নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইদুল ইসলাম

শাহেদ সাইদ

এখনও বেঁচে আছি

শাহেদ সাইদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার কলকাতা ৭

২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৪৭

আবার কলকাতা ৬
নিউ এম্পায়ার

এক দুপুরে ছোট মেয়ে বলল, বাবা কস্তুরিতে আর খাবোনা, অন্য কোথাও চল।
- অন্য কোথায়? প্রিন্সে খাবা?
- না প্রিন্স তো ওই একই খাবার।
- একই খাবার মানে,তুমি জানলা কী ভাবে? আমরা তো প্রিন্সে যাইনি
- বাবা এটা তো মেইন রোডে, কস্তুরির জন্যে ডানে না গিয়ে তুমি যদি সোজা ফায়ার ব্রিগেডের দিকে যেতে থাকো, তোমার রাইট সাইডে পড়বে। আগেরবার সাবওয়েতে যাবার সময় ঢুকেছিলাম, তোমার মনে নেই।

কণ্যার স্মৃতিশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মির্জা গালিব স্ট্রিটেই প্রিন্স রেস্তোরা, কস্তুরির সাথে পাল্লা দেয়ার ইচ্ছে আছে, সাধ্য নেই। আশে পাশে আরও অনেকগুলি রেস্তোরা আছে, খাবার জন্যে আমার পছন্দ ইসলামী ঈয়াদগার হোটেল। আমাদের হোটেলের সবচেয়ে কাছে এটি। বউ বাচ্চার দারূণ আপত্তি সেখানে বসতে। স্পেশাস নয়, ভেতরে একটু অন্ধকার সিঁড়ি ঘরের ভাব, রান্নাবান্নার অর্ধেক হয় হোটেলের সামনের ফুটপাথে। আমার ভালো লাগে, কারণ এই তল্লাটে একটি মাত্র হোটেল যেখানে গরুর গোস্ত রান্না হয় প্রকাশ্যে। আট টাকার যে শিক কাবাব পাওয়া যায়, তার স্বাদও তুলনাহীন, আমি খাবার কিনতে গেলে একটু খাতির টাতিরও করে। সেই হোটেলের নাম কন্ঠ ভোটেই বাতিল হয়ে গেল। বললাম, ঠিকাসে চলো দাওয়াতে যাই,ওখানে কাচ্চি বিরানী পাওয়া যায়। মার্কুইস স্ট্রিটে ঢুকে, কস্তুরিকে পশ্চিমে রেখে গজ বিশেক এগিয়ে গেলেই হবে।

দীপা বলল, তোমার এই সব এক্সপেরিমেন্ট রাখো তো, কস্তুরি চিনি, ওরা রাঁধেও ভালো, কস্তুরিতেই চলো। ছোট মেয়ের মুখ কালো হয়ে গেলো, বলল, ‘আমিতো আসলে সাবওয়েতে যেতে চাচ্ছি’। ওদের স্যান্ডুইচ ভালো না? আর তোমরা ভেজিটেবল খেতে বল, ওরা তো দেয় ফ্রেশ ভেজিটেবল।
আমার মেয়ের এই জ্ঞান টুকু হয়েছে সিঙ্গাপুরে । টাটকা সব্জি আর নানান রকম সস দিয়ে বানানো সাবওয়ের স্যান্ডউইচ আমারও ভালো লেগেছিলো। তাই গতবার কলকাতায় সাবওয়ে পেয়ে মেয়েদের মত আমিও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলাম। বললাম, ঠিকাসে চলো।

প্রিন্স রেস্তোরা থেকে নিউ মার্কেটের দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলেই, ডিপার্ট্মেন্টাল স্টোর দিল মাঙ্গে মোর, তার সাথে লাগোয়া। মিনিট দুয়েক হেটে সাবওয়েতে পৌছে শুনলাম ওদের এই আউটলেটটি বন্ধ হয়ে গেছে।

সাবওয়ের আরেকটি দোকান আছে মির্জা গালিব আর পার্ক স্ট্রিট যেখানে মিলেছে সেখানে, বেঙ্গল হূন্দাই এর শোরুমের কাছে। দীপা বলল, ‘উলটো ঘুরে অতদূর যাবেনা। তার চেয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়া ভালো। টাকা ভাঙ্গানোর দরকার ছিলো। বললাম, ‘ওকে, আগে সোনাভাই এর দোকানে চলো টাকা বদলানো যাবে, আর ওনার কাছে আরেকটু জানা যাবে কাছে পিঠে কেএফসি টি যদি থাকে।
মির্জাগালিব স্ট্রিট, সাদার স্ট্রিট, ডঃ ইসহাক আহমেদ রোডে অসংখ্য মানি এক্সচেঞ্জ আছে। আমি দু’এক বার ঘুরে ফিরে দেখেছি, সোহাগের সোনাভাইয়ের রেটটা অন্যদের চেয়ে ভালো। এখন আর দর জিজ্ঞাসা করতেও ইচ্ছে করেনা। ডলার, বাংলাদেশি টাকা যা থাকে ওনার হাতে দিয়ে দি। বাংলা টাকার (বাংলাদেশি) ক্ষেত্রে হাজারি নোট নাহলে সোনাভাইও ভালো দাম দিতে পারেন না। হাজার টাকার নোটে ৭৮০ রুপি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে কিনলেও তার চেয়ে কম পাওয়া যায়। ১০০ ডলারের নোট হলে সোনাভাই দেন ৬৩০০ রুপি। কম বেশিও হয়। সেটা নির্ভর করে ব্যাংক খোলা না বন্ধ তার ওপর।

সোনা ভাই বললেন, নিঊ মার্কেটেই যখুন যাচ্চেন, তো ওদিকে খেয়ে নেবেন। পিজা হাট, ডোমিনোজ পিজা আরও কী কী দোকান আছে, নিউমার্কেটের পাশে। জিগ্যেস করলাম, কোন পাশে দাদা?
- ওই যো নিউ এম্পায়ার সিনেমা হলটা আছেনা ওটার সাথেই।

হুমায়ুন প্লেস

এবার মনে পড়লো, নিউ মার্কেটের পশ্চিম সীমানা ঘেঁসে বার্টম্যান স্ট্রিট তার পশ্চিম ধারে হুমায়নু প্লেস, এখানেই নিউ এম্পায়ার সিনেমা। এই সিনেমা হলটির সম্পর্কে একটু আধটু শুনেছিলাম।
১৯৩২ সালে নির্মিত হয়েছিলো নিউ এম্পায়ার অডিটোরিয়াম। ইংরেজ আমলে, থিয়েটার ছাড়াও ব্যালে নাচ, নাটকের আসর সহ জমজমাটা সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হত এখানে। ১৯৩২ সালে রবীন্দ্র নাথের পরিচালনায় ন’টির পুজা নাটকটি অভিনীত হয়েছিলো এখানে। এখন আর নাটকের আসর বসেনা। সিনেমা চলে সারা সপ্তাহ।

নিউ মার্কেটের এই এলাকায় এলে আমার অন্য রকম লাগে। রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হয় আমি যেন পুরনো কোন সিনেমার দৃশ্যে ঢুকে পড়েছি। প্রাচীন আমলের দালান কোঠার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। সরু রাস্তা, হকারদের হাকডাক, ফলওয়ালাদের ডাকাডাকি, ঝাল মূড়ি, ফুচকা (পানি পুরি), লেম্বু পানির প্রলোভন আমার হাটার গতি কমিয়ে দেয় । দীপারও সমান আগ্রহ এসব ব্যাপারে। মেয়ে দু’টির একেবারেই অপছন্দ এই ভীড় ভাট্টা, রাস্তার খাবার।

হকারদের হাঁক ডাক

হুমায়ুন প্লেসে এবং তাঁর আশে পাশে কেএফসি, ডোমিনো’জ পিজাসহ বেশ কয়েকটা খাবারের দোকান আছে। মেয়েদের পছন্দে আমরা গেলাম নিউ এম্পায়ার সিনেমার নিচের কেএফসিতে। আমার সিনেমা দেখার ইচ্ছে হচ্ছিল, মারদাঙ্গা একটা হিন্দি সিনেমা চলছিলো তাই আর সহস করলাম না।

কে এফসির এই আউটলেটের ২৯ টাকার বার্গার থেকে ১৯৯ টাকার রক বক্স পর্যন্ত পাওয়া যায় ৭৯ টাকার ভেজি রাইস থেকে ১৭৫ টাকার চিকেন রাইস মিলও অনেকের পছন্দ হতে পারে। ২৯ টাকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে নানান রকম ক্রাশার পাওয়া যায়।

এই রেষ্টুরেন্ট বেশ কয়েকজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবিন্ধী কাউন্টার ক্লার্ক দেখে অবাক হলাম। নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে তাদের কোন হীনমন্যতা আছে বলে মনে হলনা। দারূন দক্ষতায় তাদের কাস্টমার সামলাতে দেখে মুগ্ধ হ্যে গেলাম।
পরিচ্ছন্নতার অভাব
একটা জিনিষ অবশ্য খুব ভালো লাগলোনা। আমাদের দেশের কেএফসির মত যেমন ঝকঝকে তকতকে নয় এই আঊট লেট টি। খাবারের শেষ দিকে আমার ছোট মেয়ে পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত হরেক রকম ত্রুটি খুঁজে বের করতে লাগল। বললাম আগে বলনি কেন? তার সোজা সাপ্টা উত্তর তখন তো ক্ষুধায় চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:১৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমিও কলকাতায় কয়েকবার গিয়েছিলাম। সময়টা '৭৮ থেকে '৮৫ মাঝে।। বেশ কয়েকবার।। উঠতাম সাধারনতঃ অশোকায় বা বড়বাজারের স্টান্ডার্ড বা আশেপাশের হোটেলে।। গিয়েছি ধর্মতলা,পিকনিক গার্ডেন,বেলঘড়িয়া আর নিউমার্কেটে বসতো আড্ডা।। আর তখন এতো খুটিনাটি দেখার চোখ তখন ছিলো না তাই অনেককিছুই আজ মনে নেই।। আপনার লেখায় সেই পুরানোকে দেখছি নূতন করে।। স্থানের কথা মনে না পড়লেও স্মৃতিগুলি উকিঁ দিয়ে যাচ্ছে।।

২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:২৭

শাহেদ সাইদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। দ

২| ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:১১

কোলড বলেছেন: I went there in 2011 and the airport was a shit hole. Pleasantly surprised that Dumdum airport beat Dhaka airport in being a shithole. Stayed 1 night in Calcutta and walked 2 miles on Park street...didnt like it all.

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:১৯

শাহেদ সাইদ বলেছেন: দমদম বিমান বন্দরের নাম এখন নেতাজী সুভষ চন্দ্র এয়ারপোর্ট।
এয়ার পোর্ট ঢাকার তুলনায় ভালোই বলতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা বদলাচ্ছে।

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৪০

ইমরান আশফাক বলেছেন: ভালো লাগলো।

২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬

শাহেদ সাইদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:২৫

মন্জুরুল আলম বলেছেন: সুন্দর লেখা....

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

শাহেদ সাইদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৫| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

সুরঞ্জনা বলেছেন: আগে প্রিন্সের সাথে টেক্কা দেয়ার কেউ ছিলোনা। এখন কাস্তুরী সে জায়গা দখল করেছে। কাস্তুরীর কচু পাতা কুচি সহ সর্ষে চিংড়ীটা দারুন! গত মার্চে ঘুরে এলাম। বেশীর ভাগ সময় দাওয়াতেই খেয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.