![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ অনিলার বিয়ে হচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগছে,সেদিনের ছোট্র মেয়েটার আজ নাকি বিয়ে। এইত গতবছরের পহেলা বৈশাখেও বায়না ধরেছিল মেলা থেকে তাকে লাল নীল চুরি কিনে দিতে হবে । আর আজ? মা ছাড়া মেয়েটা একা একা কত বড় হয়ে গেছে। আমার সেই ছোট্র অনিলা আজ বিয়ের পিড়িতে। ভাবলেই ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে।একটা বাবার কাছে এর থেকে বড় কস্ট বোধহয় আর দ্বিতিয় নেই,ছোটবেলা থেকে নিজের বুকে আগলে রেখে বড় করে অন্যের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া। মেয়েটা আমার একা একা বড় হয়েছে মা ছাড়া।যদিও মায়ের অভাব তাকে কখনো বুঝতেই দেইনি। কিন্তু তাতে তো আর মায়ের শূন্যস্থান মা ছাড়া অন্যকেউ পূরণ করতে পারে না।
নীলার(অনীলা কে আমি আদর করে নীলা বলে ডাকি) অনেক বন্ধুরা এসেছে সারাবাড়ি হুইহুল্লোড়ে ভরপুর,কিন্তু নীলার চাঁদমাখা মুখখানায় যেন আমাবস্যার জমে আছে।তার দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে তার রাগের মাত্রা বিপদসীমা পেড়িয়ে গেছে আরো অনেক আগেই। এমনভাবে রাগার কারন টা অনিলার 'মা',অনিলার মা মানে আমার স্ত্রী। অনিলার বিয়ের কথা শুনে সেই সকাল থেকে এসে বসে আছে একবার দেখার জন্য। শুধু আজ সকাল না, গতকাল সন্ধায়ও একবার এসেছিল, কিন্তু নীলা তার ফুপির বাসায় থাকায় চলে গিয়েছিল।রাতে এসে আমার কাছে শুনার পর থেকেই তার মেজাজটা বিপদসীমার বাইরে অতিক্রম করে আছে। আমার ছোট্র নীলার মা সকাল থেকে বেলকনীতে বসে বসে কাদঁছে আর এইজন ঐজনকে দিয়ে বার বার খবর পাঠাচ্ছে নীলার কাছে। কিন্তু নীলা দেখা করবে না,তার উত্তর প্রতিবার একইঃ এই মহিলার সাথে আমি দেখা করবো কেন??উনাকে বল চলে যেতে, আমি আমার বাবার মেয়ে।।
…
তার(নীলার মায়ের) চাওয়া শুধু এতটুকুই, নীলাকে একবার দেখেই চলে যাবে। কিন্তু নীলা দেখা করবেই না,সেই ছোটবেলা থেকেই সে একটু একরোখা টাইপের। যা বলবে তা বলবেই।।ছোটবেলা থেকেই মায়ের কথা শুনলে রেগে যেত,তখন না বুঝে রেগে যেত, আর এখন বুঝে শুনে রেগে যায়,মাকে যেন সহ্যই করতে পারেনা। .. .. রাতে ঘুমানোর আগে মেয়ের রুম চক্কর দিয়ে এসে অভ্যাসগত ভাবে একটু এলকোহল খাই।এলকোহল না খেলে রাতে আবার আমার ঘুম ভালো হয় না। রুমে এসে সে রাতে টেবিলে বসে বসে গ্লাস নিয়ে ঝিমাচ্ছি,আচমকাই টেবিলের ভেতর থেকে নীলার মায়ের ধুলোমাখা ছবিটা খুলে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই হাতে নিয়েছিলাম।
…
আমাদের বিয়ের ছবি,লাল বেনারসি শাড়িতে প্রিয়াকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল।প্রিয়ার ছবির দিকে তাকালে কেমন যেন বয়স টা কমে যায় আমায়। আমার একটা মেয়ে আছে মনেই হয় না।
..মেয়েটা যে কখন আমার পিছনটায় এসে দারিয়ে আছে বুঝতে পারিনি। আর সেকি বকুনি আমায়- আমার রাগকেও পিছনে ফেলে দেয় আমার মেয়ের রাগ। অনিলা ঃ হাতের আজ্ঞুল উঁচিয়ে আমাকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বকুনি দিচ্ছেঃ কতবার না তোমাকে বলেছি,ঐ মহিলার কোন কিছু এই বাড়িতে রাখবেনা ,কথা কানে যায়না তোমার? তোমাকে আর কতবার বললে এইসব আবর্জনা ঘর থেকে ফেলবা??তোমাকে যদি আর কখনো দেখেছি এই মহিলার ছবি বের করেছ তবেই হল..!!
তার শাষন দেখে নিজেকে হ্যাংলা ২২ বছরের যুবকের মত মনে হচ্ছিল,কিংবা আমি যেন অবাধ্য কিশোর .. .. ।
আমি তো সবই জানি সবই বুঝি ,আসলে 'অনিলা ' মা আমার যত্তটা রেগে বলে এইসব, তার থেকে বেশি বলে কষ্টে। সেই ছোট বেলা থেকেই মাকে কাছে না পেয়ে অভিমানে মাকে বকাঝকা করতো ঠিকই। কিন্তু বড় হয়ে যখন জানতে পারলো,সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তখন থেকে আর অভিমানে নয়, মাকে সহ্যই করতে পারেনা।।
অনিলার বয়স তখন কত আর হবে? তিন কি চার বছরের বাচ্চা একটা মেয়ে।তখন প্রিয়া(অনিলার মা) আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধুর হাত ধরে চলে যায় নতুন সুখের সন্ধানে। আমাদের ছেড়ে, আমাকে ছেড়ে, আমাদের ছোট্র মেয়ে অনিলাকে ছেড়ে।। আর ফিরে আসেনি,। অ চলে যাবার পর কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম আমি । পাগলের মত হয়ে খুঁজেছি তাকে আমি ,অনেক খুঁজেছিলাম,অনেক অপেক্ষা কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি।। মেয়ের কথা ভেবে আমিও আর অন্য কিছু ভাবিনি। আর আজ এতদিন পর,হঠাৎ করেই মেয়ের প্রতি ভালবাসা জেগেছে তার ,ছুটেও এসেছে।। ..কিন্তু....?নীলার মায়ের অবস্থা দেখে আসাদুজ্জামান শাহিন এর একটা কবিতার কিছু লাইন খুব মনে পড়ছে-
মান করেছি স্নান করেছি,
প্রেমের খেয়াঘাটে
ছুড়ে ফেলা ভালবাসার,
এত টান কিসে???
মনে হচ্ছিলো কবিতাটা যেন আমারই জন্য।
অনিলা তার বন্ধু রিতাকে দিয়ে আল্টিমেটাম পৌঁছে দিলঃএই মহিলা এখান থেকে যেন এক্ষুনি চলে যায়,এই মহিলা এখানে থাকলে আমি হলুদ পড়ব না। রিতা বেলকনিতে যাওয়ার আগেই দেখে অনিলার 'মা' চুখের পানি মুছঁতে মুছঁতে চলে যাচ্ছে....!মেয়ের কথায় আঘাত পেয়েছে নিশ্চই।
ছবি সংগ্রহঃ গুগল
©somewhere in net ltd.