নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তিনটি ঘটনা আমাকে চিরস্থায়ীভাবে সংসারবিমুখ করেছিল |
৭২ বছরের জীবন পেলাম। সময়টা নেহাত কম নয়। দীর্ঘই বলা যায়। এই দীর্ঘ জীবনের পেছনে ফিরে তাকালে তিনটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। তিনটি ঘটনাই আমার জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। আমি সফল নাকি ব্যর্থ, হিসাব কষতে বসলেও ওই তিনটি ঘটনা অবধারিতভাবে সামনে চলে আসে। আজ আমার যতটুকু সফলতা, সেই তিনটি ঘটনা তার পেছনে দায়ী। আবার আমার যতটা ব্যর্থতা, তার পেছনেও আছে ওই তিন ঘটনা।
প্রথম ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) থাকি। ওই দিন সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের দিকে আড্ডা দিয়ে রাতে হলে ফিরেছি। ক্যানটিন বন্ধ। খেতে গেলাম মেডিকেল গেটের কাছে পপুলার নামের একটা রেস্টুরেন্টে। খাওয়া শেষে মনে হলো, ফজলুল হক হলে বন্ধু হাবিবুল্লাহ থাকে, ওর সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। গেলাম ফজলুল হক হলে। হাবিবুল্লাহর কক্ষে গিয়ে আমি আড্ডা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর, রাত তখন পৌনে ১০টা হবে, হঠাৎ গোলাগুলির বিকট আওয়াজ। আমরা হলের ছাদে উঠে দেখলাম, নীলক্ষেত, নিউমার্কেটের দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
২৭ মার্চ সকালে ইকবাল হলে গিয়ে দেখি, মাঠের মাঝখানে, এখানে-ওখানে শুধু লাশ আর লাশ। নিজের কক্ষে গিয়ে স্যুটকেস গুছিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম। এখান থেকে পালাতে হবে, না হলে বাঁচা সম্ভব নয়। হলের গেটে এসে দেখি নির্মলেন্দু গুণ দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, ‘আমি ভেবেছি তুমি মারা গেছো, তোমার লাশ নিতে এসেছি।’ বলেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আমিও সজোরে কাঁদতে লাগলাম। তারপর সেখান থেকে আমার বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উঠলাম।
এই ঘটনা আমার হৃদয়ে ব্যাপকভাবে ছাপ ফেলল। আমার তখন কেবলই মনে হতো, ওই রাতে যদি আমি ফজলুল হক হলে না গিয়ে নিজের হলে ফিরতাম, তাহলে তো বাঁচতাম না। একটা বোনাস জীবন পেয়েছি—এই উপলব্ধি আমার ভেতর বিরাট বৈরাগ্য এনে দিল। এক ধরনের সন্ন্যাস জীবনযাপন শুরু করলাম আমি।
এর পরের ঘটনা ’৭৩ সালের জুনের। ১৯ জুন আমার পিতার মৃত্যু হলো। তিন বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পর আব্বাই ছিলেন আমার সবকিছু। তাঁর মৃত্যু প্রবলভাবে ধাক্কা দিল আমাকে। মনে হলো, জগৎসংসার তুচ্ছ। সব অর্থহীন। আমার বৈরাগ্য আরও প্রগাঢ় হলো।
আব্বার মৃত্যুর মাসখানেক পরই ঘটল তৃতীয় ঘটনা। ঘটনা ঘটাল হেলেন, আমার প্রেমিকা। হেলেন হঠাৎ ডেকে বলল, ‘কবি, তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।’ আমরা গিয়ে বসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে। সে বলল, ‘আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।’
ছোটবেলা থেকে আমি খুব সহনশীল ছিলাম। প্রচণ্ড সহ্যশক্তি আমার। তাই ভেতরের ঝড় বুঝতে দিলাম না হেলেনকে। ওখান থেকে উঠে রিকশা নিয়ে সোজা হলে চলে গেলাম। ওটাই হেলেনের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ও শেষ কথা।
এই তিনটি ঘটনা আমাকে চিরস্থায়ীভাবে সংসারবিমুখ করে ফেলল। আমার আর ঘর হলো না, সংসার হলো না, অর্থকড়ি হলো না, প্রতিষ্ঠা হলো না।
এখন জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন কেবলই আমার মনে হয়, জীবনের সময়গুলো বৃথাই অপচয় করেছি। কত সুন্দর সুন্দর কবিতার পঙ্ক্তি এসেছে মাথায়, আমি টেবিলে বসিনি, লিখিনি। জীবনটা অপচয়ই করেছি বলা যায়। এ জন্য আমি এখন ভীষণভাবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এই দীর্ঘ জীবনে যাঁরা আমাকে ভালোবেসেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আর যাঁরা আমাকে ভালোবাসেননি, তাঁদের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞতা। কারণ তাঁদের অবহেলা, অনাদর, প্রত্যাখ্যান আর ঘৃণাই আমাকে কবি বানিয়েছে।
হেলাল হাফিজ | Helal Hafiz
কবির পেজ থেকে
সোনাগাজীর অনুরোধে
পৃথক পাহাড় – হেলাল হাফিজ
by হেলাল হাফিজহেলাল হাফিজ
আমি আর কতোটুকু পারি ?
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়,
আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
আমি আর কতোটুকু পারি ?
এর বেশি পারেনি মানুষ।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৯
শাহ আজিজ বলেছেন: হুম , এখনও বেচে আছেন তবে অসুস্থ ।
২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৩
সোনাগাজী বলেছেন:
সম্ভব হলে, উনার ছোট একটা কবিতা কপিপেষ্ট করে দেন।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৯
শাহ আজিজ বলেছেন: দিচ্ছি------
৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি মনে হয় হোটেলে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর উনি সহপাঠী ছিলেন।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
শাহ আজিজ বলেছেন: শেরাটনের পশ্চিমে বারের গলিতে একটি হোটেলে বাস করেন । কিছুকাল আগে অসুস্থ হয়ে বারডেমে ভর্তি ছিলেন কয়দিন ।
৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
জুল ভার্ন বলেছেন: ২৫ মার্চের কালো রাতে আমার মামাতো ভাই শহীদ হন- যার কথা আমি কয়েক বছর আগে আমার একটা পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম।। ভাইয়া নিয়মিতই বাসায় থাকতেন। কিন্তু ওই দিন সাংগঠনিক কাজ শেষে হলে থেকে যান...
৭২ বছরের চিরতরুণ ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা অফুরান। ❤️
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ । কবি ভাল থাকুক ।
৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
সোনাগাজী বলেছেন:
কবিতাটির গঠন ও ভাব বেশ স্নিগ্ধ; কি পেশায় ছিলেন তিনি?
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৭
শাহ আজিজ বলেছেন: লেখালিখি ছাড়া অন্য কোন পেশার কথা শুনিনি ।
৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫৮
আল ইফরান বলেছেন: @চাঁদগাজী, উনি একখানা কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন ওনার এক জীবনে, তার নাম 'যে জলে আগুন জ্বলে'।
বইয়ের প্রতিটা কবিতা আসলে কবিতা নয়, যেন বুলেট এবং মিসাইল।
আমি খুব কবিতা ভক্ত নই, কিন্তু ওনার কবিতার মধ্যে দ্রোহ, কামনা এবং আবেগের এক অদ্ভুত মিশেল রয়েছে।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৮
শাহ আজিজ বলেছেন:
৭| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৩
মামুinসামু বলেছেন: আল ইফরান বলেছেন:
বইয়ের প্রতিটা কবিতা আসলে কবিতা নয়, যেন বুলেট এবং মিসাইল... ঠিক।
কবির কথা গুলোও চমৎকার, "এই দীর্ঘ জীবনে যাঁরা আমাকে ভালোবেসেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আর যাঁরা আমাকে ভালোবাসেননি, তাঁদের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞতা। কারণ তাঁদের অবহেলা, অনাদর, প্রত্যাখ্যান আর ঘৃণাই আমাকে কবি বানিয়েছে" এমনভাবে কয়জন বলতে পারে? আমার তো মনে হয় এটাও যেন একটা কবিতা।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৮
শাহ আজিজ বলেছেন:
৮| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইসব দামী নামী লোকদের শেষ জীবন অনেক কষ্ট ও হতাশায় কাটে। থাকে না কাছে অনেকের পরিবার পরিজন , থাকে না ভালো চিকিৎসা করার অর্থ বিত্ত। দোয়া রইলো উনার জন্য।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১০
শাহ আজিজ বলেছেন: কবি নিজেই চান না কারো সাথে থাকতে , ভীষণ জেদি কবি ।
৯| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হেলেনের সাথে বিদায়ের কথাগুলো মনকে খুব ব্যথিত করলো। পুরো পোস্টটাই বেদনাবিধূর কান্নার নীরব ধ্বনিতে হাহাকারময়।
তিনি অবশ্যই ব্যর্থ নন। বাংলা কবিতায় তিনি রত্ন উপহার দিয়েছেন। বাংলা কবিতা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
অনেকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। তার সুস্থতা কামনা করছি।
আমিও বৈরাগ্য চেয়েছি, কোনো এক প্রেমিকার প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে থেকে। বিগলিত অশ্রুর ভেতরে কবে যেন গড়ে উঠলো সবুজ সংসার। বৈরাগী হতে পারি নি; হতে পারি নি সংসারীও।
অফ টপিক : ২৫ তারিখ রাতে ইকবাল হলে না গিয়ে গেলেন ফজলুল হক হলে। ২৭ তারিখ সকালে গেলেন ইকবাল হলে। সম্ভবত এটা ২৬ তারিখ সকালে হবে। নাকি ২৬ তারিখে অন্য কোথাও ছিলেন?
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৯
শাহ আজিজ বলেছেন: লেখা আমার না কাজেই ২৬ আর ২৭ এর গড়বর আমার নয় ।
একজন কবির জীবনে সংসার , বৈরাগ্য সবই চাই না হলে কাব্যের ছন্দ বিকাশ হবে না ।
১০| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩৬
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: চমৎকার শাহ আজিজ দা
ভঅল থাকবেন
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৯
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ লিটন
১১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৩
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অসাধারণ লেখনি ।
হেলেনরা এমনই হয় শুধুই ট্রয় নগরি ধ্বংস করে দেয় ।
তবে লেখনিতে তারিখ ভুল আছে । ২৫ তারিখ এর পর ২৬ তারিখ মিসিং
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২০
শাহ আজিজ বলেছেন: কবি নিজে এই ভুল করেছেন ।
১২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫৫
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: কবির সুস্থ্যজীবন কামনা করছি।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৬
শাহ আজিজ বলেছেন: আমরাও তাই চাই ।
১৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
উনি সংসার না করে ভুল করেছেন। মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ওনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ দিয়েই ওনি অমর হয়ে থাকবেন। সুস্থ্যতা কামনা করছি।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২২
শাহ আজিজ বলেছেন: কারো কারো শত খানায়ও নাম ওঠে না , কারো একখানাতেই সমুদ্র পার ।
১৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৯
রানার ব্লগ বলেছেন: হেলাল হাফিজের বর্তমান অবস্থা খুবি খারাপ। এই যুগে একজন কবি ও কথা সাহিত্যিক যে দুর্দশায় আছেন তা অকল্পনীয় ।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৭
শাহ আজিজ বলেছেন: জানি , কবি ভাল নেই ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০২
সোনাগাজী বলেছেন:
তিনি বেঁছে আছেন?