![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের বিবেক কে প্রতারিত করে অন্যকে খুশি করারজন্য কথা বলা ও লেখা একটি প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। সবার সাথে প্রবঞ্চনা করা গেলেও নিজের সাথেকখনো প্রবঞ্চনা করা যায় না।
" এমনি এমনি কি ধর্ষণ হয় নাকি। মেয়েরা ছোট ছোট কাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে, আর ছেলেরা কিছু করলেই দোষ। এই মেয়েরাই সব নষ্টের গোড়া, একজন পুরুষের শারীরিক প্রবিত্তিই হচ্ছে নারীদেহের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং এটাই স্বাভাবিক। পুরুষদের কিছু দোষ থাকলেও মূল দোষটা আসলে মেয়েদের, মেয়েরা ঠিক থাকলে এত ধর্ষণ হয় না। ঠিকঠাক মত পর্দা করলে কখনোই রেপ হয় না….."আসলেই মেয়েটির কেমন পোশাক পড়া উচিৎ ছিল তা বোঝাতেই ছেলেগুলা মেয়েটাকে একটু ধর্ষণ করেছে আর কি !! প্রতিবার একটা করে ধর্ষণ হবে আর শুক্রানুতে ভরপুর অনেক প্রানিই আপনার সামনে এমন কিছু যুক্তি উপস্থাপন করবে । ধর্ষণের জন্যে যদি মেয়েটির পোশাকই দায়ি হয় তবে আপনার মা বোন কে আপাদমস্তক কাপড়ে মুড়ে রাতের বেলা ঐ ধর্ষকদের সামনে ছেড়ে দিয়ে আসুন তো দেখি !!!কিংবা আমাকে শুধু একটা কেইস দেখান যে খুব নম্র, ভদ্র, বিনয়ী একটা ছেলে, যার নামে কোন মামলা নাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র, বাবা-মার গৌরব। একটা উগ্র পোশাক মিনি স্কাট পরিহিতাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঝোপে ফেলে ধর্ষণ করলো। শিশু থেকে শুরু আপাদমস্তক পোশাকে জড়ানো বিভিন্ন বয়সের যতজন নারী এ যাবত কালে ধর্ষিত হয়েছে এ দেশে তার জন্যে ঐ নারীর পোষক দায়ী ছিল এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কেউ দ্বার করাতে পারবে ? আসলে কম/বেশি মাত্রায় ধর্ষক মানসিকতা আমরা নিজেরাও ধারন করি বিধায় ধর্ষকের পক্ষে এ ধরনের যুক্তি দিয়ে বেড়াই ।সুন্দর কে সহ্য করার মত মানসিকতা নেই আমাদের।আমাদের জন্যে হুমায়ুন আজাদের উক্তিটিই যথার্থ "আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্নবাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।" সুন্দর নারীকে দেখলেই আমরা আমাদের মনুষ্যত্ব বোধ হারিয়ে ফেলি আর জাগ্রত হয় আমাদের পুরুষত্ব নামক পশুত্ব যা দিয়ে কখনও শ্রদ্ধা করা যায় না বিপরিত লিঙ্গধারি মানুষটিকে আপন করা যায় না মানবিক ভালোবাসা দিয়ে বরং আমাদের মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক পার্শ্ববিক ক্ষুদা । নারীকে আমরা মানুষ হিসাবে নয় বরং কাম বস্তু হিসাবে মনে মনে রমন করি । তাই তো কোন নারী সন্মান প্রদর্শনের জন্য তাকে মা-বোন হিসাবে বিবেচনা করতে বলা হয় । দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ধর্ষণের ঘটনা আর ইভটিজিং তথা নারীদের যৌন হয়রানীর তো পরিসংখ্যানই করা সম্ভব না। পুরুষের যৌন চাহিদা কি আসলেই মানবিক , সুন্দর ??!!
পর পর ঘটে যাওয়া এতোগুলা ধর্ষণের পরেও বিচলিত নয় এ পুরুষ সমাজের অধিকাংশ, ধর্মীয় সংগঠনগুলো ।সর্বশেষ মসজিদের ভেতর ইমাম কর্তৃক তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষিতা হয় অথচ ধার্মিকদের প্রতিক্রিয়া কৈ ??!!ধর্ষণে কি আমাদের পুরুষ সমাজ বিচিলিত নাকি বিনোদিত ??ধর্ষণে যে আমাদের পুরুষ সমাজ বিনোদিত তার প্রমাণ মেলে যখন এ দেশের চলচিত্রে ধর্ষণকে দেখান হয় দর্শকের চিত্তবিনোদনের জন্যে ধর্ষকের নিঃসংশয়তা বোঝানর জন্যে নয় । আসলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল আমাদের পুরুষ সমাজ ধর্ষণকে কিভাবে দেখছে ? এটাকে তারা কতটা অমানবিক ভাবে ? ধর্ষণকে তারা কি মাত্রার অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে ? এ যাবতকালে কয়টি ধর্ষণের বিচার হয়েছে এ দেশে ? এমন কি নারীও অতিমাত্রায় বিচলিত নয় তার মত আর একটি নারীর ধর্ষণের খবরে ।
ধর্ষণ এমন একটি সচেতন প্রক্রিয়া যেখানে সকল পুরুষ কর্তৃক সকল নারীর উপর ভয়ের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়। ধর্ষণ শুধু একটি কামনা বা বাসনা প্রশমনের ব্যাপার নয় উলটো এটা হল ক্ষমতা ও ত্রাসের মানদন্ড। প্রাণীজগতে মানুষের বাইরে আর কোন প্রাণীর এই রকম ভয়, শাসন, ত্রাস না থাকায় তাদের মধ্যে কখনোই যৌনতার কারণে রেইপের ঘটনা ঘটে না।নারীর প্রতি সমাজের মূল দৃষ্টিভঙ্গিই এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে তারপর এ দেশে নেই সুস্থ যৌন শিক্ষার ব্যাবস্থা ।
©somewhere in net ltd.