![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাত চতুর্থ দিনে পৌঁছেছে এবং উভয় পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও ইরানের প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ ছিল, তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলে যাচ্ছেন, তাঁদের চালানো হামলা আরও ভয়াবহ।
ইসরায়েল বলছে, ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় তাদের হামলা চালানোটা খুবই জরুরি ছিল এবং সে হামলাগুলো তারা সফলভাবে চালিয়েছে।
ইসরায়েল তার জনগণকে এই হামলার পক্ষসমর্থন করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই আসল কারণটি ব্যাখ্যা করে না। কেন ইসরায়েল সরকার একতরফাভাবে কোনো উসকানি ছাড়াই এই হামলা চালাল, তার কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না।
ইসরায়েল সরকার বলছে, এই হামলা ‘প্রতিরোধমূলক’ ছিল; এর লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির এক আসন্ন ও অনিবার্য হুমকি মোকাবিলা করা। কিন্তু এই দাবি সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। বরং ইসরায়েলের হামলাটি অত্যন্ত পরিকল্পিত ও দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।
কোনো হামলাকে প্রতিরোধমূলক হামলা বলতে হলে সেটিকে আত্মরক্ষার অংশ প্রমাণ করতে হয় এবং এর পেছনে একটি জরুরি পরিস্থিতি থাকতে হয়। কিন্তু এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতি আসেনি যা দিয়ে সেই দাবি করা যেতে পারে।ইসরায়েল আরও দাবি করছে, ১২ জুন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, ইরান ২০০০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তির (এনপিটি) শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
সে কারণেই তারা হামলা করেছে বলে তাদের দাবি। কিন্তু আইএইএ নিজেও এমন দাবি সমর্থন করেনি। ওই প্রতিবেদনে এমন কিছু নেই যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আগেই জানত না।
ইসরায়েল সরকার আরও বলছে, এই ‘প্রতিরোধমূলক’ হামলার আরেকটি লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়া বা ধ্বংস করা। কিন্তু নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের মতে, ইসরায়েলের একার পক্ষে এই কর্মসূচিকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
যেভাবে ইসরায়েলি অভিযান চলছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা আসল লক্ষ্য ছিল না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিভিন্ন সামরিক ও সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তারা ইরানের মিসাইল ঘাঁটি, গ্যাসক্ষেত্র, তেল ডিপো থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে। তারা একের পর এক ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলী শামখানি। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। মনে করা হয়, তিনি গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলা আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
আলী শামখানির হত্যা এবং তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজনকে টার্গেট করে হত্যা করার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রিয় কৌশলগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে। ইসরায়েল প্রায়ই সেই সব ব্যক্তিদের হত্যা করার চেষ্টা করে যাঁদের ব্যাপারে দেশটি মনে করে যে, তাঁদের মৃত্যুতে তাঁদের পরিচালিত একটি ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়বে।সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনায় বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশ্যেই শামখানিকে হত্যা করা হয়েছে। যেভাবে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, ইরানের সরকারি কাঠামো ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার সব স্তরে ইসরায়েল নিজের শক্তি দেখাতে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে। এটি নেহাতই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘নেতৃত্বশূন্য’ করার চেষ্টা নয়।
তৃতীয় যে ব্যাখ্যাটি দেওয়া হচ্ছে, তা হলো, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য সম্ভবত তেহরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ শুরু করা। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যেই এটি বলেছেন। তিনি ‘ইরানের গর্বিত জনগণকে’ ‘একটি মন্দ ও দমনমূলক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তির’ জন্য রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল মনে করছে, ইরানে একতরফাভাবে বোমাবর্ষণ করলে ইরানিরা তাদের সমর্থন করবে। এটা ঠিক তেমনই ভুল ভাবনা, যেমনটা তারা গাজা নিয়ে করে। তারা ভাবে, যদি গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখা যায় এবং তাদের মেরে ফেলা যায়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই হামাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে আর তাদের শাসন শেষ করে দেবে।
ধরুন, এমন কিছু সত্যও হলো। কিন্তু কেবলমাত্র ইসরায়েলের হামলার অপেক্ষায় সব ইরানি বসে আছে—এমন ধারণা ইরানের রাজনীতির বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর অজ্ঞতা প্রকাশ করে।সন্দেহ নেই অনেক ইরানি ইসলামিক রিপাবলিক বিরোধী। কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, বেশির ভাগ ইরানি নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব ও বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে স্বাধীনতা বজায় রাখতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁরা বাইরের কোনো শক্তির চাপিয়ে দেওয়া এজেন্ডা মেনে চলতে রাজি নন।
অনেক ইসরায়েলি (যাঁরা নিজেদের নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচক বলে মনে করেন) হামলার শুরুতেই যেমন করে সবকিছু ভুলে গিয়ে সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক তেমনি ইসলামিক রিপাবলিকবিরোধী অনেক ইরানিও এখন দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হওয়ায় জাতীয় পতাকার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
তাই ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে গণ-বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে—এই ধরনের দাবি নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চালানো এক ধরনের বাকোয়াজ ছাড়া আর কিছু নয়।
ইসরায়েল এসব কারণে ইরানে হামলা চালায়নি। তাহলে এই হামলার পেছনে কী কারণ ছিল?
গাজায় যে গণহত্যামূলক অভিযান চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু জানেন, তাঁর সরকারের হাতে সময় ও বিকল্প দুই-ই ফুরিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সমাজ এমনকি আঞ্চলিক মিত্ররাও এখন স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের সমালোচনা শুরু করেছে। কেউ কেউ তো একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়ায় আছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের দখলদারির বৈধতা নিয়ে যে রায় দেবে, সেটিও অপেক্ষমাণ। এরই মধ্যে ইসরায়েল ও তার সেনাবাহিনী বহু হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তারপর তারা তা অস্বীকার করেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের মিথ্যা বলার প্রমাণ ধরা পড়েছে।
এ কথা বলার সুযোগ নেই যে ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়েছে। বরং, নেতানিয়াহু বহু বছর ধরেই এই হামলার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কেবল সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় এসে গেছে শুক্রবার।
এটি এক প্রকার মরিয়া চেষ্টা। সেই চেষ্টা বিশ্বের দৃষ্টি আবার ইসরায়েলের দিকে ফেরানো এবং ইসরায়েলকে সেই অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া যেখানে তারা সবকিছু করেও দায়মুক্ত থাকতে পারত।
ইরান এখনো বহু পশ্চিমা শক্তির চোখে একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসরায়েল যখন একতরফা ও প্রাণঘাতী হামলা চালায়, তখন ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি থেকে শুরু করে হলোকাস্ট পর্যন্ত নানা পুরোনো যুক্তি সামনে আনা হয়। এই ধরনের চেনা বক্তব্যের সাহায্যে নেতানিয়াহু চেষ্টা করছেন সেই পুরোনো ‘স্ট্যাটাস কু’ বা অপরাধ করেও শাস্তি না পাওয়ার অবস্থা আবার প্রতিষ্ঠা করতে; যাতে ইসরায়েল আবারও যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।এখন ইসরায়েলের কাছে ‘নিরাপত্তা’ মানে এক ধরনের বিশ্বাস, যা তারা সবচেয়ে পবিত্র নীতি বলে মানে। এটা তারা এমনভাবে দেখে, যেন এই ধারণাই তাদের পরিচয়ের মূল জায়গা।
কিন্তু আসলে, এই বিশ্বাসটা গড়ে উঠেছে ইহুদি শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার ওপর। মানে, তারা ধরে নেয় যে শুধু ইহুদিদের কর্তৃত্ব থাকলেই ইহুদিদের জীবন নিরাপদ থাকবে।
এই ‘নিরাপত্তা’র মানে হলো, ইসরায়েল যাকে খুশি, যতক্ষণ খুশি, যেখানে খুশি, যখন খুশি হত্যা করতে পারে, এবং এর জন্য কোনো জবাবদিহি করতে হয় না।
এই যে ‘নিরাপত্তা’র কথা ইসরায়েল বারবার বলছে, এটাই এখন তাদের সব কাজের পেছনে মূল চালিকাশক্তি। গাজা থেকে শুরু করে ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া এবং এখন ইরান পর্যন্ত—সব জায়গায় ইসরায়েল এই ‘নিরাপত্তা’র দোহাই দিয়েই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই ধরনের নিরাপত্তাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা থেমে থাকার নয়। এটা ক্রমেই বিস্তৃত হবে।
নেতানিয়াহু যখন ইরানে হামলা চালান, তখন তিনি অনেকটাই সর্বস্ব বাজি রেখে দেন। তাঁর লক্ষ্য একদিকে ইসরায়েলের জন্য একচেটিয়া দায়মুক্তির দাবি প্রতিষ্ঠা করা। মানে, যা ইচ্ছা করা যাবে, জবাবদিহির দরকার নেই।আরেকদিকে, তিনি নিজেকেও বাঁচাতে চাইছেন। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে শুরু করে ইসরায়েলের ভেতরের মামলা থেকে বাঁচতে চাইছেন।
প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপ কি সত্যিই তাঁকে রক্ষা করবে? ইসরায়েলিরা কি তাঁকে ক্ষমা করে দেবে? তাঁর ঘরোয়া ব্যর্থতা আর গাজায় যেসব ভয়ংকর কাজ তিনি করেছেন, সেসব কি সবাই ভুলে যাবে?
এখন যেভাবে অনেক ইসরায়েলি খুশি হচ্ছে, উল্লাস করছে, তাতে মনে হতে পারে—হ্যাঁ, হয়তো তাই হতে যাচ্ছে।
হার্ডওয়্যার দোকান থেকে খাবারের দোকান পর্যন্ত মানুষ লাইন দিয়ে জিনিসপত্র কিনছে। এতে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলিরা এখন ‘যেভাবে হোক, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো’ মানসিকতায় আছে।
এই ধরনের চুপচাপ, মানিয়ে নেওয়া মানুষজন হয়তো নেতানিয়াহুর জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু এমন মনোভাব একটি সচেতন ও সাহসী সমাজ গড়ে তোলার পথে বড় বাধা।
আল জাজিরা থেকে নেওয়া
ওরি গোল্ডবার্গ আল জাজিরার কলাম লেখক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১০
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ইসরাইলী বিশ্বের সবচেয়ে অসভ্য জাতি।