![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাইরাল জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। চিকিৎসকেরাও বলেন, বিশ্রাম নিতে হবে, তরল খেতে হবে। অথচ মনে হয়, অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তো জ্বর সেরে যেত দ্রুত। আসলে সারত না। কেন? কেন ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না? জেনে নিন অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে ও ভাইরাল রোগে করণীয়…আশপাশে অনেকেরই সর্দি-জ্বর-কাশি হচ্ছে। মূলত আবহাওয়ার কারণে। গরম-ঠান্ডা মিলে কেমন গুমোট ভাব। এর মধ্যে ভাইরাস আক্রমণ করছে দেহে। জ্বরে কাহিল অবস্থা। প্যারাসিটামল খেয়ে যেন কাজ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে হয়তো অনেকেরই মনে হয়, অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই তো ভালো হয়ে যেতাম! অথচ ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে লাভ নেই।
কেন ডাক্তার এ কথা বলেন? কারণ আছে। সেটা জানতে প্রথমে বুঝতে হবে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পার্থক্য এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতার পেছনের বিজ্ঞান।
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস: দুই ভিন্ন শত্রু
আমাদের বেশির ভাগ অসুস্থতার পেছনে দায়ী দুই ধরনের জীবাণু: ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস। অতি খুদে এই জীবদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। সে জন্য লাগে মাইক্রোস্কোপ। কিন্তু খুদে এই জীবেরাই কেমন কাত করে ফেলে আমাদের! করোনার সময় সে তো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। একটু খেয়াল করলেই মনে পড়বে, সে সময়ও আমাদের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেননি ডাক্তাররা। এর কারণ, ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া দুটো একদম আলাদা। আর এই ভিন্নতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজের মূল রহস্য।
ব্যাকটেরিয়া আসলে একধরনের এককোষী প্রাণ। আদিপ্রাণ। ব্যাকটেরিয়ার কোষকে বলা হয় প্রোক্যারিওটিক কোষ বা আদি কোষ। অর্থাৎ এই কোষগুলো খুব সুগঠিত নয়। এর ভেতরে মুক্তভাবে ভেসে বেড়ায় জেনেটিক পদার্থ। ডিএনএ বা আরএনএ। যাদের ভেতরে ডিএনএ থাকে, সেগুলোকে ডিএনএ ব্যাকটেরিয়া বলে। আর আরএনএ থাকলে বলা হয় আরএনএ ব্যাকটেরিয়া। ভাইরাসের সঙ্গে এদের মূল পার্থক্য হলো, আদিমতম হলেও এগুলো একধরনের কোষ, মানবদেহ বা কোনোরকম পোষকদেহ ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। ভাইরাসের জন্য বিষয়টা তা নয়। ভাইরাস এমনিতে নিষ্ক্রিয় থাকে। শুধু পোষকদেহের সংস্পর্শে এলেই এরা সক্রিয় বা অ্যাকটিভেট হয়, শুরু করে নিজের কাজ। এই কাজটা কিন্তু আর কিছু নয়। নিজের কপি তৈরি করা। অর্থাৎ প্রজনন করা। নিজের সংখ্যা বাড়ানো। এই কাজ করতে গিয়েই এরা মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে।
জিনিসটা কীরকম? জিনিসটা আসলে ডজনখানেক জিন, একটা প্রোটিনের আবরণে মোড়া। অল্প কিছু ভাইরাসের দেহে অবশ্য একশ র বেশি জিন থাকে। আর কিছু ব্যতিক্রমী ভাইরাসের জিনবিন্যাস ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও বড় হয়! বিজ্ঞানীদের ধারণা, অন্তত ২১৯ ধরনের ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। এদের আক্রমণেই আমাদের সর্দি-কাশি, ফ্লু বা জ্বর হয়।যে কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসকে ঠেকাতে পারে না
এটুকু যদি বুঝে থাকেন, তাহলে বলি—অ্যান্টিবায়োটিক আসলে কাজ করে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে। নামটা সে কারণেই ‘অ্যান্টিবায়োটিক’। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া কোষের কোষপ্রাচীর, অর্থাৎ কোষের বাইরের দেয়াল ভেঙে ফেলে। এতে ব্যাকটেরিয়ার ভেতরের অংশ ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। তবে সব অ্যান্টিবায়োটিক এভাবে কাজ করে না। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া আর নতুন ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে না। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আবার ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন, এমন প্রোটিন তৈরি আটকে দেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না।
কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না কেন? কারণটা খুব সহজ করে বললে—অ্যান্টিবায়োটিক ওভাবে বানানোই হয় না যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে। একটা উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, অ্যান্টিবায়োটিককে আপনি একধরনের চাবি ভাবতে পারেন। এই চাবি দিয়ে যে তালা খোলে, সেটি ব্যাকটেরিয়াতে থাকে, ভাইরাসে থাকে না। যাঁরা আরেকটু বিস্তারিত জানতে চান, তাঁদের জন্য এবারে বিষয়টা খোলাসা করা যাক।
ভাইরাসের আসলে কোনো কোষপ্রাচীরই নেই। এর গঠন একদম সরল। সাধারণত একটি প্রোটিনের খোলস এবং ভেতরে জেনেটিক উপাদান (ডিএনএ বা আরএনএ) থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের এ ধরনের সরল গঠনের ওপর কাজ করতে পারে না। আবার ভাইরাস নিজে বংশবৃদ্ধি করে না, এ জন্য সে পোষকদেহের কোষকে ব্যবহার করে। অর্থাৎ আমাদের কোষকেই এটি ব্যবহার করে। তা ছাড়া ব্যাকটেরিয়ার মতো এর নিজস্ব বিপাক প্রক্রিয়াও নেই। মোট কথা, ভাইরাস যখন আমাদের দেহের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তখন এটি কোষের ভেতরের প্রক্রিয়াগুলোকেই নিজের কাজে—নিজের কপি তৈরির কাজে ব্যবহার করে। অ্যান্টিবায়োটিক কোষের ভেতরে এসব ভাইরাসকে আলাদা করে চিহ্নিতই করতে পারে না।ভাইরাসকে ঠেকাতে—উদাহরণের তালার চাবি বানাতে—নির্দিষ্টভাবে ভ্যাকসিন নকশা করতে হয়, বানাতে হয়। এক ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবার অন্য ভাইরাসের ওপর কাজ করে না। কারণ ওটাই, সহজভাবে বললে, তালা ও চাবি মেলে না। করোনার সময় এ জন্যই প্রতিটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনকে ঠেকাতে নতুন নতুন ভ্যাকসিন বানাতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। সেই কাজটি তাঁরা ভালোভাবে করেছেন বলেই ঠেকানো সম্ভব হয়েছে করোনা অতিমারি।
তাহলে ভাইরাল জ্বরে কী করতে হবে
ভাইরাল জ্বর বা সর্দি, কাশি হলে শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে, প্রচুর তরল পান করতে হবে এবং সুষম খাবার খেতে হবে। আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ নেওয়া যেতে পারে। যদি উপসর্গগুলো গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু সাধারণ প্যারাসিটামলও নিজে নিজে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ সময় খাওয়া উচিৎ নয়। আর অ্যান্টিবায়োটিক তো নিজে নিজে খাওয়া যাবেই না।
নাবিলা সুলতানা
শিক্ষার্থী: পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৫০
শাহ আজিজ বলেছেন: আমারও অনেক জ্ঞান হল । ধন্যবাদ নাবিলাকে ।
২| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৩৫
লোকমানুষ বলেছেন: সময় উপযোগী লেখা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। কিছু বিষয় একদমই নতুন করে জানলাম। আশা করছি পোষ্টটি অনেকের উপকারে আসবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৪৪
কাঁউটাল বলেছেন: চমৎকার লেখা।