নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাঁদে সবাই, কেউ নিরবে কাঁদে, কেউ প্রকাশ্য । আমি দ্বিতীয় দলে ....।

পরাধীন বাংগালী

নিজেকে চিনছি আজও...

পরাধীন বাংগালী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ চিঠি (বাস্তব)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

প্রিয়তমেষু,
তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা আমার শেষ চিঠি । আজ এই চিঠির মাধ্যমে শেষ হতে যাচ্ছে পনেরোটি বছর ধরে, কুঁড়ে কুঁড়ে ক্ষয়ে যাওয়া আমার ভালোবাসার ইতিহাস ।
প্রেমিক হিসেবে নয়, একজন পৌরষত্ব সম্পন্ন মানব হিসেবে বলছি, আজ থেকে পনেরোটি বছর আগে তোমাকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করেছি,
এখনও একই ভাবে তোমাকে নিয়ে চিন্তা করি ।
তোমার নারীত্ব কে বোঝার জন্য, কৈশোরে তোমার প্রতি যে রকম পাগল ছিলাম এখনও সেরকম পাগল আমি ।
কিশোর বয়সের সকল স্মৃতিগুলো মনে করে দেখ, আমি তোমায় কিভাবে অনুভব করতাম । শুধু একটি নারী শরীরের সাথে একটি পুরুষ শরীরের মিলন নয়, দুইটি মনের
ভাবের আদান প্রদান নয়, তোমাকে নিয়ে ভাবনা এখনও অশারীরিক কিছু, যা সকল আত্মিক মিলনের উর্ধ্বে ।
তোমার কালো টলমলে চোখের দীঘীতে অতলে হারিয়ে যাবো, সেই ভয়ে তোমার চোখে তাকাইনি । তোমার গাঢ় ঠোট অগ্নীয়গীরির চাইতেও বেশি লাল, পুড়ে যাবো,
সেই ভয়ে তোমার ঠোট স্পর্শ করিনি ।
তোমার স্তন হিমালয়ের সাথে তুলনীয়, এতটা দুঃসাহস আমার ছিলন যে হিমালয় জয় করবো, তাই ভুলেও সেই পথ মাড়াইনি ।
তোমার কোমরের ভাজ ঢেউ তোলা নদীর মত, আমি সাঁতার জানিনা তাই সেই নদীতে নামিনি ।
সত্যি কথা বলতে কি, এই পনেরোটি বছরে তোমাকে ভালো করে দেখার সাহসও আমি পায়নি ।

প্রাণপুষ্পী,
বুঝ হওয়ার আগে হয়তো বুঝেছিলাম, তুমি আমার স্বপ্নের রাজকন্যা । কখনো রাজকন্যা দেখিনি, তাই তোমায় দেখে বড় হয়েছি আর মনে মনে ভেবেই চলেছি
রাজকন্যারা বুঝি এমনই হয় ।
আমি হয়তো কোন ভাবেই তোমার স্বপ্ন পুরুষ ছিলাম না, কিন্তু নিজের যত ভালো যাই কিছু ছিল সব তোমার কাছে উপস্থাপন করেছি ।
কখনো কোন খারাপ কিছু তোমাকে বলিনি পাছে তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দাও সেই ভয়ে ।
সব সময় চেষ্টা করেছি নিজেকে যত আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেটা ছিল আমার আচার, ব্যাবহার, কর্মে কখনো পোষাক-পরিচ্ছেদে নয় ।
বাংলা উপন্যাসের নায়কের যেরকম হয়ে থাকে সহজ, সরল, রোমান্টিক ভদ্র গোছের মানুষ ঠিক সেরকম ভাবে ।
কিন্তু আমি তো জানতাম না তোমার মত মেয়েরা পশ্চিমানায়কদের পছন্দ করে, পশ্চিম বাংলার গেয়ো নায়কদেরকে নয় ।
তোমার স্বপ্নের ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজপুত্র হতে আমি পারিনি আর পারবোওনা কোনদিন জানি, তবু তোমাকেই
আমার রাজকন্যা ভাবতে ভালোলাগে, সবসময়ই ।

প্রেয়সী,
জীবনে তোমাকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারিনি, হয়তো আর পারবোওনা । কারন আমার এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তোমাকে ভালোবেসে পাওয়া ।
তুমি যদি বলো, আমি সব করতে পারি, যদি বলো আমিরিকার প্রেসিডেন্ট হতে বলবো তাও চেষ্টা করতে পারি কিন্তু তুমি ছাড়া আমি মুচির কাজও করতে পারিনা ।
পনেরোটি বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে, রেখে যাবে সারাজীবনের স্মৃতিগুলো । সম্পর্ক বললে ভুল হবে কারন আমার ভালোবাসা ছিল হয়তো একপক্ষীয় ।
শুধু মনের মানুষের মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম, চিৎকার করে করে বলো তোমাকে ভালোবাসি, দেখ আমি তোমার জন্য কি করতে পারি । তোমার দেয়া কষ্টগুলোকে
ভালোবাসার অনুষঙ্গ মনে করে মনের ব্যাথা আড়াল করার চেষ্টা করেছি ।

প্রানপ্রিয়তম,
তুমি শুধুমাত্র কথা বলেই তোমার কাজগুলো আদায় করে নিতে পেড়েছো, ভালোবাসলে কি এর চাইতে বেশি কিছু দিতে পারতাম না? পুড়ো দুনিয়া চষে খেয়ে কেন যে
তোমার সামনে গিয়ে বোকা হয়ে যাই, তাই বুঝিনা । এর নামই বুঝি ভালোবাসা ? তোমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে তোমাকে ডাক্তার দেখানোর সময় পরিচয় দিলাম তুমি
আমার বোন লাগো । কি বোকা আমি !
ডাক্তারতো কারো পরিচিত ছিলনা বউ পরিচয় দিলেই কি হতো? তবু সাহস করে বলতে পারি নাই ।
ডাক্তার যখন তোমাকে বিব্রতকর প্রশ্নগুলো করছিল, লজ্জায় আমি মাথা কুড়ে মরি, দেখি তুমি কি সাবলীল ভাবে উত্তর দিয়ে যাচ্ছো ।
তুমি এতটুকু সাবলীল কি আমার সাথে হতে পারতে না?
একটা অদৃশ্য দেয়াল তোমার আমার মাঝে গেথে রেখেছো । এত বছর ধরে ভাঙ্গার সাহস আমার হয়নি । যদি বলো শরীর চাও, বলি না ।
কারন কোন মানবীর শরীর আমি পেয়েছি, কিন্তু ততটা উত্তাপ আমি পাইনা, যেটুকু উষ্ণতা তুমি আমার পাশে বসলে পাই । যদি বল মন চাই, তাও বলি না ।
কোন নারীর মনও আমি পেয়েছি, কিন্তু তোমার , মত অভিমানী সেটা হতে পারে নাই । আজ পনেরো বছর পরে দেয়াল ভাঙতে চাইছি ।
জার্মানি কে দুভাগ করা বার্লিন ওয়াল ভেঙে গেছে অদূরে হয়তো চীনের মহাপ্রাচীর ও ভেঙে যাবে । কিন্তু তোমার দেয়া সেই অদৃশ্য দেয়াল
ভাঙবে বলে আশা করিনা । তবু বিদ্রোহী আমি ভাঙতে চাই সেই দেয়াল । এটা যদি আমার অপরাধ হয় তবে আমি সেই পাপে দোষী ।

প্রিয়তু,
রাস্তায়, গানে, কবিতায় এমনকি গত মাসে নদীতে চলা জাহাজেও তোমার নাম টি দেখে চেয়ে রয়েছি । হয়তো তোমাকে দেখার সুযোগ পায়নি ভালোভাবে তাই,
নাম দেখেই চোখ জুড়াই ।
পনেরো বছর পর কেউ হলুদ খামে নীল চিঠি আশা করে না, তবু তুমি পেলে কারন এই পাগল এখনো তোমাকে ভালোবাসে বলে ।
এই মাঝ বয়সে কৈশোর ফিরে আসে না তবু তোমার জীবনে আমি কৈশোর ধরে রাখি আমার ভালোবাসা প্রকাশে ।
এখনো যেমন তোমার বাড়ির সামনে নদীর ধারে বসে থাকি তোমাকে না জানিয়ে ।
গতমাসে নদীতে দেখা জাহাজটির নাম ছিল, "প্রিন্স অফ --" ।
মনে মনে নিজেকে ভাবি আমি তোমার প্রিন্স বাস্তবে তো আমি তোমার আজ্ঞাবহ দাস মাত্র । প্রিয় তোমাকে আর ভালবাসতে চাইনা,
বাসলেও তা প্রকাশ করতে চাইনা ।
তাই তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা আমার শেষ চিঠি । এই জীবনে আর কোনদিন তুমি কারো কাছ থেকে চিঠি পাবেনা আমিও জীবনে আর কোনদিন চিঠি লিখবো না ।
এই চিঠির মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে প্রেমিকা হিসেবে অভিনয় করে যাওয়া তোমারা অভিনয় জীবন । আমি যদি তোমায় কাছে পেতে চেয়ে কোন অপরাধ করে থাকি
পনেরো বছরের ভালোবাসা নিয়ে অপরাধ টা ক্ষমা করে দিও । আমার ভালোবাসার কবর দিলাম বীজরুপে কোনদিন তা অঙ্কুরিত হবেনা,
তুমিও ভালোবাসা দিয়ে এক ফোটা পানিও ঢালবে না । পনেরো বছরের সম্পর্ক শেষ হবে রেখে যাবে সারাজীবনের স্মৃতি ।
যে আশায় তোমকে ভালোবেসেছিলাম সেই আশা বিদায় নিচ্ছি তুমি সুখী হও ।

ইতি,
ব্র্যান্ড নেম অফ লাভ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পনেরো বছরের ভালোবাসা নিয়ে অপরাধ টা ক্ষমা করে দিও । আমার ভালোবাসার কবর দিলাম বীজরুপে কোনদিন তা অঙ্কুরিত হবেনা,---------------- হুমম দারুন উপস্থাপনাময় চিঠি পড়লাম------ বিরহ খুবই যন্ত্রনা দেয় -----------সুন্দর হয়েছে চিঠি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.