নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মহাকর্ষ বল

০৮ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৪





পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে যেতে হলে রকেটকে ঘণ্টায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটতে হয়। এত জোরে ছুটে যাওয়ার একটাই কারণ—মহাকর্ষ বল।

মহাকর্ষ এমন এক শক্তি, যা আমাদের মাটির দিকে টেনে ধরে রাখে। আমাদের হাঁটা-চলা, বসে থাকা, এমনকি দাঁড়িয়ে থাকার পেছনেও এই বলের অবদান আছে। ধরুন, আপনি একটা ফুটবলকে ওপরের দিকে কিক মারলেন। বলটা ওপরে গিয়ে কিন্তু আবার আপনার কাছেই, মানে মাটিতে ফিরে আসবে। বলটা আপনার টানে যে পৃথিবীতে ফিরে আসে, তা তো নয়! আসলে ওই বল ফিরে আসার কারণও সেই মহাকর্ষ বল। এই বল সব কিছুকে বস্তুর কেন্দ্রের দিকে টানে। আর বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে মহাকর্ষ কত শক্তিশালী হবে। তাহলে, পৃথিবীতে সবকিছু ভূপৃষ্ঠে, অর্থাৎ মাটিতে ফিরে আসে কেন? কারণ, আমরা থাকি পৃথিবীর ওপরে, ভূপৃষ্ঠে। ওপরের দিকে একটা ফুটবলকে ছুড়ে দিলে সেটা তো আর মাটি (বা ভূপৃষ্ঠ) ফুঁড়ে পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যেতে পারে না! তাই সবকিছু ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। একইভাবে আমরা লাফ দিলে আকাশে উড়ে না গিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে, মানে মাটিতে ফিরে আসি।

তবে চাইলে এই বলের হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। মানে আপনার যদি সুপারম্যানের মতো শক্তি থাকত এবং আপনি ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে ওপরের দিকে লাফ দিতে পারতেন, তাহলে আর ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসতে হতো না। পৃথিবীর মহাকর্ষ বল কাটিয়ে চলে যেতেন মহাকাশে। একই কাজ করে রকেট। সহজ কথায়, পৃথিবী আপনাকে একটা বলে ভূপৃষ্ঠে আটকে রাখছে। আপনি যদি সেই বলের চেয়ে বেশি জোরে চলতে পারেন, তাহলে আর পৃথিবী আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না। এ বলটাই হলো ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বা সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার। একে বলে মুক্তিবেগ। মানে পৃথিবীর মহাকর্ষ থেকে মুক্ত হওয়ার বেগ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রকেটকে কেন ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটতে হয়?

রকেট কীভাবে এই টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যায়, তা বুঝতে হলে রকেটের চলাচল সম্পর্কে একটু জানতে হবে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা ভালোভাবে বোঝা যাবে। বেলুন ফুলিয়ে মুখ না বেঁধে কখনো আকাশে ছেড়েছেন? ফোলানো বেলুন এভাবে ছেড়ে দিলে ফুড়ুৎ করে সামনে চলে যায় অনেকটা। কেন বেলুন সামনে চলে যায়? কারণ, বেলুনের ভেতরে যে বাতাস ছিল, ওই বাতাস বেরিয়ে গেছে। বাতাস বেরিয়ে যাওয়া মানে ওই বাতাস বেলুনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সামনে পাঠিয়ে দেয়। তাই বেলুন ফুড়ুৎ করে সামনের দিকে চলে যায়। রকেটও ঠিক এই কাজটাই করে। রকেটে ‘বিশেষ ধরনের’ জ্বালানি পোড়ানো হয়। ফলে তৈরি হয় গরম গ্যাস। এই গ্যাস রকেটের পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেলে রকেট সামনের দিকে ছুটে যায়।

‘বিশেষ ধরনের’ এই জ্বালানি কী? ইংরেজিতে বলা হয় ‘প্রোপেল্যান্ট’। জিনিসটা আসলে জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার বা জারকের মিশ্রণ। জ্বালানি হিসেবে সাধারণত হাইড্রোজেন, মিথেন বা কেরোসিনের মতো দাহ্য পদার্থ ব্যবহৃত হয়। আর অক্সিডাইজার বা জারক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তরল অক্সিজেন। এখানে একটা মজার কথা বলি। এই যে জারক হিসেবে তরল অক্সিজেন ব্যবহৃত হচ্ছে, এর কারণটা কিন্তু খুব সহজ। অক্সিজেন ছাড়া কোনোকিছু ‘পোড়ে’ না। অর্থাৎ ‘পোড়া’ মানেই অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া। চাইলে একটা বোতলের ভেতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন, ভেতরের অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলেই নিভে যাবে আগুন, অর্থাৎ মোমবাতি। যাহোক, প্রসঙ্গে ফিরি।

রকেটকে যখন মহাকাশে যেতে হয়, তখন প্রচুর শক্তি লাগে। সেই শক্তি অর্জন করতে প্রয়োজন প্রচুর প্রোপেল্যান্ট। কিন্তু সমস্যা হলো, রকেট যদি অত বেশি প্রোপেল্যান্ট বহন করে, তাহলে তার ওজন এত বেড়ে যায় যে সেটা আর উড়তেই পারে না। মানে আপনার পিঠে যদি ১০ কেজির বস্তা দিয়ে দৌড়াতে বলা হয়, তাহলে হয়তো কষ্ট করে হলেও পারবেন। কিন্তু ৫০০ কেজির বস্তা দিয়ে দৌড়াতে বললে তো উঠে দাঁড়াতেই পারবেন না! রকেটকে ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগ অর্জন করতে হলে যে পরিমাণ প্রোপেল্যান্ট পোড়াতে হবে, তা যদি রকেটের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মহাকাশে যাওয়া একটু কঠিনই হয়ে যাবে।

তাহলে উপায়? উপায় একটাই, রকেটের প্রোপেল্যান্ট কমানো। ভাবছেন, তাহলে রকেট উড়বে কীভাবে? সেই সমস্যার সমাধান বিজ্ঞানীরা করেছেন। রকেট সাধারণত সরাসরি মহাকাশে যায় না। আগে একটানা জোরে কিছুক্ষণ ছুটে এক পর্যায়ে এসে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। মানে ততক্ষণে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া প্রোপেল্যান্ট শেষ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ হওয়ার আগে রকেটটা এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে সেটা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না—পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের কঠিন বাঁধন পেরিয়ে যায়। এ জন্য বিজ্ঞানীরা রকেটকে একটু আড়াআড়ি ভাবে পাঠান, যাতে সেটা আর পৃথিবীতে ফিরে না আসে। এই কাজটা আধুনিক রকেটে করা হয় ধাপে ধাপে। একেবারে রকেটকে পুরো মুক্তিবেগে ছোটানোর বদলে ধাপে ধাপে গতিবেগ বাড়ানো হয়। এতে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

বলে রাখি, সব রকেট কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে মহাকাশে চলে যায় না। অনেক রকেট শুধু কক্ষপথেই থাকে। বর্তমানে হাজার হাজার স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। সেগুলোর কারণে আমরা মোবাইলে কথা বলতে পারি, টিভি দেখতে পারি, আবহাওয়ার খবর জানতে পারি, এমনকি দোকানে কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতেও পারি। রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় এসব স্যাটেলাইট দেখা যায়। এই যে রকেটগুলো কক্ষপথে থাকে, তাদের কিন্তু ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার, অর্থাৎ সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার বেগে ছুটতে হয় না। সেকেন্ডে ৭.৯ কিলোমিটার বেগে ছুটলেই হয়। অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ২৯ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটলেই রকেট পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে থাকতে পারে। এই বেগকে বলা হয় অরবিটাল ভেলোসিটি বা ন্যূনতম কক্ষীয় বেগ।

সাইকেলে জোরে প্যাডেল দিয়ে অনেকক্ষণ আর প্যাডেল না দিলেও সাইকেল চলতে থাকে। রকেটের ক্ষেত্রেও সহজে বোঝার জন্য ভাবতে পারেন, একবার জোরে ধাক্কা দিয়ে পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার পর তা চলতে থাকবে।
কিন্তু শুধু নির্দিষ্ট কক্ষপথে গেলেই তো চলবে না। দূর মহাকাশেও তো যেতে হয় বিভিন্ন কাজে। সেখানেই কাজে আসে মুক্তিবেগ, ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার। আর এ জন্য এখন আরও একটু আধুনিক একধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়। একে বলে স্টেজিং। মানে মূল রকেটের সঙ্গে আরও কিছু বাড়তি রকেট যোগ করে দেওয়া হয়। তাতে থাকে বাড়তি জ্বালানি। সেই বাড়তি রকেট দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার পর, পৃথিবীর মহাকর্ষ পেরিয়ে যাওয়ার পর, তা মূল রকেট থেকে আলাদা হয়ে যায়। এতে মূল রকেট হালকা হয়ে যায় এবং বাকি পথ অল্প জ্বালানিতে চলতে পারে। এর কারণটা মজার। পৃথিবীর মহাকর্ষীয় সীমা পেরোলে রকেটকে তো খুব বেশি জোরে আর কেউ টানবে না। আবার মহাকাশে বাতাসের বাধাও নেই। তাই রকেট ইতিমধ্যে অর্জিত বেগে ছুটে চলতে পারে। এই কথাটা নিউটনের প্রথম সূত্রে আছে—বাইরে থেকে কোনো বলপ্রয়োগ না করলে (অর্থাৎ বাধা না দিলে) গতিশীল বস্তু সুষম বেগে ছুটতে থাকবে। এ কারণেই রকেট মহাকাশে ছুটে যেতে পারে বাড়তি জ্বালানি না পুড়িয়ে।

বিষয়টা এরকম—সাইকেলে জোরে প্যাডেল দিয়ে অনেকক্ষণ আর প্যাডেল না দিলেও সাইকেল চলতে থাকে। রকেটের ক্ষেত্রেও সহজে বোঝার জন্য ভাবতে পারেন, একবার জোরে ধাক্কা দিয়ে পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার পর তা চলতে থাকবে। বোঝানোর জন্য বলা, যদিও উদাহরণটা পুরো এক নয়।

সব গ্রহের বেলায় এই মুক্তিবেগ কিন্তু ঘণ্টায় ৪০ হাজার কিলোমিটার হবে না। বৃহস্পতির মতো বড় গ্রহ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে ঘণ্টায় আরও অনেক বেশি বেগে ছোটাতে হবে রকেট। যত বড় গ্রহ, তত বেশি মহাকর্ষ বল। আর মহাকর্ষ বল যত বেশি, রকেটকে তত জোরে ছুটতে হয়। বৃহস্পতি গ্রহ আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এত বড় যে এক হাজারটা পৃথিবী একসঙ্গে এর মধ্যে ঢুকে যাবে। তাই সেখানে থেকে বেরিয়ে যেতে হলে রকেটকে ছুটতে হবে ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার কিলোমিটার বেগে! এই বেগ পৃথিবীর তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।

SOURCE : দ্য কনভার্সেশন, নাসা, দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস প্রেস

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:১৬

ফেনিক্স বলেছেন:



ভালো

০৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:০৬

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ । লাঞ্চ খাইয়া কি টায়ার্ড ??

২| ০৮ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫২

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: যুগে যুগে জয় হোক বিজ্ঞানের।

০৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:০৬

শাহ আজিজ বলেছেন: তাই হোক তবে ।

৩| ০৮ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:০৭

শাহ আজিজ বলেছেন: ভাল থাকবেন ।

৪| ০৮ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

কামাল১৮ বলেছেন: এই শক্তির কারনেই পৃথিবীর সব পানি ও মানুষ একাকার হয়ে যায় না।জোরে ঘুরাটাও একটা নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।

০৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: আমার খুব আগ্রহ এসব নিয়ে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.