নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস সারা জীবন উল্টো কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধনী ব্যক্তিদের ঋণ দেয়, অথচ তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক দরীদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণ করে। বাংলাদেশের কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে ৯০%-এর উপর ঋণ গ্রহীতা পুরুষ। আর, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠান মহিলাদেরকে মাঝে ঋণ দেয়। তাঁর প্রতিষ্ঠানের ৯৭% ঋণগ্রহীতা মহিলা। কনভেনশনাল ব্যাংকের মালিকানা ধনী মানুষদের হাতে থাকে, অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা দরীদ্র মানুষদের! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো কোন কিছু বন্ধক ছাড়া টাকা ধার দেয় না, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এসব লাগেই না। দরীদ্র মানুষ তো কোন কিছু বন্ধক দিতে পারবে না! তাই, গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময়ে কোন কিছু বন্ধক নেয় না।
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, এভাবে উল্টো করে চললে তাঁর ব্যাংক চলবে কি করে! তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে - "আমি তা জানি না! আগে অন্তত চেষ্টাটা করি!" তিনি চেষ্টা করেছিলেন, এবং সফল হয়েছিলেন। এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে - সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংক পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক যেখানে কোন আইনজীবী নেই!
এভাবে সাফল্য লাভ করেও ইউনুস সাহেব নিজেকে বোকা মনে করেন! তিনি মনে করেন যে, কোন কিছু সম্পর্কে জানা না থাকলে, সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া চলবে না! কোন কিছু করতে গেলে খুব বেশি স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন নেই! তাঁর মতো বোকারাই তো পৃথিবীতে এভাবে কাজ করে করে সফল হয়েছে।
কোন কিছু করতে গেলে ভয় পাওয়া চলবে না! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো মানুষকে ঋণ দিতে ভয় পায়। তারা বলে যে, দরীদ্র মানুষেরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়! এটা কি তাদের বলা উচিৎ? নাকি ব্যাংকগুলো চয়েস করার সময়ে জনগণের বলা উচিৎ - এই ব্যাংক জনবান্ধব, অমুক ব্যাংক জনবান্ধব নয়। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক তার ঋণগ্রহিতাদের সেইরকম বলার সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, তিনি স্রোতের উল্টো পথে হেঁটেছেন!
আচ্ছা, সারা পৃথিবীতে এতো যে দরীদ্র মানুষ, তাঁদের দারিদ্রতার পিছনে কারণ কি তা কখনো ভেবে দেখেছেন? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, দরীদ্র মানুষ বনসাই গাছের মতো! বনসাই গাছ কি চিনেন? ঐ যে বড় গাছগুলোর মিনিয়েচার সংস্করণ! আপনি একটি বটগাছকেও ছোট করে বাড়ির বারান্দার টবে রেখে দিতে পারবেন। এটাই বনসাই। দরীদ্র মানুষেরা বনসাইয়ের মতো! তাঁদের বীজে কোন সমস্যা নাই। আসলে, দরীদ্র মানুষদের চারপাশের পরিবেশ তাঁদেরকে দারীদ্রতা থেকে মুক্তি দেয় না। দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিতে হলে আমাদেরকে তাঁদেরকে নিয়ে গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
এরকম একটি গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে - ব্যবসা মানেই যত বেশি মুনফা করা যায় ততোই ভালো! ব্যবসা মানেই টাকার খেলা। ব্যবসায়ীরা তাই টাকার পিছনে ছুটেন। কিন্তু, আমরা যদি উল্টোটা করি, কি হবে? এমন একটি ব্যবসা তৈরী করা যায় কি যা মুনাফার পিছনে ছুটবে না, তাহলে কি হবে? এভাবে, যদি, বাংলাদেশের প্রতিটা সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্যে একটা করে ব্যবসা তৈরী করা যায়, তাহলে কি হবে?
এই সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে তৈরী হওয়া ব্যবসাকেই স্যোশাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। এভাবেই সম্ভব আমাদের মতো দেশগুলোর সমস্যাগুলোকে সমধান করা। আমরা তাই বলে কনভেনশনাল বা গতানুগতিক ব্যবসাগুলোকে ছোট করছি না। সেগুলো চলতেই পারে। কিন্তু, সেগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবসা দরকার যেগুলো আমাদের চারপাশের সমস্যা সমাধান করার জন্যে তৈরী হবে।
জার্মান জুতার কোম্পানী 'এডিডাস'-এর কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে সেই কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একবার এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন - "আমরা কিভাবে স্যোশাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসার সাথে যুক্ত হতে পারি?" তখন ইউনুস বলেছিলেন - "তোমাদের এমন একটা মিশন থাকা উচিৎ যে, পৃথিবীর কোন মানুষই জুতা ছাড়া থাকবে না। তোমরা দরীদ্র মানুষদের জন্যে জুতা বানাও।" তখন এডিডাসের সি,ই,ও অবাক হয়ে বলেছিলেন - "এটা তো অনেক বড় মিশন!" তখন ডঃ মুহাম্মদ ডঃ ইউনুস উত্তর দিয়েছিলেন - "এডিডাসও তো অনেক বড় প্রতিষ্ঠান! তুমি কি চাও আমি তোমাকে ছোট লক্ষ্যের কথা বলি!" এডিডাসের হায়ার ম্যানেজমেন্ট প্রায় এক ঘণ্টা পরে ইউনুস সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন - "একজন দরিদ্র্য মানুষের জন্যে আমরা কত সস্তায় জুতা বানাবো? এর দাম কত রাখা যেতে পারে?" ডঃ ইউনুসের এবারের উত্তর - "আমি জানি না! মনে হয় ১ ইউরোর নিচে!" এডিডাস কর্তৃপক্ষ তাঁকে উত্তর দিয়েছিলো - "আপনি খুব প্যাঁচালো মানুষ!" ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস উত্তর দিয়েছিলেন - "এজন্যেই তোমরা এডিডাস! যেহেতু, সমস্যা অনেক বড়, তোমাদের পক্ষেই এমনটা বানানো সম্ভব বলেই আমি তা বলেছি!"
এডিডাস কোম্পানি দুই বছর লাগিয়েছিলো ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের আইডিয়া অনুযায়ী জুতা বানাতে! তারা শেষ পর্যন্ত ১ ইউরোর চেয়ে কম মূল্যের জুতা বানাতে সক্ষম হয়!
এরকম কাজ আমি - আপনিও করতে পারি! আমাদের মাঝে অনেক ধরণের আইডিয়াই আসে। কিন্তু আমরা সেগুলো কাজে লাগাই না। কেন! একটু সাহসের অভাবে, অথবা, আমরা নিজেদেরকে যোগ্য মনে করি না, সেজন্যে সেই আইডিয়াকে হাতে তুলে নিতে ভয় পাই, মানুষকে আইডিয়া দিয়ে ভয় পাই, তাই না? অথচ, যদি উল্টোটা করতাম!
এমন যদি হতো, সচিবদের কাছে আমরা ছুটে না গিয়ে, সচিবরাই আমাদের কাছে এসে সমস্যার খোঁজ করতেন? পুলিশের কাছে জিডি করতে না গিয়ে পুলিশই আমাদের কাছে জিডি করতে ছুটে আসতো? অপরাধীকে খুঁজতে পুলিশ না গিয়ে অপরাধীই নিজেকে ধরিয়ে দিতে পুলিশের খোঁজ করতো? বুয়াদেরকে রাত-দিন না খাটিয়ে আমরাই বুয়াদের কাজে সাহায্য করতে লেগে যেতাম? কেন আমাদের বেতন পাইতে মাসের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে? মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা দিয়ে দিতে অসুবিধা কোথায়!
আমাদেরকে চিন্তার দোয়ারটা খুলে দিতে হবে। তাহলেই আমরা একেকজন সমস্যার সমাধান করতে পারবো! সবাইকেই সামাজিক ব্যবসা করতে হবে, তা নয়। বরং, আমাদের নিজেদেরকে একেকজন সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে তৈরী হয়ে যেতে হবে। তাহলেই সম্ভব দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনা!
----------------
লেখার আইডিয়াঃ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস
লেখকঃ মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
----------------------------------------------------------
২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৪০
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ধন্যবাদ। আমি সামাজিক ব্যবসার সাথে যুক্ত তা প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেলো!
আমার প্রচলিত ব্যবসার সাথে সাথে সামাজিক ব্যবসাও আছে। যেমন - কর্জে হাসানা প্রোগ্রাম। নিডিদের কম্পিউটার দেওয়া। ব্যবসা তৈরী করতে সাহায্য করা।
আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
২| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:০৪
আদিত্য ০১ বলেছেন: ড ইউনুসের ঋন দিয়ে কয়টা পরিবার স্বাবলম্বী হইছে। আমাদের গ্রামে গ্রামীন ব্যাংক আছে সেই ১৯৯৬ থেকে, তখন কত গরীব যে ঘর ছাড়া হইছে ঋন নেওয়ার পর, এমনও হইছে তাদেরকে পুলিশ দিয়ে ধরে নেওয়া ভয় দেখানো হইছে, আমার দেখা কোন গরীব স্বাবলম্বী হতে পারে নাই। হ্যা তার প্রস্তাবিত ব্যাংকে যে বিনিয়োগ সেটাই হয়ত সুদ ছাড়া পেয়েছিলো, তাই তার ব্যাংক স্টেবল করছে, করবে
২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:০৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
যেসব বড় ব্যাংকের সাথে আমার কোম্পানীর একাউন্ট, সেখানে কখনো গরীব লোককে দেখি নাই।
সেখানে আপনার মতো কেতাদূরস্ত মানুষেরা স্যুট পড়ে বসে থাকেন।
৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:১০
প্রগতি বিশ্বাস বলেছেন: প্রেষণা প্রদানের জন্য গল্পটি ভালো যদি পুরা গল্পটায় বানানো!
৪| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:৪৩
ঊণকৌটী বলেছেন: কর্জে হাসানা প্রোগ্রাম। এই জিনিসটা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন
৫| ২২ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:০৩
মিথমেকার বলেছেন: আপনার বনসাই গাছের থিওরিটা বেশ লেগেছে। তবে বীজ এ কোন সমস্যা নাই এই কথার সাথে আমি কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করছি। আমি মনেকরি, গরিবদের গরীব থেকে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো তাদের চিন্তা। চিন্তাকে যদি আপনি বীজ ধরেন তাহলে বীজেও সমস্যা আছে। আর একটি মানুষের জীবনে চিন্তাই তাঁর জীবনী শক্তি বলা যায়। যেমন; গরিবেরা অ্যাসেট এবং লাইয়াবিলিটি এর ভেতর যে বড় একটি পার্থক্য সেটা বোঝে না। তাদের হাতে টাকা আসলেই বা লোনে কিছু টাকা পেলেই তাঁরা একটি লাইয়াবিলিটি কিনে বসে ইনস্টেড অফ ইনভেস্টিং ইট অন সাম প্রপার্টি ওর প্রফিট মেকিং সেক্টর।
৬| ২২ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: গরিবকে শোষণ করে কি ভাবে ধনিরা ধনী হয় এটা জানতে হলে দাস ক্যাপেটাল পড়তে হবে।
ইউনুস সাহেবের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে ছিলো।হাসিনা সরকার অনুদান দিয়ে ঠিক করে।
২২ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:২৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ধনীদের শোষণ করলে রবিন হুড হওয়া যায়?
ধন্যবাদ।
৭| ২২ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৫২
কামাল১৮ বলেছেন: ইউনুসের কাছ থেকে কি করে অন্যের টাকা মেরি দিতে হয় এটা শিখতে পারেন।
২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৪৫
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
উনি কার টাকা মেরেছেন?
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:০২
নয়া পাঠক বলেছেন: অনেক সুন্দর কিছু কথা উঠে এেসেছে আপনার এই পোষ্টে, আমাদেরকে প্রচলিত বিষয়ের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করতে হবে এবং সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে, যদিও এটা খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ নতুন বিষয় আমাদের অনেকেই ভালো চোখে দেখে না, অপ্রচলিত যেকোন আইডিয়ার পেছনে লেগে থেকে তার অনেক ভুল বের করে অথবা অন্যভাবে তা যেন সফলতার মুখ না দেখে সেজন্য অনেকেই চেষ্টা করে যায়। কিন্তু যদি উদ্যোক্তা কঠোর মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলে একসময় না একসময় ঠিকই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।
আপনার মধ্যে অনেক নতুন নতুন আইডিয়া বের করে তা সামাজিক ব্যবসায়ে রূপ দেওয়ার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে। আপনি চাইলেই এরকম কোন কিছুর পেছনে চেষ্টা করে সফল হতে পারবেন।