![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদী। এই দুটি নদী পেরোলেই চোখজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন। নদীপারের গ্রামের পথে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে চরের ওপর সারি সারি কেওড়াগাছ। মনে হয়, যেন ওপারের সুন্দরবনের এক ছায়া নেমে এসেছে এপারেও। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে ডুমুরের মতো সবুজ কেওড়া ফল।
সম্প্রতি শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা হয় কয়রার পাথরখালী গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এপারের চরের গাছগুলোন কিন্তু আমাগের লাগানো না। ওপারের সুন্দরবন থেইকে জোয়ারে ভাইসে আসা কেওড়ার ফল চরে আটকে গাছ হইছে। এখন দেখেন, পুরো চরে কেওড়া বন। গাছের ফলগুলান আরও মাসখানেক পাওয়া যাবে।’
আবুল হাসানের কথা শেষ না হতেই তাঁর পাশ থেকে কথা ধরলেন ষাটোর্ধ্ব রাজিয়া বেগম। বললেন, ‘এই কেওড়া বনডা হইছে আইলার পর, ২০০৯ সালে। তার আগে চরে এমন কিচ্ছু ছিল না। এখন দেখেন কেমন থোকা থোকা ফল ধইরে আছে গাছে। এই কেওড়া ফল আমরা খাই, বাচ্চারাও খায়। কেউ লবণ মেখে কাঁচা খায়, কেউ রন্না করে। আবার অনেকে আচার-চাটনি বানায়। খাইলে টক টক লাগে, কিন্তু দারুণ মজা।’
রাজিয়া বেগমের মুখে গল্প শুনে কয়রা নদীর তীরবর্তী মহেশ্বরীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা আবদুল হাকিম ও আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা জেলে। তাঁদের সঙ্গে ছোট ডিঙিনৌকায় উঠেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেন, এখন সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে সুন্দরবন ও লোকালয়ের মাঝখানে বয়ে চলা নদীতে চলাচলে বাধা নেই। নৌকায় সুন্দরবনের কিনারা ঘেঁষে এগোতেই চোখে পড়ে কেওড়ার সবুজ বন, গাছের ডালে থোকা থোকা ফল। নদীর হালকা স্রোত আর পাখির কিচিরমিচির, যেন অপার্থিব সেই মুহূর্ত। বৈঠা বাইতে বাইতে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেওড়ার ডাল রান্না করে খাই। আবার এই কেওড়া সেদ্ধ করে বড়শিতে গেঁথে মাছ ধরি, বড় পাঙাশ পর্যন্ত উঠে আসে।’ পাশ থেকে হাকিম হেসে বলেন, ‘এই ফল শুধু আমরা না, সুন্দরবনের হরিণ আর বানরও খায়। বানর গাছে উঠে ফল পাড়ে, পাতা ছিঁড়ে ফেলে। হরিণ নিচে দাঁড়িয়ে সেই পাতা খায়। তাদের একটা বোঝাপড়া আছে। যখন বাঘ আসে, বানর চিৎকার দিয়ে হরিণকে সাবধান করে।’
নৌকা যখন কেওড়া বনের কিনারায় পৌঁছে, দেখা যায়, এক গাছে কয়েকটি বানর কেওড়া খেতে ব্যস্ত। মানুষের দল দেখে লাফিয়ে গহিন জঙ্গলে পালিয়ে যায়। জেলেরা জানালেন, সুন্দরবনের মধুর একটি বড় অংশ আসে কেওড়ার ফুল থেকে। শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত বনে কেওড়ার ফল পাওয়া যায়।
ফিরে এসে লোকালয়ের বাজার দেখা গেল কেওড়ায় ভরপুর। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। দোকানি জাফর মোল্লা বলেন, আগে কেওড়া ফল বাজারে খুব একটা বিক্রি হতো না, এখন অনেকেই খোঁজ করেন।কেওড়া ফল শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যগুণেও ভরপুর। উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেওড়া ফল ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ডায়রিয়া, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। এতে থাকা উপাদান খাদ্য ও প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাঁর মতে, নদীর চরের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কেওড়ার চাষ শুরু হলে উপকূলের মানুষের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।
তবে কেওড়ার এই সবুজ বিস্তারে যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি আছে নিয়মের বেড়াজালও। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরের কেওড়াগাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা আইনত দণ্ডনীয়। তবে চরের জমিতে, বিশেষ করে লোকালয়ে যদি বাণিজ্যিক চাষ হয়; তাহলে তা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য দারুণ সুফল বয়ে আনবে।
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২২
শাহ আজিজ বলেছেন: বিধিনিষেধ ? কোথায় ? আসলে বন রক্ষার একটি উপায় হিসাবে বনের ভিতর থেকে কেওড়া সংগ্রহ নিষিদ্ধ । জোয়ারে বনের চারদিকের নদী আর খাল ভর্তি থাকে ভাসমান কেওড়ায় । বনের পাশের গ্রামগুলোতে দুপুরে কেওড়ার খাট্টায় বা টকে খাবার হয় । আমার কেওড়ার খাট্টা খুব প্রিয় ।
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আপনি লিখেছেন-
কেওড়ার এই সবুজ বিস্তারে যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি আছে নিয়মের বেড়াজালও। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরের কেওড়াগাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা আইনত দণ্ডনীয়।
এই বিধিনিষেধের কথা বলছি।
২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১১
শাহ আজিজ বলেছেন: হুম বুঝেছি ।
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৬
বিজন রয় বলেছেন: আমার জানা আছে।
২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১৩
শাহ আজিজ বলেছেন: খুব ভাল ।
৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: এই বছরের শেষে সুন্দরবন যাবো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:১১
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
সুন্দর একটি প্রতিবেদন।
কেওড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Sonneratia apetala। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ এবং ২০ মিটারের বেশি লম্বা হতে পারে। কেওড়া ফল সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়।
তবে, কেওড়া ফলকে কেন বিধিনিষেধের মধ্যে আনা হলো, তা জানতে পারলাম না।