নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শৈত্যসুখ - গল্প

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৮

অজানা চীনা শিল্পী

কার্ত্তিক এলেই মাজেদ উল হক কাজের মেয়েদের বলবেন ওরে তোরা লেপগুলো ছাদে রোদ্দুরে দে, একটু ঝরঝরে হোক । বেগম মাজেদ বলেন আর কিছুদিন বাদে হলেও ক্ষতি হতো না। এখন হটাৎ করেই বৃষ্টি নামে। মাজেদ সাহেব বললেন আবহাওয়া আমি খেয়াল করি, তুমি দুঃশ্চিন্তা করোনা তো।
মাজেদ দম্পতি গত ৪২ বছরের দাম্পত্য জীবনে ঝগড়াতো তো দুরের কথা জোরেও কথা বলেননি। অবসর নেবার পর ধীরে ধীরে মাজেদ সাহেব একাকী হয়ে গেছেন। সরকারের শীর্ষ চাকুরীর ব্যাপারটাই আলাদা। তার সাথের অনেকে ক্লাবে যান , ফুর্তি করেন। তিনি পানাহার করেন না তাই ওদিকে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তার গাড়ি নেই , কখনো ছিলনা ওই সরকারের দেওয়া গাড়ি ছাড়া। প্রায় সবাই আলিশান এলাকায় থাকে বলে তার সাথে দূরত্ব বেড়েছে । প্রতিদিন সকালে বাজারে যান মাজেদ সাহেব। কেনার চেয়ে চেয়ে দেখা আর বাজার দর জানাটা মুখ্য বিষয়।
নাতনীটা বড় হয়েছে এবং অন্যান্য বাড়তি বয়েসের মেয়েদের মত তারও ফেসবুক একাউণ্ট আছে।
নানা, তোমারতো সময় কাটেনা, এসো তোমায় বিজি করে দেই।
চারিদিকে আকথা কুকথা এই সাইট নিয়ে, পর্ণ নিয়ে।
নানা মাজেদ আগ্রহের সাথে বসে গেলেন। তার কম্পিউটার জ্ঞান অফিস বয়েসের শেষ দিকে কিন্তু টাইপ জ্ঞান চাকুরীর প্রথম থেকেই। সহজেই তার ফেসবুক একাউণ্ট খোলা শেষ। নাতনী বেশ কিছু বিদেশি পত্রিকা অ্যাড করে দিল , ফ্রেন্ড রিকু বা ফলো বন্ধ শুধু নাতনী তার বন্ধু আর নাতনীর হাজার বন্ধু তারও বন্ধু হয়ে গেল।
খুব কাজের জিনিস তো ! দুনিয়াময় ঘুরছেন আর পড়ছেন , ভিডিও ক্লিপ দেখছেন।
ভাল পথ যেমন আছে তেমনি খারাপ পথ আছে । বিষয়টা হচ্ছে বেছে নেওয়া। পৃথিবী এখন মাজেদের হাতের মুঠোয় ।
সকাল নয়টায় ঠিক ঠিক নেমে গেলেন এবং সোজা বাজারে।নতুন বানানো ফুটপাতে বাজার বসছে কিছুদিন ধরে , তাতে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাজা পালং দেখে দাম জানতে চাইলেন, বলল ২০ টাকা আটি ! কপালে চোখ উঠিয়ে বললেন’ এখনতো ঘাস খেতে হবে’। লোকটি তাচ্ছিল্য করে বলল ‘ তাই খান গিয়া’। ‘ কি , কি বললে’? ‘ঘাস খাইতে বলছি’। আঙ্গুল উচিয়ে মাজেদ বললেন বেরো ফুটপাত ছেড়ে।
উলটো বলল ‘ ফুটপাত কি আপনের বাপের কেনা’।
আশেপাশে ভিড় জমে গেছে।
কেউ কেউ থামাতে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
ফুটপাতের বাজারিদের দালাল থাকে, দালাল এগিয়ে এল।
মাজেদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে ,তিনি কলার ধরে ওই শাকওয়ালাকে বের করতে টানাটানি করতেই দালাল মাজেদকে প্রচণ্ড এক ধাক্কা দিল । মাজেদ পিঠ ঠেকিয়ে ফুটপাতে পড়ে গেলেন । ভেতরের বড় দোকানীরা এসে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করতেই তিনি বললেন পিঠটা গেছে , টানাটানি করোনা ,এভাবে তোলা যাবেনা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকো।ব্যাপার গুরুতর। ভাগ্যক্রমে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেল । দৌড়ে কজন থামাল এবং যাওয়ার ব্যাবস্থা হল। বাসায় খবর পৌঁছানো মাত্র সবাই হাসপাতালে রওনা দিল। সাবেক সচিব তাই চেনা জানা আর খুব জলদি স্ক্যান করে জানা গেল তার আগের ফেটে যাওয়া ডিস্ক এবার পুরো নষ্ট হয়ে গেছে, ওটা সরে গেছে। মাজেদ অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করছেন।
বড় সার্জনরা তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু আর অপারেশন সুষ্ঠু হল। বোন সিমেন্ট দিয়ে ডিস্কের জায়গা পুরন হল। এবার তিনি প্রচণ্ড ব্যাথা থেকে মুক্তি পেলেন। এম পি , সচিবগন, আই জি দেখতে এলেন। পরদিন সকালে দালালের ধোলাই হল । দাত দুটো আর নাকটা গেল বেচারার। বাকি সব্জিওয়ালারা সেকি দৌড় । বাজারিরা এম পি সাহেবের কাছে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো। এম পি বাজারের দাম ঠিক করে দিলেন, বললেন যার পোষাবে সে ব্যাবসা করবে যার পোষাবেনা , করবেনা । ফুটপাত বাজার মুক্ত হল। মাজেদ এম পিকে অনুরোধ করলেন ওদের পুলিশে না দিতে , তিনি নিজেও খুব অনুতপ্ত বোধ করলেন হটাত মাথা গরম করার জন্য। তবে ফুটপাত খালি চাইলেন। এরপর আই জি তদন্তে গেলে পুরো বাজার দোকানদার বিহীন হয়ে গেল। যদি গন ধরপাকড় হয়, জেনেছে তারা একজন সচিবকে ধাক্কা মেরেছে। এদিকে অতি শান্ত শোয়েব বাবার প্রতিশোধ নিল দুটো দাত ঘুষিতে ফেলে দিয়ে। মা তীব্র প্রতিবাদ , বোন গোপনে খুব খুশি-বলল বাপ মার খাবে আর ছেলে দাড়িয়ে মজা দেখবে, ঠিকই আছে। বড় ছেলে জায়েদ শান্ত থাকল । সবাই শোয়েবকে প্রতিজ্ঞা করাল সে আর এ রকম কাজ করবেনা।
ব্যাক বোন আক্রান্ত বাবাকে ফেলে দালালের দুটো দাত নিয়ে সেকি শোক, শোয়েব মনে মনে বলল সংসদে প্রস্তাব আনলে হয়।
৭ দিন হাসপাতালে বিশ্রাম ঠিকমত হয়নি আত্মীয়দের ভিড়ে। বাসায় উঠলেন হুইল চেয়ারে বসে। আপাতত সিঁড়ি ভাঙ্গা নিষেধ তবে সমতল জায়গায় হাটবেন স্বাভাবিক ভাবে, আরো অনেক নিয়ম।
দুটি ফ্লাট কিনেছিলেন ঢাকার এক কিনারে যাতে সবাই একসাথে থাকতে পারেন। বড় ছেলে, বউমা, পৌত্র ২জন , মেজো ছেলে কাতারে , মেজো বউমা ও এক পৌত্রী এবং মেয়ে ওই বাড়ির ৪তালায় ভাড়া থাকে তার একটি কন্যা ,সব মিলে মাজেদের আড্ডা । এক হাড়িতে রান্না , বড় টেবিলে দলেবলে খাওয়া দাওয়া। মাজেদ বলেন আমি মরে গেলে হাড়ি ভাগ করিস।
পিসিতে বসেন চমৎকার বিদেশী একটা চেয়ারে যা আগে দেখেননি, মনে হচ্ছে এটা কোমর ভাঙ্গা লোকেদের জন্য বানানো হয়েছে। হাটেন এপাশ থেকে ওপাশে । বেগম মাজেদ ওরফে জোহরা ভীষণ ব্যাস্ত দুজন কাজের লোক নিয়ে।মাজেদ পিচ্চিদের নিয়ে বসেন খেতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রন করেন আরও কজন।
জীবনটা মধুর মনে হয় এই নাতি পুতিদের বুকে নিয়ে।এম বি এ শেষ করেই বড়টি ব্যাবসায় নেমেছিল এবং সফল বটে । বাবার নির্দেশ মানেনি বরং বলেছিল দেশে উৎপাদনশীল অনেক খাত আছে যাতে সফল হব আমি। মেজটা কাতারে এনার্জি বিষয়ক প্রকৌশলী । ভালই করছে , বছরে একবার দেশে আসে। ছোটটা ১০টায় ঘুম থেকে ওঠে। জামাই সরকারি কর্মকর্তা । মেয়ে একটি নামি স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল। আঘাতের বদৌলতে ছোটটি এখন ভোরেই উঠে বাবাকে ডাক্তারের নির্দেশ মোতাবেক বিছানা থেকে ওঠায় । টয়লেটের বাইরে দাড়িয়ে ও খবরের কাগজ পড়ে। বাবার শরীরের নিন্মাংশ সাফসুতোর সেই করে। গোসল করানো এবং আবার বিছানায় শোয়ানো । এসব কিছুকাল চলবে তারপর মাজেদ নিজেই আস্তে ধীরে এসব করতে পারবে। একজন মেসেজ দিতে আসে বিশেষ করে কোমর থেকে নিচের আঙ্গুল পর্যন্ত । একটি জরুরী কলিং বেল শোয়েবের রুমে ।
একটা ইলেকট্রিক মোটর চালিত ওয়াকিং মেশিন এসেছে। তাতে মাজেদ ধীরে দুবেলা হাঁটেন । আস্তে ধীরে সবাই তাতে হাঁটছে এবং দৌড়াচ্ছে । শোয়েব বাজারে যায় এবং না চাইতেই শাক পাতা হাতে চলে আসে । গম্ভীর হয়ে টাকা দেয় ।সব্জিওয়ালাদের কুর্নিশ ভঙ্গিটি তার বেশ মজা লাগে। মনে মনে বলে মাইরের উপর ওষুধ নেই, সব শালা সোজা ।
মাজেদ এখন অনেক ভাল এবং নিজেই প্রায় সব করতে পারেন ।
মাঘ শুরু । ঢাকাতেও কিছুটা টের পাওয়া যায়। ভোরের কুয়াশা ঢাকাকেও আচ্ছন্ন করে তখন মাজেদ মন খারাপ করেন টাঙ্গুয়ার হাওরে তাহিরপুরে তাদের গ্রামের বাড়ির কথা ভেবে। জন্মস্থান, শৈশব থেকে কৈশোর গ্রামে তারপর ময়মনসিংহে কলেজ করে ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন।
পুরো হাওরটা যখন ঘন কুয়াশায় ভরে থাকে তখন মনে হয় প্লেনে মেঘের মধ্যে আছে বসে । স্ত্রীকে রাতে ফিস ফিস করে মনের ইচ্ছা জানায়। জোহরা বলেন দেখ ডাক্তার কি বলে তারপর যাও। মেসেজ করা ছেলেটি বলল স্যারের কোমর থেকে পায়ের স্নায়ু বেশ সবল এখন , শুধু কুঁজো হওয়া আর ভারি জিনিস তোলা আজীবন নিষিদ্ধ।
জোহরার মনে শান্তি ভর করে।
শোয়েবকে নিয়ে জায়েদের মাইক্রোবাসে রওনা করলেন ভোরে ।

দ্বিতীয় অংশ পরবর্তীতে ---------

------------------------------------------------------

শীত / ঠাণ্ডা (ডিসেম্বর ২০১৫)

কপিরাইটঃশাহ আজিজ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.