চাদর গায়ে দেই। কারণ ঝামেলা কম কিন্তু কাজ দেয় বেশী।
২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৮
শাহ আজিজ বলেছেন: সোয়েটার বোনা একটা মহা ঝামেলার ব্যাপার ছিল । স্বাধীনতার পর আমাদের ভাড়াটিয়া একজন মেশিন বসালেন । হাতে টেনে সোয়েটার বানাতেন । সেকি ভিড় বাসায় । আমার বড় বোন বন্ধ করলেন তার বোনা বুনি ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: পৌষ আসতে এখনো বিশ দিন বাকি আছে। আজ তো কেবল দশই অগ্রহায়ন।
শীতের স্মৃতিকথা ভাল লেগেছে। ছোটবেলায় যখন নানাবাড়ী দাদাবাড়ী গিয়ে দেখতাম, গৃহকর্মীরা গরু বাছুরকে 'স্যুট' পরিয়ে দিচ্ছে, তখন প্রথম প্রথম খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম।