![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারাহদের ঘরে যে বিড়ালের ছবিটা টাঙ্গানো আছে সেটা দেখে তোমরা চমকে উঠতে পারো। এমনিতে একটা সোজা সরল কমলা রঙের বিড়াল, কিন্তু তুমি যদিক দিয়েই তার চোখের দিকে তাকাও, দেখবে বিড়ালটা তোমার দিকে ড্যাবডেবিয়ে চেয়ে আছে। বিড়ালটার একটা কান লাল আর একটা সবুজ।
এরকম অদ্ভুত আবার বিড়াল হয় নাকি?
সেই কথাইতো তোমাদের বলতে যাচ্ছি ।
একদিন সারাহ’র মা গিয়েছেন বাইরে। বাবাও বাসায় ছিলেননা। ছোট বোনটাকে দেখে রাখার দায়িত্ব পড়লো সারাহ’র উপর। মোটে স্ট্যাডার্ড টু’তে পড়লে কী হবে, ছোট বোনকে সে ঠিকই সামলাতে পারে । অবশ্য ছোটবোন শ্রেয়াও খুব লক্ষী মেয়ে। সে পড়ে প্লে গ্রুপে। অনেক পড়া লেখা তার জানা। সে স্বরে ও থেকে ঔ পর্যন্ত বলতে পারে। ABCD পারে। ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গুনতেও পারে। তবে তেরো বলতে পারে না, এগারো বারোর পর বলে তরো, পনের, সতর। এই নিয়ে সারাহ হেসেছিলো একদিন। এখন হাসি পেলেও হাসেনা। শ্রেয়া মন খারপ করে হাসলে।
যাইহোক শ্রেয়া সেদিন মাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে চাচ্ছিলো না। বুবুয়া তাকে গল্প শোনাতে চাইলো। ওদের বাসায় কাজ করে যে ইয়াসমিন আপু সেও বলল, চলো আমরা খেলি। শ্রেয়ার কিছুই ভাল্লাগছিলোনা। সে বলল, মামমাম কখন আসবে?
সারাহ এখন একা থাকতে শিখে গিয়েছে। ওরতো মাকে ছাড়াই স্কুলে থাকতে হয় পাঁচ ঘন্টা।ছোট বনের মন ভালো করতে ও তার কাগজ, রঙ পেন্সিল সব তাকে দিয়ে দিলো, শ্রেয়ার কান্না তবু থামছিলো না। সারাহ তখন বলল, চল আপি আমরা দু’জন মিলে একটা ছবি আঁকি।
শ্রেয়া বলল, আমিতো বল আর গোল্লা ছাড়া কিছুই আঁকতে পারিনা।
- কেন! প্রজাপতি?
- ওইটা তো কঠিন
- বিড়াল?
- ওইটা তো আরও কঠিন
- ঠিক আছে, আমরা দু’জনে মিলে আঁকি, রঙও করবো দু’জনে মিলে
- ঠিক আছে, শুধু তুমি আর আমি কিন্তু
- বুয়া? ইয়াসমিন আপু?
- না। ওরা যদি আমার আঁকা দেখে হাসে!
সারাহ বলল, ঠিক আছে। তুমি কিন্তু কাঁদবা না। তারপর ঘরের দরজা বন্ধ করে মেঝেতে বসেই দুই বোন ছবি আঁকা শুরু করলো।
সারাহ আগে কখনও বিড়াল আগেনি। ওদের দুই বোনেরই বিড়াল খুব পছন্দ। মামমাম পছন্দ করেনা বলে,মেজ চাচীর বিড়ালটা ওরা আনতে পারেনি বাসায়। কী আর করা, ঠিকঠাক মত বিড়ালের ছবিটা আঁকা হলে শ্রেয়া অনেক খুশি হবে।
সারাহ শুরু করলো বিড়ালের মুখ দিয়ে। শ্রেয়া বলল, আপ্পি মুখটাতো বলের মত হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে একটু মন খারাপ হল সারাহ’র। মনে মনে ভাবলো, ইস! আমার যদি একটা জাদুর পেন্সিল থাকতো, যা ইচ্ছে আকার মত। মা অবশ্য বলেন, বিসমিল্লাহ বলে কোন কাজ শুরু করলে কাজটা ঠিকঠাক হয়ে যায়। ইরেজার দিয়ে বিড়ালের মুখটাকে মুছে, বিসমিল্লাহ বলে আবার শুরু করলো আঁকা। অনেক কষ্ট করে আবার আঁকলো মুখটা। মাথার দু’পাশে দিলো দু’টো কান। চোখ দু’টি দিলো সুন্দর করে। গোঁফগুলো আঁকার পর সত্যিকারের বিড়ালের মত দেখাতে লাগলো।চোখ দু’টো খোলা, সামনে তাকানো।
বিড়ালের চোখের দিকে চোখ পড়তেই মনে হল, কাগজটা যেন একটু নড়ে উঠলো। শ্রেয়া বলল, আপ্পি বিড়ালটা আমার দিকে তাকাচ্ছে। ভয় পেয়ে গেলো সারাহ। সত্যিই মনে হলো তাকাচ্ছে। একেবারে বোনের কোলের ভেতর ঢুকে গেলো শ্রেয়া। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না সারাহ।এমন সময় ডেকে উঠলো বিড়ালটা। হা আ ই, ম্যা অ্যা উ। শ্রেয়া বলল, শুনতে পেলে আপ্পি? সারাহ ভাবছিল দরজা খুলে দৌড় দেবে। এমন সময় বিড়ালটা কথা বলে উঠলো মানুষের মত। ম্যাও...... ভয়...... মিয়াউ...... পেয়োনা ...... ম্যাও ...... মেয়েরা।
তাতে কী ভয় কাটে ? আরও ভয় পেয়ে গেলো দুই বোন। বিড়াল বলল মিয়াও...... আমার পা কোথায়? ম্যাও ......লেজ কই? ওগুলো আঁকবে না?
সারাহ ভয়ে ভয়ে বলল, আমি? মানুষের মত হেসে উঠলো বিড়ালটা। আপু আমার তো একটা রং ও লাগবে, নাকি মিয়াও।
শ্রেয়া বলল, তুমি কথা বলছো কী ভাবে আমরা ভয় পাই না!
- আমরা বিড়ালরা তো কথা বলতে পারি, মিয়াও
- না , তোমরা শধু বলতে পারো ম্যাও
- আমরা সব কথাই বলি, বড়রা বোঝেনা। আমাদের যারা ভালোবাসেতারা বুঝতে পারে। তোমরাতো আমার বন্ধু
সারাহদের ভয় একটু একটু কমতে লাগলো। তারা বলল, তুমিতো ছবির বিড়াল, তুমি এসব কথা বলতে পারোনা।
- না, আমার পা গুলো আঁকো দেখবা আমি হাটতেও পারি।
- সত্যিকারের বিড়ালের মত?
- একেই দ্যাখোনা।
সারাহ পেন্সিল দিয়ে বিরালের শরীর আর পা আঁকতে বসলো।
পেন্সিলটা নিজেই সারাহ’র হাতের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে একে ফেললো একটি আস্ত বিড়াল। আর কী আশ্চর্য। সত্যিকারের বিড়ালের মত উঠে বসলো সেটা । বলল, রঙ কই? আমি একটা কাগুজে বেড়াল হয়ে থাকতে চাইনা। ম্যাও...... মি ই আ ও...
খুব মজা হল, বোন দু’টির। শ্রেয়া বলল, আমি লাল রং দিতে চাই।আমার পছন্দ লাল।
লাল কখনও বিড়াল হয়? আমি দেবো কমলা আরা সাদা, আপ্পি তুমিও তাই দাও। বলল, সারাহ। সে শুরু করার আগেই শ্রেয়া তাড়াহুড়ো করে রাঙিয়ে ফেলল একটি কান। সেটি হল লাল।
রেগে গেল সারাহ, দ্যাখোনা আমি কী রঙ দিচ্ছি, তুমিও তাই দাও।
বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলোনা শ্রেয়ার।হাতের কাছে ছিলো সবুজ, সেটাই দিয়ে দিল আর এক কানে।
এর পর বিড়ালের সাথে মজা করে খেলতে লাগলো দুই বোন।ওদের ঘর থেকে জোরে জোরে হাসির শব্দ শুনে বুয়া বলল, তুমরা কী অর আফু? সত্যি কথাটা প্রায় বলেই ফেলেছিলো শ্রেয়া। বিড়াল্টা দুই পায়ের উপর বসে, সামনের পা দু’টো নেড়ে নিষেধ করল। সারাহ শুধু বলল, বুয়া আমরা খেলি।
একটু পরে বিড়াল বলল, তোমরা ঘুমাবে না আপুরা?
- না, তুমি যদি চলে যাও! বলল দু’বোন
- না । আমি আছি
- মামমাম যদি এসে তোমাকে বের করে দেয়?
- চিন্তার কথা,বলল বিড়াল, এক কাজ করলে কেমন হয়? দেয়ালের খালি ফ্রেমে আমাকে যদি রেখে দাও
- তুমি থাকবে কী ভাবে? ওখানে তো থাকে ছবি
- আমি ছবি হয়েই থাকবো শুধু তোমরা দু’জন আর তোমদের বন্ধুরা এলে নেমে আসবো ফ্রেম থেকে।
একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দুই বোন একসাথে বলে উঠলো, ঠিক। তারপর ফ্রেমে ভরে টাঙ্গিয়ে দিলো দেয়ালে।
এতক্ষণ খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো দুই বোন। বিছানায় শুয়ে ফ্রেমের বিড়ালের সাথে গল্প করতে করতে ঘুমে জড়িয়ে এলো চোখ।
বিকেলে মা এসে দেখলেন লক্ষী হয়ে ঘুমোচ্ছে দুই মেয়ে। আর দেয়ালের খালি ফ্রেমটায় ঝুলছে অদ্ভুত একটি বিড়ালের ছবি। তার এক কান সবুজ আর একটি লাল। বিড়ালের চোখে চোখ পড়তেই একটু চমকে গেলেন তিনি। চোখ দু’টো কি নড়ছে? আশ্চর্য!
০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৬
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। মনে থাকবে আপনার পরামর্শ
২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২১
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মিষ্টি গল্প। খুব ভালো লেগেছে
০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৭
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: শিশুতোষ গল্প চমৎকার হয়েছে। ভালোলাগার সাথে +++++
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৮
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আপনার মন্তব্য এবং শুভ কামনার জন্যে অজস্র ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
নীল আকাশ বলেছেন: অসাধারন হয়েছে । আরেক টু বড় করেন গল্প টা ।