নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.....

শূন্য সারমর্ম

কঠিন সত্য কি মানুষ বদলাতে পারে?

শূন্য সারমর্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারারির মগজ থেকে

০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৫

আরণ্যিক নির্বোধের ভ্রান্ত দুঃস্বপন


বিশ্বাসীদের ইশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা সাধারণত রহস্যময় মহাবিশ্ব এবং মানবীয় বোধের সীমাবদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করেন। ‘যেহেতু বিগ-ব্যাং ঘটার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারে না’ তাহলে ‘নিশ্চয় এটি ঈশ্বরেরই কাজ’ এভাবেই তাঁরা বলে থাকেন। ঠিক যেমনটি করে থাকেন জুয়েল আইচ, কথার জাদুতে দর্শকদের ব্যাস্ত রেখে অবলীলায় খরগোশ বের করে আনেন টুপির তলা থেকে। বিশ্বাসীরাও একই পদ্ধতিতে মহাবিশ্বের ধোঁয়াচ্ছন্ন সৃষ্টিরহস্যে ঈশ্বরের অবদান নিয়ে কথামালা বুনতে বুনতে অবলীলায় দুনিয়াবি আইনের খরগোশ বের করে আনেন ঐশী টুপি থেকে। ইশ্বরকে মহাবিশ্বের অজ্ঞাত রহস্যের স্রষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করার পরমুহূর্তেই আচমকা তাঁকে ব্যবহার করা হয় পরিধেয় অনুমোদনে কিংবা বিবাহ-বিচ্ছেদের আইনবিদ হিসেবে। যেহেতু বিগ-ব্যাং ঘটনাটি ব্যাখ্যার অতীত, সেহেতু অবশ্যই চুল ঢেকে রাখতে হবে। অথচ, এদের মাঝে কোনও সংযোগই নেই। বিশ্বের রহস্যের ধোঁয়া যতই ঘনীভূত করা হয়, তার সাথে সমকামী-অধিকার অস্বীকারের আন্তঃসম্পর্কটি ততই উদ্ভট ঠেকে। [পৃষ্ঠা-১৯৮]

যদিও ঈশ্বর চাইলে আমাদের সহমর্মিতা ধারণে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন, তিনি আসলে নৈতিকতা চর্চার অনিবার্য উপাদান নন। নৈতিকতা চর্চায় অতিপ্রাকৃতের ধারণাটি আসলে ধরে নিতে বাধ্য করে যে নৈতিকতা মাত্রই ঐশী উৎসজাত। অথচ নৈতিকতার বোধটি অতিপ্রাকৃত নয়, নিতান্তই প্রাকৃতিক। শিম্পাঞ্জি থেকে ইঁদুর, সব স্তন্যপায়ী প্রজাতিই একধরণের নীতিসূত্র দ্বারা বিরত থাকে চৌর্যবৃত্তি বা খুন থেকে। মানব প্রজাতির বিভিন্ন অংশও ধারণ করে নৈতিকতা অথচ তারা বিশ্বাসী ভিন্ন ভিন্ন ইশ্বরে, এমনকি অনেকে আদৌ বিশ্বাসীই নয়। হিন্দু বৈদিক সূত্র না মেনেও একজন খৃস্টান পারে দয়ার্দ্র হতে। যীশুর ঐশী আবেদন অস্বীকার করেও একজন মুসলমান পারে সততার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। ডেনমার্ক কিংবা চেক প্রজাতন্ত্রের মতন নিধার্মিক দেশগুলোও কোনভাবেই ইরান বা পাকিস্তানের মতন ধর্মরাষ্ট্রের চেয়ে সামষ্টিকভাবে বেশি হিংস্র নয়। নৈতিকতার অর্থ ‘ঐশী আদেশের অনুসরণ’ নয়, বরং এটি বোঝায় ‘ভোগান্তি হ্রাসকরণ’। অর্থাৎ, সহজাত নৈতিক আচরণের জন্য কোনও পৌরাণিক গল্পে বিশ্বাস আনা জরুরী নয়। পরের ভোগান্তি হ্রাস করতে চাইলে সে ব্যাপারে একটি সহজাত সহমর্মিতাই যথেষ্ট। কেউ যদি বুঝতে পারে যে তার একটি কাজ অন্যদের কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, এই বোধটিই তো সে কাজে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট। [পৃষ্ঠা-২০০]

কারো কারো ক্ষেত্রে, অপরকে সাহায্যের আদেশদাতা একজন দয়ার্দ্র ইশ্বরের ধারণা, হয়তো ব্যক্তিগত ক্রোধমুক্তিতে সহায়তা করে। এভাবেই অনেকসময় ধর্মীয় বিশ্বাস বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ভুমিকা রেখে এসেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, আরো অনেকের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাস আসলে হাওয়া দেয় ব্যক্তিগত ক্রোধের অঙ্গারে। নিজের অবদমিত ক্রোধকে সে ভেবে নেয় ইশ্বরের ঐশী ক্রোধরূপে এবং অন্যদের ওপরে চড়াও হয়, তার কল্পনার রাগান্বিত ইশ্বরের অবমাননাকে ব্যাক্তিগত অপমান ভেবে। এভাবে ঐশী আইনের উৎসটি কালক্রমে হয়ে ওঠে ঐশী অনুসারীদের অবিকল প্রতিরূপ। ভদ্রলোক অনুসারীদের ঈশ্বর হয়ে ওঠেন নিপাট ভদ্রলোক, আর ছোটলোক অনুসারীদের ইশ্বর হয়ে ওঠেন ইতরস্য ইতর। কোন এক তীর্থদর্শন যদি তীর্থযাত্রীর মনে শান্তি ও সহাবস্থানের বোধ জাগ্রত করে তোলে, সেটি অতীব চমৎকার। আর অন্য এক তীর্থস্থান যদি হয়ে ওঠে হিংস্রতা আর সংঘাতের উৎস, তবে? নিঃসন্দেহে সেটি বর্জনীয়, এমন হিংসার পীঠস্থান আমরা চাই না। [পৃষ্ঠা-২০২]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.